তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি লেখক-এ রহমান পর্ব ২৫

0
787

#তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২৫

থমথমে পরিবেশ। সবার চোখে মুখে কৌতূহল। দৃষ্টি ইভানের দিকে স্থির। সেই দৃষ্টিতে এক রাশ প্রশ্নের সাথে অপেক্ষা। ইভান নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। সবার অপেক্ষার অবশান ঘটিয়ে ইভান সেই কাঙ্খিত বাক্যটা আবারো উচ্চারণ করলো
–আমার এই এঙ্গেজমেন্টে আপত্তি আছে।

ইমতিয়াজ রহমান সরু চোখে তাকিয়ে বলল
–কেন? এই নিয়মটা তো অনেক আগেই পালন করা হয়ে গেছে। এখন শুধু আমরা চাইছি একটা আয়োজন করে সবাইকে জানিয়ে দিতে যে এটা কোন জোর করে তৈরি হওয়া সম্পর্ক নয়। তোমরা দুজনি এই সম্পর্কটাকে শ্রদ্ধা করো। সবার মনের সন্দেহটা দূর করতেই এই আয়োজনটা। কিন্তু এখানে তোমার আপত্তির কারণটা ঠিক কি ইভান?

ইভান দৃষ্টি নিচে রেখেই বলল
–তুমি ঠিক বলেছ আব্বু। এই নিয়মটা একবার হয়েই গেছে এখন আর নতুন করে একি নিয়ম পালন করার তো দরকার নেই।

এবার ইভানের দাদি মুখ খুললেন। তিনি গম্ভীর ভাবে বললেন
–তুমি ঠিক কি বলতে চাইছ দাদু ভাই।

ইভান খুব শান্ত ভাবে বলল
–আমি আগামি শুক্রবার কোন এঙ্গেজমেন্ট না! বিয়ে করতে চাই। আমি ঈশাকে অনেক আগেই আংটি পরিয়েছি আর সেটা সবার সামনে। আমাদের সম্পর্কটা নিয়ে মোটামুটি সবাই জানে। অবশ্য জানার মাঝে অনেকেরই প্রশ্ন আছে। অনেকেই ভাবে জোর করে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বিয়েটা হয়ে গেলেই এসব নিয়ে কারও আর কোন কথা থাকবে না। সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

ইভান থেমে গেলো। ঈশা শক্ত করে ওড়না খামচে ধরল। এই মানুষটাকে সে যত দেখে ততই অবাক হয়ে যায়। বারবার তার ভালবাসার নজির এমন ভাবে প্রকাশ করে যে ঈশার সমস্ত অনুভুতি সেসবের কাছে তুচ্ছ হয়ে দাড়ায়। বারবার ঈশাকে হার মেনে দমে যেতে হয় তার ভালবাসার কাছে। যত অপরাধ যত অভিযোগই থাকনা কেন দিনশেষে তার ভালবাসার ছায়াতলেই ঈশার ছোট্ট আবেগ অনুভুতির জায়গা হয়। সমস্ত রাগ অভিমান মনের গভির থেকে শ্রদ্ধা হয়ে বের হয়ে আসে। ইভানের কথা শুনে এতক্ষন সবাই চুপচাপ ছিল। ঈশার বাবা একটু চিন্তিত হয়ে বললেন
–কিন্তু ঈশার এখনো ফাইনাল পরিক্ষা বাকি আছে। ওর পড়ালেখা…।

ইভান তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল
–আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি আঙ্কেল। বিয়ের পরেও ঈশা পড়ালেখা করতে পারবে। আর আমি আপনাকে এতোটুকু গ্যরান্টি দিতে পারি ঈশা ও বাড়িতেও যেরকম ছিল এই বাড়িতেও ঠিক তেমনই থাকবে। এতোটুকু ভরসা আমার উপরে আপনার রাখাই উচিৎ।

ইভানের কথা শুনে ঈশার বাবা একটু লজ্জা পেলেন। লজ্জিত ভঙ্গিতে বলল
–ছি! ছি! বাবা। আমি আসলে ওরকম কিছু ভেবে বলিনি। আমি তো শুধু বলতে চেয়েছিলাম যে পরীক্ষাটা শেষ হলে অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। এই বাড়িতে আমার মেয়ে কতটা ভালো থাকবে সেটা আমিও হয়তো আন্দাজ করে বলতে পারব না। তুমি কিছু মনে করনা বাবা।

ইভান হাসল। শান্ত ভাবে বলল
–আমিও ঠিক ওভাবে বলতে চাইনি আঙ্কেল। আসলে আমাদের বিষয়টা নিয়ে সবাই কনফিউজড। অনেকেই সেসবের সুযোগ নিচ্ছে।

