একই গালে পরপর দুইটা থা*প্প*ড় পড়ায় গাল জ্ব*লে উঠলো আরশির। থা*প্প*ড় দুটো এতোটাই জো*রে ছিলো যে তার শ্যাম বর্ণের গালেও আঙুলের ছা*প পরে গেছে। গাল গ*র*ম হয়ে গেছে, জ্ব*ল*ছে। তবে সেই ব্য*থা*র তুলনায় তার মনে বেশি ব্য*থা লেগেছে। তার সবুজ নীলের মিশ্রনে তৈরি কাচের ন্যায় চোখেজোড়া পানিতে পরিপূর্ণ হলো। এর মাঝেই তার হাত সর্ব শ*ক্তি দিয়ে চে*পে ধরলো মিহি বেগম। ঝাঁ*কা*তে ঝাঁ*কা*তে বললো,
–তোকে না বলেছি আমার সামনে আসবি না? আসবি না আমার সামনে। জানিস না আমি তোকে স*হ্য করতে পারি না? তাও কেনো আসিস? বল? আমি বেঁচে আছি ভালো লাগছে না তোর তাইনা? ম*রে গেলে শান্তি পাবি বুঝি? এই জন্য বারবার নিজের ওই কু*ৎ*সি*ত মুখটা আমাকে দেখাতে চলে আসিস না?
আর স*হ্য করতে পারলো না আরশি। চোখের পানি গ*ড়া*নো*র আগেই দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। তার চোখে যে অ*শ্রু মানায় না। তাকে হতে হবে পাথরের চেয়েও শ*ক্ত, ক*ঠি*ন। যাতে হাজার আ*ঘা*ত করা হলেও ভে*ঙে না যায়। আর এসব তো তার জীবনের নিয়মিত ঘটনা। তবুও তার এতো ক*ষ্ট কেনো হয় কি জানি।
আরশি রুম থেকে বের হতেই দেখলো রিফা তার দিকে ক*রু*ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই মেয়েটা তার ক*ষ্টে একটু বেশিই ক*ষ্ট পায়। এই যে এখন তার কাঁ*দা*র কথা অথচ কাঁ*দ*ছে রিফা। আশ্চর্য। আরশি রিফার কাছে গিয়ে এক ঝা*ড়ি মে*রে বলে,
— ওই সমস্যা কি তোর? তোকে না একশো দিন বলেছি কথায় কথায় কা*দঁ*বি না? কথায় কথায় কাঁ*দ*লে মানুষ ভাববে মেয়েটা দু*র্ব*ল আর এই ভেবে বারবার আ*ঘা*ত করবে। তাই নিজেকে শ*ক্ত কর। আর যা আম্মুকে খাবার খাইয়ে ওষুধ খাইয়ে দে। আমি ভার্সিটি তে যাচ্ছি।
রিফা আরশির কথায় মাথা না*ড়া*য়। আরশি কে বেরিয়ে যেতে দেখে জলে ভে*জা চোখে বলে উঠে,
— আপু মনি নাস্তা তো করে যান?
আরশি তাড়া দেখিয়ে বলে,
— একদম সময় নেই রে। তুই আম্মুকে খাইয়ে নিজেও খেয়ে নিস। আমি ভার্সিটির ক্যান্টিন থেকে কিছু খেয়ে নিবো।
বেরিয়ে যায় আরশি। রিফা তাকিয়ে থাকে ওর যাওয়ার পানে। রিফা মাঝে মাঝে অবাক হয় এটা ভেবে যে একটা মেয়ের এতো স*হ্য শ*ক্তি কিভাবে হয়? সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের কাজে লেগে পরে।
——
— আজও মা*র খেয়েছিস আন্টির হাতে তাই না?
ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসে হাটছিলো মুন আর আরশি। হঠাৎ মুনের মুখে এই কথা শুনে ম*লি*ন হাসি হাসলো আরশি। কোনো জবাব দিলো না। কিই বা বলবে? মুন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
— তুই তো জানিস আন্টি তোকে পছন্দ করে না। সুযোগ পেলেই তোকে আ*ঘা*ত করে। তারপরও কেনো তার সামনে যাস তুই?
আরশি অন্যমনস্ক হয়ে বললো,
— সে আমাকে যতোই আ*ঘা*ত করুক সে আমার মা। আমি তার হাতের মা*র স*হ্য করতে পারবো তবে তার থেকে দূরত্ব নয়।
আরশির কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেললো মুন। হঠাৎ কিছুর সাথে ধা*ক্কা খেয়ে মাঠে কিছুটা ছি*ট*কে পড়লো মুন। ব্য*থা*য় চোখ মুখ কুঁ*চ*কে ফেললো সে। হুট করে এমন কিছু হওয়ায় কিছুটা সময় লাগলো আরশির সবটা বুঝতে। বুঝামাত্র রে*গে গেলো সে। ক্ষে*পে সামনের মানুষটাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
— এই মিস্টার এই আপনি আমার বান্ধুবী কে ধা*ক্কা দিলেন কেনো? চোখ নেই আপনার? ইশ কতোটা ব্য*থা পেয়েছে মেয়েটা?
