#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
আরুহিদের কুমিল্লা থেকে ফিরতে রাত দুটো বেজে গেল। আরুহি আর আরহাম খুব টায়ার্ড ছিল তাই ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পরল। প্রতিদিনের ন্যয় ফজরের সালাত পরলো কিন্তু ক্লান্তিভাবটা না কাটায় আবারো শুয়ে পরলো আরুহি। সাতটার এলার্ম দিয়ে রাখলো যাতে ক্লাসে যেতে পারে এমনিতেই কয়েক টা ক্লাস মিস হয়ে গেছে। কালকেই আমেনা চাচি কে ফোন দিয়ে সব বলে রেখেছিল তিনি সকালে এসে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে ফেলেছে। এলার্ম বেজে উঠলে আরুহির ঘুম ভেঙে গেল ও ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আরহামের রুমে গেল। দেখলো আরহাম উঠে পরেছে। আরহামের সাথে নিচে এসে একসাথে চা খেল। আরুহি বলল,,,
“নেক্সট প্ল্যান কি ভাইয়া?”
“এবার একটু সময় নিয়ে কাজটা করতে হবে। তাড়াতাড়ি করলে চলবে না। এমনিতেও তারা সাবধান হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে আমাদের চুপ থাকাই শ্রেয়। ”
“তা অবশ্য ঠিক মোস্তাক হোসেন এর কি খবর?”
“ঐ যেমনটা ছিল। এসব বাদ দে আমি কিন্তু আবরার কে সব জানিয়ে দিয়েছি। আর ওকে আমাদের কাজে ইনভল্ভ ও করে ফেলেছি।”
“ওয়াও গ্ৰেট! উনি আমাদের সাহায্য করলে আমাদের কাজ করতে আরো সহজ হবে। বাই দা ওয়ে তুমি জানো নিশান আবরার এর মা কে?
“আমি তো ওর মাকে দেখলামই এতে আবার নতুন কি আছে বুঝলাম না।”
“নিশান আবরার এর মাই- ই মায়ের বেস্ট ফ্রেন্ড নাসরিন আফরোজা খান।
“কি! উনিই মায়ের বেস্ট ফ্রেন্ড।”
“হ্যা উনিই প্রাক্তন সাংবাদিক।যে পাঁচ বছর আগে তার কাজ ছেড়েছিলেন। আমি যদি ভুল না হই তাহলে আন্টির চাকরি ছাড়ার পেছনে তাদের হাত রয়েছে। তবে আমি আন্টির সাথে কথা বলার সুযোগ খুঁজছিলাম পাই নি। তাই কথা বলতে পারিনি। তবে এটা ঠিক দেখেছি উনি অদ্ভুত ভাবে আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতো হয়তো কিছু বলার চেষ্টা করতো। কিন্তু বলে উঠতে পারছে না।
“আচ্ছা ঠিক আছে আমি বিষয় টা দেখবো। এখন ওঠ রেডি হয়ে আয় টাইম হয়ে যাচ্ছে তো ক্লাসের। কয়েকদিন মিস গেল।”
“হুম ঠিক বলেছো।”
আরুহি আর আরহাম রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে যে যার কাজে বেরিয়ে পরলো।
___________________
এদিকে,,,
আবরার বাড়িতে আসার পর থেকেই কিছু একটা ভাবছে । আবার মাঝে মাঝে ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসির দেখা যাচ্ছে। আবরার রা সকলে ব্রেকফাস্ট টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছে। হুট করে নাসরিন খান বললেন,,,
“নিশান আমাকে একবার আরুহিদের বাড়িতে নিয়ে যাবে?”
এ কথা শুনে আবরার ওর মায়ের দিকে তাকালো। বাকি সবাই ও একি অবস্থা। আবরার বুঝতে পারল না তার মা আরুহিদের বাড়িতে কেন যেতে চাইছে। আবরার বলল,,,
“তা ও বাড়িতে যাওয়ার কারণ?”
