তোমাতে আসক্ত আমি পর্ব ৩৮

0
1173

#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৩৮

আজ আবরার, আরশির ওয়েডিং রিসেপশন। সেই উপলক্ষে সাজানো হচ্ছে আরশি কে। বেশ সময় নিয়ে আরশি কে সুন্দর করে তৈরি করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো পার্লারের মহিলারা।

আজ সম্পূর্ণ শুভ্র রঙে নিজেকে মু*ড়ি*য়ে নিয়েছে আরশি। সাদা গর্জিয়াস শাড়ির সাথে সাদা হীরার অলংকার। দীঘল, কালো কেশ একপাশে সুন্দর করে বিনুনি করে রাখা। আরশি মিসেস বন্যা কে বলতে শুনেছে এই সবকিছু আবরার নিজে আরশির জন্য পছন্দ করে কিনেছে। শুভ্র রঙে কি তাকে খুব বেশি সুন্দর লাগে! প্রশ্ন জাগে আরশির মনে। প্রশ্ন টা মাথায় আসতেই দর্পনে চোখ যায় আরশির। নিজেকে খুঁ*টি*য়ে খুঁ*টি*য়ে দেখতে থাকে সে।

——

ধীরে ধীরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসছে আরশি। পাশ থেকে বেশ কয়েকজন মেয়ে ঘিরে রেখেছে তাকে। এই মেয়েগুলোর সাথে কিছুক্ষন আগে মিসেস বন্যা তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। এই মেয়েগুলো আবরারের ফ্রেন্ডদের ওয়াইফ। হুট করে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তারা কেউ বিয়ে তে উপস্থিত ছিলো না তবে আজ সবাই চলে এসেছে। মেয়েগুলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এটা ওটা বলে মজা করছে আরশির সঙ্গে। কিন্তু আরশির ধ্যান এসবে নেই। সে তো নিজের শাড়ি সামলে হাঁটতে ব্যস্ত। কখন জানি সবার সামনে উ*ষ্টা খেয়ে পড়ে! তাহলে আর মান ইজ্জত কিছুই থাকবে না। মনে মনে আবরার কে ব*কা দেয় আরশি। কি দরকার ছিলো লোকটার শাড়ি কেনার? লেহেঙ্গা কিনলেও তো পারতো। তাহলে তাকে এমন ভ*য়ে*র মাঝে থাকতে হতো না।

অন্যদিকে সোফায় বসে আরশির জন্য অপেক্ষা করছে আবরার। অপেক্ষার প্রহর গুনছে নিজের শুভ্র পরী কে শুভ্র শাড়িতে দেখার। সিঁড়ির দিকে চোখ যেতেই থমকে গেলো আবরার। অবশেষে তার অপেক্ষার অবসান হলো। বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো সে। মোহনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিজের শুভ্র মায়াবিনীর দিকে। কি পবিত্র, মায়াবী লাগছে মেয়েটা কে সাদা শাড়িতে। চোখের পলকটাও যেনো ফেলতে ভু*লে গেছে আবরার। বন্ধুদের হাসাহাসির শব্দে হু*শ ফিরলো তার। তবুও ওদের হাসাহাসি কে পা*ত্তা না দিয়ে ফের আরশির দিকে নিজের দৃষ্টি তা*ক করলো সে। দেখলো আরশি স্লথের গতিতে হাটছে। আরশির চোখ মুখের অবস্থা আর হাঁটার গতি দেখে আবরার বুঝে ফেললো আরশির হাঁটতে স*ম*স্যা হচ্ছে। কাল বিলম্ব না করে সে এগিয়ে গেলো আরশির দিকে। আরশির কাছাকাছি গিয়ে হুট করে কোলে তু*লে নিলো আরশি কে। আবরারের কাজে আশেপাশের সকলে হৈহৈ করে উঠলো।

হুট করে কেউ কোলে তু*লে নেয়ায় চমকে উঠলো আরশি। দেখলো আবরার সুন্দর তাকে কোলে নিয়ে হাঁটছে। আশেপাশের কারোর দিকে কোনো ধ্যান নেই তার। আরশি কে তাকাতে দেখে চমৎকার একটা হাসি উপহার দিলো আবরার। অপলক আবরারের দিকে তাকিয়ে রইলো আরশি। লোকটা কে আজ বড্ড বেশি সুন্দর লাগছে। আরশি আবরারের উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে চাইলো কিন্তু পারলো না। তার বে*হা*য়া আঁখি জোড়া এক দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো না বলা প্রিয় পুরুষটা কে। এই অ*সভ্য, নি*র্ল*জ্জ পুরুষ টা তার, শুধুমাত্র তার। কথা টা ভাবতেই মন জুড়ে প্রশান্তি অনুভব করলো আরশি। আরশির মনে হলো সে কোনো স্বপ্ন দেখছে। যেই স্বপ্নে সে কোনো সাধারণ মেয়ে নয় বরং একজন প্রিন্সেস। আর আবরার তার প্রিন্স। আবরার সেই প্রিন্স যে নিজের প্রিন্সেস কে ভালো রাখতে সব করতে পারে, নিজের প্রিন্সেস এর সব স*ম*স্যা না বলতেই বুঝে যায়, যে নিজের প্রিন্সেস কে অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসে কিন্তু তা কখনো মুখে বলে না। নিজের প্রতিটা কাজের মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশ করে।

