#তোমার_আসক্তিতে_আমি_আসক্ত
#নুশা_আহমেদ
#পর্ব_১১
বিয়ে বাড়িতে আমেজে ভরপুর, ছোট ছেল মেয়েরা দৌড়া দৌড়ি হৈচৈ করছে বড়রা সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে এদিক ওদিক ছুটা ছুটি করছে । কিশোরীরা তাদের সাজসজ্জায় ব্যস্ত সবাই কেউ নিজে সাজছে আবার কেউ কাউকে সাজিয়ে দিচ্ছে । সময় খুবই দ্রুত চলে কারো জন্য বসে থাকে না সে তার গতি অনুযায়ী এগিয়ে যায় কারো জন্য থেমে থাকার পরোয়া করে না তাই তো দীর্ঘ কয়েকদিন কেটে গিয়ে এই দিনটি খুবই তাড়াতাড়ি চলে এসেছে । আজ উনিশ তারিখ বৃহস্পতিবার নিশির আর রিফাতের গায়ের হলুদ । বাড়ির সামনের জায়গায় বড় করে সাজানো হয়েছে নিশির অন্য দিকে রিফাতের বাড়িতেও ছাদে বড় করে স্টেজ সাজিয়েছে । রিফাতের বাবা মা খুব খুশি নিশিকে তাদের মনে ধরেছে খুব তাই খুশির সাথে সবাইকে এটা ওটা করতে বলছে আবার নিজেরাও কাজ করছে ।
সায়নের গাজীপুর একটা কাজ থাকায় হলুদ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবে না । নিশি এতে সায়ানের সাথে অভিমানে বলে উঠলো,
-নুশার কোনো সুন্দর দিনে যেমন জন্মদিন বা অন্য কিছু তখন তো ভাইয়া আপনি সব কাজ সব ব্যস্ততা ফেলে চলে আসেন আর ভবিষ্যতেও আসবেন আমি জানি তাহলে ভাইয়া আমার বিয়েতে আপনি আসতে পারবেন না কেনো বুঝতে পারছি আপনি তো আমাকে ভালোইবাসেন না কারন নিজের বোনের এমন দিনে আপনি না এসে থাকতে পারতেন বলেন ।
ফোনের অপর পাশেসায়ান নিশির কথা শুনে কি বলবে বুঝতে পারছে না , তাই লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো,
-পাগলি বোন৷ , আচ্ছা আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করবো আসার জন্য এখন আমার ভালো বোনটি আর রাগ করিছ না । আর শুন নুশা কি করে আমার ফোন তুলছে না কেনো ..!
-নুশাতো মনে হয় ওয়াশরুমে শাওয়ার নিচ্ছে পার্লারের মহিলা আসবে সবাই কে সাজাতে আমি আরো অনেকক্ষণ আগে শাওয়ার নিয়েছি এখন মনে হয় নুশা নিচ্ছে আচ্ছা আসলে বলবো নে।
-না থাক বলতে হবে না৷। আরেকটা কথা আমি যে আসবো সেটাও যাতে নুশা না জানে ।
-আচ্ছা আমি কাউকে বলবো না কিন্তু ভাইয়া আপনি কিন্তু আসবেন মনে থাকে যেনো।
-আরে বাবা আসবো বোন , এখন রাখি তাড়াতাড়ি কাজ গুলো শেষ করতে হবে তো।
বলে ফোনটা কেটে দিলো সায়ান,,,।
অন্যদিকে
