তোর শহরে রেখেছি পা (পর্ব ৭)

0
638

#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_৭
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

আরুহির কথা শুনে আরশি বলল,,,

“কাকাই সবসময় একজন স্বাধীন মানুষ ছিলেন। তিনি সবকিছু স্বাধীন ভাবে করার চেষ্টা করতেন। সেই জন্যই তো সব বাধা উপেক্ষা করে নিজের স্বপ্ন কে আকরে ধরেছিলেন। প্রয়োজনে নিজের পরিবারকেও।”

তখন আরুহি বলল,,

“কিছু মানুষ পরিবারের জন্য স্বপ্নকে বিসর্জন দেয়। আবার কিছু মানুষ স্বপ্নের জন্য পরিবার।”

“তুই সবসময় এতো ভারি ভারি কথা কেন বলিস?”

“বাস্তবে চারপাশে দেখি তাই বুঝলে । এমন কথা নেই সবকিছু তোমার সাথে ঘটলেই তাহলে তুমি তা উপলব্ধি করতে পারবে। আসলে আমাদের চারপাশে অনেক কিছুই ঘটে চোখকান খোলা রাখলে অবশ্যই তুমি সবকিছু তোমার সাথে না ঘটলেও উপলব্ধি করতে পারবে।এবং সেটার ভেতর তোমার অনুভূতি ও কাজ করবে।”

“তোকে আজ পর্যন্ত বুঝতেও পারিনি আর আজও পারবোনা।”

“বুঝতে হবেও না তোমার তবে তোমাকে একটা কথা বলি জীবনে যা করতে চাও করো। কারো বাধায় থেমে যেও না।”

তখনি কিছু মহিলা আরশির রুমে আসলো। সাথে আফরিন নাদিয়া মিস্টিও ছিল। আর খান বাড়ির বাকি মহিলারা কেউ আসে নি। এক মিনিটের মধ্যেই পুরো রুম ভরে গেল। তখন একজন মহিলা বলল,,,

“হয়েছে বাপু তোমাদের গল্প এখন আমরা আরশিকে গোসল করানোর জন্য নিয়ে যাবো।”

এ কথা শুনে আরুহি বলল,,,

“কেন আপনারা যাবেন কেন আরশি আপুকে গোসল করানোর জন্য। আপুর কি হাত পা নেই যে আপনাদের আপুকে গোসল করাতে হবে?”

হুট করে পুরো রুমে কানাঘুষা শুরু হলো। তখন একটা মহিলা মুখ বেঁকিয়ে বলল,,,

“এটা নিয়ম মেয়েদের হলুদের দিন আর বিয়ের দিন অন্য মহিলারা গোসল করিয়ে দেয়।আমরা আগে থেকেই এসব দেখে আসছি।”

“আপনাদের এই তথাকথিত নিয়ম কি কোথাও লেখা আছে নাকি ?”

“এ মা কি বলো তুমি এসব আজকাল কার শহরে মেয়েরা কি অভদ্র। বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও জানে না। ”

“এখানে অভদ্রতার কি দেখলেন আজব। যা সত্যি তাই বলেছি। বিয়ে বা হলুদের দিন অন্য মহিলাদের গোসল করানোর কোন নিয়ম নেই কোথাও বুঝলেন।আপু আপনাদের সাথে কোথাও যাবে না। ওয়াশরুমে গোসল করবে।”

“মেয়েটার সাহস দেখে অবাক হয়ে যাই এই কে তুমি যে আমাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছো।”

তখন আরশি মুচকি হেসে বলল,,,

“ও হচ্ছে মাহমুদ খানের মেয়ে আরুহি মাহমুদ খান।এই খান বাড়ির মেয়ে। আর আরুহি যা বলেছে ঠিক বলেছে আমিও যেতাম না আপনাদের সাথে।এখন আপনারা আসতে পারেন। আমি ওয়াশরুম থেকে গোসল করে বের হচ্ছি।”

তখন আবার কানাঘুষা শুরু হলো। তখন একজন মহিলা বলল,,,

“মাহমুদের মেয়ে দেখেই তো এতো তেজ। মাহমুদ যেমন তেজ দেখিয়ে এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছিল। মাহমুদ কাউকে তোয়াক্কা করতো না। এই মেয়েও তো দেখছি মাহমুদ এর থেকে কম যায় না। চল এখানে থেকে আর লাভ নেই শুধু শুধু নিজের অপমান করা। ”

