#তোর_শহরে_রেখেছি_পা
#পর্ব_৬
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
আরুহি সোজা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হলো। বাকিরাও যে যার জন্য বরাদ্দকৃত রুমে চলে গেল। সন্ধ্যার আজান দিতেই আরুহি নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পরলো। ওর অভ্যাস জার্নি করলে সারাদিন না ঘুমিয়ে সন্ধ্যার পর ঘুমাবে। আর আরহাম এসে টেনে তুলে খাওয়াবে। তারপর আবার ঘুমাবে। আবার ফজরের সময় উঠবে।মত রাতেই বা আগেই ঘুমাক না কেন ফজরের সময়- ই ঘুম ভেঙে যাবে।
এদিকে,,
নাসরিন খান আর নেহমাত শেখ কিছু একটা ভাবছে। উনাদের ভাবনা শেষ-ই হচ্ছে না। নাহিয়ান খান খেয়াল করেছে নাসরিন খান আরুহির পরিচয় পাওয়ার পর থেকেই কেমন যেনো চুপচাপ হয়ে গেছে। নাহিয়ান খান নাসরিন খানের কাঁধে হাত রেখে বলল,,
“কি হয়ে নাসরিন তোমাকে আসার পর থেকেই খেয়াল করছি কেমন যেনো চুপচাপ হয়ে গেছো?”
নাসরিন খান অসহায় চোখে উনার দিকে তাকালো আর বলল,,
“নাহিয়ান আরুহি রেহানার মেয়ে !”
“কোন রেহানা কার কথা বলছো। তুমি কি ডাক্তার রেহানার কথা বলছো যে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল।”
“হ্যা নাহিয়ান আমি সেই রেহানার কথাই বলছি। আরুহি তারই সন্তান। কিন্তু ওরা যে ওদের বাঁচতে দেবে না। নাহিয়ান যার জন্য আমি আমার প্রফেশন ছেরেছি। মাহমুদ ভাই আর রেহানা দুনিয়া ছেড়েছে।তারা যদি ওদের কথা জানতে পারে তাহলে ওদের কেউ মেরে ফেলবে।”
“কি বলছো কি তুমি?”ওদের কেনো মারবে ওরা তো বোধহয় কিছু জানে না।”
“আমি সত্যি বলছি। কারন ওরা নিশ্চিন্তে ছিল এতদিন যে মাহমুদ আর রেহানার কোন ছেলে মেয়ে ছিল না বলে। কিন্তু এখন যদি জানে তাহলে ওরা ওদের মেরে ফেলবে।কারন সব প্রমান গুলো ওরা হাতে পায় নি। ওরা ভেবেছিল ওদের মেরে দিলেই সব শেষ কিন্তু ওদের বাড়িতে তো প্রমান লুকিয়ে রেখেছিল রেহানা। আমাকে ফোন করে সব জানিয়ে ছিল। আমিই আমাদের চ্যানেলের মাধ্যমে ওদের মুখোশ খুলে ফেলতাম। কিন্তু তার আগেই তো ওরা রেহানা কে মেরে দিল। আর আমাকে উঠিয়ে নিয়ে গেল আর থ্রেট দিল যদি আমি এই প্রফেশনে থাকি তাহলে নিশান আর নিশি কে মেরে ফেলবে। ওদের কাছে দুটো ভিডিও ছিল যেখানে নিশান আর নিশির দিকে বন্দুক তাক করা ছিল।আমি যদি রাজি না হই তাহলে ওদের মেরে দেবে। তাই তো আমি আমার জীবনের থেকেও প্রিয় প্রফেশনটাকে ছেড়ে চলে এসেছি। কিন্তু রেহানা আমাকে সব বললেও এটা কেন বললো না যে ওদের ছেলেমেয়ে আছে।’
নাহিয়ান খান এতদিন এসবের কিছুই জানতো না। উনি শুধু জানতেন কেউ ওকে থ্রেট দিয়েছিল চাকরি ছাড়তে আর নাসরিন খান সংসারে মনোযোগী হবেন বলে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু এতকিছু হয়েছে তা জানতো না সব শুনে উনি হতভম্ব হয়ে গেল। নাসরিন খানের চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। নাহিয়ান খান ওকে জরিয়ে ধরলো। কিন্তু দেয়ালের ওপাশ থেকে কে জেনো সবকিছু শুনলো। আবার সবার চোখের আড়ালে ওখান থেকে চলে গেল।
