#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_১৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
ডাস্টবিনের মধ্যে বসে আছে শুভ। ডাস্টবিনের যত ময়লা-আবর্জনা আছে সব ওর শরীরে লেগে আছে। কেউ তো আর ইচ্ছে করে ডাস্টবিনের মতো এতো সুন্দর জায়গায় বসে না।
[শুভ ভাই যখন নূরের মাথায় পিস্তল ধরে। নূর মনে মনে ভয় পেলেও সেটা শুভ ভাইকে বুঝতে দিলো না।
শুভঃ আরেক বার যদি” মামা ” ডাকটা শুনি। আমি সত্যি একদম মাথা উড়িয়ে দিবো!!
নূর ভয় পাওয়ার মতো মুখ করে বললো, ” আপনার পিছনে কে এটা!!”
নূরের মুখের দিকে তাকিয়ে আবার পিছনে ফিরলো শুভ।সাথে সাথে নূর ওদের পাশেই ডাস্টবিন ছিলো।সেই ডাস্টবিনের দিকে শুভকে ধাক্কা দিলো। বেচারা তাল সামলাতে না পেরে গিয়ে পরলো ডাস্টবিনে। সাথে সাথে সারা শরীর ময়লায় মাখামাখি। শুভর এই অবস্থা দেখে নূর অবাক হওয়ার মতো মুখ করে বললো,” আহারে মামা!! পরে গেলেন কিভাবে।ইসস কি একটা অবস্থা। সারা শরীর কাদার ময়লায় মাখামাখি।
শুভ থতমত খেয়ে তাকিয়ে আছে নিজের শরীরের দিকে। এবার নূরের দিকে তাকালো। ওকি সত্যি নূরকে কিছু করতো নাকি। শুধু একটু ভয় দেখাতে চেয়েছে।আর এই মেয়ে ডাইরেক্ট ওকে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।]
নূরঃ আপনাকে দেখতে না একদম গুন্ডা টাইপের লোক মনে হয় না!! গুন্ডা থাকবে কালো কচকচে, চুল গুলো বড় বড়,চোখ গুলো লাল লাল,দাঁত গুলো হলুদ, বিশাল দেহ,কন্ঠ থাকবে ভূতুড়ে। যাকে দেখলেই ভয়ে দু একবার হার্ট অ্যাটাক এমনিতেই হয়ে যাবে।কিন্তু আপনাকে দেখলে তো ভয় পাবে দূরের কথা। ছেলে মানুষ ও ক্রাশ খাবে।
শুভ হা করে নূরের কথা বলার ভঙ্গিমা, হাসি মুগ্ধ হয়ে দেখছিলো।
আজ হয়তো নূরের জায়গায় অন্য কেউ হলে। এতক্ষনে শুভ কি করতো নিজেও জানেনা। অবশ্য এতক্ষনে হসপিটাল ভর্তি থাকতো। কিন্তু ওর এখন হাজার চেষ্টা করেও নূরের উপর রাগ আসছে না।
শুভঃ সবাই তো ক্রাশ খাবে। সেটা আমিও জানি। তা তুমি খেয়েছো?
নূরঃ আমি জার তার উপর ক্রাশ খাই না। বলে বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলো।
পিছন থেকে শুভ চেয়ে আছে নূরের যাওয়ার দিকে।
——
মাহি আর আদিবা ভার্সিটি থেকে বের হয়ে রিক্সার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়ালো।
মাহিঃ ভালো করে আরেক বার ভেবে দেখলে হয় না!!