শেষের কথাটা দাতে দাত চেপে বলল। ঈশা হালকা কেঁপে উঠলো। তার বুঝতে বাকি নেই কেন কথাটা বলল ইভান। থেমে আবার বলল
–সে জন্যই আমি বুঝে শুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর এই বিষয়ে আমি এবার কারও কোন আপত্তি শুনতে চাই না।

ইমতিয়াজ রহমান মাথা নিচু করে ভাবছেন। তিনি এখনো কোন কথা বলেন নি। ইভান তার দিকে তাকিয়ে বলল
–আব্বু তুমি জানো আমি না ভেবে কোন সিদ্ধান্ত নেই না। আমার এরকম সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনেও কোন না কোন কারন আছে। সব কারন খুলে বলা সম্ভব না। ধরে নাও সবার ভালোর কথা ভেবেই আমি এমন টা করতে চাইছি। এই বিষয়ে কারও কোন আপত্তি থাকলে আমি সত্যিই খুব হতাশ হবো। আর আমাকে আমার আর ঈশার ভালোর কথা ভেবে অন্য কোন উপায় খুজতে হবে। সেটা কারও জন্য ভালো হবে না।

ইভানের মামা বললেন
–আমরা তোমার কথা বুঝতে পারছি ইভান। কিন্তু এটা অনেক কম সময় হয়ে গেলো না? এতোটুকু সময়ে একটা বিয়ের আয়োজন করা অনেক কঠিন একটা ব্যাপার।

ইভান কোন উত্তর দিলো না। কারন সে তার কথা বলে দিয়েছে। এর পরেও আর কোন কথা বলার থাকে না। বেশ কিছুক্ষন পর ইমতিয়াজ রহমান মুখ খুললেন। বললেন
–সিদ্ধান্ত টা কি তোমার একার না দুজনের? ঈশাও কি তোমার সাথে একমত?

ইভান খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
–আমি ঈশার মতামতের গুরুত্ত দিচ্ছি না। আমি মনে করি ঈশা যেহেতু বিয়েতে রাজি তাহলে ওর কোন সমস্যা থাকার কথা না। কারন এক সপ্তাহ পরেই হোক বা এক বছর পরেই হোক বিয়েত আমাকেই করতে হবে। এখন তোমাদের যদি মনে হয় ওর মতামত নেয়ার দরকার আছে তাহলে তোমরা আলাদা করে ওকে জিজ্ঞেস করতে পারো।

ইমতিয়াজ রহমান ইভানের হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্তের কারন বুঝতে পারলেন না। কিন্তু তিনি এটা বুঝলেন তার ছেলে আবেগের বশে কোন ভুল সিধান্ত নিবে না। নিশ্চয় এমন কোন কারন আছে যার কারনে সে এরকম করতে চাইছে। তিনি গম্ভীর ভাবে বললেন
–আলাদা করে নয়। আমি ঈশাকে সবার সামনেই জিজ্ঞেস করতে চাই। ঈশা কি ইভানের সাথে একমত?

সবার সামনে এরকম হঠাৎ করে প্রশ্ন করায় ঈশা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। কি বলবে বুঝতে পারছে না। এর আগেও ঠিক এভাবেই ইভান জোর করে তার উপরে নিজের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছিল। এবার কিন্তু সেরকম কিছুই নয়। সেও চায় ইভান কে বিয়ে করতে। এর মাঝেই ইভানের মা বলল
–ঈশা রাজি হয়ে থাকলেও একটু বেশিই তাড়াহুড়ো হয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় আমাদের এটা নিয়ে একটু ভাবা উচিৎ। সব দিক বিবেচনা করে প্রস্তুতি নেয়া উচিৎ। একটা বিয়ে ছোট খাট কোন ব্যাপার না। অনেক আয়জনের ব্যাপার আছে। এর মাঝে ঈশাকেও একটু সময় দেয়া হোক ভাবার জন্য।

ইভান বাধা দিয়ে বলল
–আমি আর কোন সময় দিতে চাই না। এটাই অনেক বেশী হয়ে গেছে। আমার কোন প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই। তোমাদের প্রয়োজন থাকলে সেটা এই সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে। এটাই আমার শেষ কথা আম্মু।

ইমতিয়াজ রহমান এবার বেশ বিরক্ত হলেন। একটু ঝাঝাল গলায় বললেন
–এতো তর্ক বিতর্কের তো কোন প্রয়জন নেই। আর প্রস্তুতিরও কোন প্রয়োজন নেই। ওদের এই বিয়ে নিয়ে এমনিতেও নাটকীয়তার শেষ নেই। যদি ঈশাও ইভানের সাথে একমত হয় তাহলে ওরা চাইলে আজই বিয়ে দিবো। ওদের জীবন ওদের সুখ। আমি ঈশার কাছে এখনি জানতে চাই। ও কি চায়?

ঈশা শক্ত করে ওড়না খামচে ধরল। বুকের ভিতরের ঢিপঢিপ শব্দটা বেড়ে গেছে অনেক। হাত পা কাঁপছে। গা ঘেমে যাচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আর চুপ করে থাকা যায়না। জোরে শ্বাস নিয়ে বলল
–আমার কোন আপত্তি নেই।

কথাটা কানে আসতেই এতক্ষনের শ্বাসরুদ্ধ কর পরিস্থিতিতে আটকে রাখা তপ্ত শ্বাসটা ছাড়ল ইভান। ঈশা বুঝতে পারলো ইভান মুখে যত কথাই বলুক তার এই ছোট্ট কথাটার জন্য অপেক্ষা করছিলো। সবাই ঈশার কথার উপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্ত নিলো। ইভানের বিয়ে আর ইফতি মিরার এঙ্গেজমেন্ট এক সাথেই হবে। ঈশার চোখ ছলছল করছে। চোখ বন্ধ করতেই কোলের উপরে পাতিয়ে রাখা হাতটার উপরে পানি টুপ করে পড়লো। ঈশা হাতটা বন্ধ করে ফেললেও ইভান সেদিকে আড় চোখে তাকাল। ঠোটের কোনে ক্ষীণ হাসি। আজ ঈশা আনন্দে কাঁদছে। আর এই আনন্দের কারন ইভান। এটা ভেবেই ইভানের মনটা হালকা হয়ে গেলো। ঈশাকে সে সব সুখ দিতে চায়। জীবনের সব চাওয়া পুরন করতে চায়। হয়তো শুরুটা হয়ে গেছে। যার কারনেই মেয়েটার চোখে আজ তার জন্য পানি। সবাই কথা শেষ করে উঠে গেলো। ঈশা আর ইভান পাশা পাশি বসে থাকলো। অনেক্ষন ধরেই দুজন চুপচাপ বসে আছে। কেউ কোন কথা বলছে না। দুজনের নিরব অনুভুতির আদান প্রদান চলছে। মাঝখানে মান অভিমানের খেলা। এটাকে মান অভিমান ঠিক কতোটুকু বলা চলে সেটাই প্রশ্ন। দুজন দুজনের মনের ভাষা ঠিকই বুঝতে পারছে। আর যেখানে মনের ভাষায় কথা হয় সেখানে মুখের ভাষা আদৌ কি গুরুত্বপূর্ণ? ঈশা ঘাড় ফিরিয়ে একবার ইভানের দিকে তাকাল। ইভান নিচের দিকেই তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি খুব শান্ত। সে এখানে কেন বসে আছে সেটা ঈশা জানে। ইভান এখান থেকে উঠে চলে গেলে ঈশা মনের সুখে কাঁদতে শুরু করে দিবে। জতক্ষন না তার মনে হয়েছে এখন থামা দরকার ততক্ষন কাদতেই থাকবে। আর ইভান তার চোখে পানি কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনা। হোক না সেটা খুশির কান্না। একফোঁটাই যথেষ্ট। এর বেশী সহ্য করা যে তার জন্য কষ্টকর। তাই তো অভিমান নিয়েই পাশে বসেই প্রেয়সীকে নিরব অনুভুতি দিয়েই শান্তনা দিচ্ছে “আমি আছি তো। তোমাকে সব সময় আগলে রাখবো।“

ঈশা ইভানের সাথে কথা বলার প্রস্তুতি নিলো মনে মনে। নিজের মুখ খুলে কিছু বলার আগেই ইভান সেটা বুঝে যায়। আর পাশ থেকে টিস্যু বক্সটা ঈশার হাতে ধরিয়ে দিয়ে উঠে চলে যায়। ঈশা হতাশ হয়ে বসে ইভান কে যেতে দেখছে।

সেদিনের ওই ঘটনায় কার দোষ কতোটুকু সেটা নিয়ে ইভানের মাথা ব্যাথা নেই। ঈশার প্রতি তার অভিযোগ ঈশা তাকে মিথ্যা বলেছে। ইভান অপ্রত্যাশিত ভাবে সেখানে না গেলে কিছুই জানতে পারতো না। আর যদি কোন বিপদ হতো সেটা থেকেই বা কিভাবে ঈশা নিজেকে বাচাত। ইভান সব সময় তাকে আগলে রাখতে চায়। কিন্তু ঈশা সেটা না বুঝেই সব সময় বোকামি করে। ইভান কে এভাবেই কষ্ট দেয়। তাই ইভান এবার ঈশার কাছ থেকে ইচ্ছা করেই নিজেকে দূরে রেখছে যাতে ঈশা ভবিষ্যতে কোন ভুল করার আগে বারবার ভাবে।

চলবে……

(এতদিন যারা গল্পটা পড়ে আসছেন আজ একটু মন থেকে কমেন্ট করেন। গল্প নিয়ে আপনাদের অনুভুতি আমি জানতে চাই। এটা আমার অনুরধ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here