কথাটা বলেই আরশি ব্যস্ত হয়ে গেলো মুন কে উঠাতে। আবরার কান থেকে ফোন নামিয়ে দেখলো দুইটা মেয়ে তাদের মাঝে একজন মাটিতে পরে আছে। আবরার বুঝলো পরে থাকা মেয়েটাকেই সে ধা*ক্কা দিয়েছে। মুনের হাত কিছুটা ছি*লে গিয়েছে দেখে আরও রে*গে গেলো আরশি। এই বান্ধুবী যে তার বড্ড ভালোবাসার। আপন বোনের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আরশি রে*গে মুনের হাতে ফুঁ দিতে দিতে আবরারকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো,
— কা*না নাকি আপনি? নাকি সুন্দর মেয়ে দেখে ইচ্ছা করে ধা*ক্কা দিলেন?
এতক্ষন শান্ত থাকলেও এবার প্রচন্ড রে*গে গেলো আবরার। ভেবেছিলো সরি বলে চলে যাবে। সে তো তাড়ায় ছিলো আর ফোনে কথা বলে হাটছিলো তাই খেয়াল করেনি। কিন্তু মেয়েটার এমন আ*জে*বা*জে কথায় মে*জা*জ গ*র*ম হয়ে গেলো তার। সে কিছু বলার আগেই মুন আরশির হাত চে*পে ধরলো। ফিসফিস করে বললো,
— ঝা*মে*লা করিস না দোস্ত। তুই জানিস না হয়তো উনি কে?
আরশি দাঁ*তে দাঁ*ত চে*পে বললো,
— সে কোথাকার কোন রাজার পুত্র যে আমি তাকে ভ*য় পাবো। আর তারচেয়ে বড় কথা সে তোকে ব্য*থা দিয়েছে।
মুন আরও আস্তে ফিসফিস করে বললো,
— আমি তোকে পরে সবটা বুঝিয়ে বলছি। বোন তুই প্লিজ আর কিছু বলিস না। দেখ সবাই কিভাবে ভ*য় পাচ্ছে।
আরশি আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো আসলেই পুরো ক্যাম্পাসের সবাই ভ*য়ে ভ*য়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। এবার আবরারের দিকে কো*না চোখে চাইলো আরশি। মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো এ কোনো সেলেব্রেটি কিনা। এতক্ষন সে অতো খেয়াল করে দেখে নি সামনে কে আছে। মাত্রাতিরিক্ত সুদর্শন তার সামনে দাঁড়ানো পুরুষটা। হাজারো মেয়ে কে নিজের রূপে পা*গ*ল করতে সক্ষম। সাদা রঙের পাঞ্জাবী পরনে। দেখে মনে হচ্ছে এই রঙ টা যেনো তার জন্যই তৈরি। সারা মুখে গ*ম্ভী*র*তা ছড়িয়ে আছে যার কারণে তাকে আরও বেশি সুপুরুষ মনে হচ্ছে। চোখ দুটো স্বচ্ছ, গভীর তার দৃষ্টি। আরশির দিকেই গ*ম্ভী*র মুখে তাকিয়ে আছে সে। পিছনে পা*হা*লো*য়া*ন মার্কা অনেক গুলো গা*র্ড দাঁড়িয়ে আছে যা এতক্ষন পরে খেয়াল করলো আরশি। কিন্তু এসবে তার কোনো হে*ল*দো*ল নেই। কারণ একে দেখে তার কোনো সেলেব্রেটির কথা মনে পড়ছে না। আর না আবরারের রূপ তার মন কা*ড়*তে পারলো। সুদর্শন পুরুষদের থেকে তার ভীষণ রকমের এ*লা*র্জি আছে। তার মতে সুদর্শন পুরুষদের মন কালো হয়। তারা শুধু মেয়েদের ব্যবহার করতে জানে। তবে তার এই ধারণার পিছনেও কাহিনী আছে।
আবরার এতক্ষন গভীর চোখে পর্যবেক্ষণ করছিলো তার সামনে দাঁড়ানো দুই মেয়েকে। তারা নিজেদের মধ্যে কি যেনো ফিসফিস করছে। তবে আবরার আন্দাজ করতে পারছে ওরা কি বলাবলি করতে পারে। পিছনে তার গা*র্ডগুলো ভদ্র হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আবরারের পারমিশন ছাড়া তারা এক কদম ও ন*ড়ে না। আর মেয়েদের সাথে ত*র্ক করা বা মেয়েদের গায়ে হাত দেয়া তাদের সা*ফ ভাবে মানা। আবরার ভাবলো সে যাকে ধা*ক্কা দিয়েছে তাকে সরি বলে চলে যাবে। তার হাতে সময় খুব কম। নাহলে এই মেয়েকে সে একটা শা*স্তি দিয়ে যেতো তার সাথে বে*য়া*দ*বি করার জন্য। কতো বড় সা*হ*স এই মেয়ের যে সে এমপি আজওয়াদ আবরারের সাথে বে*য়া*দ*বি করে। কিন্তু সে কিছু বলার আগেই মুন ধীর পায়ে তার সামনে এসে মিনমিন করে বললো,
