হীরকচূর্ণ ভালোবাসা পর্ব ২১

0
970

#হীরকচূর্ণ_ভালোবাসা
#পর্ব২১
#রাউফুন

হাতের রিপোর্ট দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে তুলিকা। কি করে সম্ভব? সে কিভাবে প্রেগন্যান্ট হতে পারে? সে এখনো বিবাহিত হয়েও পিওর ভা*র্জিন! মাইজিনের আরও খারাপ অবস্থা। তুলিকা প্রেগন্যান্ট এটার জন্য নয়। তুলিকার ভয়াবহ তীর্যক দৃষ্টি আর কথার তীব্র ঝাপটা দেখে। কি থেকে কি হলো বুঝতে পারছে না কিছুতেই। সে তো তুলিকাকে স্পর্শ করেনি৷ তবে তার বউ এমন রাতারাতি মা হতে চলেছে এটার মা’রপ্যাচ বুঝতে বেগ পেতে হচ্ছে তার।

‘এই তুলিকা আপনি আমার ঘুমের এডভান্টেজ নিয়ে আমার মতো অবলা পুরুষের সঙ্গে কিছু করেন নি তো? যার ফলস্বরূপ এই বাচ্চা এসেছে।’

কথার যথার্থ অর্থ ধরতে পেরে রোষানল দৃষ্টিতে তাকালো তুলিকা। রগরগে গলায় বললো,

‘তুই কথা বলবি না। সেইম কথাটা আমারও। তুই আমার ঘুমের সুযোগ নিয়ে আমাকে বাচ্চা দিয়ে দিছস!’.

তুলিকার রাগান্বিত আর তুই তুকারি করায় ভড়কে যায় মাইজিন। মিনমিনিয়ে বলে, ‘তাইলে কি আপনি বুঝতেন না? না মানে আমি যদি ওরকম কিছু করতাম তাহলে। আচ্ছা আপনার হঠাৎ টেস্ট কেন করতে হলো?’

‘তোকে এখন বিশ্বাস নাই। আমার মাথা ঘুরছিলো, বমি পাচ্ছিলো। শুনেছি মাথা ঘুরলে, বমি পেলে মানুষ পোয়াতি হয় তাই টেস্ট করেছি! সেদিন জ্বরের ঘোরে কি সব আবোলতাবোল বলছস তা জানোস!’

‘আচ্ছা আমি কি জ্বরের ঘোরে কিছু করেছিলাম সেদিন?’

‘জানি না আমি!’ ঝামটা মে’রে বলে তুলিকা। মাইজিন দমে যায়। তার বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে ওমন শান্তশিষ্ট, নিপাট ভদ্র মেয়ের এমন ভয়াবহ রূপ দেখে।

মিষ্টি ওঁদের ঝগড়ার মধ্যে এক অবলা বাচ্চা। একবার মাইজিন তো একবার তুলিকাকে দেখছে। সে সাহস সঞ্চার রিনরিনে কন্ঠে বললো, ‘বুবুজান তুমি ভাইয়ার সঙ্গে এমন করছো কেন? কত ভালো একটা খবর। আমি খালামনি হবো খুশি না হয়ে রাগ করছো!’

‘ ভালো খবর না? ভালো খবর তোর পকেটে রাখ।’

‘বুবুজান আর রাগ করো না তো।’

‘রাগ করবো না তো কি বসে বসে নাচবো? তোর লু*চ্চা দুলাভাই আমার সর্বনাশ করবে আমি চেয়ে চেয়ে দেখবো? আমি এখান থেকে চলে যাবো বলছিলাম না? তাই এই ব্যবস্থা করেছে যাতে আমি যেতে না পারি।’

‘আপু এভাবে বলো কেন?’

‘তুই যাবি এখান থেকে?’

মিষ্টি বোনের রোষানল দৃষ্টিতে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। এরপর অবস্থা বেগতিক দেখে আস্তে আস্তে সটকে পরলো সেখান থেকে।

এদিকে নাফিস খবর পেয়ে ছুটে এসে দরজা ধাক্কাধাক্কি করে আবার চলেও গেছে। কারণ কেউ-ই দরজার খুলে নি। মাইজিন বারণ করেছে হাওয়া গরম দেখে। ডক্টরের কথা মতো মাইজিন রিপোর্ট এনেছে হসপিটালে গিয়ে। কিন্তু সেখানে রিপোর্ট খুলার সাহস হয়নি। যদি খারাপ কিছু হয়ে থাকে? তাই সোজা বাসায় এসে তুলিকার হাতে দিয়েছে রিপোর্ট। কিন্তু এরপরই শুরু হয় কুরুক্ষেত্র! মাইজিন কাচুমাচু হয়ে দাঁতে নখ খুটছে। না জানি তুলিকা কখন তার উপর হামলা করে৷ ভয়ে ভয়ে সে তুলিকার কাছে গিয়ে বললো,

‘বাচ্চা যদি এসেও থাকে তাতে এতো রাগ করার কি হয়েছে? একটা বাচ্চাই তো!’