“তোমাদের কাউকে বলা হয়নি আরুহির মা রেহানা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। তবে আমি ওদের ব্যাপারে জানতাম না। বিয়ে বাড়িতেও ওদের সাথে কথা হয় নি। তাই আমি আমাদের বাড়িতে আসার জন্য দাওয়াত করতে চাচ্ছি। ফোনে বললে ওরা যদি না আসে তাই আমি নিজে গিয়ে ওদের আসতে বলতে চাই। ”
আবরার কোন সিন ক্রিয়েট ছাড়াই বলে দিল,,
“ঠিক আছে।”
সকলে আবরারের কথা শুনে অবাক হলো।তখন মিস্টি বলল,,,
“আমিও আন্টিদের বাড়িতে যাবো দাদীজান।”
“ঠিক আছে তোমাকেও নিয়ে যাবো।”
তখন রুবিনা খান বলল,,,
“মেয়েটা ভারী মিস্টি । সবার সাথে কি সুন্দর ব্যবহার করে। ভুল কে ভুল আর ঠিক কে ঠিক বলে। ”
তখন আফরিন বলল,,
“একদম ঠিক বলেছো তুমি। আর ভাইয়া তোমাকে নিয়ে যেতে হবে না। আমি মাকে নিয়ে যাবো। আমি তো এখন ওদের বাড়ি চিনি। চাচি তোমাকেও নিয়ে যাবো। আর ভাবি তুমি কেন একা বাড়িতে থাকবে তোমাকেও নিয়ে যাবো। আমার বান্ধবী বড়লোক না হলেও ওদের বাড়িটা খুব সুন্দর।”
তখন আবরার বলল,,
“উনি দাওয়াত দিতে যাবে পিকনিকে না। এতো গুলো লোকের যাওয়ার দরকার নেই। এমনিতেও তারা মোটে দুজন তাও আরহাম ভাইয়া সবসময় বাড়িতে থাকে না। তোমরা এতো গুলো লোক মিলে গেলে উনার অসুবিধা হতে পারে।”
“আরে আমরা খেতে যাচ্ছি নাকি আমরা তো যাবো দাওয়াত দিতে। আর ভাবি চাচি ওরা যাবে দেখতে। তোমার অসুবিধা কোথায়?”
“আমার অসুবিধা নেই। কিন্তু তাদের তো থাকতেই পারে। তারওপর তোমরা বিনা নোটিশে যাবে।”
“ভাইয়া তুমি চুপ থাকো তো ব্যাপারটা আমি বুঝে নেব। তাদের যেনো অসুবিধা না হয় তার জন্য আমরা শুক্রবার এ ওদের বাড়িতে যাবো। তখন তুমি ও আমাদের সাথে যেও।”
“আমি বললাম না এতো গুলো মানুষের যেতে হবে না। বিনা নোটিশে এতগুলো মানুষ যাওয়া ভদ্রতার খাতিরে পরে না।
তখন নাসরিন খান বলেলেন,,,
“নিশান ঠিক বলেছে এতো গুলো মানুষের যেতে হবে না। আমি আর মিস্টি যাবো। আর নিশান আমাদের নিয়ে যাবে। ওদের এ ব্যাপারে কিছু বলতে হবে না। ওদের বললে ওদের ঝামেলা হবে। আমাদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পরবে তার থেকে বরং এমনি যাবো কথা বলবো চলে আসবো। ”
“ঠিক আছে আমি কাল আপনাকে নিয়ে যাবো।”
“ঠিক আছে ধন্যবাদ।”
আবরার এর খাওয়া শেষ হলে ও ওর বাইক নিয়ে বেরিয়ে পরলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। আফরিন ওর বাবার সাথে যাবে।
____________________
ভার্সিটি,,
আরুহি ভার্সিটি ঢুকতেই দেখতে পেল সবাই ওর দিকে কেমন যেনো তাকাচ্ছে। বিষয়টা ও বুঝতে পারছে না। ওকে এভাবে দেখার কি আছে। আবরার আসতেই ইমান আর নিবিড় আবরার কে বলল,,,
“বাহ কি দারুন জুটি দুজনকে খুব মানিয়েছে!”
