#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_৪
জ্ঞান ফিরতেই নিজের মুখের উপর কারোর গ*র*ম নিঃশ্বাস অনুভব করলো আরশি। টিউশন শেষে বাড়ি ফেরার পথে হুট করে একজন লোক তার মুখের উপর কিছু একটা স্প্রে করে। সেখানেই জ্ঞান হা*রা*য় আরশি। আর কিছু মনে নেই তার। মুখের উপর কি স্প্রে করেছিলো ভাবতে লাগলো আরশি। এখনো ভালো মতো চোখ খুলতে পারছে না সে। আরশি আর বাম ডান না ভেবে সর্ব শ*ক্তি ব্যবহার করে হাতের ক*নু*ই দিয়ে এক ঘা বসিয়ে দিলো সামনের লোকটার গায়ে। ব্য*থা*য় গু*ঙি*য়ে উঠে সামনের ব্যক্তি। ধীরে ধীরে দৃষ্টি স্পষ্ট হয় আরশির। সামনের ব্যক্তির অবস্থা দেখে এমন একটা পরিস্থিতিতে ও খিলখিলিয়ে হেসে উঠে সে।
হাসির রিনিঝিনি শব্দে ব্য*থা ভু*লে আরশির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো আবরার। সে তো আরশির জ্ঞান ফেরানোর জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে ওর কাছে গিয়েছিলো। কিন্তু আরশি যে হুট করে এ*টা*ক করবে বুঝে নি আবরার। মে*রে*ছে তো মে*রে*ছে একবারে পে*টে। সাথে গ্লাসের সব পানি তার গায়ে। আর দেখো এখন কিভাবে হাসছে। প্রানবন্ত সেই হাসি। হাসতে হাসতে আরশির সুন্দর, স্বচ্ছ চোখজোড়ায় পানি জমে টলমল করছে। আবরার এক ধ্যানে প্রাণবন্ত, হাস্যজ্জ্বল আরশি কে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। হুঁ*শ, জ্ঞান যেনো হারিয়ে গেছে তার। কিছুটা সময় অতিবাহিত হলো। আরশির হাসি ধীরে ধীরে কমে আসলো। অনেক দিন পর এতো হাসলো সে। একজন এমপির এমন অবস্থা দেখে হাসি থামাতে পারে নি সে। বিশেষ করে সেই সময় আবরারের মুখের এক্সপ্রেশন টা দেখার মতো ছিলো। মনে পড়লে এখনো হাসি পাচ্ছে তার।
আবরার কে এক ধ্যানে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে হালকা কা*শি দিলো আরশি। একবার নিজের দিকে তাকালো সে। তারপর বাঁ*কা চোখে আবরারের দিকে তাকিয়ে তার ম*তি*গ*তি পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো।
আরশির কা*শি*তে ধ্যান ভা*ঙ*লো আবরারের। সে দ্রুত চোখ সরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে ভাবলো,
— শি*ট আমি এতক্ষন এই মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। মেয়েটা না জানি কি ভেবেছে। আমি একে এনেছি ভ*য় দেখাতে আর তা না করে এতক্ষন ওর দিকে হা*ব*লা*র মতো তাকিয়ে ছিলাম। কিন্তু মেয়েটার হাস্যজ্জ্বল মুখের উপর থেকে দৃষ্টি স*রা*তে পারছিলাম না, কেনো যেনো দেখতে ভালো লাগছিলো। আমার কি দো*ষ? মেয়েটাকে কে বলেছে ওভাবে হাসতে?
আবরার গ*লা ঝে*ড়ে আরশির দিকে তাকিয়ে দেখলো ও বাঁ*কা চোখে তাকিয়ে আছে। আবরার কে তাকাতে দেখে আরশি চোখ সরিয়ে নিলো। পুরো ঘরে একবার চোখ বুলিয়ে দেখলো মাঝারি সাইজের ফাঁকা একটা রুম। মাথার উপর একটা লাইট জ্ব*ল*ছে যাতে আলো খুব বেশি না। রুমে শুধুমাত্র দুইটা চেয়ার যার একটাতে আরশি বসে আছে। রুমের মধ্যে সে আর আবরার ছাড়া কেউ নেই। হয়তো গা*র্ড রা বাইরে আছে। আবরার ফাঁকা চেয়ার টা টে*নে আরশির সামনাসামনি বসলো। আরশি ও এবার আবরারের দিকে চোখ পি*ট*পি*ট করে চাইলো। দেখলো আবরার বাঁ*কা হাসছে। আবরার বললো,
— কি মিস কি যেনো নাম? ওহ হ্যা আরশি। তো মিস আরশি কেমন লাগছে নতুন জায়গায়?