মহিলারা সবাই চলে গেল। তখন নাদিয়া আফরিন আর মিষ্টি এগিয়ে আসলো। মিস্টি গিয়ে আরুহির কোলে বসে বলল,,,

“আন্টি তুমি আমাকে একদম ভুলে গেছো। আসার পর থেকে একবার ও আমার সাথে কথা বলো নি কোলেও নাও নি।”

এ কথা শুনে আরুহি বলল,,,

“সরি সোনা আসলে আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম সময়ই পাই নি তোমার সাথে কথা বলার। আর এরকম হবে না। এখন থেকে মিস্টি আমার কাছেই থাকবে ঠিক আছে।”

তখন নাদিয়া বলল,,,

“মিস্টি তোমার ফ্যান বুঝলে বাড়ি যাওয়ার পর থেকে শুধু তোমার প্রসংসাই করে যাচ্ছে। তোমার সাথে দেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে ভাবিনি।”

এ কথা শুনে আরুহি মুচকি হেসে বলল,,

“আসলে আমাদের জীবনে কখনো কোথায় কার সাথে কিভাবে দেখা হয়ে যাবে সেটা তো আমরা জানি না তাইনা। তবে আপনার সাথে পরিচয় হয়ে ভালো লাগলো।”

“আফরিনের থেকে তোমার ব্যাপারে যা শুনেছিলাম তার থেকেও বেশি ভালো তুমি।

“তাই নাকি তা কি বলেছিল আফরিন।”

তখন আফরিন মেকি হেসে বলল,,,

“আরে আরুহি আমি তেমন কিছুই বলি নি। শুধু বলেছি তুই একজন ভালো মানুষ। আমি তোর কতো ভালো বন্ধু অথচ তুই আমাকে পাত্তাই দেস না।”

“তাই নাকি ?”

তখনি নিচে চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা গেল। আরুহিরা সকলে নিচে নেমে দেখলো আঁখি খান চেঁচামেচি করছে। কেন আরশিকে গোসল করাতে দেওয়া হলো না। আর আরুহি মহিলাদের অপমান করেছে কেন এইগুলো নিয়েই ঝামেলা করছে। আরুহি কে দেখেই আঁখি খান বললেন,,,

“জিজ্ঞেস করো বাবা তোমাদের আদরের নাতনি কে ঐ মহিলাদের কেন অপমান করেছে? তার জন্য তারা রেগে বাড়ি থেকেই চলে গেল।”

আরুহি কিছু বলছে না শুধু দেখেই যাচ্ছে। তখন আনোয়ার খান বললেন,,,

“শান্ত হও আঁখি আমরা তো জানি না ঐ রুমে কি হয়েছে তাই না।”

“ঐ মেয়েটাই যতো নষ্টের গোড়া। এতদিন কেউ খান বাড়ির নামে খারাপ কথা বলেনি অথচ এই মেয়ের জন্য তারা খান বাড়ির নামে বলে গেল ।”

তখন আরুহি বলল,,,

“আমি তাদের অসম্মান করে বা অপমান করে কিছুই বলিনি। আমি যা ফ্যাক্ট তাই বলেছি। তারা নিয়মের কথা বলেছে আমি জানতে চেয়েছি কোথায় লেখা আছে। ইসলাম এটাকে কখনোই সমর্থন করে না। আর ইসলাম যেটাকে সমর্থন করে না সে সব কিছুই বিদাআত।”

“প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণামই জাহান্নাম। [মুসলিমঃ১৫৩৫]

আরহাম প্রথম থেকেই এখানে ছিল। ও কিছুই বলেনি। ও দেখতে চাইছিল ওর বোন কি করে। ও আর আবরার রিয়াদ মিলে কফি খাচ্ছিল। আরুহির কথা শেষ হলে আরহাম বলল,,

দাদুভাই আপনি কি এখন এই নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে আমার বোনকে বয়কট করবেন।”

আরুহি নিজের ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।আরহামের কথা আনোয়ার খান কিছু বললেন না। উনি বুঝতে পারেন আরহাম এখনো তাকে ক্ষমা করে নি আর মেনেও নিতে পারে নি। উনি শুধু বললেন,,,

“আরশি নিজের ওয়াশরুমেই গোসল করুক । এখন সবাই যে যার কাজে যাও। এটা নিয়ে আমি আর কোন কথা শুনতে চাই না। ”

আঁখি খান বললেন,,,

“বাবা তুমি সবসময় ওদের দিক নাও। ওরা ভুল করলেও তুমি কিছু বলো না। তারজন্যই তো দিন দিন ওদের সাহস বেড়ে যাচ্ছে।”

“আঁখি আমি কি বলেছি এই টপিক এখানেই শেষ। তুমি যাও দেখো নেহমাত কোথায় ওর কোন অসুবিধা হচ্ছে নাকি।”

“বাবা !”

“আঁখি তোমাকে একটা কথা বললে কানে যায় না। দিন নিন অবাধ্য হয়ে যাচ্ছো।”

“সরি বাবা!”

আঁখি খান ওখান থেকে যেতে লাগলেন। আনোয়ার খান ও চলে গেলেন। আখি খানের আসা দেখে আরহাম এর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো ও এগিয়ে এসে ইচ্ছে করে কফিটা আঁখি খানের হাতের ওপর ফেললো। আর ভাব ধরলো ওখানে কিছু একটা ছিল আর ও ওখানে বেজে হোঁচট খেয়েছে। গরম কফিটা হাতের ওপর পরতেই আঁখি খান চিৎকার করলেন। “আহ!!!”

তা দেখে আরহাম মিছে মিছে বলল,,

“সরি ফুপি আমি একদম বুঝতে পারে নি। সরি সরি!”

তখন আখি খান রেগে বলল,,,

“আমি কিছু বুঝিনা তুমি ইচ্ছে করে আমার ওপর কফিটা ফেলে দিলে। ”

তখন আরহাম আস্তে আস্তে বলল,,

“বোঝেন যখন তাহলে আমার বোনের সাথে লাগেন কেন? আমাদের আঘাত করার আগে নিজেদের প্রস্তুত রাখুন পাল্টা জবাব নেওয়ার জন্য। এমনিতেও অনেক ভুল করে ফেলেছেন। সবকিছুর হিসাব সমেত সব ফেরত দেওয়া হবে। সব পাল্টে কি হবে সুরত তো পাল্টাতে পারে নি। ”

এসব কথার আগামাথা আঁখি খান কিছুই বুঝতে পারলো না। তবে উনি কিছুটা ভরকে গেল।আর তারাতাড়ি করে ওখান থেকে চলে গেল। আরহামের চোখের দিকে তাকাতে উনি অস্বস্তি বোধ করছিল। বাকিরা শুধু দেখে গেল কেউ কিছু বুঝতে পারলো না। কারন ওদের মধ্যে কি কথা হচ্ছিল কেউ শুনতে পারে নি। আরুহি ভাইয়ের কাছে গিয়ে বলল,,,

“কি হলো ভাইয়া উনি তোমাকে কিছু না বলেই চলে গেল কাহিনী কি! বলো তো উনি তো এত সহজে কাউকে ছেড়ে দেয় না। ”

“আমার সাথে লাগতে এলে আগে থাকতে প্ল্যান করতে হবে। ”

“তুমি ইচ্ছে করে কফিটা ফেললে তাই না।”

“তো কি বলবো আমার বোনকে কথা শোনানো ওনার ভাগ্য ভালো শুধু কফি ফেলেছি। মুখ ভেঙে দেয় নি।”

“তুমি আর শুধরাবে না তাইনা। তোমার কথা শুনে দাদুভাই ও কিছু বললো না। তুমি কি লাভ পাও তাকে ঐ কথাটা শুনিয়ে।”

“শান্তি লাগে বুকের ভেতরে। ঐ কথাটার মাধ্যমে ওনাকে মনে করিয়ে দেই তিনি যা করেছিলেন সব ভুল করেছিলেন।”

“হুম বুঝতে পেরেছি। এখন কি করবে তুমি?”

“তেমন কোন কাজ নেই আজ। আমরা তো এতক্ষন আড্ডা দিচ্ছিলাম। আজ গাঁয়ে হলুদ কিন্তু অনুষ্ঠান হবে না। তাই কোন কাজ নেই।”

“দুপুর তো হয়ে এলো তোমরা গোসল করে নাও। ”

“হুম যাচ্ছি।”

_____________________

বিকেলে বেলা সব ইয়াংস্টার রা মিলে ছাদে আড্ডা দিচ্ছে। বাড়ির সবাই একবয়সির ওরা সবার সাথে পরিচয় হয়ে এ কথা সে কথা বলছে। ছাদের একপাশে কিছু বাচ্চা খেলা করছে সাথে মিস্টিও আছে। আরুহি ছাদের একপাশে দাঁড়িয়ে সবাইকে দেখছে। আরহাম জানে ওর বোন কেমন তাই আর আরুহিকে জোর করেনি।আরুহির এসব ভির পছন্দ না। ওকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবরার ওর কাছে গিয়ে বলল,,

“তা মিস এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কি করছেন?”

“এই তো সবাই কে দেখছিলাম। আপনি এখানে কি করছেন।সবাই তো ওখানে আড্ডা দিচ্ছে।”

“আমার ছোট থেকেই একা থাকার অভ্যাস। বলতে পারেন ছেলে হয়েও একটু ইনট্রোভার্ট। আর আপনি একা একা কি করছিলেন। আমার বোন আফরিন কে দেখুন নতুন বান্ধবী পেয়ে তার সাথে গল্প করছে।”

“আমিই বলেছি ও এতক্ষন আমার সাথেই কথা বলছিল। কিন্তু একটা মেয়ে আসলো আমাদের সাথে পরিচিত হতে তাই আমিই বললাম তার সাথে আড্ডা দিতে। কারন এতক্ষন শুধু ও একাই কথা বলছিল আমি হু হা করছিলাম। সবকিছুরই একপাক্ষিক হলে সেটা ভালো লাগেনা। তাই আমিই বললাম যাতে ওর বোরিং না লাগে। ও যাবেই না তাই আমিই পাঠিয়ে দিয়েছি। এমনিতে আপনার বোনটা খুব ভালো।”

“আপনি কি আগে থেকেই এরকম সবসময় একা একা থাকতে পছন্দ করেন।”

“তা কিছুটা বলতে পারেন যখন মা বাবা ছিল। দুজনেই যেহেতু কাজ করতো আমি একা বাড়ি থাকতাম একা একাই সব করতাম খেলা করতাম। ভাইয়া যতোটুকু পারতো আমাকে সময় দিতো। মা বাবা যতোটুকু সময় পেত সবটুকুই আমাদের দেওয়ার চেষ্টা করতো। ছোট বেলা থেকেই তেমন কারো সাথেই মেশা হয়ে ওঠেনি। আপনিও কি তাই?”

তখন আবরার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,,

“আমিও কিছুটা আপনার মতোই। কিন্তু আপনার মা বাবা আপনাদের সময় দিলেও আমার মা বাবা আমাকে তাদের মহা মূল্যবান সময়টুকু দেয় নি। বাবা বিসনেস করতো আর মা ছিল সাংবাদিক। আমিই ছোট বেলায় বাবা মায়ের ভালোবাসা ছাড়াই বড় হয়েছি। বলতে পারেন এই জন্যই একটু ইনট্রোভার্ট।”

আরুহি বুঝতে পারল আবরার এই জন্যই বেশি হাসে না। সেদিনের কথা গুলোর মানে একটু হলেও বুঝতে পারলো। তখন ও বলল,,

“কিছু মানুষ থাকে, যারা অনেক মানুষের ভিড়ে একাকিত্ব অনুভব করে। কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে চুপ করে এক কোণে বসে থাকে। ফ্রেন্ডস হ্যাংআউটে স্থির হয়ে সবার আনন্দ দ্যাখে। শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম রাস্তা দিয়ে হেটে গেলেও তার মনে হতে থাকে, তার আশেপাশে কেউ নেই। বাসা ভর্তি মানুষ, অথচ তার ইচ্ছে হবে- চুপ করে নিজের রুমে শুয়ে থাকতে!

আমি আর আপনি তাহলে সেই দলের মানুষ কি বলেন।”

“আপনি একদম ঠিক বলেছেন। কেন যেনো নিজের মানুষদের করা ভুল গুলোর জন্য আমাদের চিন্তা ধারা বদলে গেছে।”

“হুম তা অবশ্য ঠিক।”

“আচ্ছা মিস আপনি আপনার মা বাবাকে মিস করেন না?”