নুশা উপরে উপরে খুশি হলেও কেনো জানি মনের মধ্যে খারাপ লাগছে কেনো লাগছে যানে না । বুঝতে পারছে না এই খারাপ লাগার কারন কি ? তবে কি সায়ান কে নুশা মিস করছে । আজ পাঁচ দিন হয়েছে সায়ানের সাথে দেখা হয় না,প্রথম দুই দিন ফোন না দিলেও পরে দুই দিন কয়েকবারই ফোন দিয়েছিলো কিন্তু ফোন বাজার সময় একবারও হাতের কাছে মোবাইল না থাকায় একবারো ধরতে পারেনি । মামী (সায়ানের আম্মুর কাছে তারিখ বেগম সায়ানের আসার কথা জিজ্ঞেস করলে সায়ানের আম্মু বলে সায়ান গাজীপুর আছে বিয়েতে মনে হয় থাকতে পারবে না ।) তখন থেকে নুশার মন কেনো জানি খারাপ লাগছে আবার এক হিসিবে ভালো লাগছে নিজের মনের মতো করে সে বিয়েতে আনন্দ করতে পারবে সায়ান নামক ভাই তাকে বিরক্ত করবে না । এতোক্ষন ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আয়নার তাকিয়ে চুল মুছতে মুছতে এই সব ভাবতেছিলো নুশা । ভাবনার মাঝেই নুশার বান্ধবী ইমা আরো পাড়াপ্রতিবেশি কয়েকজন মেয়ে রুমে ঢুকলো। ইমা নুশাকে ডেকে বললো,
-কিরে নুশুন আর কতক্ষণ সন্ধ্যা তো এই বাড়িতেই কেটে যাবে তোর পার্লারের মেয়েরা কখন আসবে আর আমাদের সাজাবে আর আমরা এখানে নিশি আপুকে হলুদ দিয়ে রিফাত ভাইকে হলুদ দিতে যাবো ।
নুশা আয়না থেকে মুখ সরিয়ে পিছনে তাকিয়ে ইমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো ,
-এই দেখ ইমুর বাচ্চা তুই আমারে নুশুন বলে ডাকোছ কেনো আমার ভালো নাম ধরে ডাকতে পারলে ডাকবি আর না ডাকলে চুপ করে মুখে কুলু পেতে বসে থাকবি।
-এই মাইয়া আমার নাম ইমা তুই জানছ না । এতো সুন্দর নামটারে তুই ইমু বলছ।
-হো কতো যে সুন্দর তাই তো নিশাত ভাই তোর নাম্বার নের্টওয়াক দিয়ে সেভ করে রেখেছে ।
বলে জোরে জোরে হাসতে লাগলো নুশা , নুশার কথা শুনে ইমা ছাড়া সবাই গড়াগড়ি করে হাসাহাসি করছে ইমা তো রেগে ফায়ার নিশাত কে পেলে এখনি কাচা চাবিয়ে খেয়ে ফেলতো । ইমার নিশাতের কথা ভাবতে দেরি নিশাত তাদের মাঝে হাজির হতে দেরি না। দরজার কাছেই নুশাকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-সারাদিন মহারানীর শুধু ঘুরাঘুরি আর যতো কাজ আছে সব আমার কাজ । আবার সেই কাজের মধ্যেও মহারানী কে ঢাকতে পাঠায় আমাকে বলিকি শুধু কি আমার বোনেরই বিয়ে হচ্ছে তোর বোনের বিয়ে হচ্ছে না। নিচে আয় সাজগোজের মহিলারা চলে এসেছে বলে আবার ছোটে চলে গেলো। যেভাবে দৌড়ে এসেছে সেভাবেই আবার চলে গেছে।
কাউকে কোনো উওর দিবার সময় টুকুও দেয়নি।
ছোট বড় সব মেয়েরা শাড়ী পরেছে আর ছেলেরা পান্জাবি । নিশি হলুদ শাড়ী পরেছে হলুদ শাড়ীর মধ্যে লাল কাজ করা । কাচা গাদা ফুল আর গোলাপ ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে আর বাকী মেয়েরা সবুজ শাড়ী পরেছে আর ছেলেরা সবুজ পান্জাবি চার পাঁচ টা ছোট মেয়ে সবুজ রঙের ফ্রক পরেছে।