আরশি আরেকবার পুরো রুমে চোখ বু*লি*য়ে বললো,
— যেহেতু দেখার মতো সুন্দর কোনো দৃশ্য নেই, তাই অবশ্যই ভালো লাগছে না।
আবরার আরশির জবাবে ভিতরে ভিতরে থ*ত*ম*ত খেলেও উপরে প্রকাশ করলো না। গম্ভীর স্বরে বললো,
— তুমি কি জানো তোমাকে এখানে কেনো আনা হয়েছে?
আরশি হা*ই তু*লে বললো,
— হয়তো ওই দিনের ব্যবহারের প্র*তি*শো*ধ নেবার জন্য। ওই যে মুভি তে দেখায় না যে নেতার সাথে পা*ঙ্গা নিলে তারা পরবর্তীতে সেই মানুষ কে ধরে এনে মে*রে উ*ধা*ও করে দেয়। হয়তো সেরকম কিছু করার জন্যই আনা হয়েছে।
আবরার আরশির উত্তরে মনে মনে ভাবলো,
— বাব্বাহ কতদূর চিন্তা করে ফেলেছে। এবার নিশ্চয় ভ*য় পাবে।
আবরার ভ*য় দেখানোর ভ*ঙ্গি*তে আরশি কে বললো,
— তো মিস আরশি তোমার কি ভ*য় লাগছে না? আমি যদি তোমাকে মে*রে উ*ধা*ও করে দেই?
আরশি বি*র*ক্ত হয়ে বললো,
— ভ*য় পেয়ে আর কি হবে? আপনার আমাকে মে*রে উ*ধা*ও করার ই*ন*টে*ন*শ*ন থাকলে তা আমি ভ*য় পেলেও করবেন, না পেলেও করবেন। তাই আ*জাইরা ভ*য় পাওয়ার মানে হয় না।
আবরার হ*তা*শ হলো আরশির জবাবে। আরশির চোখে সে কোনোরকম ভ*য় দেখতে পাচ্ছে না। একদম স্বাভাবিক আরশি যেনো এখানে ঘুরতে এসেছে। আবরারের চিন্তার মাঝে আরশি নাক মুখ কুঁ*চ*কে বললো,
— আচ্ছা আপনি কেমন এমপি বলেন তো? টাকা তো কম থাকার কথা না আপনার। তাও এতো কি*প্টা। আপনি চাইলেই তো পারতেন আমাকে কোনো পাহাড়ের চূ*ড়া*য় নিয়ে যেতে। তারপর সেখান থেকেই নাহয় ধা*ক্কা দিয়ে ফে*লে দিতেন। এতে করে আমি ম*রে উ*ধা*ও হয়ে যেতাম আর ম*রা*র আগে আশপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগটাও হতো। এখানে তো দেখার মতো কিছুই নাই। বি*র*ক্তি*ক*র।
আবরারের ইচ্ছা করছে নিজের কপাল চা*প*ড়া*তে। এ কেমন মেয়েরে বাবা? অন্য কোনো মেয়ে হলে এতক্ষনে কাঁ*দ*তে কাঁ*দ*তে নাকের পানি চোখের পানি এক করে ফেলতো। আবরার আরশি কে জিজ্ঞাসা করলো,
— আচ্ছা আমি যদি তোমাকে এখানে কয়েকদিন আ*ট*কে রেখে দেই তাহলে তোমার ফ্যামিলির কি হবে বলো তো? তারা নিশ্চয় তোমাকে খুঁজে না পেয়ে কা*ন্না*কা*টি করবে, অ*সু*স্থ হয়ে যাবে। আরশির মুখ এবার কিছু টা ম*লি*ন দেখালো। সে আলতো হেসে বললো,
— সবচেয়ে বড় কথা কি জানেন? আমাকে এক সপ্তাহ পর্যন্ত কেউ খুজবেই না। সন্তানের কিছু হলে সবার আগে উ*ত*লা হয় বাবা মা। আর এটা এতক্ষনে জেনে গেছেন নিশ্চয় আমার বাবা নেই। আর মা তো অ*সু*স্থ, সে এমনিতেও আমাকে স*হ্য করতে পারে না। আর নিবে খোঁজ? রিফা তো বাচ্চা মেয়ে। ও অনেক নরম স্বভাবের। সব মিলিয়ে দেখা যাবে প্রথম কয়েকদিন কেউ আমার খোঁজ ই নেয় নি। বন্ধুমহলের সবাই ভাববে কোথাও জ*রু*রী কাজে গিয়েছি হয়তো। পরবর্তীতে খোঁজ খবর না পেলে তখন হয়তো খুজবে।