“মিস বাবা মাকে হ্যা খুব মিস করি। কিন্তু কি বলুন তো আমরা চাইলেও সবকিছু আমাদের হাতে থাকে না। প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েই চায় তার মা বাবা আজীবন বেঁচে থাকুক। কিন্তু সেটা কখনোই সম্ভব না।

আল্লাহ তায়ালা আল কোরআন এর মাধ্যমে বলেছেন,,

“প্রত্যেকটা প্রানকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্ৰহন করতে হবে।”

তাই চাইলেই কিছু করার নেই। আল্লাহ তায়ালা উত্তম পরিকল্পনা কারী। প্রত্যেকটা কাজের মাধ্যমেই বান্দার কোন না কোন মঙ্গল নিহিত আছে। এখন তাদের কথা বাদ দিন। ভালো লাগছে না।”

“আচ্ছা ঠিক আছে ।”

“আচ্ছা আপনার মা সাংবাদিক ছিলেন উনি কি এখনো সাংবাদিক আছেন।”

“হঠাৎ এই প্রশ্ন ?”

“এমনিই আপনি বলুনই না! ”

“এখন আর সাংবাদিক নেই। পাঁচ বছর আগে কাজটা ছেড়ে দিয়েছেন। অথচ তার সবকিছুর উর্ধ্বে ছিল তার কাজ যার জন্য আমাকে পর্যন্ত অবহেলা করেছে। বুজলাম না কেন করেছে। হয়তো বুঝতে পেরেছে তার সংসার জীবনটাও ইম্পোর্টেন্ট।”

“আপনার মায়ের নাম কি যেনো?”

“নাসরিন আফরোজা খান।”

একথা শুনে আরুহি থমকে গেল। নাসরিন আফরোজা খান মানে মায়ের বেস্ট ফ্রেন্ড। আরুহি কিছু বললো না। চুপ করে রইল। আবরার ওকে পর্যবেক্ষন করে বলল,,

“কি হলো চুপ করে গেলেন যে?”

“কিছু না।”

“আচ্ছা এ টপিক বাদ আপনি বলুন তো আপনার কেমন ছেলে পছন্দ? ”

“হঠাৎ আমার কেমন ছেলে পছন্দ সেটা নিয়ে পরলেন কেন?”

তখন আবরার মনে মনে বলল,,,

“দেখি আমার মধ্যে তোমার পছন্দের কোন জিনিস আছে কিনা। আমার শহরে যেহেতু পা রেখেছো। তখন তো সব জানতেই হবে তাই না।”

কিন্তু মুখে বলল,,

“এমনিই জানতে ইচ্ছে হলো আর কি!”

“আমার তেমন কোন পছন্দ নেই। তবে হ্যা যে আমাকে বুঝবে আমার পাশে থাকবে আমার কাছে সৎ থাকবে। আমার বাহির টা কেমন সেটা তার কাছে বিন্দু মাত্র ম্যাটার করবে না। আর হ্যা কেউ একজন আমার হয়ে থাকবে! যে এক যুগ পরেও মুগ্ধতা নিয়ে বলবে, তোমাকে সেই দিনের মতোই ভালোবাসি! এমন একজন হলেই হবে। বাকিটা আল্লাহ ভালো জানেন।”

তবে এখনকার সময়ে জানেন তো,,

চাইলেই সব মন মতো পাওয়া যায় না।।।।
যাকে পাবেন আপনার থেকে এক ভিন্ন মেন্টালিটির মানুষ।জীবনের অর্ধেক সময় তাকে বুঝতেই চলে যাবে।
আর যখন বুঝতে শিখে যাবে, তখন সংসারের চাপে ভালোবাসতেই ভুলে যাবে,তখন শুধু থাকবে রেসপনসিবিলিটি।
আর যখন দায়িত্ব থেকে অবসর নেয়ার চেষ্টা করবে, তখন ভালোবাসার ক্ষমতাই আর থাকবে না, বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠল বলে।।।

তারাই ভাগ্যবান যারা তাদের মনমতো বুজদার জীবন সঙ্গী পায়। তবে আমি ওসব নিয়ে বেশি ভাবি না। যা হবে ভালোই হবে। যে আমার জীবনে আসবে তাকে আল্লাহ তায়ালা আগেই ফিক্সড করে রেখেছে। তাই আমি যদি অন্য কাউকে চাই ও তাও আমার ভাগ্যে লেখা যে ছিল সেই-ই আসবে।

এ কথা শুনে আবরার মুচকি হাসলো। সে ভেবেছিল আরুহির থেকে এই রকমই জবাব পাবে। কিন্তু এতটা বিশ্লেষণ করে দেবে সেটা বুঝতে পারে নি। এই মেয়েটাও না তাকে ভালোবাসার নতুন নতুন কারন দেয়। এমন এমন কারন দেয় যে তাকে উপেক্ষা করা যায় না। তখনি আফরিন আসলো ওদের কাছে আর এসে আরুহিকে বলল,,,

“আরে বাবা এতদিন আমি জানতাম আমি বাচাল এখন দেখি আমার থেকেও বিশ্ব বাচাল আছে। বাবারে বা কেউ এতো কথা বলে!”

