কাঞ্জি পর্ব ১৯

0
606

#কাঞ্জি
#পর্ব-১৯

ওয়াজিফার কথায় আঁতকে উঠল। গ্যাসের চুলাটা বন্ধ করে দৌড়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করল,

“কি হয়েছে?”

” তোমার রুমের এ কি অবস্থা আবৃতি। এসব কি?”

আবৃতি তাকিয়ে দেখলো তার পুরো বিছানা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে শাড়ি।কিছু খোলা অবস্থায় কিছু আধ খোলা অবস্থায়।দীর্ঘ শ্বাস ফেলল সে। নিশ্চয়ই শাড়ির নিচে রয়েছে শাহরিয়ারের জিনিসপত্র। তবে কি শাহরিয়ার এখনো ওয়াশরুমে?ওয়াশরুমে থাকলে বারান্দায় কে? আচানক ভয়ে পেটে মোচড় দিয়ে উঠলো তার।বারান্দার দরজা ঠেলে দিয়ে ভিতর থেকে লাগিয়ে দিয়ে বলল,

“শাড়ি রোদে মেলে ছিলাম।তাই এমন হয়ে আছে।”

“কিন্তু দেখে তো মনে হচ্ছে সব নতুন শাড়ি।এগুলো তো নতুন ডিজাইন। তোমার মা তো এতো শাড়ি কিনে দেওয়ার মানুষ নয়।”

“মা না কিনে দিলেও এসব আমার আপু।আমার বিশেষ মানুষের কাছ থেকে পাওয়া উপহার।”

“এতো শাড়ি?”

“আপু তুমি একটু বাদামগুলো পিষে ফেল।আমি আসছি।”

ওয়াজিফা কিছু না বলে সন্দেহের রেশ নিয়ে বেরিয়ে গেল রুম থেকে।শ্বাস ছেড়ে স্বাভাবিক হলো আবৃতি। বারান্দার দরজা খুলে দিতেই দেখতে পেল শাহরিয়ার বসে আছে। তার চুল ভেজা,গ্রীবাদেশে বিন্দু বিন্দু পানি।সিগারেটে টান দিয়েছে বলে মনে হলো না।অথচ হাতে রয়েছে জ্বলন্ত আগুন। আবৃতি তার চুলে হাত রাখতেই সে স্বীয় স্ত্রীর উদরে মাথা ঠেঁকিয়ে বলল,

” এই জাহানের সমস্ত সুখ আমি তোমার পায়ে এনে ফেলবো পাখি। তুমি কেবল যাই হোক না কেন ভয় পেও না।আমাকে ছেড়ে থাকার কথা চিন্তা করিও না।তোমার সব আবদার, আহ্লাদের দায়িত্ব আমার।তুমি চাইলেও আমার, না চাইলেও আমার।”

“জানি।কিন্তু আপু যদি দেখে ফেলতো?”

“আপাতত শাহানারার বিয়ে অবধি কিছুই বলবো না।তুমি।এ কয়দিন মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নাও।”

“শাড়িগুলো?”

“তোমায় দেওয়া আমার সকল উপহার কেবল তোমারই থাকবে।কারোর স্পর্শ সেই উপহারে পড়লে আমি সব জ্বালিয়ে দিবো।”

আবৃতি হাতে ঠেলে শাহরিয়ারের মাথা উঁচু করে জিজ্ঞেস করল,

“আগের কাঞ্জিভরম গুলো কি করেছেন?”

“পুড়িয়ে ফেলেছি।”

“কেন?কত সুন্দর ছিল ওগুলো।”

“এগুলো তার থেকেও দামী।”

“কাকী কিছু বলল না?জানে সে?”

“তার সামনেই পুড়িয়েছি। আশা করছি তোমার সাথে আর কোনো বিষয় নিয়ে তর্ক করবে না।”

“মায়ের সাথে এমন ব্যবহার করা উচিৎ নয়।”

“করবো না।দীর্ঘ আটাশ বছর করিনি।সে যা বলেছে মেনেছি।আমার একটা চাওয়া যদি মানতে না পারে আমি কেন তার হাজার চাওয়া মানবো?”

