#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_১২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
আরহাম আর আরুহি খান বাড়িতে ঢুকেই দুটো নতুন মুখ দেখতে পেল। আনোয়ার খানের পরিবারের সকলেই এসেছে সাথে আখি খান আর নেহমাত শেখ ও। ছেলেটার পরনে স্যুট প্যান্ট আর মেয়েটার দামী থ্রিপিস। আরহাম আর আরুহি এগিয়ে গেল।আরহাম সকল কে সালাম দিল,,
“আসসালামু আলাইকুম!”
আনোয়ার খান বললেন,,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
“কেমন আছেন আপনারা?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি তোমাদের কি খবর?”
“জি আমরাও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”
তখন নাহিয়ান খান বললেন,,
“তোমাদের তো সকালে আসতে বলেছি তোমরা দেরি করলে কেন?”
“আসলে আংকেল আমার কিছু কাজ ছিল ওগুলো করতে করতেই দেরি হয়ে গেল।”
“ওহ আচ্ছা তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো!”
আরুহি আর আরহাম গিয়ে বসে পরলো। তখন আনোয়ার খান বললেন,,,
“ওরা হচ্ছে আঁখির ছেলেমেয়ে । ওরা এতদিন লন্ডনে ছিল। তাই আরশির বিয়েতে আসতে পারে নি। ও হচ্ছে রবিন আর ও রুহানি।”
তখন আরুহি বলল,,
“আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া আপু!”
রবিন মুচকি হেসে বলল,,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
আর রুহানি মুচকি হাসি দিলো। তখন আফরিন আরুহির কানে কানে বলল,,
“আরুহি এই ছেলে মেয়ে দুটোকে কেমন যেনো লাগছে। মেয়েটা তো যেমন তেমন ভালোই লাগছে কিন্তু ছেলেটাকে কেমন যেনো লাগছে দ্যাখ কেমন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। ”
তখন আরুহি আস্তে আস্তে বলল,,
“না জেনে তোমরা কারো প্রতি খারাপ ধারণা রেখো না এটা সবচেয়ে বড় গুনাহ।
_সহীহ বুখারী – ৫১৪৩
“সেটা অবশ্য ঠিক! আসতাগফিরুল্লাহ। আল্লাহ আমাকে মাফ করুন। আমিন!”
“হুম হয়েছে এবার থেকে কারো ব্যাপারে কথা বললে বুঝে শুনে বলবি। আমাদের সবারই উচিত বুঝে শুনে কথা বলা।”
“হুম বুঝতে পেরেছি। জাযাকাল্লাহ খয়রান!( আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক)
ওয়া আংতুম জাযাকুমুল্লাহ খয়রান। (আল্লাহ আপনাকেও উত্তম প্রতিদান দান করুক)
“শুকরিয়া।”
“হুম কিন্তু আমার এখানে আর ভালো লাগছে না। ”
“আমারও!”
তখন মিস্টি গেল ওদের কাছে। মিস্টি গিয়ে বলল,,,
“আন্টি চলো এখন ছাদে আমার সাথে খেলবে। দেখো না আমার সাথে খেলার কোন মানুষ নেই সবাই ব্যস্ত।”
আরুহি মনে মনে খুব খুশি হলো। এমনিতেও আনোয়ার খানের সাথে কথা বলতে কেমন যেন তারওপর নেহমাত শেখ আঁখি খান। তাই ও বলল,,,
“হ্যা সোনা খেলবো তো! চলো আমরা যাই রুপা ভাবি তুমি ও চলো রুহানি আপু আপনিও চাইলে আমাদের সাথে জয়েন হতে পারেন।”
তখন রুহানি বলল,,,
“হ্যা চলো যাই । এমনিতেও বড়দের মাঝে বসে থেকে আমি কি করবো। তার থেকে বরং তোমাদের সাথে ভালোভাবে পরিচিত হয়ে নিই।”
“ঠিক আছে চলুন।” আরুহি মিস্টির হাত ধরলো। তখন মিস্টি হেসে আবরারের দিকে তাকালো।আসলে আবরার বুঝতে পেরেছিল আরুহির ভালো লাগছে না। তাছাড়া ওর রবিন নামক ছেলেটাকে খুব একটা ভালো লাগে নি। তাই মিস্টিকে পাঠিয়েছে যাতে আরুহি এখান থেকে চলে যেতে পারে।
মেয়েরা ছাদে গেল মিস্টি একপাশে খেলতে লাগলো। রবিন ও বাকি ছেলেদের সাথে গিয়ে কথা বলতে লাগলো।আসলে ছেলেটাকে যেমন দেখা যায় তার থেকে ভালো ছেলেটা। মেয়েরা সবাই মিলে একসাথে কথা বলতে লাগলো। আরুহির রুহানি কে বেশ ভালো লাগলো। খুব সহজেই সবার সাথে মিশে গেছে। হুট করে আরুহি বলল,,,
“রুহানি আপু আপনারা কি অনেক আগে থেকেই লন্ডনে থাকতেন?”