তখন আবরার অবাক হয়ে বলল,,
“মানে কি বলছিস তোরা? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না? জুটি কোন জুটি আর কিসের জুটি?
“মানে তুই কি কিছু জানিস না।”
“আরে আমি আবার কি জানবো?”
“তোরা যে বিয়ে বাড়িতে গেছিলি । সেখানে গিয়ে আফরিন কিছু পিকচার আপলোড করেছিল। আর ওখানে তোর আর আরুহির দুজনের কাপল পিক ও ছিল একটা। আর আফরিন এর তো ফ্রেন্ড অনেক। সাথে ফলোয়ার তো আছেই। ভার্সিটির প্রায় অনেকেই বিষয় টা জেনে গেছে। যারা জানেনা তাদের কেও অন্যরা বিষয় টা জানিয়েছে। ”
“আফরিন করেছে এই কাজ?”
“কেন তুই জানিস না।”
“আফরিন কাজটা মোটেও ঠিক করেনি। আমার এমনিতেই এসব ভালো লাগেনা। আর আরুহি উনি তো ফেসবুকই ইউজ করে না। উনি কি ভাববে বলতো উনিতো মিডিয়াই এসব পিকচার দেওয়া ও পছন্দ করে না। আফরিনের উচিত ছিল আরুহি জিজ্ঞেস করে তারপর উনার পিকচার আপলোড করা। এমনিতে স্যোশাল মিডিয়া কিছু একটা হলেও ঝড় তুলে দেয়। উনি জানতে পারলে খারাপ হবে। যদি কেউ কোন খারাপ কথা বলে দেয়। ওরা তো জানে না আমরা আত্মীয়।”
____________________
আরুহি চোখ বন্ধ করে নিজেকে কন্ট্রোল করছে। আফরিন কে ইচ্ছে করছে ইচ্ছে মতো কেলাতে। শুধু মাত্র ওর জন্য আজ অন্যের থেকে কথা শুনতে হচ্ছে।
কিছুক্ষণ আগে,,,
নিতু রা কেউ বিয়ে বাড়িতে যায় নি ।তাই ও আরুহির ব্যাপারে জানেনা। আফরিনের পোস্ট দেখেই ওর মাথায় আগুন জ্বলে উঠে। দুদিন ধরে আরুহির আসার অপেক্ষা করছে আজ এসেছে। আরুহি কে দেখেই নিতু ওর পথ আটকিয়ে বলে,,,
“বড়লোকের ছেলে দেখলেই তাকে কিভাবে পটাতে হবে সেই চিন্তাই করো তাইনা?”
আরুহি শান্ত স্বরে বলল,,,
“মানে? কি বলতে চাইছেন আপনি?”
“বিয়ে বাড়িতে গিয়েছো সাজগোজ করে ম্যাচিং ড্রেস পরে ছেলেদের ইমপ্রেস করতে চাও।”
“আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”
“আহা এ দেখি কিছুই বোঝে না। কিছুই বুঝোনা যখন তখন আবরারের সাথে কাপল পিক তুলেছো কেন?”
“আরে আমি কোথায় কাপল পিক তুললাম। আমি তো কোন ছবিই তুলিনি বিয়ে বাড়িতে।”
“ও তাই নাকি তাহলে এগুলো কি?”