আরশির ভাবনার মাঝে তাকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো আবরার। আজকের অনুষ্ঠান পার্টি সেন্টারে হবে। এখন তারা সেখানেই যাবে। আরশি কে বসিয়ে নিজেও তার পাশে বসলো আবরার। আরশির শাড়ি ঠিকঠাক করে দিয়ে নিচু আওয়াজে বললো,

— শাড়ি পড়ে খুব স*ম*স্যা হচ্ছে তাই না? আমি জানি তুমি শাড়ি পড়ে কমফোর্টেবল ফিল করো না, ঠিকমতো হাঁটতে পারো না। কিন্তু কি করবো বলো? এই শাড়ি দেখার পর তোমাকে এই শাড়িতে দেখার লো*ভ সামলাতে পারি নি। চি*ন্তা করো আমি আছি তো, আমি ঠিক তোমাকে সামলে নেবো।

কথা শেষ করেই আরশির হাত মুঠোয় পুরে নিলো আবরার। আরশি কোনোরকম চেষ্টা করলো না হাত টা ছাড়ানোর। আজ কেনো যেনো কোনো প্রকার অ*স্ব*স্তি, লজ্জা তাকে ছুঁতে পারছে না। সে নীরবে তাকিয়ে রইলো আবরারের পানে।

——-

রিসেপশন পার্টি শেষে আরশিদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করেছে আবরার আরশি। আজ রাত টা তারা আরশিদের বাড়িতেই থাকবে। এতোটা সময় এক টা*না বসে থেকে আরশির অবস্থা না*জে*হা*ল। তার উপর এতো এতো মানুষের ভি*ড়, তাদের চিৎ*কা*র চেঁ*চা*মে*চি, ফটো সেশন সব মিলিয়ে আরশির অবস্থা খা*রা*প। এসবের সঙ্গে মোটেও পরিচিত নয় সে। মাথা ভা*র হয়ে আছে তার। ইচ্ছা করছে একটুখানি ঘুমাতে। আরশির অবস্থা যেনো বুঝে গেলো আবরার। কোমর আঁকড়ে ধরে নিজের কাছে টে*নে নিয়ে আসলো আরশি কে। আলতো করে মাথা টা নিজের বুঁকের উপর রাখলো। ছাড়া পাওয়ার কোনো রকম চেষ্টা করলো না আরশি। আবরারের বুঁকে মাথা রেখেই ব্য*থা*তুর চোখে আবরারের দিকে চাইলো সে। আঁখি জোড়া লাল হয়ে আছে তার। আরশির এমন অবস্থা দেখে ভিতরে ভিতরে অ*স্থি*র হলেও বাইরে প্রকাশ করলো না আবরার। আদুরে কণ্ঠে বললো,

— তোমাদের বাসায় যেতে অনেক টা সময় লাগবে। ততক্ষন একটু ঘুমাও মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি। ভালো লাগবে তোমার।

আবরারের বুঁকে মুখ গু*জে আলতো হাসলো আরশি। আবরার প্রকাশ না করলেও আবরারের চোখে ঠিকই নিজের জন্য অ*স্থি*রতা দেখেছে সে। লোক টা তার জন্য অ*স্থি*র হচ্ছে দেখে ভীষণ আনন্দ অনুভব করলো আরশি। সে শান্তিতে আবরারের বুঁকে মুখ গু*জে তার সাথে লে*প্টে রইলো। টের পেলো আবরার তার মাথা থেকে দুপাট্টা খোলার চেষ্টা করছে। পিন খুলছে হয়তো। কিছুক্ষন পর দুপাট্টার পিন খুলতে সক্ষম হলো আবরার। মাথা থেকে দুপাট্টা নামিয়ে ধীরে ধীরে আরশির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো সে। আরামে একরাশ ঘুম এসে হা*না দিলো আরশির চোখে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই গভীর ঘুমে ত*লি*য়ে গেলো সে।

——-

— মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি শুনছো? ওঠো তোমাদের বাড়িতে চলে এসেছি। এই মেয়ে শুনছো?

আরশির কপোলে আলতো করে হাত ছুঁইয়ে ডাকলো আবরার। আবরারের নরম কণ্ঠস্বর শ্রবণ হতেই ঘুম ভা*ঙ*লো আরশির। পিটপিট করে চোখ খুলে কোথায় আছে তা বোঝার চেষ্টা করলো আরশি। মনে পড়ে গেলো আবরারের বুঁকে মাথা রেখে ঘুমানোর সময় টা। গাড়ির সামনের সিটে চোখ যেতে দেখলো গা*র্ড, ড্রাইভার কেউ নেই। তৎক্ষণাৎ মাথা উঁচু করলো সে। আবরার তার দিকেই তাকিয়ে থাকার দরুন চোখে চোখ পড়ে গেলো। আরশি কে জাগতে দেখে আলতো হাসলো আবরার। আরশি কপালে ছড়িয়ে ছি*টি*য়ে থাকা এ*লো*মে*লো চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে নরম কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো,

— কেমন লাগছে এখন?

আরশি মিনমিন করে জবাব দিলো,

— ভালো…

ঘুম হওয়ার কারণে এখন বেশ ভালোই লাগছে আরশির। মাথা ব্য*থা, ভা*র ভা*র ভাব অনেকটাই দূর হয়েছে। এখন শুধু শাওয়ার নিয়ে এক কাপ চা খেলেই চা*ঙ্গা হয়ে যাবে সে। হুট করে আরশির মনে প্রশ্ন জাগলো সে কতক্ষন এভাবে আবরারের বুঁকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে! আবরারের কাছ থেকে কিছু টা দূরে সরে আসলো আরশি। জিজ্ঞাসা করে বসলো,

— আচ্ছা আমি কতক্ষন ঘুমিয়েছি?

আরশির প্রশ্নে ঠোঁট বা*কি*য়ে হাসলো আবরার। নিজের ঘড়িতে সময় দেখে বললো,

— উমম দুই ঘন্টা বিশ মিনিট ঘুমিয়েছো তুমি।

চোখ বড় বড় করে তাকালো আরশি। মুহূর্তেই গাল জুড়ে লজ্জার আভা ছড়িয়ে পড়লো। এতোটা সময় সে ওভাবে আবরার কে ঝা*প্টে ধরে ঘুমিয়েছে! আরশি কে লজ্জা পেতে দেখে বেশ মজা পেলো আবরার। টি*ট*কা*রি করে বললো,

— এভাবে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছো কেনো? আমি জানি আমি অনেক হ্যান্ডসাম। তাই বলে এভাবে তাকাবে? এতক্ষন আমার বুঁকে মাথা রেখে আ*ষ্টে*পৃ*ষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘুমালে আর এখন এভাবে তাকিয়ে আছো। তুমি কিন্তু দিনদিন ভারী নি*র্ল*জ্জ হয়ে যাচ্ছ মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি। সে তো আমি বড়ই দয়াবান মানুষ তাই তোমাকে আমার বুঁকে ঘুমাতে দিলাম। আমার পার্সোনাল বুঁকটা কে নিজের পার্সোনাল সম্পদ ভাবছো নট ফেয়ার।

আবরারের কথায় লজ্জা উ*ধা*ও হয়ে গেলো আরশির। লোকটা নিজে যা ইচ্ছা করতে পারবে আর সে একটু বুঁকে মাথা রেখেছে বলে এখন খোঁ*চা দিচ্ছে! রা*গ হলো আরশির। রা*গে*র ব*শে*ই হুট করে আবরারের দিকে এগিয়ে গেলো সে। ভ*ড়*কে গেলো আবরার। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো আরশির দিকে। আবরার কে আরও অবাক করে দিয়ে আরশি আবরারের কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— আপনিও আমার, আপনার বুঁকটাও আমার। এখানে ভাবভাবির কিছু নেই। তাই আমি যখন ইচ্ছা আপনাকে জড়িয়েও ধরবো আর যখন ইচ্ছা আপনার বুঁকে মাথাও রাখবো। বুঝতে পেরেছেন এমপি সাহেব?

আবরার চোখে মুখে অবাক ভাব ব*জা*য় রেখেই মাথা ঝাঁ*কি*য়ে বুঝিয়ে দিলো সে বুঝতে পেরেছে আরশির কথা। আবরার কে ভ*ড়*কে দিতে পেরে বিজয়ের হাসি হাসলো আরশি।

চলবে?

(আস্সালামুআলাইকুম। কেউ ব*কা দিয়েন না 🙂। ব্যস্ততার কারণেই এতো অ*নি*য়*ম হচ্ছে। চাইলেও হুট করে গল্প টা শেষ করতে পারছিনা। এতে হয়তো আপনাদের এতদিনের ভালো লাগা টা ন*ষ্ট হয়ে যাবে। আপনাদের এতোটা অপেক্ষা করানোর জন্য ক্ষ*মা*প্রা*র্থী। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here