#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৭
— কিরে কাজ হয়েছে তো? ওই আবরার শা*লা কে ট*প*কা*তে পেরেছিস তো তাই না? হা হা হা আমার পথের একটা কাঁ*টা সরলো তবে?
কথা টা বলেই বি*দ*ঘু*টে হাসি দিতে লাগলো ফোনের অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি টি। লোকটার ভ*য়ং*ক*র হাসিতে আ*ত্মা কেঁ*পে উঠলো ট্রাক ড্রাইভারের। থ*র*থ*র করে কাঁ*পতে লাগলো ড্রাইভার। সে ভেবে পাচ্ছে না কিভাবে বলবে আবরার কে সে মা*র*তে পারে নি। এটা জানালে সে আর বাঁচতে পারবে না হয়তো। কিন্তু না জানিয়েও যে লাভ নেই। ট্রাক ড্রাইভার বুঝতে পারলো তার মৃ*ত্যু হয়তো সন্নিকটে।
ড্রাইভারের কাছ থেকে কোনো জবাব না পেয়ে হাসি থামিয়ে ভ*য়*ঙ্ক*র এক হু*ঙ্কা*র ছাড়লো ফোনের অপর প্রান্তে থাকা লোকটা। চি*ৎ*কার করে বললো,
— কথা বলছিস না কেন হ্যা? তুই কি ওই আবরার শা*লা কে মা*র*তে পারিস নি? কথা বলিস না কেন?
ড্রাইভার লোকটা একটা ঢো*ক গি*লে তো*ত*লাতে তো*ত*লাতে বললো,
— ব..ব বস আ…আসলে আসলে
অচেনা লোকটা গ*র্জে উঠে বললো,
— বললললল কি হয়েছে? জলদি বল নাহলে এমন ভ*য়া*নক মৃ*ত্যু দিবো যে চিন্তাও করতে পারবিনা।
ড্রাইভার কাঁ*পতে কাঁ*পতে বললো,
— আসলে বস এমপি কে মা*র*তে পারি নাই। আমি প্রায় ট্রাক দিয়ে চা*পা*ই দিয়ে দিচ্ছিলাম এমন সময় একটা মেয়ে তাকে সরিয়ে নিয়েছে। আমি কোনোরকমে ট্রাক নিয়ে পা*লি*য়েছি। বস আমাকে ক্ষ*মা করে দেন। এতে আমার কোনো দো*ষ নাই, সব দো*ষ ওই মাইয়ার। আমারে আরেকটা সুযোগ দেন বস। আমি যেভাবে পারি এমপি কে শেষ করবো। আমি…
ড্রাইভার কথা শেষ করার আগেই নিজের মোবাইল ছু*ড়ে মা*রলো অচেনা লোকটা। মোবাইল দেয়ালে স্ব*জো*রে বা*রি খেয়ে চু*র*চু*র হয়ে গেলো। লোকটা দাঁ*ত ক*ট*ম*ট করে বললো,
— আমার এতদিনের সাধনা যেনো ন*ষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই বাপ, বেটাকে আমি কিছুতেই শেষ করতে পারছিনা। কেন? কেন? যখনই কোনোভাবে এদের শেষ করতে যাই, তখনই কোনো না কোনো ভাবে এরা বেঁচে যায়। এর বাপ কে মা*রা৬র সাধ্যও তো আমার এখন নাই। শা*লা ক*ড়া সি*কি*উ*রিটির মধ্যে থাকে আর নিজের ছেলেকেও রাখে। আজকে পেলাম একটা ভালো সুযোগ তাও কাজে লাগাতে পারলাম না। নাহ যেভাবেই হোক আমি আমার স্বা*র্থ হাসিল করেই ছাড়বো। আমার এতদিনের পরিশ্রম বি*ফলে যেতে দিবো না। দিবো না, দিবো না।
কথাগুলো বলেই লোকটা পা*গ*লে*র মতো আচরণ করতে লাগলো। কিছুক্ষন পরে আবার স্বাভাবিক হয়ে শ*য়*তানি হাসি দিলো সে। হয়তো আবার কোনো ঝ*ড় উঠাতে চলেছে সে আবরারের জীবনে।
———–