‘ওহ তার মানে তোর মনে মনে এসব ছিলো? তুই নিজের দোষ ঢাকতে এখন আমাকে পটাতে আসছিস! দূর হো আমার চোখের সামনে থেকে!’

তুলিকা স্বজোরে মাইজিনকে ধাক্কা দিলো দুই হাতে। মাইজিন উল্টো পালটি খেয়ে ফ্লোরে পরে গেলো।
কিন্তু তাতেও মাইজিন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না৷ সে একদম প্রতিক্রিয়াহীন হয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইলো। শুধু নরম কন্ঠে বললো, ‘আমি সত্যিই কিছু করি নাই তুলিকা!’

‘ হ্যাঁ কিছুই করেন নাই। বাচ্চা আকাশ থেকে ডাউনলোড হয়ে আমার পেটে আসছে। আমি আর এই সংসার করবো। আজ ই চলে যাবো এখান থেকে। কি ভেবেছেন থাকবো এখানে?’

তুলিকা হনহনিয়ে অন্য রুমে গিয়ে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে কাঁন্না করতে লাগলো। মাইজিন যখন স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলো সে সময় তার ফোনে কল এলো। সে না দেখে নাদান মুখে কল রিসিভ করে। বললো,

‘হ্যালো! কে বলছেন? এই সময় আপনি যাকে কল করেছেন সে এখন বউয়ের হাতে ধাক্কা খেয়ে ভিমড়ি খেয়ে বসে আছে। প্লিজ কিছুক্ষন পর ফোন করুন। ধন্যবাদ!’

অপর প্রান্ত থেকে খুকখুক করে কেশে উঠলেন ডক্টর! এমন কথা শুনে একবার ফোনের দিকে চোখ বুলিয়ে দেখে নিলেন সঠিক নাম্বার কি না। দেখলেন সঠিক নাম্বার! তিনি শান্ত গলায় শুধালেন,

‘আপনি কি মিস্টার মাইজিন সুলতান।’

‘ইয়েস কে বলছেন?’ কথা শুনে মাইজিন সিরিয়াস হলো এবারে।

‘আসলে একটা ভুল হয়েছে আমাদের তরফ থেকে। আপনার ওয়াইফের রিপোর্ট এর জায়গায় অন্য একজনের রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। কাইন্ডলি যদি আবার রিপোর্ট টা নিয়ে আসতেন ভালো হতো!’

‘কিন্তু রিপোর্টে তো আমার ওয়াইফের ই নাম আছে!’

‘এই জন্যই গোলমাল হয়েছে। আসলে যে মহিলার রিপোর্ট আপনি নিয়ে গেছেন সে মহিলারও নাম তুলিকা। সেজন্য একটা মিস-আন্ডারস্ট্যান্ড ক্রিয়েট হয়েছে।’

‘আপনাদের এরকম ভুলের জন্য আমার সংসার ভাঙতে বসেছিলো। যায় হোক আমি ওই মহিলার রিপোর্ট নিয়ে এখনই আসছি! আর খেয়াল রাখবেন আর যেনো এমন ভুল না হয়।’

এমন খবর পেয়ে খুশিতে দু চোখ চকচক করছে মাইজিনের। এবার নিশ্চয়ই আর ভুল বুঝবে না তুলিকা তাকে। সে দ্রুত গিয়ে দরজা ধাক্কালো।

‘তুলিকা দরজা খুলুন। খুশির খবর আছে!’

তুলিকা গা’ট্টি মেরে বসে রইলো। কিছুই ভালো লাগছে না তার। মাইজিনের কথা শুনলেই রাগ লাগছে। লোকটা স্পর্শ করবে না বলেও স্পর্শ করলো অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। আর এখন সে মাও হতে চলেছে। মা হওয়ার খবর পেলে মানুষ খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় কিন্তু সে খুশি হতে পারছেই না। হবে কিভাবে কিছুতেই তো বোধগম্য হচ্ছে না সবটা হলো কিভাবে? কোথাও কি কোনো ভুল হয়েছে? মাইজিনের মতো মানুষ হয় না। তার সঙ্গে একই বিছানায় এতোদিন পর্যন্ত রাত্রী যাপন করেছে অথচ তার অনুমতি পাইনি বলে তার হাত টা পর্যন্ত ধরেনি সে কিনা তার ঘুমের সুযোগ নিয়ে এরকম কিছু করবে? আর যদি এরকম কিছু করেও থাকতো সে তো বুঝতে পারতো। তার ঘুম ভারী কিন্তু তাই বলে এটা নয় যে তাকে কেউ স্পর্শ করলে সে জেগে যাবে না। তবে এই বাচ্চা? বাচ্চা তার পেটে কোথা থেকে এলো? এদিকে রিপোর্টে লেখা আছে ফাইভ উইকশ প্রেগন্যান্ট টাইম।

‘আহা তুলিকা দরজা খুলুন খবর শুনলে আপনি আমার থেকেও বেশি খুশি হবেন। আপনি প্রেগন্যান্ট না। ওটা অন্য একজনের রিপোর্ট!’

