এই অবেলায় তুমি পর্ব ৩৪

0
1065

#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_৩৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

নূরকে এই হালকা সাজে খুব সুন্দর লাগছে। । সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতেই শায়েলা বেগম বললে,’ মাশাল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে। ‘
একে একে সবাই খুব প্রশংসা করলো।
আদিবা, শুভ্রতা,রুহি সবাই শাড়ি পড়ে খুব সুন্দর করে সেজেছে। রুহি যাবে না কিন্তু শুভ্রতা জোর করে রেডি করিয়েছে।
ছেলেরা কেউ যেতে পারবে না।

সবাই রেডি তখনই শায়েলা বেগম এর মুঠোফোনে বেজে উঠলো।
শায়েলা বেগমঃ হ্যালো..
রুদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম আম্মু।
শায়েলা বেগম সালামের উওর দিয়ে। আরো অনেক কিছুই বললেন। রুদ্র রাবেয়া আন্টির বাসায় নূরকে নিয়ে যেতে একদম নিষেধ করে দিলো। ও যেহেতু নেই তাই ওর বউ যেতে পারবে না। ওর বউ যেনো বাসায় থাকে।
হাজার বুঝানোর পরেও রুদ্র রাজি হলো না।
শায়েলা বেগম নূরের সামনে এসে চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছেন। কিভাবে নিষেধ করবেন বুঝতে পারছেন না।
নূরঃ কি হয়েছে বড় আম্মু..?
শায়েলা বেগম নূরকে রুদ্রের নিষেধ করার বিষয়টা বললো।
নূরঃ সমস্যা নেই। তোমরা যাও আমার এমনিতে যেতে ইচ্ছে করছে না।
শায়েলা বেগম যেতে চাননি নূর অনেক কিছু বুঝিয়ে জোর করে ওদের সাথে পাঠিয়েছে।

নূর শাড়িটা আর চেঞ্জ করলো না। গহনা গুলো খুলে রাখলো৷ মনটা হালকা খারাপ হয়ে গেলো। প্রথম যেতে রাজি না হলেও রেডি হওয়ার পর মন বললো যেতে আর তখনি এই সাদা হনুমান কি করলো!! হুহ্

আজ যত যাই হোক এই সাদা হনুমানের সাথে কোনো কথাই বলবে না নূর।

মোবাইল হাতে নিয়ে ঘাটাঘাটি করছে এমন সময় আননোন নাম্বার থেকে কল আসলো৷ প্রথম কল এসে কেটে গেলো নূর ধরলো না। আবার সাথে সাথে কল আসলো। এবার কল রিসিভ করে কানে দিতেই কেউ বলে উঠলো, ‘ ইচ্ছে করে প্রথম কল ধরো নি তাই না..?

নূর চুপ করে বুঝার চেষ্টা করলো কে ফোনের ওপাশের ব্যক্তিটি।রুদ্র ভাইয়ার কন্ঠ তো এমন নয়।

~কি হলো এখনো চিনতে পারো নি..?

নূরঃ পরিচয় না দিলে চিনবো কিভাবে.??

ওপাশের লোকটি হয়তো একটু হাসলো।

~ আচ্ছা বাদ দাও চিনতে হবে না। বাসায় কি একা..??

নূর এদিক ওদিকে তাকানো শুরু করলো। ওপাশের পুরুষটির কথার ধরন দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি জানেন নূর বাসায় একা।

নূরঃ আপনি কে..?

~আমার প্রশ্নের উত্তর এটা নয়…
নূরঃ আমার উত্তর ও এটা নয়..
~এতো কথা পেঁচাও কেনো??
নূরঃ আপনি সঠিকভাবে উত্তর দিলেই তো হয়।
~ চোখ বন্ধ করো কন্ঠটা মনে করার চেষ্টা করো!!
নূর তাই করলো চোখ বন্ধ করলো।
চোখ, মুখ, শক্ত করে শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,”শুভ ভাই”

রুদ্র অনেকক্ষন ধরে নূরের মোবাইল ফোন দিচ্ছে বার বার এক বিরক্ত কর মহিলা একি কথা বলছে “আপনি যেই নাম্বারে কল দিয়েছেন সে টি এখন ব্যস্ত আছে” বিরক্ত হয়ে ফোনটা পাশে রেখে চোখ বন্ধ করতেই মনে হলো নূর এত সময় কার সাথে কথা বলছে? মাহির সাথে কি? ফোনটা হাতে নিয়ে মাহির নাম্বারে কল দিলো।