গাড়িতে গাল ফু*লি*য়ে বসে আছে আরশি। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে সে। হুট করে হাতে টা*ন পড়ায় চোখ বড় বড় করে আবরারের দিকে তাকালো সে। দেখলো আবরার একটা তুলা তে ওষুধ লাগিয়ে নিয়েছে। হয়তো তার হাতে লাগাবে। আরশি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে আবরার আরও জো*রে চে*পে ধরলো ওর হাত। আরশি হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,
— স*ম*স্যা কি? আপনার গাড়িতে উঠে গেছি বলে আমাকে দু*র্ব*ল ভাবার মতো ভু*ল করবেন না। আমি শুধুমাত্র প্রেস, মিডিয়ার কাছে যাতে আমার নাম না পৌঁছে তাই উঠে গেছি। আমি একজন সাধারণ নাগরিক আর সাধারণ ই থাকতে চাই। কোনো হ*ট টপিকে পরিণত হওয়ার ইচ্ছা আমার নেই।
আবরার আরশির হাত টে*নে নিজের কাছে নিয়ে বললো,
— তুমি এতো তে*ড়া কেন মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি? আমি কি তোমার কোনো ক্ষ*তি করছি? জাস্ট ওষুধ ই তো লাগাচ্ছি। চুপচাপ বসে থাকো আমি যতক্ষণ ওষুধ লাগাই। একদম তে*ড়া*মো করবে না। নাহলে ওই সময় যে লু*চু*র উপাধি দিলে তা কিন্তু সত্যি করবো।
শেষের কথাটা আরশির কানের কাছে ফিসফিস করে বললো আবরার। আবরার কে এতো কাছে দেখে একটা শু*ক*নো ঢো*ক গি*ল*লো আরশি। একরাশ অ*স্বস্তি ঘিরে ধরলো তাকে। এই প্রথম কোনো পুরুষ তার এতোটা কাছে আসলো। তার উপর গাড়ির সামনের সিটে ড্রাইভার আর আবরারের হেড গা*র্ড আছে। না চাইতেও লজ্জা পেলো আরশি। আরশি কে লজ্জায় হাঁ*স*ফাঁ*স করতে দেখে দূরে সরে গেলো আবরার। হাতের কাঁ*টা জায়গাগুলোতে যত্ন সহকারে ওষুধ লাগাতে লাগলো। কাঁ*টা জায়গায় ওষুধ লাগতেই ম*রি*চ লাগার মতো জ্ব*লে উঠলো। দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে সেই জ্ব*ল*ন স*হ্য করতে লাগলো আরশি। আবরার আরশির দিকে তাকাতেই দেখলো ওর চোখে পানি ট*ল*ম*ল করছে, মুখ শ*ক্ত করে বসে আছে। আবরার বুঝলো জ্ব*লা*র কারণে এই অবস্থা আরশির। কিন্তু এই মেয়ে নিজের অনুভূতি চে*পে রাখার চেষ্টা কেনো করে বুঝে পায় না আবরার।
আবরার এবার ওষুধ লাগানোর সাথে সাথে হাতে ফুঁ দিচ্ছে যাতে জ্ব*লন কম হয়। জ্ব*লন কিছুটা কম হওয়ায় হাতের দিকে তাকালো আরশি। দেখলো আবরার খুব যত্ন করে আরশির হাতে ফুঁ দিয়ে দিয়ে ওষুধ লাগাচ্ছে। যাতে তার সামান্য ব্য*থা*টাও না লাগে। চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো আরশির। আজ কতগুলো বছর পরে কেউ তাকে এতো যত্ন করছে। আবরার তাকানোর আগেই দ্রুত চোখের পানি মু*ছে ফেললো আরশি।
আবরার হাতের কাজ শেষ করে পা ধরতেই ছি*ট*কে সরে গেলো আরশি। গাড়ির ডোরের সাথে সে*টে গিয়ে চি*ল্লি*য়ে বললো,
— আশ্চর্য! কি করছেন আপনি? পায়ে হাত দিচ্ছেন কেনো?
হঠাৎ আরশির এমন ব্যবহারে বো*কা বনে গেলো আবরার। গম্ভীর মুখে বললো,
— তোমার পায়ের কাঁ*টা জায়গায় অয়েন্টমেন্ট লাগাতে চাচ্ছি। আর কি করলাম? এভাবে সরে যাওয়ার কি হলো?