এই কথা শুনে আবরার আর আরুহি হেসে উঠল আর আবরার মশকরা করে বলল,,

“তাহলে বুজ আমরা কিভাবে তোকে সহ্য করি।”

তখন আফরিন বলল,,,

“হুম এখন সেটা ভালোভাবেই বুঝতে পারছি। নিজে সেই পরিস্থিতি তে না পরলে বোঝা যায় না। থাক বাবা আমি আজ থেকে কম কথা বলবো। তোদের আর জালাবো না।”

তখন পেছন থেকে আওয়াজ আসলো,,

“বদলে গেলে তখন আর ভালো লাগবে না। কারন এই বাচালেই আপনাকে ভালো মানায়।”

সবাই পেছনে ঘুরে দেখলো আরহাম সাথে রিয়াদ আর নাদিয়া। তখন আফরিন বলল,,,

“এই আপনি আমাকে বাচাল বললেন।”

‘আরে আমি কোথায় বললাম আপনিই তো একটু আগে আরুহিকে বললেন আপনি আগে জানতেন আপনি বাচাল। তখন তো আমি আপনার পেছনে ছিলাম তাই শুনতে পেলাম।”

“এই আপনার কোন কাজ নেই না।”

“এই মুহূর্তে আমার তেমন কোন কাজ নেই।”

“কাজ নেই মানে কতো কাজ আপনি না মেয়ের ভাই তাহলে যান বাড়িতে অনেক কাজ আছে সেগুলো করুন।”

“আপনিও এক হিসেবে মেয়ের বোন। আপনারও কাজ আছে। দেখুন গিয়ে চাচি ,ফুপি ,আপনার মা ,চাচি কাজ করছে। আপনিও গিয়ে সাহায্য করুন। ”

তখন আরুহি বলল,,

“এই তোমরা থামবে! কি বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করছো।”

তখন আফরিন বলল,,

“দেখনা আরুহি তোর ভাই – ই তো প্রথমে শুরু করেছে। আমি কিন্তু কিছুই বলিনি।”

“আমরা এখানেই ছিলাম তাই কে কি বলেছে সব ভালো ভাবেই শুনেছি। এখন কোন কথা না। ”

তখন আরহাম বলল,,

“ওকে বাবা থামলাম এখন চলো আবরার তোমাদের এখানে কিছু জায়গা আছে । ঘুরিয়ে নিয়ে আসি । এমনিতেও আমাদের কোন কাজ নেই।’

“হুম চলো আমরাও একটু ঘুরতে চাইছিলাম। কাল বাড়িতে বিয়ে কোথাও বেরুনো যাবে না। আর পরশুদিন সকালেই ব্যাক করতে হবে। সবারই কাজ আছে। আমাদের ক্লাস ও আছে।”

“হুম আমরাও পরশুদিন যাবো কিন্তু রাতে যাবো!”

“আচ্ছা তোমরা যা ভলো বুঝো।”
________________________

দেখতে দেখতে আরো একটা দিন কেটে গেল।আজ আরশির বিয়ের। কাল সবাই এদিক ওদিক ঘুরা ঘুরি করলেও আজ সবাই ব্যস্ত । আরহাম ও আজ শিহাবের হাতে হাতে কাজ করছে মতোই হোক এবাড়ির ছেলে। আরহাম কে আবরার রিয়াদ ওরাও সাহায্য করছে। আরশিকে পার্লারের লোক সাজাতে এসেছে। খুব সুন্দর করে আরশি কে সাজানো হলো। গর্জিয়াস লাল লেহেঙ্গা সাথে ম্যাচিং লাল হিজাব। ব্রাইডাল মেক আপ। দেখতে মাশাআল্লাহ সুন্দর লাগছে। আরুহি হালকা নীল রঙের একটা গ্ৰাউন পরেছে মাথায় সাদা গর্জিয়াস হিজাব। মুখে হালকা মেক আপ ব্যাস এতেই আরুহিকে অনেক সুন্দর লাগছে। উজ্জ্বল শ্যামলা গিয়ে গ্ৰাউনটা খুব ভালো মানিয়েছে। আরহাম সাদা শার্টের উপর এ হালকা নীল রঙের ব্লেজার আর ম্যচিং প্যান্ট পরেছে। আবরার হালকা নীল রঙের শার্ট এর ওপরে সাদা ব্লেজার আর ম্যাচিং সাদা প্যান্ট পরেছে। ওদের তিনজনকে দেখলে বলবে ওরা প্ল্যান করেই ম্যাচিং ড্রেস পরেছে। আরহাম আর আরুহি প্ল্যান করে পারলেও আবরারের ম্যাচিং হওয়াটা কাকতালীয়। আরুহি রেডি হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। পেছনে একসাথে আবরার আর আরহাম ও নামছে। আবরার আর আরহাম কি নিয়ে যেনো কথা বলছে। কাকতালীয় ভাবে সকলের নজর পরে সিঁড়ির দিকে তিনজনকে একসাথে দেখতে খুব ভালো লাগছে। সিঁড়ি থেকে নেমেই আরহাম আরুহিকে ডাকলো ও কাছে আসতেই আরহাম আরুহির মাথা ধরে সূরা নাস আর সূরা ফালাক পড়ে ফুঁ দিয়ে বলল,,,

“মাশাআল্লাহ আমার বোনটাকে অনেক সুন্দর লাগছে কারো নজর না লাগে।”

তখন আরুষি বলল,,

“নজর লাগবেও না তুমি এই যে সূরা পরে ফু দিলে। আমার রক্ষা কবজ হয়ে গেল। বাই দ্য ওয়ে আমার ভাইকেও কিন্তু কম সুন্দর লাগছে না। মাশাআল্লাহ!”

আরুহিও আরহামের মতো সূরা পরে ফু দিয়ে দিল। যারা ওদের দেখছে তারা ওদের ভাই বোনের ভালোবাসা দেখে মুগ্ধ। তখন আবরার বলল,,,

“আমাকে কি কেউ একটু সূরা পরে ফু দেবে। না মানে কয়েকজন বললো আমাকে নাকি খুব সুন্দর লাগছে। এখন যদি কারো নজর লেগে যায় তাই বলছিলাম আর কি?”

এ কথা শুনে আরহাম আর আরুহি হেসে উঠলো। তখন আরহাম বলল,,,

“তা অবশ্য ঠিক বলেছো তোমাকে কোন রাজপুত্র এর থেকে কম লাগছে না। তার ওপর শুভ্র রঙ তোমার গায়ে খুব ভালো মানিয়েছে । মাশাআল্লাহ।’

“আরহাম ভাইয়া তুমিই তাহলে একটু ফু দিয়ে দাও।”

“আচ্ছা ঠিক আছে।”এদিকে আসো।

আরহাম আবদারের মাথায় সূরা পরে ফু দিল। আরুহি আবরারের কান্ড দেখে হাসছে। আবরার তা দেখে মনে মনে বলল,,,

“ইশশ্ তোমার হাসিটা যে সুন্দর। মনে হয় তোমার হাসিমুখেই আমি হাড়িয়ে যাই। তোমার এই হাসি মুখটা দেখবো বলেই তো এরকম করলাম। কাল তোমাকে বললাম না তোমার হাসির নতুন নতুন কারন দেব। এভাবেই সারাজীবন হাসি খুশি থাকবে তুমি। ”

তখন সিঁড়ি দিয়ে আফরিন মিস্টির হাত ধরে নামছে। পেছনে নাদিয়া আর রিয়াদ। মিস্টি লাল রঙের একটা ফেইরি ফ্রক পরেছে। আফরিন মেরুন রঙের গ্ৰাউন সাথে ম্যাচিং হিজাব। মুখে হালকা মেক আপ ব্যস এতেই ভালো লাগছে। আরহাম মুগ্ধ চোখে আফরিন কে দেখছে। কিন্তু কি ভেবে যেন আবার চোখ ঘুরিয়ে নিল। মিস্টি এসেই আরুহির কাছে গিয়ে বলল,,,

“আন্টি তুমাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।”

আরুহি মিস্টিকে কোলে নিয়ে বলল,,

“ধন্যবাদ মিস্টি তোমাকেও আজ খুব মিস্টি লাগছে একদম পরী। ”

তখন আফরিন বলল ,,

“আমাকে কেমন লাগছে?”

তখন রিয়াদ পেছন থেকে বলল,,,

“শেওরা গাছের পেত্নির মতো।”

“রিয়াদ ভাইয়া এটা কিন্তু ঠিক না।”

তখন আরুহি বলল,,

” আফরিন তোকে আজ খুব ভালো লাগছে।!”

“সত্যি ”

“হুম সত্যি!”

তখন আনোয়ার খান আরহাম আর আরুহি কে ডাকলো। আরহাম আর আরুহি ওনার কাছে গেল। তখন আনোয়ার খান সবার সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিল। ইতি মধ্যে ব্যাপারটা নিয়ে অনেকেই কানাঘুষা শুরু করেছে। আরহাম আর আরুহি একসাথে আনোয়ার খানের পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আজ আরশির বিয়ে থাকলেও আরুহি আর আরহামকে দেখে মনে হচ্ছে ওদের রিসিপশন। সবাই ওদের দেখছে। আরুহি আর আরহাম এর একটু রাগ হচ্ছে এই জন্য কিন্তু এখন আনোয়ার খান কে কিছুই বলা যাচ্ছে না। কিন্তু দুর থেকে দুই জোড়া চোখ ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের চোখে মুখে হিংস্রতা। আরহাম এর কথা শোনার পর থেকেই আখি খান ওদের থেকে দুরের থেকেছে। আর নেহমাত শেখ এর কাছে ওদের দু ভাই-বোন কে কেমন যেনো লাগছে তাই উনিও ওদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই চলেছে। আরুহি আর আরহাম তাদের কিছু বলেনি।

দেখতে দেখতে বিয়েটা ভালো ভাবেই মিটে গেল। আরশির তিন কবুলের মাধ্যমেই লেগে গেল বিবাহিত ট্যাগ। বিদায় বেলা আরশি খুব কাদলো। সবার থেকে বিদায় নিয়ে পারি দিল জীবনের নতুন অধ্যায়ে। ওর বিদায় হতেই বাড়িটা নিস্তব্ধ হয়ে উঠলো। পরের দিন সকালে নাহিয়ান খান আনোয়ার খান এর কাছে গিয়ে বলল বাড়ি ফেরার কথা তিনি তো কোন মতেই আসতে দেবে না। কারন আজ আরশির শুরুর বাড়িতে যেতে হবে। কিন্তু নাহিয়ান খান তাদের কথা জানালো তখন আর আনোয়ার খান মানা করলো না। আবরার রা সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল। আরহাম আর আরুহি এক ফাকে সবার অগোচরে ওর দাদুভাই কে নিয়ে কোথাও একটা গেল। আরহাম আর আরুহি একটা বেঞ্চে বসে আছে তার সামনের বেঞ্চে বসে আছে আনোয়ার খান। আরুহি আনোয়ার খানকে একটা প্রশ্ন করলো প্রশ্ন টা শুনে উনি চমকে উঠলো।মূলত আরুহিরা এখানে এসেছিল আনোয়ার খান এর সাথে কথা বলতে। উনি নিজেকে সামলিয়ে বলল,,,

“এতে তোমাদের কি কোন লাভ আছে। এটা অনেক বছর আগের ঘটনা!

তখন আরুহি বলল,,,

“আপনি যদি আমাদের সত্যিই নিজের বলে মনে করেন তাহলে আপনি সব সত্যি বলবেন। কারন এর সাথেই বাবা মায়ের মৃত্যুর রহস্য আছে। আপনি যদি সব সত্যি বলেন তাহলে আমরা সহজেই আপনার ছেলের হত্যাকারীদের শাস্তি দিতে পারবো।”

সব শুনে আনোয়ার খান কিছুক্ষণ মৌন থেকে ওদের সব বলে দিলো। সব শুনে আরুহি বলল,,,

“তাহলে এটাই হচ্ছে মূল রহস্য ধন্যবাদ দাদুভাই।
আমরা আজকে রাতেই ঢাকা ফিরছি। আপনি বারন করবেন না। আর বারন করলেও আমরা শুনছি না। কারন আমাদের অনেক কাজ আছে।”

~চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here