চটাস করে দরজা খুলে দিলো তুলিকা। এমন বক্তব্য শুনে মুহূর্তেই বাকহারা হলো তুলিকা। বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো চকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাইজিনের দিকে। মিষ্টির রিয়াকশন ও একই। ঠোঁটের দুই রেখার মধ্যে ঈষৎ ফাঁক বিদ্যমান। অবাকতায় বাকহারা হয়ে গেছে সেও।

‘কি বললেন? অন্য একজনের রিপোর্ট? কিন্তু রিপোর্টে তো আমার ই নাম!’

‘এক্ষুনি ডক্টর কল করে জানালেন আপনার নামের ই আরেকটা মহিলার সঙ্গে অদল বদল হয়েছে রিপোর্ট। আপনি প্রেগন্যান্ট না ইয়েএএ।’

মাইজিন খুশিতে রিপোর্ট নিয়ে দ্রুত হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলো। পিছে ফেলে গেলো তুলিকার অবাক করা মুখ। মানুষটার সঙ্গে এতো এতো রাগ দেখালো সে এটা শুধুই একটা ভুল থেকে? সে-ই বা কি করবে? রিপোর্ট দেখে মাথা ঠিক ছিলো না তার। তাই তো বা’জে ব্যবহার করে ফেলেছে মাইজিনের সঙ্গে! এমন কি তুই পর্যন্ত তাদের সম্পর্ক টেনে নিয়ে গেছে।

মাইজিন বাড়িতে আসার পর তুলিকা নিশ্চুপ ছিলো। অস্বস্তিতে মাইজিনের চোখে চোখ মেলাতে পারছিলো না সে। কিন্তু মাইজিন দিব্বি স্বাভাবিক ছিলো। বরং সে আসার সময় লুডো কিনে এনেছে। সাথে করে নাফিসকে ডেকে এনেছে চারজন খেলবে বলে।

অকম্মাৎ মিষ্টি চেচিয়ে উঠলো। বললো, ‘ইয়ে আমার ছক্কা উঠেছে। আর এই যে ছক্কায় নাফিস ভাইয়ার গুটি খেয়ে দিলাম।’

নাফিস মুখ গোমরা করে ভেবলার মতো চেয়ে রইলো। এর আগে মাইজিনের গুটি খাওয়া পরেছিলো কিন্তু মিষ্টি মাইজিনের গুটি খাইনি। কিন্তু তার বেলাই এমন নিষ্ঠুরতার মানে কি? সে বলল, ‘এটা কি ঠিক হলো বাচ্চা? চিটিং করলে আমার সঙ্গে। এমনিতেই একটাও গুটি উঠেনি আমার।’

ঝলমলিয়ে হেসে উঠলো মিষ্টি। নাফিস মিষ্টির সুন্দর হাসির দিকে তাকিয়ে রইলো। মাইজিন খেলার ছলে তুলিকাকে স্বাভাবিক করার চেষ্টায় আছে। যা হলো আজ। কিন্তু মেয়েটা নির্জীব হয়ে আছে।

‘এয়্যাইই নাফিস ভাই ওইভাবে চাইয়া রইছেন কিল্লাই? আরেকবার চাইয়া থাকলে চোখ খুবলে তুলে কাকেরছা কে খাওয়াবো হুহ্!’

মাইজিন আর তুলিকা পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে দুজনের দিকে। এদিকে ঝটপট চোখ সরিয়ে নিয়ে শুকনো ঢুক গিলে নাফিস। সে ভাবছে আর জীবনেও মিষ্টির দিকে তাকাবে না। কি সাংঘাতিক মেয়ে আল্লাহ! এতোদিন কত সিনিয়র,জুনিয়র মেয়ে তার পিছনে ঘুরেছে। তাদের কেন যে রিজেক্ট করেছে সে? একদম ঠিক হয়নি তাদের রিজেক্ট করা। আজ তাদের রিজেক্ট করার ফল এই বাচ্চা মাইয়ার প্রেমে পরা। দেখতে নরম স্বভাব কিন্তু ভেতরে রনচন্ডী রুপ! এবার যাদের রিজেক্ট করেছিলো তাদের কাছে যেতে হবে তাছাড়া উপায় নেই। আজীবন সিঙ্গেল থাকার চেয়ে একটা হিল্লে জুটিয়ে মিঙ্গেল হওয়া বেটার।

#চলবে

রিচেইক হয়নি বাচ্চারা। একটু মানিয়ে নিও প্লিজ!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here