অন্য রিফাত সাদা পান্জাবি পরেছে ছেলেরা নেবি কালারের পান্জাবি আর মেয়েরা লাল কালারের শাড়ী । সবাই ব্যস্ত হয়ে গাড়িতে উঠছে নিশিদের বাড়িতে যাবে বলে, নিশিকে হলুদ ছোঁয়াবে তারা অপরদিকে নুশারাও অপেক্ষা করছে রিফাতদের বাড়ি থেকে লোক জন আসার তারা আসলে নিশিকে হলুদ ছোঁয়ানো হবে।
ছোটরা গান বাজার সাথে সাথে নাচানাচি করছে বড়রা এটা ওটা কাজ করছে বাবুচিরা রান্না করছে। নুশা ইমা নিশাত তারা তাদের বন্ধু দের সাথে কথা বলছে আড্ডা দিচ্ছে নিশি স্টেজে বসে রিফাতের সাথে মেসেঞ্জারে কথা বলছে এটা নিয়েও সবাই তার সাথে মজা করছে। প্রায় অনেকক্ষন পরেই দুইটা গাড়ি রাস্তায় এসে থামলো আর বরের বাড়ির লোকজন নেমে সবার হাতেই আছে ডালা। তাদের মাঝে পাঁচ জন অল্প বয়সী মেয়ে, তিনজন ছোট মেয়ে আরেকজন ছোট ছেলে আর দুইজন একটু বয়সি মহিলা আর দুইজন ছেলে । নুশা ইমারা তাদের আসতে দেখে নিশিকে স্টেজে একা বসিয়ে রেখে তারা সবাই নেমে জায়গা দিলো তাদের । সব গুলো মেয়েরা উপরে উঠলো ছেলেরা দাড়িয়ে রইলো । ইমা সামনে তারপর নুশা হাটতে লাগলো তখনই রিফাতদের বাড়ি থেকে আসা একটা ছেলে নুশার দিকে হাত বাড়িয়ে বলে উঠলো,
-আসসালামু আলাইকুম
হঠাৎ করে নুশার সামনে অপরিচিত ছেলের হাত বাড়ানো দেখে দাঁড়িয়ে যায় নুশা, নুশার সাথে ইমাও দাড়িয়ে যায়। নুশা ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,,
-আলাইকুম আসসালাম ।
-ভালো আছেন বেয়ান।
-জী আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি ভালো আছেন ।
-আমি আবার ভালো না থাকতে পারি বলেন, এতো সুন্দর একটা বেয়ান যে কেউরই মন খারাপ থাকলেও ভালো হয়ে যাবে।
-মানে ,,
-কিছুনা,,,,। বায় দা ওয়ে আমি তো আপনাকে চিনি আপনি রিফাত ভাইয়ের অনলি ওয়ান শালিকা তাই না।
-কই নাতো শুধু আমি কেনো শালিকা হতে যাবো আমার বোনের কি শুধু আমি একাই বোন নাকি আমার কাকাতো বোন আছে আমার বান্ধবী আছে আপুর বান্ধবী আছে তারাওতো ভাইয়ার শালিকা তাই না।
-আরে বেয়ান ঐসব শালিকা আর আপনি অনেক তফাৎ । আচ্ছা এখন আমার পরিচয় দেই আমি রিফাত ভাইয়ার মামাতো ভাই শুভ আহমেদ অর্নাস ফাইনাল ইয়ারে পড়াশোনা করছি সাথে বাবার ব্যবসায় দেখাশোনা করছি।
-হুম ভালো করে পড়াশোনা করেন আর আপুর সাথে পরিচয় হোন আমি একটু আসতেছি ইমা চল।
-আরে বেয়ান দাড়ান ভাবি তো আমার ফুফুর বাড়িতে কালকে যাবেই আর উনার সাথে পরিচয় তো করতেই পারবো তার আগে আপনার সাথে আরেকটু পরিচয় হয়ে নেই ।
নুশা শুভর দিকে তাকিয়ে বলে
-হুম বলেন কি বলবেন..?
-আপনি যে ভাইয়ার শালিকা সেটা জানি কিন্তু আপনার নামতো জানি না নামটা তো বলেন।
– আমাকে চিনতে পারলে আমার নামটা জানতে পারেন নাই কেনো ,,,?