______________________
আফরিন রিয়াদ আবরার নাদিয়া ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে গল্প করছিল। মূলত আনোয়ার খান সব নাতি নাতনিদের নিয়ে গল্প করছে। এখন তো এখানে শিহাব আর রুপাও আছে। ওদের সাথে আবরার দের খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে। আরশি ওর রুমে আছে। হাজার হোক বিয়ের কনে । রাত আটটার দিকে আরহাম খান বাড়িতে ঢুকলো। ড্রয়িংরুমে যারা ছিল সবাই ওর দিকে তাকালো। আরহাম আফরিন দের দেখে অবাক হলো। কিন্তু কিছু বললো না ও আনোয়ার খান এর দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,,,
“আসসালামু আলাইকুম দাদুভাই!”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। এই তোমার আসার সময় হলো। ”
“কিছু কাজ ছিল তাই রাত হলো। কেমন আছেন আপনি?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি তোমাকে দেখে খুশি হলাম। আর তোমার কাজ বলতে সারাদিন তো ঐ ক্রিমিনাল দের পেছনেই দৌড়ে বেরাও। আর তো কোনো কাজ নেই।”
“দাদুভাই এবার একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না। ”
তখন আনোয়ার গিন্নি বললেন,,,
“দাদুভাই উনি ওরকমি তুমি উনার কথায় কিছু মনে করো না। তুমি তো জানোই উনি এসব পুলিশ, সি আই ডি প্রফেশন পছন্দ করে না।”
“এসবের জন্যই তো আজ এই অবস্থা আমাদের পরিবারের যাই হোক বাদ দিন আরু কোথায় নিশ্চয়ই ঘুমাচ্ছে।”
তখন রুপা বলল,,
“হ্যা ঘুমাচ্ছে!”
“এই মেয়েটাও না কখনো শুধরাবে না। আমি যাই ফ্রেশ হয়ে ওকে ডেকে তুলি নাহলে ওভাবেই ঘুমিয়ে থাকবে।”
তখন আনোয়ার খান বললেন,,,
“আরহাম দারাও তোমার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিই।”
“ঠিক আছে তবে আমি আবরার আর আফরিন কে চিনি আর বাকি সবার সাথে পরিচয় করান। ”
আনোয়ার খান সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আরহাম সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। তখন সিঁড়ি দিয়ে নেহমাত শেখ নামলো। আনোয়ার খান ওনাকে ডেকে বলল,,
“আরহাম এই হলো নেহমাত তোমার ফুপির হাজবেন্ড মানে তোমার ফুপা।”
আরহাম মুচকি হেসে বলল,,
“গুড ইভিনিং ফুপা আমি আরহাম ,আরহাম মাহমুদ খান পেশায় একজন সি আই ডি অফিসার।”
আরহামের কথা শুনে নেহমাত হকচকিয়ে গেল। নিজেকে সামলিয়ে বলল,,
“এখনো ইভিনিং আছে নাকি এখন তো নাইট মানে রাত। ”
“আরে ফুপা গুড নাইট বললে মনে হয় তাকে এখনি বিদায় দিতে হবে।তাই বললাম গুড ইভিনিং মানে আমাদের আরো দেখা হবে।”
“ভারি মজার ছেলে তো তুমি।”
“তবে মজার ছেলে হলেও খুব একটা ভালো মানুষ না আমি। যাই হোক আপনার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো আবার পরে কথা হবে। ”
নেহমাত শেখ আরহামের কথা বুঝতে পারলো না।আরহাম সবার থেকে বিদায় নিয়ে ওপরে গেল। আরহাম কে ওর বাবার রুমে থাকতে দেওয়া হয়। যে রুমে মাহমুদ খান আগে থাকতো। আরহাম ফ্রেশ হয়ে আরশির সাথে দেখা করে আরুহির কাছে গেল। আরুহি কাঁথা মুড়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছে। আরহাম গিয়ে মাথায় হাত দিল। তখন আরুষি বলল,,
“ভাইয়া মাথাটা একটু টিপে দাও না। মাথাটা ব্যাথায় ছিঁড়ে যাচ্ছে!”
“তুই বুঝলি কি করে যে আমিই এসেছি। আর আজ তুই ঘুমাস নি?