মাহি মাত্র রাতের রান্না শেষ করে রুমে আসলো। ফায়াজ ড্রয়িং রুমে বসে চা খাচ্ছে। রোকেয়া বেগম অসুস্থ নিজের রুমে শুয়ে আছেন।

ফোনে রিং হতেই বালিশের নিচ থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে স্কিনে তাকিয়ে থমকে গেছে। রুদ্র কেনো ওকে কল দিলো..?
হাজারো কথা ভাবতে ভাবতে কল রিসিভ করলো।
~হ্যালো…
রুদ্রঃ কেমন আছো মাহি..?
মাহির চোখ ছলছল করে উঠলো।
মাহিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো…
রুদ্রঃ আমাকে জিজ্ঞেস করবে না..?
মাহিঃ কেমন আছেন..?
রুদ্রঃ আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি। আন্টির শরীর এখন কেমন?
মাহিঃ কিছুটা ভালো।
রুদ্রের নিজের উপর এখন নিজেরি রাগ হচ্ছে কেনো ফোন দিতে গেলো। মাহির কথা বলার ধরন দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও কথা বলতে চাচ্ছে না।
রুদ্রঃ আচ্ছা তো ভালো থেকো। সময় করে একদিন ফায়াজকে আন্টিকে নিয়ে এসো।
মাহিঃ আচ্ছা।
রুদ্রঃ তো রাখি..
মাহিঃ কথা শেষ।
রুদ্র এর বিপরীতে কি বলবে বুঝে পেলো না।
মাহি নিজেই আর উত্তরের অপেক্ষা করলো না। কল কেটে দিলো।

শুভ হাসতে হাসতে বললো, ‘ বাহ্ রাণী সাহেবা আপনার রাজার কন্ঠ তো খুব ভালোই মনে গেঁথে রেখেছেন।
নূরঃ আপনি কি ফাজলামো করতে কল দিয়েছেন..?
শুভঃ না!
নূরঃ তাহলে??
শুভঃ প্রেম করতে ফোন দিয়েছি!
নূরঃ সামান্য লজ্জা বলতে কিছু থাকলে অন্য কারো বউকে এই সব বলতেন না।
শুভ হুঁ হুঁ করে হেসে বলে উঠলো, ‘ তোমরা বুঝি স্বামী স্ত্রী! তুমি তো এখনো পুরনো প্রেমিক কেই ভুলতে পারো নি..
নূরঃ আমার সম্পর্কে তো দেখছি ভালোই সব যেনে গেছেন..
শুভর কন্ঠ এবার কিছুটা শক্ত হয়ে আসলো।
শুভঃ আমি তোমাকেও খুব তারাতারি আমার কাছে নিয়ে আসবো।
নূর এবার রেগে বলে উঠলো,’দ্বিতীয় বার আমার কাছে আসা তো দূর ফোন দেওয়ার মতোও সাহস করবেন না!!..
শুভঃ সব সমস্যার মূল হলো রুদ্র তাই না.??

নূর কিছু বলছে না।

শুভঃ ডক্টর!

নূরের বুক কেঁপে উঠল। ভেতরটা নাড়া দিয়ে বলে উঠলো,’ খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে রুদ্রের সাথে।

নূর রেগে বললো,’ আপনি যদি চোখ তুলেও উনার দিকে তাকানোর চেষ্টা করেন আমি আপনার সেই চোখ তুলে ফেলবো।
শুভ হেঁসে উঠলো, ‘ নূর তুমি কি যানো তুমি কি বলছো আর কাকে.? তুমি বাঘ কে বেড়ালের ভয় দেখাচ্ছো..! বলে আবার হুঁ হুঁ করে হেসে উঠলো।

নূর কি বলবে! নিজেকে নিয়ে ভয় নেই কিন্তু এই ডেঞ্জারাস লোকের সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনেছে। এখন ভয় ঢুকে গেছে রুদ্রকে নিয়ে।যদি এই লোক রুদ্রের কোনো ক্ষতি করে ফেলে।