নিতু ওর সামনে ওর ফোন ধরলো সেখানে আরুহি আর আবরারের একটা পিক রয়েছে যেটায় আবরার আর আরুহি একে অপরের দিকে হাসি মুখে তাকিয়ে আছে। ওদের মাঝে দু হাত জায়গা আছে। আসলে কাল আরহাম যখন আবরারের মাথায় ফু দেয় তারপরেই আরহাম একটু সরে দাড়ায় । আবরার আর আরুহির দিকে তাকিয়ে ছিল আর আরুহি আবরারের দিকে। আফরিনের সিড়ির দিয়ে নামার সময় এই সিনটা দেখে আর ওটা ফোনে ক্লিক করে নেয়। ছবিটা ওর ভালো লাগে তাই ঐ ছবিটাও ফ্যামিলি ফটোর সাথে এড করে দেয়। এখানে আরুহির ছবি থাকলেও আরহামের একটাও ছবি ছিল না। আরুহি এই পিকচার টা দেখে অবাক হয় পিকটা দেখতে ভালোই লাগছে। কিন্তু ওতো কোন পিক তুলেনি। তবে বুঝতে পারলো এটা ফেসবুকে দেওয়া হয়েছে। ওপরে লেখা নিশি আফরিন এটা দেখেই আরুহির খুব রাগ হচ্ছে।আরুহি নিজেকে সামলিয়ে বলল,,,
“আপনি যা ভাবছেন বিষয়টা তেমন নয়। বিষয় টা কাকতালীয় ভাবে ঘটেছে। আমরা কেউ এব্যাপারে অবগত নই।”
“তুমি কি মনে করো আমরা কিছু বুঝিনা।”
“আপনারা যা ইচ্ছে তাই ভাবতে পারেন আমার কিছু যায় আসে না। আমি জানি আমি কি! এটা নিয়ে অন্যের কাছে আমার কৈফিয়ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। এখন আমার পথ ছাড়ুন।”
“এত সহজে তো তোমায় ছাড়ছি না। তুমি বারবার আমাকে অপমান করো এর শাস্তি তো তোমাকে আজ পেতেই হবে।”
তখন পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,,
‘শাস্তি তো তোকে আমি দেব উনাকে এভাবে কথা শোনানোর জন্য আর অপমান করার জন্য!”
সবাই পেছনে তাকালো আর দেখলো আবরার দাঁড়িয়ে আছে সাথে আফরিন ইমান আর নিবিড়। আবরারের চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে ও খুব রেগে আছে। তখন আফরিন বলল,,,
“নিতু আপু তুমি কিছু না জেনে শুনেই আরুহিকে কেন কথা শোনাচ্ছো। তোমাদের ও তো ইনভিটেশন ছিল তোমরা যাও নি কেন? গেলে দেখতে পেতে কি কাহিনী হয়েছিল। ওরা যে ঐ পিকটায় ছিল এটা ওরা কেউ জানতো না। আর আরুহি তো কোন ছবিই তুলে নি। ঐ পিকটা আমি লুকিয়ে তুলেছিলাম। ওদের অগোচরে আর তুমি কিনা আরুহি কে কথা শোনাচ্ছো।”
তখন নিতু বলল,,
“আমি যা বলেছি সব ঠিক বলেছি।আমি কেন শাস্তি পাবো। ওকে তো ছবিতে দেখেই বোঝা যাচ্ছে মিস্টি হেসে আবরারের দিকে তাকিয়ে আছে। মূলত ছেলে পটাচ্ছে। এইভাবেই কালো মেয়েরা তাদের হাসি দিয়েই ছেলেদের পটায়।”
এ কথা শুনে আবরার আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। নিতুর গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। আবরার চিৎকার করে বলল,,,
“নিতু তোকে আমি আগেই ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করবি না। আর গায়ের রঙ নিয়ে তো নয়-ই। আমি এতক্ষন তোকে কিছু বলিনি তার মানে এটা না কিছু বলবো ও না। এখনি আমার চোখের সামনে থেকে সর নাহলে কি করবো আমি নিজেও জানিনা।”
“তুমি ঐ মেয়েটার জন্য আমার গায়ে হাত তুললে?
“হ্যা তুললাম এখন কি করবি আমাকে মারবি নাকি?
“আবরার কাজটা তুমি ঠিক করলে না। আর তুমি ঐ মেয়ের হয়ে কথা বলছো কেন? ঐ মেয়েটা কি দিয়ে তোমাকে বস করেছে?
