এই অবেলায় তুমি পর্ব ৩৯

0
1233

#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩৯
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

বাসার কলিং বেল বাজাতেই বড় আম্মু দরজা খুলে দিলো।
দরজার সামনে ফুপিমণির হাতে বউ বরন করার জিনিসপত্র।
নীল তো হা হয়ে আছে ওর আম্মু এই বাসায় কেনো আর এই সব কি??
ইরিন মাথা নিচু করে আছে। মাথার ঘোমটাটা একটু বেশি লম্বা করে দেওয়া তাই সামনের কিছুই দেখছে না। মনে মনে আল্লাহকে ডাকছে।
নীল কিছু বলতে গেলে রূপা বেগম এক ধমক দিয়ে চুপ করয়ে দিলেন।
দরজার বাহিরে রেখে কিছু নিয়ম মেনে ঘরে প্রবেশ করার আগেই পিছন থেকে আওয়াজ আসলো।

~এই, এই, না না ঘরে পা রাখবে না।

ইরিন পা বাড়াতে গিয়েও পা পিছিয়ে নিলো। কন্ঠটা তো মাহি আপুর।

রুদ্র আর নীল মাহি কে দেখে আরো বেশি অবাক হলো। আসতে আসতে এক এক করে সবাই এসে জরু হলো দরজার সামনে।

বড় আম্মুঃ কি হয়েছে মাহি? ঘরে পা রাখবে না তো বাহিরে কি দাঁড়িয়ে থাকবে?

মাহিঃ বড় আম্মু আমি কিন্তু সেটাও বলিনি। দাঁড়াও তোমরা সাইডে যাও।

এই নীল বউ কোলে নিয়ে ঘরে প্রবেশ কর।

নূরঃ এটা আবার কেমন নিয়ম??

মাহিঃ আমার শশুর বাড়িতে এমন নিয়ম মানা হয়।

নূর মন খারাপ করে বললো,’ ওওহহ কত ভালো নিয়ম।’

সবাই নীল আর ইরিনের দিকে তাকিয়ে আছে।
নীল এক ঝটকায় ইরিন কে কোলে তুলে নিলো।
ইরিন লজ্জায় মনে হয় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা।

দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে আদিবা, শুভ্রতা, রুহি,মিম, নূর, মাহি। কেউ দরজা খোলছে না। তালা দেওয়া দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে যার চাবি নূরের হাতে।

নীলঃ সমস্যা কি? চাবি দে..

নূরঃ আহ্ এতো তারা কিসের…

নীল রুদ্রের দিকে তাকালো, ‘ ভাই তোমার বউকে বলো দরজা খুলতে।

শুভ্রতাঃ আজ কিন্তু কারো সুপারিস কাজে দিবে না। এটা ভেবো না নিজে অন্য কাউকে বিয়ের সময় বাঁচিয়েছো তাই তোমাকেও বাঁচাবে।

নীলঃ ভাবি আপনিও…!

নূরঃ আর কত সময় দাঁড়িয়ে থাকবি। তোর নিজেরি কিন্তু সময় নষ্ট হচ্ছে।

নীলঃ আমার নিজের কিভাবে?

নূরঃ এত কথা কেনো বলছ? আমার জান্স এর কষ্ট হচ্ছে..

নীলঃ তোর জান্স আমার কোলে আরামে আছে। নিজের ভাইটার প্রতি একটু মায়া কর। এই আটার বস্তা কোলে নিয়ে আমি শেষ।

আদিবাঃ একবার বলেছো দেবরজি দ্বিতীয় বার বললে কিন্তু আজ আর বাসর করতে পারবা না।

আদিবার কথা শুনে সবাই হেসে দিলো।

নীলঃ আমি কি জানতাম যে বিয়ে করবো? আর আমি কি চাকরি করি নাকি। পারলে বউ পালার জন্য তোরা এই অসহায় ভাইটাকে হেল্প কর।

আরো অনেক কথা বলে দরজা খোলে দিলো নূর।

রুমের ভেতর প্রবেশ করে রুদ আর নীল অবাক হয়ে বললো,’ এত ফুল দিয়ে এত সুন্দর করে রুম সাজানো হলো কখন??

নীল নূরের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

নূর আমতা আমতা করে বললো,’ আমার দিকে এভাবে তাকানোর কি আছে। নিজের জন্য বাসর ঘর সাজাইছি। বিয়ে হলো এখন বাসর হলো না এটা কেমন দেখায় না। তাই আজ শখ করে নিজ হাতে নিজের বাসর সাজাইছি। কিন্তু এখন দেখছি আমার থেকে এটা তোদের বেশি দরকার তাই আজকের জন্য তোদেরকে দিয়ে দিলাম।
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে সবার দিকে তাকালো।

সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। একটা মানুষ এতগুলো মানুষের সামনে নিজের বাসর ঘর সাজানোর কথা কিভাবে বলতে পারে??

নূরঃ সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো??

রুদ্র রেগে নীলের দিকে তাকালো।
নীল সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিলো।
রুদ্রের তাকানোর মানে হলো,’ তোর জন্য আজ আমার বাসর হতে গিয়েও হলো না! তোর আজ কেই বিয়ে করা লাগলো?। তোরে আমি পরে দেখে নিমু৷ ‘

শুভ্রতাঃ এখনো বাসর হয়নি!!

নূর নিজের মাথায় নিজে বারি মারতে ইচ্ছে করছে। কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেললো।

ফায়াজঃ আহারে তাহলে তো আজও আমার বন্ধুর বাসরটা হলো না। আদিবা ভাবি ভাইকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করেন তো ফুলের দোকান খোলা আছে কি-না??

রুদ্রঃ ফুলের দোকান খোলা দিয়ে কি করবি??

ফায়াজঃ তোদের বাসর ঘরও সাজাতাম শত হলেও একটা মাত্র শালিকা আমার ওর বাসর করার ইচ্ছে জেগেছে।

রুদ্রঃ আমি জিজ্ঞেস করছি ভাইকে..

রুদ্রের কথা শুনে সবাই হাসাহাসি শুরু করলো।
নূর লজ্জায় রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

শুভ্রতাঃ মেয়েটাকে এভাবে লজ্জায় ফেলা একদম ঠিক হয়নি।

নীলের কাছে সব কিছু রহস্য রহস্যময় লাগছে।
প্রথম বাসায় আশার পর সবাই আগে থেকেই বউ বরন করার জন্য রেডি আবার কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলো না। এখন আবার রুম ফুলে ফুলে সাজানো। এই সব কিছুর পেছনে কি নূরের হাত? নূর কি আগে থেকেই সব জানতো? বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কথা শুনে নূর একটু ও চমকায়নি। ইরিনের চাচা এতটাও ভালো মানুষ না যে চৌধুরী বাড়ির ছেলে শুনে বিয়েতে নাচতে নাচতে রাজি হয়ে যাবে নূরের এক কথায় কোনো গন্ডগোল না করে।
হঠাৎ নীলের মনে পরলো নূরকে ইরিনের বড় চাচার সাথে কি যেনো বলতে দেখে ছিলো। প্রথম লোকটা রেগে গেলেও পরে উনার চোখে মুখে ভয়ের ছাপ ছিলো। এমন কি কথা বলেছে নূর??

নূর ছাঁদে বসে আছে। কেমন কেমন করে যেনো বিয়ের একমাস বিশ দিন চলে গেলো।

ওই দিন রুদ্র ওর প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। রুম থেকে বের হয়ে গিয়ে ছিলো নূরের মোবাইল হাতে নিয়ে ।
নূর কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে গিয়ে ছিলো। সকালে উঠে রুদ্রকে কোথাও দেখেনি তার মানে রুদ্র রাতে বাসায় আর আসেনি। কিন্তু কোথায় ছিলো সারা রাত? এই সব চিন্তা করতে করতে কলেজের জন্য বের হয়ে ছিলো। আজ দেখবে শুভ মামা তুক্কো শুভ ভাই নূর কি! এত দিন শান্ত সৃষ্ট ভদ্র মেয়ে সেজে ছিলো। কোনো গন্ডগোল বাঁধাতে চায়নি। কিন্তু এই শুভ এখন বেরে গেছে। আজ তার অবস্থা যদি ওর ভাইয়ের মতো না করে, তাহলে ওর নাম ও নূর না!!

কিন্তু দুঃখের বিষয় এত এত প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েও কোনো লাভ হলো না। ওই দিন কেনো আজও নূর শুভর চেহারা দেখেনি। শুভ ওর সামনে দূর আশেপাশে আর এই কয়দিন আশে নি। তাহলে লোকটা কোথায়? রুদ্র ওই ফোনটা আর নূরকে দেয়নি। পরের দিন রুদ্র নূরের জন্য নতুন ফোন কিনে এনে ছিলো। এমন ভাবে কথা বলছিলো যেনো কাল রাতে কিছুই হয়নি। নূর বার বার জিজ্ঞেস করতে গিয়েও ফিরে এসেছে। আপনি সারা রাত কোথায় ছিলেন?? কিন্তু কখনো সাহস হয়ে উঠেনি জিজ্ঞেস করার।

ওর পাশে এসে মাহি বসলো।

মাহিঃ কি ভাবতেছিস?
নূর হাসি দিয়ে ছিলো,’তেমন কিছু না। জিজু কই?’
মাহিঃ রুমে।
নূরঃ একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?
মাহিঃ হুম বল?
নূরঃ তুই কি সত্যি জিজুকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিস?

মাহি কিছু সময় চুপ থেকে বললো,’ বিয়ের আগে ভালোবাসা কি বেশি জরুরি? বিয়ের আগে ভালোবাসা থেকে বিয়ের পর ভালোবাসায় শান্তি অনেক। বিয়ের আগের ভালোবাসা পুড়ায় ঠিক আগুনে হাত দিলে যেমন জ্বালা ধরে আর বিয়ের পরের ভালোবাসা হলো এতটা মিষ্টি যে তুই নিজের বর কে যত ভালোবাসবি নিজের কাছে পৃথিবীটা আরো সুন্দর মনে হবে।

নূরঃ তুমি তো দেখছি ভালোবাসায় পিএসডি করছো। স্যার কি খুব বেশি ভালোবাসে না-কি? আমার আনরোমান্টিক বোনটা এত ভালোবাসা সম্পর্কে জেনে গেলো।
মাহিঃ নূর তুই কিন্তু দিন দিন ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস। আমি তোর বড়।
নূরঃ তো কি হয়েছে?
মাহিঃ কিছু না। নিচে চল।
নূরঃ তুমি যাও আমি একটু পর আসছি।

মাহি নিচে যাওয়ার কিছু সময় পর রুদ্র এলো ছাঁদে।

রুদ্রঃ এখানে কি করছো??
নূরঃ কিছু না। বসে আছি।
রুদ্রঃ এই সব প্লেন তোমার ছিলো?
নূর রহস্যময় হাসি দিয়ে রুদ্রের দিকে তাকালো।
রুদ্রঃ এমন হাসিতে তোমাকে ঠিক শয়তানের মতো লাগে।
নূর কটমট দৃষ্টিতে তাকালো রুদ্রের দিকে।
রুদ্রঃ বিয়ের পর মনে হয় সব মেয়েরা সাহসী হয়ে যায়। আগে ভয়ে চোখের দিকে তাকাতে পারতে না। আর এখন আমাকে এই চোখ দিয়ে ভয় দেখাচ্ছো।

নূর দৃষ্টি ঘুরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।
রুদ্রঃ কথা বলছো না কেনো??
নূরঃ রুমে যাবো।
রুদ্রঃ রুমে তো এখন যাওয়া যাবে না।
নূরঃ কেনো??
রুদ্র লাজুক হেসে বললো,’ রুম তো আদিবা ভাবি সাজাচ্ছেন। ‘
নূরঃ রুম তো গোছানো আর কি গোছাবেন ভাবি?
রুদ্রঃ কি জানি..
নূর সন্দিহান চোখে রুদ্রের দিকে তাকিয়ে উঠে যেতে নিলে রুদ্র হাত আঁকড়ে আটকে দিলে।
রুদ্রঃ আমার পাশে চুপটি করে বসে থাকো।
নূরঃ রুমে যাবো হাত ছেড়ে দিন..
রুদ্র নূরকে হেঁচকা টানে নিজের বুকে নিয়ে ফেললো।
রুদ্রঃ আর একটা কথা যেনো না শুনি।
নূর গুটিশুটি মেরে রুদ্রের বুকে মাতা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আজকের আকাশটা খুব সুন্দর। তাঁরায় জ্বলজ্বল করছে পুরো আকাশ মাঝ খানে চাঁদ।