“তোমার স্পর্শ আমি ভালোভাবেই চিনি।আর এতো কিছু মাথায় থাকলে ঘুম হয় নাকি ! তার ওপর মানুষের ভিড় ভাট্টা আমার ভালো লাগে না। তারওপর এরা এমন ভাবে সবার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দেবে যেনো আমি প্রধান মন্ত্রী তার ওপর সবার ইউজলেস কথাবার্তা। মাহমুদ এর ছেলে মেয়ে আছে কেউ জানালো না কেন? হ্যানত্যান তার জন্য এভাবেই শুয়ে আছি। ঘুমাতে পারছি না বলে মাথাও ব্যথা করছে। ”
“নিচে আরহাম আফরিন কে দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম পরে তখন দাদুভাই পরিচয় করিয়ে দিল তখন বুঝলাম কাহিনী কি!”
“ওসব রাখো আমার খুব মাথাব্যথা করছে ঘুমাবো।”
“আমি সব জানি কোথায় কি করেছিস আজ রুপা সব বলেছে।এখন খেয়ে নে তারপর একটা মেডিসিন খেয়ে তারপর ঘুমাবি।”
“এখন আমি কোথাও যাবো না আর খাবোও না। আমার কিছু ভালো লাগছে না। এমনিতেও এই বাড়ির নিয়ম কেউ ঘরে এনে খাবার খেতে পারবে না।”
“আমি তোকে কোলে নিয়ে যাচ্ছি আমি নিজ হাতে খায়িয়ে দেব যেভাবে রোজ দিই। শুধু ঘুমালে মাথাব্যথা কমবে না তোর ওষুধ ও খেতে হবে। তার জন্য আগে কিছু খেতে হবে। ”
“ভাইয়া প্লিজ আমার কিছু ভালো লাগছে না।”
“তা বললে তো শুনবো না। ওঠ এবার!”
“ভাইয়া প্লিজ!”
আরহাম আরুহিকে কোলে তুলে নিল। আরুহি ভাইয়ের কোলে উঠে বুকে মাথা ঠেকালো। আসলেও ওর ভালো লাগছে না।মাথাটা অনেক ভার হয়ে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না ওর। আরহাম সিঁড়ি দিয়ে আরুহিকে নিয়ে নামছে আরুহি চোখ বুজে আছে। আরুহিকে এ অবস্থায় দেখে সকলে এগিয়ে এলো। আবরারের বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো। আনোয়ার খান ব্যস্ত হয়ে বলল,,,
“আরহাম কি হয়েছে আরুহির ? ওর এ অবস্থা কেন?”
তখন আরহাম সবাইকে আশ্বস্ত করে বলল,,,
” বোনুর কিছু হয় নি। যাস্ট ওর একটু মাথাব্যথা করছিল। আর খেতেও চাইছিল না।তাই জোর করে এখানে নিয়ে এলাম। এখন খায়িয়ে একটা ওষুধ খাওয়াবো আর ও একটা ঘুম দেবে দেখবে সকালে সব ঠিক আছে।”
“ওকে রুমে নিয়ে খাবার দিতে তাহলে”
“এবাড়ির নিয়ম হলো রুমে কেউ খেতে পারবে না। সকলকে এখানে এসেই খেতে হবে। আমি বা আমার বোন কেউ চাই না নিয়ম লঙ্ঘন করতে। নিয়ম লঙ্ঘন করলেও যদি আবার বয়কট করে দেওয়া হয়।
এ কথা শুনে আনোয়ার খান চুপ মেরে গেলেন । তখন আরুহি চোখ খুলে বলল,,,
“আহ ভাইয়া কি হচ্ছে এসব তুমি এখন দাঁড়িয়ে না থেকে টেবিলে বসাও। আর নাহলে ওপরে নিয়ে চলো আমার ভালো লাগছে না।”
তখন আনোয়ার খান বললেন,,,
“আরহাম তুমি আরুহিকে রুমে নিয়ে যাও। রুপা একটু পর তোমাদের খাবার রুমে দিয়ে আসছে।”
“নিয়ম ভেঙে ফেলবেন দাদুভাই?”
আরহাম এর কথায় আরুহি বলল,,,
“ভাইয়া রুমে চলো এখানে সিন ক্রিয়েট করছো কেন? ”
“আচ্ছা ঠিক আছে রুমেই যাচ্ছি।”
আরহাম যেভাবে কোলে তুলে আরুহি কে নিয়ে এসেছিল সেভাবেই কোলে তুলেই নিয়ে গেল। বাকি সবাই অবাক হয়ে ওদের দেখলো। ওদের ভাইবোনের মাঝে ভালোবাসার কমতি নেই সেটা স্পষ্ট। আবরার আর আর আফরিন ও গেল ওদের রুমে। আরহাম আরুহিকে বিছানায় শুইয়ে দিল। তখন আবরার বলল,,,
“আসবো আরহাম ভাইয়া?”