শুভ কিছু বলবে তার আগেই পাশে দাড়িয়ে থাকা ইমা বলে উঠলো,
-আহ নুশা বলে দে সুন্দর করে এতে পেঁচাই তাছোস কেনো কথা রে।
নুশা শুভর দিকে মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললো,
-আমি নুশা আহমেদ ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষ ।
-ওয়াও, কি সুন্দর আপনার আর আমার নামের মধ্যে কতো মিল দুইজনই আহমেদ ।
-হুম আমার আপুর নামও শেষ আহমেদ আমার আব্বুর নামের শেষে আহমেদ ভাইয়ের নামের শেষেও আহমেদ।
-হুম বুঝতে পারছি আমাদে৷ ফেলেলীতেও সবার নামের শেষে আহমেদ।
-হুম , এখানে আরো অনেক মানুষ আছে সবার সাথে পরিচয় হোন আমার একটু কাজ আছে আমি আসতেছি ।
-এই দাড়ান এমন করতেছেন কেনো শুধু পালাই পালাই করতাছেন আপনি একটু কষ্ট করে সবার সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন।
নুশা ডানে বামে তাকিয়ে দেখে দূরে নিশাত কয়েকটা ছেলে বন্ধু আর মেয়ে বন্ধুর সাথে কথা বলতেছে । নুশা তাদের দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে শুভর দিকে তাকিয়ে বললো,
-ঐ-যে ঐটা আমার ভাই নিশাত আহমেদ উনার সাথে কথা বলেন আর বলেন সবার সাথে পরিচয় করে দিতে আর সত্যিই সরি আমার একটু কাজ আছে এখনই যেতে হবে। আর সময় নষ্ট না করে এটুকু বলেই ইমার হাত ধরেই সেখান থেকে চরে আসলো । আর এদিকে শুভ নুশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-অবশেষে মনের মতো একজনকে পাইছি তাকে তো আমি আর ছাড়ছি না বলে মুচকি একটা হাসি দিয়ে নিশাতের দিকে এগিয়ে গেলো ।
এদিকে নুশা হাটতে হাটতে ইমাকে বললো,
-কেমন ছেঁচড়া ছেলেরে কথা বরতে চাইছি না তার পরও কেমন কথা বলতে চায় । শুধু মাএ রিফাত ভাইয়ের ভাই দেখে কিছু বলি নি কিছু ।
নুশার কথায় ইমা বিরক্ত হয়ে বললো,
-তো কি হইছে এখানে কি এমন হইছে যে তুই ছেলেটাকে ছেঁচড়া বলতাছোস। ছেলেটা তো আত্মীয় হয় বলেই তো এমনে কথা বরতে চাইছে । তুই না কেমন জানি তোর সায়ান ভাইয়ার সাথেও তুই এমন ভাবে কথা বলিস।
-এই মামাতো ভাই শব্দ টাই সহ্য হয় না আমার।
-হইছে ভাব , তোর খালি ভাবই।
-কি আমি ভাব ধরি।
-অবশ্যই ধরছ ।
-যা তুই আমার সাথে কথা বলবি না একদম ।
ইমার সাথে রাগ দেখিয়ে নিজের রুমে চলে আসলো নুশা । রুমটা অন্ধকারে আচ্ছন্ন । কিন্তু তার এখন লাইট জ্বালাতে একদম ইচ্ছে হচ্ছে না । চোখ ভারি ভারি লাগছে আর হারলা জ্বালা করছে চোখ তাই কোনোরকম বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো অর্ধেক শরীর বিছানায় অর্ধেক শরীর বাহিরে । কেনো জানি কিছুই ভালো লাগছে না। কোনো কিছুর শূন্যতা মনে হচ্ছে কিন্তু কিসের শূন্যতা মনে হচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে হটাৎ চোখে ঘুম চলে আসলো তখনই খেয়াল করলো নুশার মুখের কাছে গরম বাতাস তাই তাড়াতাড়ি চোখ খুলে ফেলে দেখে সব অন্ধকার কিছু দেখা যাচ্ছে না । বিছানা থেকে উঠতে যাবে কিন্তু দেখে শরীরের উপর পর্বতসমান ভারী কিছু । অস্থির চিওে হাত নাড়াচাড়া দিতেই হটাৎ হাত দুটি কেউ বিছানার সাথে চেপে ধরলো। নুশা চিৎকার দিয়ে উঠে কিন্তু তার চিৎকার তার কানেই যায় না কারন চিৎকার দেওয়ার আগেই কেউ একজন তার মুখ চেপে ধরলো। প্রচন্ড ভয়ে শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে, গা ছমছম করছে । হঠাৎ কানের কাছে একটা ফিসফিস শব্দ তরঙ্গ এলো। খুবই ফিসফিস ”
‘ ব্লাক ডাইমন্ড কেনো আমাকে এতো পুরাও তুমি….!
চলবে,,,
জানি না কেমন হয়ছে অনেক বানান ভুল আর সাজানো ভুল হইছে তার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখীত আর যাদের কাছে গল্প টা বিরক্ত লাগলে তারা গল্প টা সম্পূর্ণ ভাবে এরিয়ে চলেন কারন কয়েক জনের জন্য আমি গল্প টা লেখা বন্ধ করবো না।
আসসালামু আলাইকুম