শুভঃ কি হলো ভয় পেয়
য়ে গেছো..?? এটা ভয় নয় আমি খুব জলদি এই রুদ্রের চেপ্টার ক্লোজ করে ফেলবে। সরি দিবো সবাইকে যাঁরা যাঁরা তোমার আর আমার মধ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।

নূর খট করে ফোন কেটে জিম মেরে বসে আছে। রুদ্র কে নিয়ে ভয় করছে। মন বলছে সামনে খুব খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে।

———

নূর ছাঁদে বসে আছে পাশের বাসার ছাঁদে খুব সুন্দর করে লাইটিং করা হয়েছে। পাশের ছাঁদের মৃদু আলো এসে এই ছাঁদে পরছে। চুল খোঁপা করা ছিলো। নূর ছেড়ে দিলো চুল। হালকা বাতাসে চুল গুলো এসে চোখ মুখ ডেকে দিচ্ছে।
নূরের পাশে রুদ্র এসে দাঁড়ালো। নূর রুদ্রের দিকে তাকিয়ে আবার সামনের বিল্ডিং এর ছাঁদের দিকে তাকালো।
নূরঃ কখন আসলেন??
রুদ্র কিছু না বলে নূরের দিকে তাকিয়ে আছে।
নূর আবার তাকালো রুদ্রের দিকে। রুদ্র কিছু বুঝে উঠার আগেই নূর রুদ্রের সামনা সামনি দাঁড়িয়ে রুদ্রের ঠোঁটের মাঝে ঠোঁট ডুবিয়ে অধরজোড়া আঁকড়ে ধরলো।

মাহি সব কিছু গুছিয়ে রেখে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। প্রচুর গরম পরেছে এলার্জিয়ে শরীর জায়গায় জায়গায় লাল লাল দাগ পরে গেছে।

গোসল করে রুমে এসে দেখে ফায়াজ মোবাইলে কার সাথে যেনো কথা বলছে।

মাহি কাপড় ছড়িয়ে এসে ফায়াজের সামনে দাঁড়ালো।

ফায়াজ মাহির দিকে তাকিয়ে আবার ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে গেলো।

মাহি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বুঝলো ফায়াজ কোনো মেয়ের সাথেই কথা বলছে। কিন্তু মেয়েটা কে?? আর মেয়েটার জন্য ওকে দেখেও দেখলো না!! মন খারাপ করে শাশুড়ীর রুমের দিকে চলে গেলো।

মাহির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ফায়াজ ফোন রেখে দিলো।

———

সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। আদির খুঁজ এখনও পাওয়া যায় নি। রুহি দিন দিন কেমন যেনো হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে রুম বন্ধি করে নিচ্ছে।

নূর লজ্জায় ছাঁদ থেকে নেমে আর রুদ্রের সামনে জায়নি। রুদ্রকে দেখলে এখন লজ্জা, ভয়ে লুকিয়ে যায় ছি!ছি!ছি লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে কি কিভাবে পারলো এমনটা করতে।

নূর আর ইরিন বসে আছে ওদের পাশেই আরেকটা মেয়ে বসে আছে। ইরিন আবারও মেয়েটার দিকে তাকালো।

নূরঃ তোমার নাম কি..?
~আপনি এখনো আমাকে চিনলেন না আপু!! মন খারাপ করে মেয়েটি বললো।
নূরঃ পরিচয় দিলে তো চিনবো।
মেয়েটি কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে বলে উঠলো, ” এই হরিণ ”
ইরিন রেগে নূরের দিকে তাকালো।
নূরঃ হেবলার মতো আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কা…
ইরিনঃ তোর এই বেয়াদব ভাইকে আমি মাথা ফাটিয়ে দিবো। আমার এত সুন্দর নামটার অবস্থা কি করলো!…
মেয়েটা বলে উঠলো,’ কি হয়েছে??’

সবাই পিছন ফিরে তাকালো।
মেয়েটা পিছনে নীলকে দেখেই খুশিতে এক দৌড়ে নীলের সামনে গিয়ে নীলের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে উঠলো,’ আমি মনে মনে তোমারকে খুব মিস করতে ছিলাম আর দেখো তুমি আমার সামনে। ‘

মেয়েটা নীলের চুল ধরাতে ইরিন রাগে নূরের হাত খামচে ধরলো।

চলবে…

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here