“হ্যা এসো!”
আবরার আরহাম বড় দেখে ভাইয়া বলে। ঢোকার সম্মতি পেয়ে ওরা রুমে ঢুকে পরলো। আবরার বলল,,,
“এই মাথাব্যথা কখন হলো আমরা তো কেউ কিছু বুঝলাম না। সন্ধ্যার পর আমরা ওকে ডাকতে এসেছিলাম।তখন দেখলাম কাঁথা মুড়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছে। তাই আর ডিস্টার্ব করিনি।”
“ইটস্ ওকে আবরার!”
আরহাম আরুহির মাথা টিপে দিচ্ছে। আরুহি চোখ বন্ধ করে আছে। রুপা খাবার নিয়ে আসতেই আরহাম জোর করে ওকে খায়িয়ে দিল।নিজেও খেল। আর ওষুধ খায়িয়ে দিল। তারপর মাথা টিপে দিতে লাগলো। ও ঘুমিয়ে গেলে লাইট বন্ধ করে দরজা ভিরিয়ে দিয়ে।নিচে আসলো। আবরার রা আগেই নিচে চলে এসেছে। ও নিচে আসতেই সবাই ওকে আরুহির কথা জিজ্ঞেস করল।ও বলল সব ঠিক আছে। আর আবরার কে বলল আবরার তুমি একটু আমার সাথে এসো কথা আছে। আরহাম এর কথা শুনে আবরার ওর কাছে এলো। আরহাম ওকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল। প্রথমে ওরা চা খেল । তারপর রাস্তা দিয়ে হাঁটতে লাগলো। হুট করে আবরার বলল,,,
“আরহাম ভাইয়া তুমি কি আজ আমাকে বলবে তোমাদের বাবা মায়ের কথা।”
“সেটা বলার জন্যই তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছি । কারন তোমাকে আমাদের দরকার।”
আরহাম আর আবরার একটা খোলা মেলা জায়গায় গেল। আকাশে চাঁদ উঠেছে। চাঁদের আলোয় দুজনকেই দেখা যাচ্ছে। আরহাম চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,,
“আমার বাবা মাহমুদ খানের ছোট বলা থেকেই ইচ্ছে ছিল দেশের জন্য কিছু করতে। তাই উনি বরাবরই চাইতেন পুলিশ অফিসার হতে। কিন্তু দাদুভাই এর তা পছন্দ ছিল না। আরো একজন ছিল যে দাদুভাই কে প্রলোভিত করেছে যাতে বাবা পুলিশ অফিসার না হতে পারে। কারন বাবা ছিলেন সাহসী কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। কিন্তু কাকা সবসময় বাবাকে সমর্থন করেছে। দাদুভাই সবসময় চাইতেন বাবা যেনো উনার ব্যবসা সামলায়। বাবা দাদুভাই এর থেকে লুকিয়ে পুলিশের পরীক্ষা দেয়। বাবা তাতে পাস ও হয়ে যায়। সেদিন বাবা বাড়িতে বলে দাদুভাই খুব রাগারাগী করে। কোন মতেই তাকে এই পুলিশের চাকরি করতে দেবে না। কাকা কোনরকমে তাকে শান্ত করে। বাবা এটাও বলেছিল সে পুলিশের চাকরি ছাড়া আর কিছু করবে না। দাদুভাই আর বাবার মাঝে বড় রকমের ঝামেলা হয়। বাবা মাকে খুব পছন্দ করতো।হয়তো ভালোও বাসতো কখনো তাদের প্রেম হয় নি। বাবা পুলিশের চাকরি হতেই মায়ের বাড়িতে প্রস্তাব পাঠায়। তারা রাজি হয়ে যায়। কিন্তু দাদুভাই এতে রাজি হয় না। কারন মা ছিলেন আমাদের মতো দেখতে। আর তার সাথে নাকি খানদের সাথে যায় না। বাবাও জেদ ধরে বসে বিয়ে করলে তাকেই করবে। তখন দাদুভাই কারো কথা শুনে বলে তোমাকে দুটো অপশন থেকে একটা বেছে নিতে হবে। এক