“কারণ সে মা।”

“আমি তার সন্তান।আমি তাকে খুশি করার জন্য আমার নিজের খুশি সারা জীবনের জন্য শেষ করতে পারবো না।”

আবৃতি আর কথা বাড়ায় না।শাহরিয়ার কিছু একটা বিষয় নিয়ে ভীষণ বিরক্ত। খাট থেকে শাড়িগুলো তুলে ডিভানের উপর রাখলো আবৃতি। বিছানাটা টান টান করে গুছিয়ে শাহরিয়ার কে বলল,

“অনুষ্ঠান শুরু হতে চার ঘন্টা বাকী।আপনি ঘুমাবেন এখানে।আমি আসছি।”

“কোথায় যাবে?আমাকে দেখে লজ্জা পাওয়ার কি আছে? শেষ অবধি আমি তো তোমার সাইয়্যাই হয়ে গেলাম।”

দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো মেয়েটার।এই কথাটা সে নিজেও চিন্তা করছিল। কিন্তু মুখে বলল,

“বেশ ভালো হয়েছে। এবার আমি আসি না হলে আপু আবার চলে আসবে।”

রুমের লাইট বন্ধ করে বেরিয়ে গেল সে।বালিশে মাথা রেখে ঘুম জড়িয়ে এলো দুই চোখে। এতো শান্তি লাগছে কেন তার?

বাদাম গুলো ব্লেন্ড করে নিয়ে ঘি দিয়ে ভাজতে লাগলো আবৃতি। ওয়াজিফা গল্প করছে।শাহরিয়ারের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে। তাদের ছোটো বেলার গল্প।একবার পেয়ারা গাছ থেকে পড়ে গিয়ে ওয়াজিফার হাত ভাঙলো, সেটা দেখে শাহরিয়ারের কান্নার গল্প শুনতে শুনতে আবৃতি রান্না শেষ হলো।সে একটা বাটিতে একটু তুলে নিলো।ওয়াজিফা ভাবলো হয়তো আবৃতি নিজে খাবে বলে রেখেছে। কথা না বাড়িয়ে বাকীটা নিয়ে চলে এলো শাহদের ফ্ল্যাটে।আবৃতি বাটিটা ঢাকা দিয়ে চুলোয় গরম পানি দেয়।মানুষটা এখনো খাবার খায়নি।চুলোয় পানি দিয়ে রুমে ফিরে আসে।টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে একে একে সবগুলো শাড়ি ভাঁজ করে।গুছিয়ে রাখে শাহরিয়ারের বেল্ট, ওয়ালেট,গাড়ির চাবি আর ঘড়িটা।ঘড়িতে যখন বেলা পাঁচটে বেজে চার মিনিট তখন এক মগ কফি এবং বাদামের হালুয়া হাতে রুমে ঢুকে আবৃতি। আলতো স্পর্শে হাত বুলিয়ে দেয় শাহরিয়ারের চুলে।তাদের দুজনের চেহারায় কোনো মিল নেই। অথচ তাদের বাবাদের চেহারায় ছিল অসম্ভব মিল। আংগুল ঘুরিয়ে শাহরিয়ারের নাকের ডগাতেই রাখতেই চোখ মিলে তাকালো সে।আবৃতির হাতটা নিজের বুকের বা পাশে শক্ত করে চেপে ধরে সে ফিসফিস করে বলল,

“তোমার মাঝে আমি সেই শান্তি খুঁজে পাই যেটা পৃথিবীর কোনো কিছুতেই পাখি।তুমি আমার জীবনের সেই সুঁতো যে সুঁতোতে যত গিট লাগবে আমার ভালোবাসা ততোই মজবুত হবে।”

“কিন্তু ওদিকে ওয়াজিফা আপু যে আপনাকে………

আবৃতি কথা শেষ করতে পারে না। একজন মানুষ এবং কিছু সময়ের অধিকার থাকে সকল কথা অপূর্ণ রাখার।আবৃতির জীবনের সেই মানুষ শাহরিয়ার এবং সেই সময়টা এখন।যে সময়ে প্রেমের জোয়ার নামে, অসময়ে চাঁদের জোৎস্নায় হারিয়ে যায় সমুদ্রের হাসির শব্দ এবং দূর থেকে ভেসে আসে অজানা কোনো এক পাখির কলকাকলি।

চলবে( এডিট ছাড়া,যারা পড়েন রেসপন্স করবেন।আপনাদের পছন্দের মানকলি বইটি প্রি-অর্ডার করেছেন তো?মেলা কিন্তু শেষ পথে)

#ছবিয়াল:ফ্লাওয়ারগ্রাফি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here