তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি লেখক-এ রহমান পর্ব ২৩

0
858

#তোমার_তুমিতেই_আমার_প্রাপ্তি
লেখক-এ রহমান
পর্ব ২৩

খাওয়া শেষ করে আচমা সব কিছু গুছিয়ে রাখল। ইভান আর ইফতি সোফায় বসে টিভি দেখছিল। ঈশা রান্না ঘরে চা বানাচ্ছে। আচমা পিছনে গিয়ে বলল
–মামনি কিছু লাগবে?

ঈশা পিছনে ঘুরে বলল
–না খালা তুমি শুয়ে পড়ো। অনেক রাত হয়ে গেছে। বাকিটা আমি সামলে নিবো।

আচমা ঈশার কথা শুনে দাড়িয়ে থাকলো। ঈশা অনেক্ষন পর ঘুরে তাকাল। আচমা কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলল
–কিছু বলবে খালা?

আচমা হাসল। ঈশার কাছে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলল
–তুমি খুব ভালো মামনি। একদম এই বাড়ির যোগ্য বউ। কি সুন্দর লাগতেছে তোমারে।

ঈশা হেসে বলল
–তুমি শুয়ে পড়ো খালা।

আচমা চলে গেলো। ঈশা রান্না ঘর থেকে চা নিয়ে এলো। ইফতি আর ইভান কে দিয়ে নিজে একটা কাপ নিয়ে সোফায় বসে পড়লো। সবাই টিভি দেখছে। কেউ কোন কথা বলছে না। চা শেষ করে ইফতি বলল
–আমি শুতে যাচ্ছি। গুড নাইট।

বলেই উঠে চলে গেলো। চা শেষ করে ঈশা কাপ নিয়ে রান্না ঘরে গেলো। সেগুলো ধুয়ে ইভানের পাশে দাড়িয়ে বলল
–আমিও ঘুমাবো।

বলে পা বাড়াতেই ইভান হাত ধরে ফেলল। ঈশা ভ্রু কুচকে বলল
–কি হল?

ইভান ঈশাকে এক টানে কোলে বসিয়ে নিয়ে বলল
–তুই কোথায় জাচ্ছিস জান?

–ঘুমাতে যাচ্ছি।

ইভান আরও একটু কাছে টেনে বলল
–সারা রাত তো পড়েই আছে। এখনি ঘুমাবি?

ঈশা নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো। ইভান তাকে কোলে তুলে নিয়ে ঘরে চলে এলো। ভিতরে ঢুকে কোল থেকে নামিয়ে দিলো। দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঈশার দিকে ধির পায়ে এগুতে লাগলো। ঈশাও পিছাতে লাগলো। আলমারির সাথে আটকে গেলো ঈশা। শক্ত করে ওড়নার মাথা খামচে ধরল। ইভান দুই পাশে হাত রাখল। ঈশা জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে শুরু করলো। কাপা কাপা গলায় বলল
–কি…কি করছ? আমি ঘুমাবো।

ইভান আরও একটু ঝুকে বলল
–ঘুমাবি তো অবশ্যই। তার আগে আমার পাওনাটা মিটিয়ে নেই।

ঈশা বুঝতে না পেরে ভ্রু কুচকে বলল
–কিসের পাওনা?

–তোর কাছ থেকে কি আমার চাওয়া পাওয়ার শেষ আছে জান।

ইভান বাকা হাসল। তার হাসি দেখে ঈশা শুকনো ঢোক গিলে ফেলল। ভিত চোখে তাকিয়ে থাকলো। ইভান বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে নিশব্দে হাসল। সামনে পড়ে থাকা চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দিলো। কপালে গভির ভাবে একটা চুমু দিয়ে বলল
–এতো ভয় পাস কেন জান? বিশ্বাস নেই আমার উপরে? আমি কোনদিনও তোর বিশ্বাস ভাঙবো না।

ঈশা ইভানের চোখের দিকে তাকাল। অদ্ভুত শান্ত চাহুনি। ঈশা হেসে ফেলল। ইভান তাকে হাত ধরে টেনে এনে বিছানায় বসিয়ে দিলো। পিঠের নিচে বালিশ দিয়ে নিজে হেলানি দিয়ে ঈশাকে বুকে টেনে নিলো। জড়িয়ে ধরে বলল
–ঘুমা।

ঈশা একটু বিরক্ত হল। বলল
–এভাবে ঘুম আসে নাকি?

ইভান কোন কথা বলল না। বন্ধ জানালাটার পর্দা সরানো। সেদিকেই তাকাল সে। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার কাঁচ বেয়ে একে বেকে সেই বৃষ্টির ফোটা গড়িয়ে পড়ছে। ফ্যানের হালকা বাতাসে পর্দাটা এলোমেলো ভাবে উড়ছে। ইভান আনমনেই বলল
–বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। বারান্দায় যাবি?

ঈশা মাথা তুলল। ইভানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিতেই ইভান তার সম্মতি বুঝে গেলো। বিছানা থেকে নেমে ঈশাকে নিয়ে বারান্দায় গেলো। দুইটা টুল টেনে নিয়ে একদম গ্রিলের ধার ঘেঁষে বসে পড়লো। বাতাসের ধাক্কায় বৃষ্টির ফোটা গ্রিল বেয়ে পড়ছে। বাকা হয়ে কিছু কিছু গ্রিলের এপারেও চলে আসছে। ঈশার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। সে বেশ খুশি। ঈশার বৃষ্টি কতো পছন্দ সেটা ইভান জানে। তাই তাকে এখানে নিয়ে এসেছে। ইভান ঈশার খোঁপার কাঁটাটা খুলে দিলো। সারা গায়ে চুল ছড়িয়ে গেলো। ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে হাসল। ঈশা চোখ ফিরিয়ে আবার বৃষ্টি দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেলো। ইভান সামনে তাকিয়ে আছে। অনেক্ষন চুপ থাকতে দেখে ঈশা ইভানের কাধে মাথা রাখল। সামনে তাকিয়েই বলল
–মন খারাপ কেন? কি ভাবছ?

ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। গ্রিলে দুই হাত রেখে সামনে তাকিয়ে বলল
–জানিস ঈশা আমি তোকে খুব ভালবাসলেও কখনও এভাবে পাওয়ার কথা ভাবিনি। তোর সাথে বিয়ে হবে সেটাও ধারনাতে ছিল না। তবে আমি তোকে সব সময় আগলে রেখেছি। রাখতে চেয়েছি। আমি তোকে নিজের মতো করে ভালবাসতে চেষ্টা করেছি। বিনিময়ে তোর কাছে কিছুই আশা করিনি। আমি সত্যিই আজ অবাক হয়েছি সবার বিশ্বাস দেখে। সেদিন যখন এঙ্গেজমেন্টের দিনে সবার সামনে তুই বললি আমাকে বিয়ে করতে চাস। সেদিনও আঙ্কেল কোন কথা বলেনি। এক কথায় মেনে নিয়েছে। আমি সেদিনও আঙ্কেলের চোখে আমার জন্য একি রকম বিশ্বাস দেখেছি। আজকেও সেই একি রকম বিশ্বাস। মাঝে মাঝে ভাবি জানিস আমার আসলেই কি এই বিশ্বাসটা পাওয়ার যোগ্যতা আছে? আঙ্কেল আমাকে বিশ্বাস করে তার এক মাত্র মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত। আমি কি পারব তার এই বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে? পারব কি তার মেয়েকে ভালো রাখতে?

ইভানের কথাটা শেষ না হতেই ঈশা তার হাতের নিচে দিয়ে ঢুকে পড়লো। দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখল। ইভান ঈশাকে জড়িয়ে ধরে বিচলিত কণ্ঠে বলল
–ভিজে জাচ্ছিস তো।

ঈশাকে উঠাতে চেষ্টা করলেও সে শক্ত করে ধরে ওভাবেই দাড়িয়ে থাকলো। ইভান বুঝতে পারলো ঈশা এখন কোন কথাই শুনবে না। তাই নিজেও তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল
–ভিজলে জ্বর হবে তো।

–হোক।

ঈশার কথা শুনে ইভান একটু হাসল। তারপর ওভাবেই তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুরে গেলো। নিজের পিঠটা গ্রিলে ঠেকিয়ে দাড়িয়ে গেলো। ঈশা এবার মাথা তুলে বলল
–এখন তোমার জ্বর হবে না?

ইভান হাসল। বলল
–হলেই ভালো। তুই সেবা করবি।

ঈশা কিছু বলল না। বাইরে তাকাল। কি ভেবে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল
–বৃষ্টি কমে গেছে। ঝিরি ঝিরি বৃষ্টিতে ভিজলেও কি জ্বর হয়?

ইভান ভ্রু কুচকে তাকাল। একটু ভেবে বলল
–আমার মনে হয় তোর বাপ তোর পড়ালেখার পিছনে অযথায় টাকা নষ্ট করছে। সামনে তোর ফাইনাল পরিক্ষা। তারপর ডাক্তার হয়ে বের হবি। এখানে যদি কোন পেশেন্ট থাকতো তাহলে আমি সিওর তোর এরকম প্রশ্ন শুনে নিজের রোগের কথা শোনার আগেই স্বেচ্ছায় জীবন ত্যাগ করতো।

ইভানের কথাটা যে তাকে অপমান করার জন্য সেটা ঈশা বুঝতে পেরে একটু সরে দাঁড়ালো। তারপর অভিমানের সুরে বলল
–এসবের বাইরে তুমি আর ভাবতেই পারনা। কি বুঝে ডক্টর কে বিয়ে করতে গেলাম। আনরোম্যান্টিক একটা!

ইভান ঈশাকে টেনে নিজের কাছে আনল। দুই গালে হাত দিয়ে ঠোট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নিলো। কিছুক্ষন পরে ছেড়ে দিয়ে বলল
–আমি কতো রোম্যান্টিক সেটা জানার জন্য যে তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে ঈশা পাখি। শুধু তোমার না। আমি সবার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে চাই। আরও কাছে আসা যে আমার পক্ষে অসম্ভব।

ঈশাকে ছেড়ে দিয়ে ঘরে চলে গেলো। ঈশা বারান্দায় দাড়িয়ে ভাবতে লাগলো। কি অদ্ভুত মানুষটা সবার কথা ভাবে। সবার ইচ্ছার খেয়াল রাখে। ঈশা দাড়িয়েই থাকলো। বেশ কিছুক্ষন পর ইভান আসলো। হাত ধরে টেনে ভিতরে নিয়ে গিয়ে বলল
–চেঞ্জ কর। ঠাণ্ডা লাগবে।

ঈশা ইভানের দিকে তাকাল। ভেজা কাপড় চেঞ্জ করে এসেছে। ঈশাকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ দিয়ে ইশারা করে ওয়াশ রুমে যেতে বলল। ঈশা কোন কথা না বলেই ওয়াশ রুমে চলে গেলো। কাপড় চেঞ্জ করে ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখল ইভান জানালার সামনে দাড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। ঈশা তার পিছনে গিয়ে দাড়াতেই তার দিকে ঘুরে একটা কাপ এগিয়ে দিলো। ঈশা ভ্রু কুচকে সেদিকে তাকাতেই বলল
–কফি। খেলে ঠাণ্ডা লাগবে না।

ঈশা কাপটা হাতে নিয়ে বলল
–কে বানাল?

ইভান ভ্রু কুচকে বলল
–কেন তোর বর কি অকর্মা? কিছুই পারেনা?

ঈশা কিছু বলল না। কফির কাপে চুমুক দিয়েই থেমে গেলো। একটু হেসে বলল
–মোটেই না। আমার বর অনেক ভালো কফি বানাতে পারে।

ইভান দেয়ালের সাথে হেলানি দিলো। ঈশা তার বুকে মাথা রাখল। ইভান এক হাতে তাকে জড়িয়ে নিলো। কিছু একটা ভেবে বলল
–আচ্ছা যদি কোনভাবে সবাই বিয়ের কথা জেনে যায় তাহলে খুব রাগ করবে তাই না?

ইভান কফিতে চুমুক দিয়ে ঈশাকে শক্ত করে ধরে বলল
–জানবে না। তুই এসব নিয়ে ভাবিস না। আমি আছি তো।

‘আমি আছি তো’ এই একটা কথাই ঈশার সমস্ত চিন্তা দূর করে দিতে সক্ষম। এই মানুষটার এই একটা কথা ঈশার পুরো দুনিয়া বদলে দিতে সক্ষম। নিশ্চিন্তে ভরসা করা যায় এই মানুষটাকে। কফি শেষ করে ইভান বলল
–চল ঘুমাব। অনেক রাত হয়েছে।

ঈশা কাপ দুইটা টেবিলে রেখে বিছানায় বসে পড়লো। ইভান সব বন্ধ করে এসিটা অন করে পাতলা কম্বল টেনে শুয়ে পড়লো। ঈশা কম্বলের নিচে ঢুকে বিছানায় হেলানি দিয়ে বসে আছে। ইভান চোখ বন্ধ করেই বলল
–ঘুমানোর ইচ্ছা কি নেই?

ঈশা কিছুই বলল না। ইভান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে বসলো। একটু রাগি সরে বলল
–কি সমস্যা? কেন এরকম করছিস?

ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে বলল
–ঘুম আসছে না।

ইভান কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো। ঈশার গালে আলতো করে স্পর্শ করে শান্ত কণ্ঠে বলল
–কি হয়েছে? কি নিয়ে এতো ভাবছিস? আমাকে বল। না বললে আমি কিভাবে বুঝবো?

ঈশা মন খারাপ করে বলল
–সবাই তোমাকে কতো বিশ্বাস করে। আর আমি সব সময় বোকার মতো কাজ করি। বিয়ের কথাটা সবাই জানতে পারলে তোমাকেও ভুল বুঝবে। আমার জন্য শুধু শুধু তোমাকে সবার কাছে খারাপ হতে হবে। আমি এতো বড় বোকামি না করলেও পারতাম।

ঈশার কথা শুনে ইভান হাসল। বলল
–এটা নিয়ে এতো ভাবছিস? বলেছি না এসব নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না। তুই জতদুর পর্যন্ত ভেবেছিস আমি বিষয়টা এতো দূর পর্যন্ত যেতেই দিবো না। বিশ্বাস নাই আমার উপরে?

ঈশা মাথা নাড়াল। ইভান ঈশার গালে হালকা স্পর্শ করে বলল
–তুই যখন বোকামি করেছিস তখনই আমি সব ভেবে নিয়েছি। কি হতে পারে আর কিভাবে এসব সামলানো যায়। আমি জতদিন বেঁচে আছি ততদিন তোকে কোন কিছু নিয়েই ভাবতে হবে না। তুই আমার জীবন। আমি বেঁচে থাকতে আমার জীবন কে কিভাবে কষ্ট দেই বল।

ঈশা ইভানের দিকে তাকিয়ে থাকলো। ইভান তাকে বুকে টেনে নিয়ে শুয়ে পড়লো।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here