তুমি যদি পুলিশের চাকরি করতে চাও তাহলে রেহানা কে ছাড়তে হবে। আর যদি রেহানাকে চাও তাহলে পুলিশের চাকরি ছাড়তে হবে। তখন বাবা বলে আমি কাউকে ছাড়বো না। তখন দাদুভাই বলে তাহলে বাড়ি ছাড়তে হবে। তুমি পুলিশের চাকরি করে খান বাড়ির নিয়ম লঙ্ঘন করেছো। তার ওপর আমার মুখের ওপর কথা বলা বা আমার কোন সিদ্ধান্ত কে অগাহ্য করা নিষেধ তুমি তাও করেছো। তুমি খান বাড়ির নিয়ম লঙ্ঘন করেছো। তুমি এ বাড়িতে থাকতে পারবে না। ব্যস এতেই বাবা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে কাকা দাদী জান কতো আটকানোর চেষ্টা করে কিন্তু বাবা কারো কথাই শোনে না। তারপর এসে মায়ের বাড়িতে সব খুলে বলে নানা আগে থেকেই বাবাকে চিনতেন তিনি জানতেন তাঁর মেয়েকে বাবা কখনো অসুখী করবেন না। তাই উনি পরিবার ছাড়াই মা বাবার বিয়ে দেন। দাদুভাই এর পরে কোনদিন তাদের খোঁজ নেয় নি। বাবার পোস্টিং ঢাকায় পরে ততদিনে মাও ডাক্তার হয়ে যায়। মা আগেই ঢাকায় থাকতেন। তারপর থেকে দুজনে সংসার করতে থাকে তারপর আমি আসি আরুহি আসে। জানো আবরার আমাদের কেউ না থাকলেও আমরা খুব সুখী পরিবার ছিলাম। কিন্তু সুখ টা বেশিদিন ধরে রাখা গেল না।”
এইটুকু বলেই আরহাম থামলো। আরহামের কথাগুলো গলায় আটকে যাচ্ছিল। হয়তো মা বাবার মৃত মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠেছে। আবরার আরহাম এর দিকে তাকালো আর ঘাড়ে হাত রাখলো। আরহাম বলল,,,
“জানো আবরার আমার থেকে না আরুহি মা বাবাকে বেশি ভালো বাসতো। মা বাবা বলতে অজ্ঞান ছিল। ওদের খুন হওয়াটা ও মানতে পারে নি। কিন্তু একটা সময় ও শক্ত হয়ে উঠলো। মা বাবা কে ভেবে কান্না করা বন্ধ করে দিল। নিজেকে সামলিয়ে উঠলো। আমি সি আইডি জয়েন করার দিন ও যে কি খুশি হয়েছিল।”
তখন আবরার বলল,,,
“আরহাম ভাইয়া আংকেল আন্টিকে কে বা কারা মেরেছে তুমি জানো?”
আরহাম চুপ মেরে গেলো। একটা বড় নিঃশ্বাস ফেলে বলল,,
“আজ সব তোমাকে বলবো কিভাবে কারা মেরেছে। তবে তুমি কাউকে বলবে না। আর আমার কিছু ইনফরমেশন লাগবে তার জন্য তোমাকে সব জানানো।”
“ভাইয়া আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।আর থাকবো তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।”
আরহাম আবরার কে
************
ওর মা বাবার মৃত্যুর রহস্য সব বলে দিলো।আরো কিছু কথা বললো। সব শুনে আবরার বলল,,,
“চিন্তা করো না ভাইয়া সবাই সবার কৃতকর্মের ফল পাবে। আমি আছি তোমাদের সাথে।আমি সব খোঁজ খবর এনে দিব তোমাদের। তবে আরুহি?
“তুমি আরুহির কথা চিন্তা করো না। ও সব জানে আর ও সব ঠিক করেও রেখেছে।”
“চলো এখন বাড়ি যাই। সবাই হয়তো চিন্তা করছে!’
“হুম চলো। তবে এখানের কথা এখানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রইলো।”
“হুম চলো!”