“আমার আর রবিন এর এসএসসি পরীক্ষার পর বাবা লন্ডনে পাঠিয়ে দেয়।’
“আপনারা তো টুইন তাই না।”
“হুম আমরা টুইন!”
“আপনাদের তো পড়াশোনা শেষ তাই না।”
“হ্যা শেষ। আসলে আরশির বিয়ের সময় আমাদের এক্সাম ছিল তাই আসতে পারিনি। তাই এখন দেশে আসতেই বাবা বললেন সবার সাথে পরিচিত হতে।”
“ওহ আচ্ছা।”
ওরা সবাই মিলে আড্ডা দিতে লাগল। সন্ধ্যা হয়ে গেছে তা দেখে আরুহি বলল,,,
“এখন চলো সবাই নিচে যাই মাগরিবের আজান দিয়ে দেবে নামাজ পরতে হবে। আচ্ছা রুহানি আপু আপনি নামাজ পড়েন?”
“আগে পরতাম কিন্তু কয়েক বছর ধরে পড়া হয়না। আগে মা রোজ ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করতো নামাজ পড়েছি কিনা। তাই রোজ নিয়ম করে পড়াও হতো। কিন্তু কয়েক বছর হলো মা জিজ্ঞেস করে না তারপর দুনিয়ার মোহে পরে নামাজ টা ঠিক পড়া হয় না। নফস এর কাছে হেরে গেছি।”
আল্লাহ তায়ালা আল কোরআন এ বলেছেন,,
“নিশ্চয়ই নামাজ সকল খারাপ কাজ হতে বিরত রাখে।”
নামাজ হচ্ছে প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ কাজ। আমাদের ফরজ কাজ গুলো অবশ্যই করা উচিৎ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য এতকিছু করেন আর আমরা তার জন্য এইটুকু করতে পারবো না। আল্লাহ তায়ালা কিছু বিধিনিষেধ বলে দিয়েছে এগুলো মেনে চললে আমাদের জীবন সুন্দর। বেনামাজীদের জন্য রয়েছে কবরের কঠিন আজাব ও জাহান্নাম। যারা নামাজ আদায় করে না তাদের ওপর আল্লাহর রহমত বরকত কিছুই থাকে না। প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের আলাদা আলাদা ফজিলত রয়েছে। আমাদের পত্যেক ভাই ও বোনদের আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলা উচিত।
নামাজের সাথে নিজের সম্পর্ক গভীর করুন। শান্তির অভাব হবেনা ‘ইনশাআল্লাহ’!’
“আমি কেন আমার আল্লাহর ইবাদত করব না, তিনি’ই তো আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর কাছেই আমাকে ফিরতে হবে।
সূরা: ইয়াসিন,- ২২
সব কথা সবাই মন দিয়ে শুনলো। আরুহিকে খুব পছন্দ হয়েছে রুহানির।রুহানি আরুহির কথা শুনে বলল,,,
“তুমি ঠিক বলেছো আরুহি ধন্যবাদ। আমাকে এত সহজ করে বোঝানোর জন্য। আমি ইনশাআল্লাহ এখন থেকে নিয়মিত সালাত আদায় করার চেষ্টা করব।”
“আসলে যখন স্যার আমাদের উপদেশমূলক কথা বলেন। তখন আমাদের ভেতর অন্যরকম একটা জিদ তৈরি হয় যে আজ আমরা স্যারের কথা মতো সেগুলো করবো। আমাদের কথা গুলো শুনতে খুব ভালো লাগে কিন্তু যখন আমরা ক্লাস থেকে বের হই তখন আমরা সব ভুলে যাই। ”
রুহানি কথার মানে বুঝতে পারলো। আর বলল,,,
“এটা কিন্তু একশত ভাগ সত্য কথা।তবে আমি এখন থেকেই আমার নামাজ শুরু করতে চাই। দেখো আজান দেওয়ার সময় ও হয়ে গেল। ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়িই নিজেকে নামাজের সাথে সম্পৃক্ত করতে পারবো।”
“ইনশাআল্লাহ আপু খুব ভালো।”
ওরা সকলে নিচে আসলো। রুহানি আফরিনের থেকে ড্রেস নিয়ে চেন্জ করে নামাজ আদায় করে নিল। ওদিকে ছেলেরাও নামাজ পড়ে নিয়েছে। আরুহিরা নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ বসে তারপর নিচে নামলো। আরুহিরা নিচে নেমে সোফায় বসলো। তখন আরহাম বলল,,,
“দাদুভাই আপনারা কি আংকেল দের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন নাকি অন্য কোন কাজেও এসেছেন। না মানে আপনারা তো বেশি এদিকপানে আসেন না। তাই বলছিলাম।”
তখন আনোয়ার খান বললেন,,
“তেমন কোন কারন নেই। রবিন আর রুহানি লন্ডনে ছিল ওরা পড়াশোনা শেষ করে বাংলাদেশ এ এসেছে। তাই নেহমাত আর আঁখি চাইছিল তোমাদের সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দেবে। আর এখানে কোনদিন আসা হয় না এটাও দেখা হয়ে যাবে।”
“তারমানে আমাদের শ্রদ্ধেয় ফুপা ফুপি তাহলে এখানে আসতে চেয়েছেন।”
তখন নেহমাত শেখ বলল,,,
“ঐ তোমাদের একটু দেখতে আসলাম। ”
“খুব ভালো করেছেন।”
তখন আরুহি বলল,,,
“আন্টি আমাদের এখন যেতে হবে। তাহলে আমরা আসি?”
তখন নাসরিন খান বললেন,,,
“এখন তোমাদের কোথাও যাওয়া হবে না। তোমাদের দাদুভাই এসেছে আজ তোমরা আমাদের বাড়িতেই থাকবে।”
“সরি আন্টি আজ সম্ভব না। এখন ভাইয়াকে অফিস যেতে হবে। ভাইয়ার বস তো ভাইয়াকে ছাড়বে না। কত বলে কয়ে এখানে এসেছে আর বলেছে আটটার আগেই অফিসে পৌঁছে যাবে। আমরা সকালেই আসতে চাইছিলাম কিন্তু ভাইয়ার কাজের জন্য লেট হলো।”
‘তুমি তাহলে আজ থাকো। বাড়িতে গিয়ে তো একাই থাকবে। তার থেকে বরং সবার সাথে এখানেই থাকো।”
তখন আরহাম বলল,,,
“সরি আন্টি আরুহিকে আমি এখানে রেখে যেতে পারবোনা। তাছাড়া ও আমার সাথে অফিসে যাবে। ওর একটা অ্যাসাইনমেন্ট আছে সেটা ওখানে বসে শেষ করবে। রাত দশটার দিকে আমার কাজ হয়ে যাবে তখন আমরা বাড়ি যাবো একসাথে। ”
তখন আফরিন বলল,,,
“আরে ভালো কথা মনে করেছেন। যদিও আমি কিছু টা করে রেখেছি কিন্তু অ্যাসাইনমেন্ট টা পুরো শেষ হয় নি। কালকেই জমা দিতে হবে। আমারও অ্যাসাইনমেন্ট টা শেষ করতে হবে।”
তখন আনোয়ার খান বললেন,,,
“আরুহি আজ থাকুক না। ও থাকলে আমাদের ভালো লাগবে।”
তখন আরুহি বলল,,,,
“সরি দাদুভাই আজ পসিবল না। আমাকে যেতে হবে
পুরো অ্যাসাইনমেন্ট টা কম্পিলিট করতে হবে।”
“ঠিক আছে তোমরা যা ভালো বুঝো। এমনিতেও তো তোমাদের আমার কথা শুনো না।
তখন নাসরিন খান বললেন,,,
“তোমরা যাবে ঠিক আছে কিন্তু না খেয়ে আমি যেতে দিচ্ছি না।”
“আরে আন্টি সবে সাতটা বাজে এটা কোন খাওয়ার টাইম হলো নাকি আমরা অফিসে ডিনার করে নেব।”
“ওকে খেতে হবে না আমি খাবার প্যাক করে দিচ্ছি। অফিসে গিয়ে খেয়ে নিও।এটা মানা করতে পারবে না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
তখন রুহানি এসে বলল,,
“আরুহি তোমার সাথে পরিচিত হতে পেরে সত্যি আমি আনন্দিত।”
“সেইম টু ইউ।”
আরুহি ওর দাদুভাই আর দাদী জান এর সামনে গিয়ে বলল,,,
“আপনারা তো আপনাদের ছেলের বাড়িতে কোনদিন যান নি। যদি আপনাদের ইচ্ছে হয় দেখতে আপনাদের ছেলে কোন বাড়িতে থাকতো। কি রকম বাড়ি বানিয়েছেন। তাহলে আমাদের বাড়িতে যেয়েন।আর গেলে অবশ্যই জানাবেন।”
আরুহি উনাদের কথা শোনার অপেক্ষা না করেই। ওখান থেকে চলে গেল। নাসরিন খান খাবার প্যাক করে দিয়েছে। ওরা সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল বাড়ি থেকে। তখন আবরার ওদের পেছনে গেল। গাড়ির কাছে যেতেই আবরার বলল,,,
“ভাইয়া নেক্সট প্ল্যান কি?”
তখন আরহাম বলল,,
“আরে আবরার এতো তাড়া কিসের এসেছে দু এক দিন খাক থাক তারপর কিছু একটা প্ল্যান করা যাবে।”
“তোমার কি মনে হয় ভাইয়া তারা শুধু এখানে বেড়াতেই এসেছে নাকি অন্য কোন মোটিভে?”
“তাদের যতটুকু চিনি বড় কোন মোটিভ ছাড়া আসে নি। ”
“ওকে আমি বের করছি কি করবে।”
“হুম ভালো!”
“আচ্ছা ভাইয়া ঠিক আছে। তুমি একটু গাড়িতে বসো আমার মিস আরুহির সাথে কথা আছে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
আরহাম গাড়িতে ভেতরে গেল। আবরার আরুহির কাছে এসে বলল,,
“মিস আজ তো আপনার সাথে কথা বলার স্কোপ-ই পেলাম না।”
তখন আরুহি মুচকি হেসে বলল,,,
“তা কথা বলার জন্যই কি ভাইয়াকে গাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন!”
“আরে না তেমন কোন ব্যাপার না। আসলে আরহাম ভাইয়ার ব্যাপারে কথা বলতে চাইছিলাম।”
“কি বলবেন বলুন?”
“আরহাম ভাইয়া কি কাউকে পছন্দ করে । না মানে কেউ একজন ভাইয়া কে অনেক পছন্দ করে তাই যদি ভাইয়ার কাউকে পছন্দ না থাকে তাহলে তার পথটা ক্লিয়ার থাকতো।”
আরুহি আবরারের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেল। আরুহি আবরারের পেছনে তাকিয়ে দেখলো আফরিন একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে । তা দেখে আরুহি মুচকি হেসে বলল,,,
“হ্যা ভাইয়া একজন কে খুব পছন্দ করে আর তাকেই বিয়ে করবে। আমার ভাই একমাত্র নিশি আফরিন কেই বিয়ে করবে আর কাউকে না। কারন ভাইয়া তাকে খুব পছন্দ করে।এবার বুঝতে পেরেছেন মিস্টার।”
আবরার আর আফরিন কি রিয়্যাক্ট দেবে ভুলে গেল। আরুহি আফরিনের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল। আবরার আরুহির দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো আফরিন কে দেখেই ও মুচকি হাসলো। কারন কাল আফরিন -ই আবরার এর রুমে এসে আরহাম এর কথা জানিয়েছে। তাই আজ আবরার আরুহির কাছে জিজ্ঞেস করলো। আফরিন দৌড়ে এসে আরুহিকে জরিয়ে ধরে বলল,,
“তুই জানতি আমিই সেই ব্যক্তি যে তোর ভাইকে পছন্দ করি!”
তখন আরুহি বলল,
“আমার ভাই একজন সি আই ডি অফিসার। তার চোখ কান সবসময় খোলা থাকে। এখানে যা হলো সব ভাইয়া ভেতর থেকে শুনেছে।”
একথা শুনে আরুহি লজ্জা পেল।তখন আরহাম গাড়ি থেকে মাথা বের করে বলল,,
“ওহে লজ্জাবতী আমার উনি। আমিও আপনাকে অনেক পছন্দ করি। কিছুদিন অপেক্ষা করুন তারপর আপনার বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে আসবো আপনাকে আপন করে নিতে। ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।”
একথা শুনে আফরিন লজ্জায় তাকাতে পারলো না। তবুও বলল,,
“শেষ বেলায় হলেও আপনি আমারই হবেন এমন নিশ্চয়তা পেলে; আমি মৃত্যুশয্যা অব্দি অপেক্ষা করতে পারি!”
“মৃত্যুশয্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। কিছু দিন অপেক্ষা করলেই হবে।”
এ কথা শুনে আফরিন লজ্জায় তাকাতে না পেরে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেল। সবাই আফরিনের কান্ড দেখে হাসলো। তখন আরহাম আবরার কে বলল,,
‘আবরার তুমি একজন স্পাই অফিসার হয়ে এরকম বোকামি কেমন করে করলে। আরে ভাই আমায় নিয়ে কথা বলবে সে ঠিক আছে। সেটা তো আমার থেকে দূরে যেয়ে করবে । আমার গাড়ির কাচ খোলা আমার কানে সবই আসছে।”
এ কথা শুনে আবরার মাথায় হাত দিল।তখন আবরার বলল,,,
“আমি তোমার বোনকে আগে থেকেই পছন্দ করি। আমি চাইছিলাম আফরিন আরেকটু বড় হোক। আর আমাদের শত্রু দের শেষ হোক তারপর বলবো। আমি ওনাকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাইনা। কিন্তু তোমার বোন তো আমার থেকেও ফাস্ট।তাই কাজটা তাড়াতাড়িই করতে হবে মনে হচ্ছে।
তখন আরুহি হেসে বলল,,
“আচ্ছা আজ আসি পরে আবার দেখা হবে। সত্যিই ভাইয়ার এখন দেরি হয়ে যাবে। আল্লাহ হাফেজ।”
“ওকে আল্লাহ হাফেজ ফি আমানিল্লাহ!”
“ইনশাআল্লাহ।”
আবরার ওদের কে বিদায় দিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো। ভেতরে যেতেই সবকিছু কেমন যেনো থমকানো দেখতে পেল। আফরিনের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর মুখটা মলিন হয়ে আছে। একটু আগেই তো খুশি ছিল। হুট করে কি হলো। তখন নেহমাত শেখ আবরার কে দেখে বলল,,,
“আরে আবরার যে তুমি তো এখানে ছিলে না। আমরা সবাই আফরিন আর রবিনের বিয়ের কথা বলছিলাম।”
তখন আবরার অবাক চোখে আফরিনের দিকে তাকালো। আফরিন অসহায় চোখে আবরারের দিকে তাকালো। ওর চোখে পানি নিচের দিকে তাকিয়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে। তখন আবরার বলল,,,
“তারমানে আপনাদের এখানে আসার আসল কারন হচ্ছে বিয়ের কথা বলতে আসা। তাই তো বলি যারা আমাদের বাড়িতে কোনদিনও আসে না। তারা হুট করে আমাদের বাড়িতে কেন? এ বিয়ে হতে পারে না। এ বিয়ে হবে না।”
এ কথা শুনে ড্রয়িংরুমে ছোটখাটো একটা বোমা ফুটলো মনে হয়। নেহমাত শেখ বলল,,,
“তা কারন টা কি জানতে পারি?”
“কারন হচ্ছে আমার বোন একজন কে অনেক পছন্দ করে। আর যাকে পছন্দ করে সেও আমার বোনকে পছন্দ করে। সে আমার বোনের সাথে বিয়ের কথা বলতে কয়েকদিন পরেই আমাদের বাড়িতে আসবে।”
তখন রবিন বলল,,
“বিয়ের আগে ওরকম হয়েই থাকে। বিয়ে হয়ে গেলে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।’
“হোয়াট ডু ইউ মিন বিয়ের আগে ওরকম হয়েই থাকে। আমার বোন জীবনে প্রথম কাউকে পছন্দ করেছে আর তার সাথেই বিয়ে করবে কথা দিয়েছে ।আমার বোন অন্যদের মতো সো কল প্রেম করে নি। যে এমন ভাবে বলছেন বিয়ের সব ঠিক হয়ে যাবে। আর যাকে পছন্দ করে সেও কোন গলির রোমিও নয়। যে তাকে ছেড়ে আপনার সাথে আমার বোনের বিয়ে দিতে হবে। সে ও একজন ভালো মানুষ সাথে প্রতিষ্ঠিত এবং আমার বোনকে সুখী রাখার মতো সব কিছুই তার রয়েছে। আর আমি শতভাগ নিশ্চিত তার সাথে আমার বোন সুখেই থাকবে।”
“আপনার কি মনে হয় আপনার বোন আমার সাথে সুখী হতে পারবে না।”
“বিষয় টা তেমন নয়। বিষয় টা আমার বোন একজন কে পছন্দ করে। আর সংসার করার জন্য দুজনের পছন্দ টাও ম্যাটার করে। আপনি শুধু পছন্দ করলে হবে না আমার বোনের ও তো আপনাকে পছন্দ করতে হবে। আমার বোনের পছন্দ আমার জানা। তাই বলছি এ বিয়ে হবে না। ”
“তা কে সেই ছেলে সেটা কি জানতে পারি?”
“ওদের বিয়ের অনুষ্ঠানে আপনাদের দাওয়াত করা হবে তখন দেখে নিয়েন। বিয়েতো তার সাথেই হবে।
এ কথা শুনে রবিন একটু অপমান বোধ করলো। আবরার আফরিনের হাত ধরে ওপরে চলে গেল। আফরিন ও ভাইয়ের সাথে কোনদিকে না তাকিয়ে চলে গেল। নাহিয়ান খান এর পরিবারের সকলে অবাক আফরিন কাউকে পছন্দ করে ভেবে। আবরার আর আফরিন ওপরে যাওয়ার পর ড্রয়িংরুমে নিস্তব্ধতা চেয়ে গেল। তখন আনোয়ার খান বললেন,,
“নেহমাত তুমি বরং রবিনের জন্য অন্য মেয়ে দেখো। আবরার যখন চাইছে না তাহলে আর দরকার নেই। সব থেকে বড় কথা আফরিন অন্য একজন কে পছন্দ করে।”
আনোয়ার খানের কথার জবাবে নেহমাত শেখ কিছু বলতে পারলেন না। তিনি বললেন,,
‘আচ্ছা ঠিক আছে আমরা বরং অন্য মেয়েই দেখবো।”
তখন নাহিয়ান খান বললেন,,,
“আবরারের আচরন এর জন্য দুঃখিত আমরা। ”
“আমরা কিছু মনে করি নি। আপনি প্লিজ দুঃখিত হবেন না। আমাদের কাল একটু কাজ আছে তাই আমরা কালকেই চলে যেতে চাই। বাবারা থাকুক কিছুদিন। আপনারা প্লিজ আটকাবেন না আমাদের।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
আবরার আফরিন কে নিয়ে ওপরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বলল,,
“নিচে এটা কি হচ্ছিল তুই কিছু বললি না কেন? তুই একটু আগে আরহাম ভাইয়া কে মৃত্যুশয্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করবি কিন্তু এখানে এসে মাথা নিচু করে বসে ছিলেন। এই তোর ভালোবাসা।”
তখন আফরিন বলল,,
“সবাই হুট করে এমন ভাবে বলল আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম।তাই কিছু বলতে পারি নি। তবে আমি বলতে চাইছিলাম।”
“ভালোবাসতে গেলে একবুক সাহস আর শক্তি নিয়ে বাসতে হবে। অনেক কিছু সহ্য করার ক্ষমতা রাখতে হবে। তাকে পাওয়ার জন্য সব রকম চেষ্টা করতে হবে। আমি আরহাম ভাইয়া কে বলছি তাড়াতাড়িই যেন আমাদের বাড়িতে আসে সব ব্যবস্থা করতে।”
“থাক এ বিষয়ে উনাকে কিছু বলতে হবে না উনি ওনার সুবিধা মতো আসুক। তুমি যখন একবার বলেছো এ বিয়ে হবে না।তখন আমাদের পরিবার আমাকে বিয়ে দেবে না এখানে। বাবা তোমাকে অনেক মানে শুধু একটা ভুল হয়েছিল তার । তারপর থেকে সব শুধরে নিয়েছে। সে তার ছেলেমেয়ের ওপর আর কিছু চাপিয়ে দেবে না।”
“আমার ভালো লাগছেনা কিছুই তুই এখন ঘর থেকে যা।। আর তোরও নিচে যাওয়ার দরকার নেই। আমি নাদিয়া ভাবিকে বলে দেব তোর খাবার রুমে পাঠিয়ে দেবে।”
“ঠিক আছে !”
“আর হ্যা তুই যে আরহাম ভাইয়া কে পছন্দ করিস সেটা এখন কাউকে বলার দরকার নেই আমি সুযোগ বুঝে সবাই কে পরে বলবো।”
“আচ্ছা।”
আফরিন আবরারের রুম থেকে চলে গেল। তখন আববরার আরুহি কে মনে করে মুচকি হেসে বলল,,,
আমিও একদম পুরোপুরি ডাক্তার হয়ে নিই তারপর তোমার কথা তোমার ভাইয়াকে জানাবো। সাথে তোমাকেও প্রিয়শী,,
“তুমি বকুল হয়ে ছড়িয়ে থেকো আমার উঠোন জুড়ে,
আমি আলতো করে কুড়িয়ে নেবো রাত্রি কি-বা ভোরে ”
______________________
ওদিকে,,,
আজ আরহাম আর A.K এসেছে অফিসে। কাল একটা মিশন আছে ইনফর্মার মাধ্যমে জানা গেছে কাল কিছু নারীকে পাচার করা হবে বিদেশে সেখানে প্রায় পঞ্চাশ জন মেয়ের মতো আছে। সেটা নিয়েই আজ প্ল্যান করছে ওরা। কাল মিশনের মাধ্যমে ওরা আশা রাখছে শুধু মেয়েদের কে উদ্ধার ই নয় বরং যে পাচার করছে তাকেও ধরতে পারবে।
~চলবে,,