আবরার আরো একটা চর মেরে বলল,,,
“আমি তোর বড় ভাই হই। তাই সম্মান দিয়ে কথা বলবি।এরপর থেকে তোর মুখে যেনো আমার শুধু নাম না শুনি। আবরার ভাইয়া বলবি!আর কি বললি উনি আমাকে বস করেছে। উনাকে তোর মতো মনে হয় ইডিয়ট। সর সামনে থেকে এখন।তোকে যেনো এরপর থেকে মিস আরুহির আশেপাশে না দেখি তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”
অপমানে নিতুর মুখটা থমথমে হয়ে গেছে। ও রাগে গজগজ করতে করতে ওখান থেকে চলে গেল। আবরার আরুহির কাছে গিয়ে কিছু বলবে তার আগেই আরুহি বলল,,,
“ছবিটা ডিলিট করতে বলুন। আমি জানি আপনি এই বিষয়ে কিছু জানতেন না। তাই ক্ষমা চাইতে হবে না। আর এটাও জানি আফরিন ও আগপাছ না ভেবেই ছবি পোস্ট করেছে। ওর কোন অন্য ইনটেনশন ছিল না। এখন আসি ক্লাসের টাইম হয়ে গেছে।”
“মিস আমার কথাটা শুনুন?’
“মিস্টার নিশান আমার কথা শেষ এখন আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না।”
আরুহি কোন দিকে না তাকিয়ে ওখান থেকে চলে গেল। আরুহি জানে আফরিন ওতো কিছু ভাবে নি। আর এটা নিয়ে এতকিছু হবে সেটাও ভাবতে পারে নি। এখানে ওদের কোন দোষ নেই। আফরিন ও আরুহির পেছনে গেল। আর গিয়ে সরি বলতে লাগলো। আফরিন আরুহির কথা শুনেই ছবি ডিলিট করে দিয়েছে। আরুহি আফরিন কে কিছুই বললো না। আবরার বুঝতে পারে না মেয়েটা না বলতেই সব বুঝে যায়। ও ঠিক বুঝে ফেলেছিল আবরার ক্ষমা চাইবে। আবরার মনে মনে বলল,,
“তোমায় কোন কষ্ট পেতে দেব না প্রেয়শী আর আমার জন্য তো নয়-ই।সব খারাপ জিনিস থেকে তোমায় আগলে রাখবো। আমার বেশি কিছু চাইনা,,
আমি শুধু চাই ,যতবার আমার চোখ খুলবে
তোমাকে আমার চোখের সামনে দেখব।
তোমাকে এতটা কাছে রাখবো যে,
কোনো খারাপ স্বপ্ন যেন তোমার কল্পনাকেও ছুঁতে না পারে, এতটা ভালোবাসবো তোমায়,
ঠিক এতটা।
________________________
ক্লাস শেষ করে বের হতেই কিছু একটা দেখে আরুহি এগিয়ে এলো সাথে আফরিন ও। মনির ওর জন্য অপেক্ষা করছে। ওকে দেখেই মনির এগিয়ে এলো তা দেখে মনির বলল,,,
“আসসালামু আলাইকুম আপা!”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম মনির।কেমন আছো তুমি ?”
“আমি ভালোই আছি। আপনি কেমন আছেন?”
“আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তা এখানে কি মনে করে?”
“আজ আপনারে আমি কিছু খাওয়ামু! আপনি জানেন আমার কাছে এখন অনেক টাকা জমে গেছে?”
“তা কিভাবে অনেক টাকা জমলো?’
“কাল তো একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল। কাল ফুল গুলো অন্যদিনের তুলনায় বেশি বিক্রি হইছে আর বেশি দামেও। বিশ টাকার ফুল পঞ্চাশ টাকা বিক্রি হইছে। ”
“তা এতটাকা দিয়ে বিক্রি করলে কেন?”