আরশি দ্রুত বাঁ*ধা দিয়ে বললো,
— আর লাগবে না। যা করেছেন তার জন্য থ্যাংকস। বাকিটা আমি করে নিতে পারবো।
আবরার এক ভ্রু উঁচু করে বললো,
— তা তো মানছি না। আমিই করবো আর না করতে দিলে…
কথাটা শেষ করে আবরার আবার আরশির কাছে আসতে নিলেই আরশি চোখ মুখ শ*ক্ত করে বললো,
— করুন করুন, যা করার করুন কিন্তু দূরে থাকুন আমার থেকে। আপনার মতো লু*চু লোক আমি জীবনেও দেখি নি। তাও আবার সে নাকি এমপি হুঁহ।
আবরার আলতো হাসলো। আরশির পা টা আলতো করে তু*লে নিজের উরুর উপর রাখলো। তারপর ওষুধ লাগিয়ে নিচে নামিয়ে দিলো। আরশির মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে মনে মনে আবরার কে ইচ্ছা মতো ঝা*ড়*ছে। আরশির চিন্তার মাঝেই আবরার আরশির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
— আর কতো ব*কা দিসে মিস অদ্ভুত চোখওয়ালি? তোমার এতো এতো ব*কা খেয়ে মনে হচ্ছে দুইদিনেও আর ক্ষু*ধা লাগবে না।
আরশি হ*ক*চ*কিয়ে উঠলো আবরারের কথায়। নিজেকে সামলে নিয়ে আবরারের হাতে নিজের ধা*রা*লো নখ দিয়ে জো*রে একটা চি*ম*টি কে*টে দিলো। আবরার আ*উ*চ করে নিজের হাত চে*পে ধরে দূরে সরে গেলো। ব্য*থা*য় নাক মুখ কুঁ*চ*কে ফেললো সে। রা*গী রা*গী কণ্ঠে বললো,
— এই জন্য মানুষের উপকার করতে নেই।
আরশি মুখ বা*কি*য়ে বললো,
— আপনাকে কে বলেছে আমার উপকার করতে হ্যা? এই যে আমার নখ দেখতে পাচ্ছেন এমপি সাহেব? আর একবার কাছে আসলে এই নখ দিয়ে আপনার হাতের মাং*স তু*লে নিবো।
আরশির নখ দেখে মুখ বি*কৃ*ত করলো আবরার। বললো,
— ছে*হঃ এটা কি কোনো মানুষের নখ নাকি পে*ত্নী*র নখ? আজ আমি সিওর হয়ে গেলাম তুমি মানুষ না একটা পে*ত্নী। শেওড়া গাছের পে*ত্নী; যে নিজের হাত, পা, নখ ঝু*লি*য়ে বসে থাকে। ভাবা যায় আমার পাশে একটা জ্ব*ল*জ্জ্যা*ন্ত পে*ত্নী বসে আছে।
দাঁ*ত ক*ট*ম*ট করে আবরারের দিকে তাকালো আরশি। তার নখ খুব বেশি না তবে সাইজের তুলনায় কিছুটা বড়। আর দেখতে সুন্দর দেখায় বলে সে চামড়ার সাথে লাগিয়ে কা*টে না। তাই বলে তার এতটুকু, এতো সুন্দর কিউট সুইট নখগুলোকে পে*ত্নীর নখের সঙ্গে তুলনা? আবরার আরশি কে এভাবে তাকাতে দেখে বললো,
— মাই গড এখন তো দেখি পিওর পে*ত্নীর মতো লুক ও দিচ্ছ।
আরশি আবরারের উপর থেকে চোখ সরিয়ে ঠিক করলো আর একটা কথাও বলবে না এই অ*সভ্য লোকের সাথে। আরশি কে চুপ হয়ে যেতে দেখে বাঁ*কা হাসলো আবরার।
কিছুক্ষন পরে আরশি এদিক ওদিক চোখ ফি*রা*তে গিয়ে ওর চোখ ঠে*ক*লো আবরারের হাতের উপর। যেই জায়গায় সে চি*ম*টি দিয়েছিলো, সেই জায়গাটা লাল হয়ে ফু*লে উঠেছে। আবরার ধবধবে সাদা হওয়ার কারণে অতিরিক্ত লাল হয়ে আছে জায়গা টা। মনে হচ্ছে টু*প্ করে র*ক্ত বেরিয়ে যাবে। আরশির কেনো যেনো খা*রা*প লাগলো আবরারের হাত টা দেখে। সে মুখ গো*ম*ড়া করে তাকিয়ে রইলো আবরারের হাতের দিকে।
চলবে?
(আস্সালামুআলাইকুম। গল্প কি আপনাদের ভালো লাগছে না? ভালো কোনো মন্তব্য পাই না তো। আর অনেকেই বলছেন বড় করে দিতে। বড় করে দিতে হলে গ্যাপ দিয়ে দিয়ে দিতে হবে আমার। আমি চাচ্ছি নিয়মিত দিতে। তাই পর্ব ছোট হচ্ছে। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)