আবরার মনে মনে বলল,,,
“আজ আমাকে নতুন করে ভালো মুহূর্তের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছো।। আমিও তোমাকে নতুন বেস্ট মুহূর্ত দেব। ”
ওরা বাড়িতে চলে গেল। আরহাম বোন কে দেখে নিজের রুমে গেল। আর ঘুমিয়ে পরলো। আজানের ধ্বনি কানে আসতেই চোখ খুললো আরুহি। এটা ওর অভ্যাস তাই হোক না কেন ফজরের নামাজের সময় ঘুম এমনিতেই ভেঙে যাবে। আরুহি ঘুম থেকে উঠার দোয়া পরে বিছানা ছাড়লো। ওয়াশরুম থেকে উযু করে সালাত আদায় করে নিল। বেলকনিতে দাড়ালো ভোরের আলো ফুটতেই আরহাম কে মেসেজ করে ড্রয়িংরুমে ডাকলো। আরহাম ও নিয়মিত ফজরের সালাত আদায় করে। আরহাম আরুহির মেসেজ পেয়ে ড্রয়িংরুমে গেল। সারাবাড়ি নিস্তব্ধ কেউ মনে হয় উঠেনি আর উঠলেও রুম থেকে বের হয় নি। আরুহি থ্রিপিস এর ওপরে মোটা শাল জড়িয়ে মাথা ভালোভাবে ওরনা দিয়ে ঢেকে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বলল,,
“ভাইয়া চলো খেজুরের রস খাবো!”
“মানে এখন খেজুরের রস পাবি কোথায়? আগে থেকে বলে রেখেছিলি নাকি?” আর তোর মাথা ব্যথা কমেছে?
“আরে ভাইয়া তুমি তো জানোই ওষুধ খেয়ে একটা ঘুম দিলেই সব হাওয়া। এখন চলো ওরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। আমি আগেই বলে রেখেছিলাম।”
“কারা তোর জন্য অপেক্ষা করছে?”
“কারা আবার আমার ছোট গ্যাং পাটি।!”
“ওকে চল তাহলে অনেক দিন হলো রস খাওয়া হয় না এভাবে ভোরে।”
“হুম চলো!”
“আর কাউকে নিবি না আমাদের সাথে না মানে আবরার আফরিন ওরা তো নতুন ওদের কেও নিতাম সাথে।”
“ওরা বোধহয় কেউ উঠেনি চলো তো তুমি আর আমি যাবো ।”
“ওরা তো সারাজীবন শহরেরই থেকেছে । কোনদিন খেজুরের রস খেয়েছে কিনা সন্দেহ! ওদের নতুন কিছু উপহার দেই।”
“ওরা কেউ ওঠেনি ওদের জন্য নিয়ে আসবো। এখন চলো নাহলে সত্যিই দেরি হয়ে যাবে।”
“আচ্ছা ঠিক আছে চল।”
আরহাম আর আরুহি বাড়ি থেকে বের হলো। কিছু দূর যেতেই দেখলো চার পাঁচটা ছেলে একজন লোক কে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঐ লোকটাই মুলত গাছে উঠে রস নামাবে উনাদের গাছি বলা হয়। আরহাম আর আরুহি যেতেই একটা বাচ্চা বলল,,
“আরুহি আপা সব যোগার কইরা রাখছি।”
“ধন্যবাদ মাসুদ এখন চলো ওনাকে গাছে উঠতে বলো।”
লোকটা গাছে ওঠে ওদের রস পেরে দিল। ওরা সবাই মজা করে রস খেলে। একটা বাচ্চা তিনটা বোতল এনেছিল আরুহির কথায়। ওরা রস খেয়ে রস বোতলে ভরে নিল। একটা বোতল আজিম আহমেদ এর বাড়িতে নিয়ে গেল। আরহাম আর আরুহি এখন আজিম আহমেদ এর বাড়িতে যাবে উনাদের সাথে দেখা করে খান ভিলায় আসবে। আরুহি আর আরহাম কে দেখে আজিম আহমেদ খুব খুশি হলো। ওরা উনাদের সাথে দেখা করে বাড়ির দিকে রওনা দিল। আজিম আহমেদ বলেছিলেন খেয়ে আসতে কিন্তু ওরা না করলো। অতঃপর ওরা বাড়ির দিকে রওনা দিল।
এদিকে সকাল হতে হলে নিচে আসতেই সকলে জানতে পারলো আরুহি আর আরহাম বাড়িতে নেই। ওদের লাপাত্তা হওয়ার কারণ কেউ খুঁজে পেল না। আনোয়ার খান একটু চিন্তিত হয়ে পরলো। তখনি হাসি মুখে আরুহি আর আরহাম বাড়ির ভেতরে ঢুকলো। তখন আনোয়ার খান বললেন,,,
“আরহাম আরুহি তোমরা কোথায় গিয়েছিলে বলে তো যাবে এদিকে সবাই টেনশন করছিলো?”