— দুঃ*খি*ত স্যার। ও আসলে আপনাকে চিনতে পারে নি। আর আমাকে ও অনেক বেশি ভালোবাসে তো তাই আমার কিছু হলে সহ্য করতে পারে না।
আবরার মুগ্ধ হলো তার সামনে দাঁড়ানো রমণীর নম্র ব্যবহারে। মেয়েটা যেমন সুন্দর, তেমন সুন্দর তার ব্যবহার। তার রা*গ কিছুটা নি*ভে গেলো মুনের কথায়। মুন এসে আরশির হাত চে*পে ধরে ওকে নিয়ে চলে যেতে চাইলে নড়লো না আরশি। মুনের ইচ্ছা করছে দেয়ালে নিজের মাথা পি*টা*তে। সে বুঝে না এই মেয়ে এতো ট্যা*রা কেনো? আরশি দাঁ*ত কি*ড়*মি*ড় করে বললো,
— তুই উনাকে সরি বললি কেন? দো*ষ উনি করেছেন নাকি তুই? একে তো তোকে ধা*ক্কা দিয়ে ফেলে দিয়ে ব্য*থা দিয়েছে আর এখন আবার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে যেনো কোনখানকার কোন মন্ত্রী মিনিস্টার।
আবরার ভ্রু কুঁচকে তাকালো আরশির দিকে। এই প্রথম আরশির সাথে চোখাচোখি হলো আবরারের। মেয়েটার চোখজোড়া দেখে অদ্ভুত লাগলো আবরারের। অদ্ভুত সুন্দর চোখেজোড়া। নীল আর সবুজের মিশেলে এক অন্যরকম চোঁখের রঙ। ডাগর ডাগর চোখে রোদে পড়ায় স্বচ্ছ আয়নার মতো মনে হচ্ছে। এ ধরনের চোখ সাধারণত বিদেশিনীদের থাকে। অথচ এই মেয়ে শ্যামদের কা*তা*রে পরে। তার এমন রঙের চোখ কি করে হলো ভাবার বিষয়। আবরার ভাবলো হয়তো লেন্স পড়েছে। আজকাল লেন্স পড়া তো মেয়েদের ফ্যাশন। মেয়েটার পরনে শর্ট টপস আর জিন্স। গলায় একটা স্কার্ফ ঝুলানো। চেহারায় একটা ধা*রা*লো ভাব আছে। তার দিকে একেবারে শু*চা*লো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেয়েটা। কতো বড় সা*হ*স যে তার চোখে চোখ রাখে।
আরশির উপর থেকে দ্রুত নিজের চোখ সরিয়ে নিলো আবরার। অনেক সময় ন*ষ্ট করে ফেলেছে সে। আর এক সেকেন্ডও ন*ষ্ট করা যাবে না। সে মুনের সামনে গিয়ে বললো,
— আমি দুঃ*খি*ত ধা*ক্কা দেয়ার জন্য। একটু তাড়ায় ছিলাম তাই খেয়াল করি নি।
মুন দ্রুত মাথা নিচু করে ফেললো। তার ভ*য় লাগছে। এখান থেকে যেতে পারলেই বাঁচে। আবরার আরশি কে ক্র*স করার সময় ফিসফিস করে বললো,
— তোমার শা*স্তি উঠিয়ে রাখলাম।
আরশি ও আবরারের চোখে চশমা খেয়াল করে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
— আসলেই কা*না।
কথাটা আস্তে করে বললেও আবরারের কানে গেলো। আবরার একবার আরশির দিকে ক*ট*ম*ট চাহনি দিয়ে দ্রুত পায়ে চলে গেলো ভার্সিটির ভিতরে।
চলবে?
#তোমাতে_আসক্ত_আমি
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১
(আস্সালামুআলাইকুম চলে আসলাম নতুন গল্প নিয়ে। প্রথম পর্ব পড়েই কেউ গল্পটাকে যাচাই করবেন না দয়া করে। যদি কোনো প্রশ্ন থাকে কমেন্ট করে জানাবেন। ইনশাআল্লাহ আগামীতে উত্তর পেয়ে যাবেন। আর অবশ্যই জানাবেন কেমন লেগেছে প্রথম পর্ব। গল্পটা সম্পূর্ণ আপনাদের রেসপন্স এর উপর নির্ভর করছে। ভু*ল-ত্রু*টি ক্ষ’মা’র দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।)