আরশির ম*লি*ন মুখ টা দেখে অ*জান্তেই খা*রা*প লাগলো আবরারের। সে কিছু একটা ভাবতে লাগলো। এর মাঝেই আরশি আবরারের হাতের উপর কিছু একটা দেখে সেই জায়গায় ঠা*স করে একটা বা*রি দিলো। হুট করে এতো জোরে বা*রি দেয়ায় চ*ম*কে উঠলো আবরার। আবরারের মনে হচ্ছে জায়গা টা জ্ব*লে যাচ্ছে এতোটাই জো*রে বা*রি দিয়েছে আরশি। আরশি আবরারের হাত থেকে জিনিসটাকে তু*লে নিজের হাতের তা*লু*তে নিলো। আবরার কে দেখিয়ে বললো,
— আপনি কেমন এমপি বলেন তো? আপনাকে তো মশাও ভ*য় পায় না।
একে এতো জো*রে বা*রি দেয়ায় আবার এইরকম কথা বলায় মে*জা*জ খা*রা*প হয়ে গেলো আবরারের। সে দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে নিজের এক গা*র্ড কে আওয়াজ বাড়িয়ে ডাক দিলো। তার আওয়াজ পেতেই দ্রুত রুমে প্রবেশ করলো এক পা*হা*লো*য়া*ন মার্কা গা*র্ড। আবরার রে*গে গা*র্ডটাকে বললো,
— এই পা*গ*ল মেয়েটাকে আমার সামনে থেকে নিয়ে যাও আর ওকে ওর বাসায় দিয়ে আসো। যাও।
বাসায় পৌঁছে দেয়ার কথা বলায় কিছুটা অবাক ই হলো আরশি। সে ভেবেছিলো আজ এখানেই প্রাণ খো*য়া*তে হবে। বেঁচে গেছে ভেবে চোখজোড়া চকচক করতে লাগলো তার। কিন্তু আবরার তাকে পা*গ*ল বলেছে মনে পড়তেই সে আবরার কে কিছু একটা বলতে চাইলো তবে আবরারের ক*ড়া দৃষ্টি দেখে আর কিছু বললো না। গার্ড তাকে উঠতে বলতেই সে দাঁড়িয়ে গার্ডের পিছনে যেতে লাগলো। দরজার কাছে যেতেই থেমে গেলো আরশি। ঘা*ড় পিছন ফিরিয়ে দেখলো আবরার গম্ভীর মুখে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আরশি হঠাৎ দাঁ*ত কে*লি*য়ে আবরার কে উদ্দেশ্য করে বললো,
— আপনি কেমন এমপি বলেন তো? মা*র্ডা*র নাহয় নাই করলেন কিছু নাস্তা পানি তো খাওয়াতে পারতেন। একটু আপ্যায়ন ও করলেন না এতক্ষন শুধু শুধু বসিয়ে রাখলেন। আপনি আসলেই কি*প্টা এমপি সাহেব।
আবরার রা*গী রা*গী চোখে তাকাতেই হাসতে হাসতে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আরশি। আরশি রুম থেকে বের হতেই হেসে ফেললো আবরারও। সিল্কি চুলগুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বিড়বিড় করলো,
— মেয়েটা আসলেই পা*গ*ল। তবে মেয়েটার চোখ যেনো স্বচ্ছ আরশি। সেই চোখের দিকে তাকালে দুনিয়া ভুলে যাওয়া সম্ভব। সেই চোখে আছে শুধু সততা,দৃ*ঢ়*তা; নেই কোনো মি*থ্যা,প্র*তা*রণা। তার আঁখি জোড়ার দিকে তাকালে উপলব্ধি করা যায় তার একান্ত বে*দ*নাগুলো যা সে কখনো প্রকাশ করে না।
চলবে?
(আস্সালামুআলাইকুম। কেমন লেগেছে আজকের পর্ব কমেন্ট করে জানাবেন সবাই। আর ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)