রুদ্রঃ ওই যে আকাশে দেখছো চাঁদ টা ওটা তুমি আর পাশের তাঁরা টা আমি। আমার চাঁদের দিকে কেউ তাকালে আমার সেটা সয্য হবে না। যেটা আমার সেটা শুধুই আমার। অন্য কেউ তার দিকে নজর দিতে পারবে না।
নূর মুগ্ধ হয়ে শুনছে রুদ্রের কথা। রুদ্রের ছোটো ছোটো কথায়, কেয়ারে নূর মুগ্ধ হয়। রুদ্রের হাসি তে মুগ্ধ হয়। এক কথায় রুদ্রের সব কিছুতে নূর মুগ্ধ হয়।

ফাইজা মন খারাপ করে টেবিলে বসে আছে সামনে বই খোলা। কিন্তু তার মন পড়ার আশেপাশে কোথাও নেই৷ এই কয়দিন নীলের সাথে ফোনে কথা বলে ভালোবেসে ফেলেছিলো। কিন্তু আজ শুনলো নীল বিয়ে করে নিয়েছে ক্রাশ ওকে এভাবে প্রেম না করে ধোঁকা দিলো। আহ্ কি কষ্টের কথা ক্রাশ তার বউয়ের সাথে হয়তো এখন বাসর করছে আর এদিকে সে দুঃখ প্রকাশ করছে বইয়ের সাথে।
পাশেই মোবাইলটা বেজে উঠলো।
মোবাইলের স্কিনে জ্বলজ্বল করে নীলের নামটা দেখে হা হয়ে গেলো ফাইজা। এই পুলা নতুন বউ রেখে ওকে কেনো কল দিয়েছে? ওহ হয়তো বিয়ের কথা বলতে।
ফাইজা কল ধরে সালাম দিলো।
ওপাশ থেকে সালামের উওর আসতেই ফাইজা বলে উঠলো,’ নতুন বউ রেখে আমাকে কল দেওয়ার সাইন্স টা বুঝলাম না..?’

~ কিসের বউ? কার বউ? কি কও তুমি।

ফাইজা এমন কথা শুনতে শুনতে অবস্তু হয়ে গেছে। নীল বলেছে ফোনে ওর এভাবে কথা বলতে ভালো লাগে। তাই ফাইজাও ইমোশনাল হয়ে বলে ছিলো। তাহলে সব সময় আপনি ফোনে এভাবে কথা বলবেন। আমারও শুনতে ভালো লাগে।

ফাইজাঃ আপনি তো আজ বিয়ে করেছেন। বউ নিশ্চয়ই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।

~ বার বার কার বউয়ের কথা বলতাছো? আমি আজ ৬০বছর ধরে বিয়ে করি না বউ আসবো কই থেকে। (রিফাত ভাই নীলের বিয়ের বিষয় কিছু জানেনা)

ফাইজাঃ৬০ বছর!! তোমার বয়স কতো?

ওপাশের লোকটা ভাবলো আর কত মিথ্যা কথা বলবো। এবার সত্যি টা বলে ফাইজার পা ধরে হলেও বিয়ে করে নিবে। তাই প্রথম থেকে শেষ অবদ্ধি সব খোলে বললো ফাইজা কে।

রাগে ফাইজার সারা শরীর কাঁপছে মোবাইলটা ছুঁড়ে ফেললো বিছানার এক কোনায়। শুধু সকাল হোক ওই নীলের একদিন কি ওর একদিন। শালা ঠকবাজ শুধু হাতের কাছে একবার পাই ফুটবল যদি না খেলছি আমিও ফাইজা না!!

চলবে…
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here