“এই তো দাদুভাই বেশিদূর যাইনি একটু রস খেতে গিয়েছিলাম।”
“এরপর থেকে কোথাও বেরুলে আমাদের বলে যাবে।”
“আমরা তো এখন ছোট নই যে বাড়ি থেকে একলা বের হলে হারিয়ে যাবো।”
আনোয়ার খান কিছু বললেন না।আরহাম ওর দাদুভাই এর ওপরে ক্ষোপ কাজ করে ওর বাবা মায়ের কথা ভেবে। আরুহি আরহামের হাত ধরলো। আর আফরিনের কাছে গিয়ে বলল,,,
“আফরিন তোমরা নিশ্চয়ই কোনদিন খেজুরের রস খাওনি?”
“হুম খাওয়া হয় নি শুধু বইতেই পরেছি।”
“রুপা ভাবি তুমি ওদের সবাইকে রস দাও।এই নাও! আমরা একটু ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর নাস্তা করবো।
আরুহি ওর হাতে থাকা বোতল রুপার হাতে দিল। আর আরহামের হাত ধরে ওপরে নিয়ে গেলো। আরহাম আর আরুহি ওপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে সকলের সাথে ব্রেকফাস্ট করলো। তারপর যে যার কাজে গেল।আজকে গায়ে হলুদ কিন্তু হলুদের অনুষ্ঠান হবে না। আরুহি আরশির রুমে গিয়ে নক করল। আরশি আরুহিকে দেখে বলল,,,
“আয় ভেতরে আয়! কাল তো তোর ছায়াও দেখলাম না। মাথাব্যথা ছিল নাকি তোর?
“হুম ঐ একটু আজ একদম ঠিক আছি। আচ্ছা আরশি আপু তোমার বিয়ে হলে গেলে ওরা তোমার ইচ্ছে অনুযায়ী তোমার কাজ করতে দেবে তো?”
“আমার উনি তো বলেছেন দেবে! ”
‘যদি বিয়ের পরে না দেয় তাহলে কি করবে?”
“তাহলে আর কি করবো তোর দুলাভাই এর কথা মেনে সংসার করবো।”
“তুমি যে বলেছিলে তুমি ছোট থেকেই চাকরি করতে চাও একটা বিয়ের জন্য এত বছরের স্বপ্ন বিসর্জন দেবে।”
“যুগ যুগ ধরে এটাই হয়ে আসছে। মেয়েরা সেক্রিফাইস করেই সবাই এতো দিন পর্যন্ত এসেছে।”
“বাবা আমাকে আর ভাইয়া কে সবসময় বলতো,,
‘অবাধ্য হও। সবার মন জুগিয়ে চলার কোনও দায় নেই তোমার। অতো সবার কথা ভাবতে ভাবতে নিজেকে খারাপ রাখা বন্ধ করো। কেউ তোমাকে দু’টো খারাপ কথা বললেই তা ভেবে ভেবে নিজেকে গুমড়ে মারার প্রয়োজন নেই। দরকারে কেয়ারলেস হও। প্রয়োজন নেই প্রতিবার তোমারই সবটা ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা করার। কেউ একটু ভালোবেসে কাছে ডাকলেই সব ছেড়েছুড়ে দৌড়ে যেতে হবে না। বুকে জমা সব কথা হাউহাউ করে বলে দিতে হবে না। বিশ্বাস করতে একটু সময় নাও, একটা গন্ডি টানো নিজের মনের চারপাশে। যা পার করে সহজে প্রবেশ করা যায় না। যেখানে কদর নেই, সেখান থেকে উঠে এসো নীরবে। ওঠো; অনেকটা দেরি হয়ে গেছে, এবার একটু নিজের দিকে তাকানোর অভ্যাস করো!’
~চলবে,
বিঃদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম। দয়া করে কেউ বলবেন না ছোট হয়েছে। কারন বড় করে দেওয়ার জন্য আমার অনেক পাঠক/পাঠিকা গল্প পরতে পারেনা। সকলকে মেসেঞ্জারে দিতে হয়। আজ ভার্সিটি গিয়েছিলাম তাই একটু দেরি হলো পোস্ট করতে। দয়া করে কেউ রাগ করবেন না। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ।