#কাঞ্জি
#পর্ব-১৮
ইহ জন্মের ভীষণ ভারী শব্দ হচ্ছে কবুল। কাউকে জীবন সঙ্গী হিসেবে কবুল করে নেওয়া। তার সাথে পুরোটা জীবন কাটানো, সে বুঝবে কি না? তাকে ঠিক মতো মূল্য দিবে তো?তাদের মাঝে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি চলে আসবে না তো?ভালোবাসা, অভিমান, অনিশ্চিত ভয় এবং এক রাশ মুগ্ধতা লুকিয়ে থাকে এই কবুল শব্দে।আবৃতি কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেল।কিন্তু শাহরিয়ার যেন নিশ্চিত। সে বুঝে শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এ বিষয়ে।যেন এমনটা হওয়ার ছিল। আবৃতির দেরি হচ্ছে দেখে সে ভ্রু-কুঁচকে কিছুটা জিজ্ঞাসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। চোখ ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছে?”
“ফোনটা কাটবেন?”
“না, বিয়ে অসম্পূর্ণ রেখে কল কাটা যাবে না।”
“কি বলছেন এসব?অভিভাবক কেউ জানে না।”
“আবৃতি আমরা এখানেই।”
দাদা সাহেবের কণ্ঠস্বর শুনে চমকে উঠেছে আবৃতি। সাথে রয়েছে তার ছোটো চাচাও।তিনি অভয় দিয়ে বললেন,
“তোমার চিন্তা নেই। আমরা এখানেই আছি।তুমি আসতে পারছো না বলে ফোনে ব্যবস্থা করা।আবৃতি আমি তোমার এই বিয়ে ঠিক করেছি।তোমার কি কোনো আপত্তি আছে?”
আবৃতি নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে কেবল বলল,
“কিন্তু মা?”
“সেটা আমরা সামলে নিবো।তুমি চিন্তা করো না।আমরা পুনরায় তোমার নিকাহ্ নামা পড়ছি।তুমি।আরেকবার শুনে।নাও।”
……..যদি রাজি থাকো তবে বলো আলহামদুলিল্লাহ্ কবুল।
আবৃতিকে চুপ থাকতে দেখে সহ্য হচ্ছিলো না শাহরিয়ারের।সে শক্ত হাতে আবৃতির হাত চেপে ধরে করুণ দৃষ্টিতে তাকালো। সে দৃষ্টিতে রয়েছে হারানোর ভয় সাথে পাওয়ার ব্যকুলতা।ভীষণ সিরিয়াস সময়ে হাসি পেল আবৃতির।সে ফিক করে হেসে ফিসফিস করে শাহরিয়ারের কানে বলল,
“আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”
স্বস্তির শ্বাস ফেলল শাহ্। এক হাতে তার ফোন ধরা অন্য হাতে আবৃতি। ফোনটা আবৃতির হাতে দিয়ে টেবিল হাতড়ে পানির গ্লাসটা এগিয়ে নিলো নিজের দিকে।ঢকঢক করে পুরো গ্লাসের পানি শেষ করে ফেলল।পানি খাওয়ার তালে তালে তার এডামস আপেলটা উঠা নামা করছে।বুকের পেশি ফুলে উঠছে।আবৃতির মনে হলো এত দ্রুত পানি খাওয়ার জন্য আবার গলায় না প্যাঁচ লেগে যায়।তার বুকে আলতো করে হাত বুলায় মেয়েটা। বুকের বা পাশে হাতটা আসতেই খপ করে সেই হাত ধরে ফেলে শাহরিয়ার।তার ঠোঁটের কোণে এখনো লেগে আছে পানির বিন্দু।অন্য হাতের পীঠ দিয়ে ঠোঁট মুছে সে বলে,
“এতো সময় লাগে পাখি?আমার জান যাই যাই অবস্থা ছিল।”
” এটা তো ভুল হলো না?ওয়াজিফা আপু আপনাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।”
“শরীয়ত মোতাবেক আমি তোমাকে বিয়ে করেছি।মৌখিক বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আগামীকাল কোর্টে গিয়ে আমরা বিয়েতে রেজিস্ট্রি করে ফেলবো।”
“তাহলে বিয়ের তারিখ তো দুইটা হয়ে যাবে।আমরা কোন দিন বিবাহ বার্ষিকী পালন করবো?”
চিন্তার ভাঁজ দেখা দিলো আবৃতির কপালে।তার ভ্রু-কুঁচকে আছে।দুই আঙ্গুল দিয়ে সেই ভাঁজ ছাড়াতে ছাড়াতে শাহ্ বলল,
“তোমার উপস্থিতিতে আমার প্রতিটা দিন হবে অতীব বিশেষ। হোক সেটা দুঃখের রবিবার কিংবা আনন্দের শুক্রবার।”
“বাসায় জানাবো কবে?”
“শাহানারার বিয়েটা আগে ঠিকঠাক মতো শেষ হোক এরপর সব আস্তে-ধীরে করবো।আচ্ছা আগামীকাল তোমার সময় হবে? আমরা একটু বের হবো।”
“কেন?”
“আমাদের ফ্ল্যাটটা একবার দেখে আসা প্রয়োজন ছিল তোমার।তুমি তো এখনো দেখোনি।”
“কাল আপুর হলুদ তো।”
“আচ্ছা তবে অনুষ্ঠান শেষ হোক।”
দরজায় ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ হতেই সাবধানী হয় শাহরিয়ার। যদিও তার কোনো প্রয়োজন নেই কিন্তু আবৃতির মান সম্মানের জন্য আপাতত এটুক প্রয়োজন। সে ইশারা করে আবৃতিকে বেরিয়ে যেতে বলে।রুমের বাইরে উঁকি দিয়ে দেখতে পায় ওয়াজিফা দাঁড়িয়ে আছে রান্নাঘরে। তার দিকে এগিয়ে গিয়ে আবৃতি জিজ্ঞেস করে,
“আপু তুমি এখানে?তোমার কিছু লাগবে?”
“তোমার ভাইয়ার জন্য বাদামের হালুয়াটা করে দিবে?”
“এখন?”
“আসলে আজ সকালে না খেয়ে গেছে। ভাবছিলাম ও আসলে খেতে দিবো।”
“বেশ।”
“তুমি বানিয়ে দাও।”
আবৃতি কথা না বলে ওড়না কোমরে প্যাঁচিয়ে নিলো।কেবিনেট থেকে বাদাম বের করে নিতেই তার ঘরে শব্দ হলো।হালকা আঁচে ফ্রাই পেনে ওয়াজিফাকে বাদাম ভাজতে দিয়ে সে বলল,
“আপু দেখবে একটু? রুমে কিসের যেন আওয়াজ হলো।আমি আসছি।”
“তুমি এখানে থাকো আমি যাই?”
“না আপু তুমি থাকো।”
আবৃতি রুমে এসে দরজা ভিতর থেকে লাগিয়ে দিলো।বিছানার উপর পড়ে আছে শাহরিয়ারের ঘড়ি, ওয়ালেট, শার্ট এবং বেল্ট।ওয়াশরুম থেকে পানি পড়ার শব্দ হচ্ছে।আবৃতি বুঝতে পারলো শাওয়ার নিচ্ছে কেউ।দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দরজায় টোকা দিয়ে বলল,
“কি পরবেন?আমার সালোয়ার কামিজ?”
প্রতি উত্তরে এক আজল পানি তার দিকে ছুড়ে দিয়ে শাহরিয়ার বলল,
“না হয় কিছুই নাই পরলাম।আপত্তি না থাকলে তোমার প্লাজো পরতে পারি। লুংগী আর ওটার মাঝে তো কোনো তফাৎ নেই।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে দাঁড়িয়ে রইল আবৃতি। রান্নাঘর থেকে ডাক দিচ্ছে ওয়াজিফা।তার দিকে ভেজা হাত বাড়িয়ে শাহ বলল,
“তোমার ওয়ারড্রবে একটা ব্যাগ আছে।সেটা আমাকে দাও।আর বাইরে যাও।না হলে ওয়াজিফা আসবে।”
আবৃতি ব্যাগটা খুলে দেখার সময় পেল না।ওয়াজিফার ডাকে বেরিয়ে গেল।এক দিকে সে যখন কাজে ব্যস্ত, শাহ তখন শাওয়ারে,ওয়াজিফা কৌতুহল বশত রুমে ঢুকলো।বিছানার উপর এলোমেলো জিনিস দেখে কিছুটা চিৎকার করে বলল,
“এসব কি আবৃতি? তুমি কি বাসায় একা নও?”
চলবে( ইনশাআল্লাহ আগামীকাল গল্প দিবো তাই রেস্পেক্ট করবেন। এস এস সি এক্সাম এগিয়ে আসা মানে স্টুডেন্টদের সাথে টিচারদেরও ব্যস্ততা বেড়ে যায়।আশা করি বুঝতে পেরেছেন কেন নিয়মিত গল্প দিতে পারছি না।মেলার বই নিয়েও তেমন প্রচারণা নেই একমাত্র এই কারণেই।
আর হ্যাঁ ৩০% ছাড়ে আমার নতুন বই দুটো অর্ডার করেছেন তো?
মান কলি এবং উজল প্রাতের আরশি সর্বোচ্চ ছাড়ে এবং ক্যাশ অনে দিচ্ছে রকমারি.কম)
#ছবিয়াল:odt