#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৩১
ফুলে সজ্জিত কক্ষে বসে আছে আরশি। হাঁ*স*ফাঁ*স অবস্থা তার। পাঁচ মিনিট আগেই কয়েকটা মেয়ে তাকে এখানে বসিয়ে রেখে গেছে। তারপর থেকেই হাঁ*স*ফাঁ*স করছে সে। হৃৎপিণ্ড জো*রে জো*রে লা*ফা*চ্ছে। সে বুঝতে পারছে না কেনো এমন লাগছে তার। এই অনুভূতির সাথে সে মোটেও পরিচিত নয়। আরশি বুঁকে হাত রেখে জো*রে একটা শ্বাস টা*নলো। বিড়বিড় করে বললো,
— এমন কেনো হচ্ছে? মনে হচ্ছে হৃদযন্ত্র টা লা*ফাতে লা*ফাতে বাইরেই বেরিয়ে আসবে। আমি কি ম*রে ট*রে যাবো নাকি? মাত্রই তো বিয়ে টা হলো। এখনই ম*রে গেলে কি করে চলবে? এখনো তো এমপি সাহেবের লাইফ টা ভা*জা ভা*জা করা বাকি, তার মাথার চুল ছে*ড়া বাকি, খা*ম*চি দিয়ে তার মাং*স তো*লা বাকি, বুড়ো বয়সে তাকে জ্বা*লা*নো বাকি। আরও কতো কিছু বাকি। এসব না করে আমি কি করে ম*র*তে পারি? রিল্যাক্স আরশি। তোর এখনো কতো কিছু করা বাকি। এতো জলদি তোর কিছু হতে পারে না, তুই ম*র*তে পারিস না। সো রিল্যাক্স।
আরশি নিজেকে কিছুক্ষন উ*ল্টা*পা*ল্টা বুঝ দিলো। তারপরও তার হৃদযন্ত্র টা নিজের কাজ করেই চলেছে। বি*র*ক্ত হলো আরশি। নিজের মনোযোগ অন্যদিকে নেয়ার জন্য ধীর পায়ে বেড থেকে নামলো। লেহেঙ্গা একটু উঁচু করে আবরারের রুম টা ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলো। লেহেঙ্গা পড়ায় হাঁটতে খুব একটা অ*সুবিধা হচ্ছে না আরশির। সে ধীরে ধীরে রুমের সবকিছু ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতে লাগলো। বিশাল বড় রুম আবরারের এবং খুব পরিপাটি। দেয়ালে আবরারের বেশ কিছু ছবি লাগানো। আরশি কিছু সময় নিয়ে ছবিগুলো খুঁটে খুঁটে দেখলো। তারপর রুমের জানালার দিকে চোখ যেতেই সেদিকে চলে গেলো আরশি। বন্ধ জানালা এক টা*নে খুলে ফেললো। অমনি বাইরের হাওয়া এসে বা*রি খেলো আরশির চোখে মুখে। নাকে এসে ঠে*ক*লো ফুলের সুবাস। চোখ বন্ধ করে মুহূর্ত টা উপভোগ করতে লাগলো আরশি। এমন সময় খ*ট করে দরজা খোলার শব্দে চম*কে তাকালো আরশি। দেখলো আবরার ভেতরে প্রবেশ করছে। শান্ত হওয়া হৃদযন্ত্র টা আবারও অ*স্বাভাবিক হয়ে উঠলো।
অন্যদিকে আরশি কে এভাবে চ*ম*কে তাকাতে দেখে বাঁ*কা হাসলো আবরার। মনে পরে গেলো আরশির ত্যা*ড়া কথাগুলো। সুন্দর মতো দরজা বন্ধ করলো সে। বাঁ*কা হেসে ধীরে ধীরে আরশির দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আবরার কে নিজের দিকে আসতে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকালো আরশি, শু*ক*নো ঢোক গি*লতে লাগলো। গলা টা ভীষণ শুকিয়ে গেছে তার। আরশি মনে মনে নিজেকে বলতে লাগলো,
— তুই এই অ*সভ্য এমপি কে ভ*য় পাচ্ছিস কেনো আরশি? ভ*য় পেলে চলবে না, মোটেও চলবে না। একবার উ*ল্টা*পা*ল্টা কিছু করতে আসুক, একেবারে খা*ম*চে রেখে দিবো হুমম।
আরশি নিজের ভাবনা চি*ন্তা থেকে বেরিয়ে আসতেই দেখলো আবরার তার অতি সন্নিকটে চলে এসেছে। আরশি চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো আবরারের দিকে। হুট করে আরশির দিকে ঝুঁ*কে আসলো আবরার। ফিসফিস করে বললো,
— তা কি যেনো বলছিলে? তুমি আমার বউ লাগো না তাই আমি যখন তখন তোমার কাছে আসতে পারি না, যখন তখন কল, মেসেজ করতে পারি না। তা এখন তো তুমি আমার বউ লাগো। এখন নিশ্চয় সবকিছু করতে পারি?