“আমি তো তাও কমই বিক্রি করছি। আমার সাথীরা সত্তর টাকা বিক্রি করছে আবার কতোজন তো একশো টাকাও বিক্রি করছে। আসলে যার থিকা ফুল আনি উনি কইছে বেশি দামে বিক্রি করতে। আর মানুষ নাকি বেশি টাকা দিয়াই লইবো।। তাই তো সবাই বেশি বেশি টাকায় বিক্রি করছে। আর যাদের কাছে বিক্রি করছি তারাও কিছু কয়নায় অন্য দিন তো বকা দেয় কিন্তু কাল কিছুই কয়নাই।”
আরুহি ভাবলো, “ইশশ্ আমরা বাঙ্গালিরা কেমন মানুষ একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে ফুল দেবে শুনে কিছু লোক তার সার্থ সিদ্ধির জন্য দাম বাড়িয়ে নিয়েছে। আমাদের বাঙালি জাতিকে বোঝা বড় দায়। কখন যে কি করবে বোঝা যায় না। কখনো কখনো একসাথে শত্রুর সাথে লড়বে আবার নিজেরাই নিজেদের পেছনে বাঁশ দেবে। যখন যেটার প্রয়োজন বেড়ে যাবে তখনি তার দাম বাড়িয়ে দেবে। এদের বলে লাভ নেই। এর জলজ্যন্ত প্রমান বাইশ সালের সিলেটের বন্যা।
আরুহি ভেবে মুখে বলল,,
“ঐ টাকাতো তোমার ! আমাকে খাওয়াতে হবে না। ওগুলো তোমার কাছে রাখো। কোন একসময় কাজে লাগবে!”
“আপা কালকে টাকা গোনার পরেই আমি নিয়ত করছি আপনারে খাওয়ামু এই জন্য দুইশো টাকা সরাই রাখছি। এহন চলেন !”
“আচ্ছা বেশ নিয়ত তখন করছো তাহলে খাবো তবে আমি এখন বেশি কিছু খাবো না। একপ্লেট ফুচকা খাওয়ালেই হবে। ”
“আচ্ছা ঠিক আছে।আমিও একদিন খাইছিলাম খুব মজা আছে।”
আফরিন এতোক্ষণ ওদের কথা শুনছিল। আসলে আরুহিরাও ক্লাসে প্ল্যান করছিলে ফুচকা খাবে। আরুহি ওকে কিছুই বলে নি। কিছু বলেনি দেখেই আফরিন বেশি অপরাধ বোধ এ ভুগছিল। একটা ক্লাস পরে আরুহি স্বাভাবিক ভাবেই আরুহির সাথে কথা বলে আফরিন ও আর সেই টপিক তুলে নি। মনির খাওয়াবে দেখে আফরিন আর কিছু বলল না। ও আরুহিকে বলল,,,
“আজ তাহলে আসি কাল আবার দেখা হবে। আল্লাহ হাফেজ।”
আরুহি আফরিনের কথার মানে বুঝতে পারলো ও মুচকি হেসে বলল,,,
“ঠিক আছে আল্লাহ হাফেজ।”
আরুহি আর মনির মিলে একটা ফুচকার দোকানে গেল। তারপর দুজনে মিলে ফুচকা খেলে। ওদের দুজনকে যারা দেখছে তারাই অবাক হচ্ছে। মনির কি কি যেনো বলে আর আরুহি মনোযোগ দিয়ে শুনছে আর হাসছে। একজনের গায়ে ময়লা জামাকাপড় দেখে লোকে দুরে দুরে থাকে আর আরুহিকে দেখো দিব্যি ওর সাথে হেঁসে হেসে ফুচকা খাচ্ছে। দূর থেকে আবরার এইসব দেখছে। ওদের দেখে আবরার মনে মনে বলল,,,
“মানুষের সৌন্দর্য তার মস্তিষ্কে বসবাস করে। যার মস্তিষ্কের ভাবনা যত সুন্দর, সে মানুষ হিসেবে ঠিক ততটাই সুন্দর! যেমন টা তুমি !তোমার নতুন নতুন রুপ দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। মুগ্ধ চোখে তোমায় দেখি। তোমার সরলতা স্নিগ্ধতা আমায় বারবার মুগ্ধ করে। তুমি কি জানো তোমার অগোচরে তুমি আমার শহরে রেখেছো পা কিন্তু আমি তো আমার অগোচরে নই। তোর অগোচরে #তোর_শহরে_রেখেছি_পা।
__________________
পরের দিন,,,
আবরার বিকেল বেলা ওর মাকে নিয়ে আরুহিদের বাড়িতে যাচ্ছে। এই প্রথম নাসরিন খান আর আবরার আলাদা এত কাছাকাছি । আবরার বাইকের পেছনে ওর মাকে বসিয়েছে। পাখি যেতে চাইলেও আজ নাদিয়া কোন কারনে ওর বাবার বাড়ি গেছে। তাই পাখিও ওর মায়ের সাথে গেছে। দুজনে চুপ করে আছে কারো মুখে কোন কথা নেই। দুজনকে দেখে মনে হচ্ছে যন্ত্রমানব। মৌনতা ভেঙে নাসরিন খান বললেন,,,
“নিশান আমার ওপর তোমার অভিমান কি কখনো কমবে না। আমি জানি তুমি আমার ওপর রাগ করে নেই। যা আছে সব অভিমান।”
আবরার শুনেও কিছু বললো না। নাসরিন খান আবারো বলল,,
“আমাকে কি ক্ষমা করে দেওয়া যায় না। সব অভিমান ভুলে আমাকে আপন করে নেওয়া যায় না। আমাকে কি মা বলে ডাকা যায় না!
এতক্ষন মৌন থাকলেও আবরার বলল,,
“আপনি ঠিক বলেছেন আপনার ওপর আমার অভিমান রয়েছে। আপনার ওপর আমার এক আকাশ অভিমান। উঁহু শুধু অভিমান নয় অভিযোগ ও আছে। কেন আপনি আমাকে সময় দিতে পারলেন না। কেন আমার শৈশব রঙিন হলো না। কেন একা একা বড় হতে হলো। আমার বাবা মা থাকা সত্বেও এতিম এর মতো বড় হতে হলো। আমি জানিনা কেন এরকম হয়েছে আমার সাথে তবে কি বলুন তো আমি সবসময়ই আপনাকে চাইতাম কিন্তু তখন আমার কাছে আসেন নি আসার প্রয়োজন বোধ করেন নি। আমি চাইলেও সব ভুলতে পারি না।
আমি এখন ভালো আছি ,,আমাকে খুজঁতে হবে না, ভালোবাসতে হবে না, জানতে হবে না, বুঝতে হবে না আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না, আমার জন্য কান্না করতে হবে না, আমার কিছু চাই না, আমি কিছুই চাই না। বিশ্বাস করুন আমার কিছুই চাই না।”
আবরারের কথা শুনে নাসরিন খান এর চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। উনি আর কিছু বললেন না। কিই বা বলার আছে এখন। উনার ভেতর টা পুরে যাচ্ছে। আবরারের কথা গুলো বলতে কষ্ট হচ্ছে। চোখ ছলছল করছে। কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু ছেলেদের যে কাঁদতে মানা। কোন ছেলেই চায় না তার মায়ের থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু ঐ যে অভিমান কবে এই অভিমান কাটবে সেটা কেউ জানেনা। আবরার বাইক থামিয়ে দিল। আরুহিদের বাড়ি চলে এসেছে। নাসরিন খান নিজেকে ঠিক করে নিলেন। কলিং বেল বাজাতেই আরুহি দরজা খুলে দিল। দরজা খুলতেই ও আবরার আর ওর মাকে দেখতে পেল আরুহি একটু আগেই আসরের নামাজ পরেছে এখনো ওর মাথায় ওরনা দেওয়া। অনেক স্নিগ্ধ লাগছে। আরুহি ওদের দেখেই সালাম দিল,,
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি! কেমন আছেন? !
নাসরিন খান মুচকি হেসে বলল,,,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি! তুমি কেমন আছো?”
‘এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। ভেতরে আসুন।”
ওরা ভেতরে গেল। তখন আরুহি বলল,,
“আসলে বাড়িতে কেউ নেই। ভাইয়া তার কাজে গেছে আর আমেনা চাচি একটু বাড়িতে গেছে।”
“আরে এতো ব্যস্ত হতে হবে না। আমরা তোমার সাথেই দেখা করতে এসেছি। আসলে তুমি জানো কি না জানিনা আমি তোমার মায়ের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। ”
“হুম সেটা আমিও জানতাম না পুরশুই জানলাম। আন্টি একমিনিট!”
বলেই আরুহি কিচেনে গিয়ে ওনাদের জন্য কফি আর স্ন্যাক নিয়ে আসলো। ওগুলো দেখেই নাসরিন খান বললেন,,
“এসবের আবার কি দরকার!”
“দরকার আছে আন্টি আপনি নিন তো। আমাদের বাড়িতে প্রথম এলেন কিছু তো মুখে দিতেই হবে।”
“তুমি একদম তোমার মায়ের মতো হয়েছো।”
এ কথা শুনে আরুহি মুচকি হাসলো কিছু বললো না। আজ আবরার নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে।ওরা কফি খেতে লাগল। তখন নাসরিন খান বললেন,,
“আসলে আমি তোমাদের দাওয়াত করতে এসেছি। সামনে শুক্রবার তোমার আর আরহামের আমাদের বাড়িতে দাওয়াত।”
“কোন ওকেশন আছে নাকি আন্টি?’
“না মামনি আসলে আমরা চাইছিলাম তোমাকে আর আরহাম কে আমাদের বাড়িতে দাওয়াত করে খাওয়াতে। ”
“ওহ আচ্ছা!”
“তোমাদের কিন্তু আসতেই হবে।”
“আসলে আন্টি ভাইয়ার সাথে কথা বলে দেখবো ও ফ্রি আছে কিনা। যদি ফ্রি থাকে তাহলে আমরা অবশ্যই আসবো। ভাইয়ার প্রফেশন তো জানেনই।”
“আচ্ছা ঠিক আছে নিশান কে তাহলে জানিও।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
নাসরিন খান আরো কিছু বলতে চাইছিলেন কিন্তু কেন যেন বললো না। নাসরিন খান বললেন,,,
“আচ্ছা মামনি আজ তাহলে আসি।”
“আরে এখন কথায় যাবেন আরেকটু থাকুন না আন্টি।”
“আজ একটু তাড়া আছে। নাদিয়া বাড়িতে নেই তাই তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরতে হবে। আরেকদিন এসে পুরো দিন থাকবো। ভালো থেকো আজ আসি।”
“আচ্ছা ঠিক আছে। ”
নাসরিন খান আগে আগে যেতে লাগলেন আরুহি তার সাথে তাকে এগিয়ে দিল। আবরার আরুহির সাথে কথা বলতে চাইছিল কিন্তু কোন সুযোগ নেই। আরুহি বাইক পর্যন্ত ওদের এগিয়ে দিয়ে গেল। আরুহি আবরারের দিকে তাকালো তা দেখে আবরার একটা মুচকি হাসি দিলো। ওরা চলে গেল। আরুহি কিছু একটা ভাবতে ভাবতে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পরলো।
_______________
দেখতে দেখতে আবরারদের বাড়িতে যাওয়ার দিন চলে এসেছে। এ কয়েকদিনে আরুহি আর আবরারের কলেজে দেখা হলেও তেমন কথা হয় নি। নিতু ও সেদিনের পর আরুহির ধারে কাছে আসে নি। ও বড় কিছু করার প্ল্যান করছে হয়তো। আফরিন আজ খুব খুশি আরহাম ওদের বাড়িতে যাবে দেখে। আরুহি ফোন করে জানিয়েছে আরহামের কাজ নেই সেদিন তাই ওরা যাচ্ছে। নাসরিন খান ওদের সকালেই যেতে বলেছে। ওরা দশটার দিকে বাড়ি থেকে বের হলো। অতঃপর আবরার দের বাড়িতে পৌছে গেল। কলিং বেল বাজাতেই কেউ একজন দরজা খুলে দিল। আরুহি আর আরহাম বাড়ির ভেতরে ঢুকেই কাউকে দেখে থমকে গেল!
~চলবে,,
বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। আজ বাড়িতে একটু কাজ ছিল তাই কাজের ফাঁকে যতটুকু পেরেছি ততটুকু লিখেছি। জানি একটু ছোট হয়েছে তার জন্য আমি দুঃখিত। তবে এর থেকে বেশি দেওয়া আজ আর পসিবল না। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।