আবরার কথাগুলো বলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আরশির দিকে। সেই দৃষ্টিতে যেনো একরাশ মুগ্ধতা বিরাজ করছে। আবরারের চোখের দিকে তাকিয়ে আরশি ও কেমন এক ঘো*রে*র মাঝে ডু*বে গেলো। জবাব দেয়ার কথাটাও মাথায় রইলো না। এই সুযোগটাই কাজে লাগালো আবরার। হুট করে কোলে তু*লে নিলো আরশি কে। আবরার কোলে তু*লতেই হুস ফিরলো আরশির। সে মোটেও এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলো না। কিছুক্ষন থম মে*রে থেকে আবরারের কোল থেকে নামার জন্য মো*চ*ড়া*মু*চ*ড়ি করতে লাগলো আরশি। বলতে লাগলো,
— অ*সভ্য, লু*চু এমপি একটা। নামান আমাকে। নামান বলছি নাহলে, নাহলে…
আরশি কথাগুলো বলতে বলতে উ*ত্তে*জিত হয়ে আবরারের গলায় একটা খা*ম*চি বসিয়ে দিলো। ধবধবে ফর্সা হওয়ায় মুহূর্তেই লাল বর্ণ ধারণ করলো জায়গা টা। জ্ব*ল*ন হলেও পাত্তা দিলো না আবরার। আরও শ*ক্ত করে আরশি কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। খা*ম*চি দেয়া জায়গা টা নজরে আসতেই মো*চ*ড়া*মু*চ*ড়ি থামিয়ে দিলো আরশি। জায়গা টা লাল হয়ে ফু*লে উঠেছে। দেখে আরশির নিজেরই আ*ফ*সোস লাগলো। সে সব কিছু ভু*লে কাঁ*পা কাঁ*পা হাত টা এগিয়ে নিয়ে গেলো আবরারের গলার কাছে। আলতো হাতে ছুঁয়ে দিলো জায়গা টা। আরশির অবস্থা দেখে নিঃশব্দে হাসলো আবরার। আরশির এসব কর্মকা*ন্ডে*র মাঝেই বেডে এসে বসে পড়লো আবরার। তবে আরশি কে ছাড়লো না। হাত বাড়িয়ে বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ার থেকে কিছু একটা বের করলো সে।
ড্রয়ার লাগানোর শব্দে চ*ম*কে উঠলো আরশি। এতক্ষন কি করছিলো ভেবেই লজ্জায় কান গরম হয়ে আসলো তার। কিন্তু আবরারের হাতে নেইল কা*টার দেখে সব লজ্জা ছুঁ*টে পা*লা*লো আরশির। চোখ বড় বড় করে আবরারের দিকে তাকালো সে। মনে পড়ে গেলো আবরারের সেই বিখ্যাত বাণী।
— “তোমার জামাই কবুল বলেই আগে তোমার নখ কা*ট*বে দেখে নিও।”
আরশি ভ*য়া*র্ত দৃষ্টিতে একবার নিজের নখ আর একবার আবরার কে দেখতে লাগলো। আরশির এক্সপ্রেশন দেখে ভীষণ হাসি পেলো আবরারের। তবুও হাসলো না সে। আরশির কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
— মনে আছে তো কি বলেছিলাম? তোমার জামাই কবুল বলেই আগে তোমার নখ কাটবে? আর দু*র্ভা*গ্যবসত অথবা সৌভাগ্যবসত আমিই তোমার জামাই। কবুল বলে নখ কা*টতে পারলাম না তাতে কি? এখন বাসর ঘরে বসে আরামসে তোমার নখ কা*টবো।
আবরারের কথাগুলো শুনে দুই হাত মুঠ করে পুনরায় ছ*ট*ফ*ট করতে লাগলো আরশি। হঠাৎ এক অদ্ভুত কান্ড করে বসলো আবরার। ছাড়া পাওয়ার জন্য ছ*ট*ফ*ট করতে থাকা আরশির দুই গালে ট*পা*ট*প দুটো চু*মু খেলো। ছ*ট*ফ*ট করা বন্ধ করে মূর্তি রূপ ধারণ করলো আরশি। অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো আবরারের দিকে। আবরার বাঁকা হেসে আরশির ঠোঁটের দিকে ইশারা করে স্লো ভয়েসে বললো,
— আর একবার ন*ড়া*চ*ড়া করলে গালে না অন্য কোথাও চু*মু খাবো। সো ভদ্র মেয়ের মতো বসে থাকো।
কথাটা বলেই আরশির হাত টে*নে ঝ*ট*ফ*ট নখ কা*ট*তে লাগলো আবরার। আরশি অ*স*হায় চোখে নিজের কিউট নখগুলোর মৃ*ত্যু দেখতে লাগলো। ভিতরে ভিতরে রা*গে, দুঃ*খে ফু*স*তে লাগলো সে। এর প্র*তি*শো*ধ সে নিবে এবং অবশ্যই অবশ্যই নিবে। এখন তো লেহেঙ্গা পড়ে থাকার কারণে তেমন একটা সুবিধা করতে পারলো না। আবরার কি ভেবেছে? তার নখ কি আর বড় হবে না নাকি? তার নখ এক সপ্তাহ পর আবার বড় হবে। সে এবার আরও বড় নখ রাখবে আর তিন বেলা খাবারের সাথে একটা করে খা*ম*চি দিবে আবরার কে।
আরশির সবগুলো নখ মনমতো কে*টে বিশ্ব জয় করা হাসি দিলো আবরার। আবরারের হাসি দেখে গা জ্ব*লে উঠলো আরশির। সে ধা*রা*লো দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আবরারের দিকে। আরশি কে এভাবে তাকাতে দেখে আবরার আরশির চোখে চোখ রেখে বললো,
— এভাবে তাকিও না মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি। তোমার অদ্ভুত চোখের এই ধা*রা*লো দৃষ্টি দিয়ে আর কতবার ঘা*য়ে*ল করবে আমায়? ওই চোখের দিকে তাকিয়ে আগের সেই আমিটাকে তো হা*রি*য়েই ফেলেছি। আর কি চাও বলো তো?
‘মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি’ ডাক টা শুনে এক মুহূর্তের জন্য থ*ম*কে গেলো আরশি। হ্যা সে এখন মিসেস। আবরারের ‘মিসেস অদ্ভুত চোখওয়ালি’। বাকি কথাগুলো শ্রবণ হতেই আরশির দৃষ্টি নরম হয়ে আসলো। আবরার আরশি কে বেডে বসিয়ে একটা প্যাকেট নিয়ে আসলো। আরশির পাশে রেখে বললো,
— এতে তোমার পড়ার জন্য কাপড় আছে। বাকিগুলো কাল সকালে পেয়ে যাবে। আপাতত এটা পড়ো। আমি ফ্রেস হয়ে আসছি। ততক্ষনে তুমি গহনাগুলো খুলে রাখো।
আবরার কথা শেষ করে নিজের কাপড় নিয়ে চলে গেলো ফ্রেস হতে। আরশি তাকিয়ে রইলো আবরারের যাওয়ার পানে। লোকটা এই ভালো, এই খা*রা*প। আরশি বুঝে না লোকটা আসলে ভালো না খা*রা*প? আরশি বিড়বিড় করে বললো,
— এমপি সাহেব ভালো কিনা খা*রা*প জানি না তবে সে একটা লু*চু লোক হুহ।
চলবে?
(আস্সালামুআলাইকুম। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব জানাবেন অবশ্যই আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)