আদিবাঃ ভেবে দেখার কি আছে। আমি কারো দয়া নিয়ে সারাটি জীবন পার করে দিতে চাই না। আর আমি চাই না আমার কারোনে জীবনের কোনো একটা মুহূর্তে গিয়ে তোর ভাই আপসোস করুক।
মাহিঃ তুই ভুল ভাবছিস আবির ভাই তোর উপর দয়া করছেন না। আর রইলো আপসোস ভাইয়া টাইম পায় কই বেড়াতে যাওয়ার। ভাইয়ার মনে এক মুখে আরেক বলার সভাব নেই।আর আমি বুঝলাম না তুই তো ভাইয়া কে ভালোবাসিস তাহলে কেনো না করবি বিয়েতে।
আদিবাঃ আমি একদম তোর ওই গাধা ভাইকে ভালোবাসি না।আর আমি বাসা ঠিক করেছি৷ আজ বিকেলে চলে যাবো।
আদিবার কথা শুনে মাহি রেগে গেলো,” আরেক বার যাওয়ার কথা বললে। ধাক্কা দিয়ে একদম গাড়ির নিচে ফেলে দিবো।”
আদিবা কিছু বলবে তখনি একটা ছেলে এসে হাসি-হাসি মুখ করে ওদের সামনে দাঁড়ালো। পিছে আরো ৩-৪টা ছেলে।
ছেলেটা ব’লে উঠলো, ” আরে তুমি মাহি না?.. আমাকে চিনতে পেরেছো। আমি মিহান ওই যে হসপিটাল দেখা হলো। মনে পড়েছে?
মাহিঃ জ্বি ভাইয়া। কেমন আছেন?
মাহিন ওফ্ফ ভাইয়া ডেকে দিলে তো মুডটাই নষ্ট করে।
মাহি মিহানের মুখের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিলো। এই ছেলের কথা বলার ভঙ্গিমা দেখলে যে কেউ, যে কোনো পরিস্থিতিতে হাসতে বাধ্য।
মিহানঃ তা কেমন আছো? ওই দিন পর তো আর তোমাকে খুঁজেই পেলাম না!!
মাহিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া। আপনি?
মিহানঃ আমি সব সময় ভালো থাকি। বলেই মাহির পাশে আদিবার দিকে তাকালো। চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো, ” আরে তুমি সেই মেয়েটা না!!”??
আদিবা চোখ ছোটো ছোটো করে মিহানের দিকে তাকালো, ছেলেটা কে আগে কখনো দেখেছে বলে আদিবার মনে পড়লো না। মাহি জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদিবার দিকে। ওকি মাহিন কে চিনে?
আদিবা বললো,” বুঝতে পারলাম না ভাইয়া। আপনি কি আমাকে চিনেন।? আমার তো আগে কখনো আপনাকে দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।
মাহির পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটা ছবি ওদের সামনে ধরলো। ছবির দিকে তাকিয়ে মাহি চোখ বড় বড় করে আদিবার দিকে তাকালো। বেচারি আদিবা পারে না লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যায়।
মাহিনঃ এই মেয়েটা তুমি না?
আদিবা চোখ মুখ লাল করে বললো,” এই ছবি কোথায় পেয়েছেন?”
মাহিনঃ তার মানে সত্যি আমি তোমাকে ধরতে পেরেছি!!
মাহিঃ বিয়ে করবো না! বিয়ে করবো না!! আর দেখো পাবলিক রাস্তায় সবার সামনে ভাইকে কিস করে দিলি। আর কিস করা ছবি সবাই পকেটে নিয়ে ঘুরছে!!
_______
নূর বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে যাওয়ার সময়। মনে হলো রুদ্র ভাইয়ার রুমের দরজা খোলা। রুদ্র ভাই তো হসপিটালে আজ মনে হয় ভুলে দরজা খোলা রেখে চলে গেছে। খুশিতে নূরের চোখ মুখ চকচক করে উঠলো।ওই দিন পড়ার সময় রুদ্রের রুমে একটা শো পিস দেখে ছিলো৷ অনেক সুন্দর কিন্তু ধরার সাহস হয় নি। আজ ওইটার কয়েকটা ছবি তুলে সেও এমন একটা শো পিস কিনবে।
রুদ্র যেহেতু বাসায় নেই। রুমে ঢুকতে কোনো ভয় নেই। এক দৌড়ে নিজের রুম থেকে মোবাইলটা নিয়ে রুদ্রের রুমে গেলো।কেউ যেনো না দেখে দরজাটা ভেতর দিয়ে লাগাতে গিয়ে বাঁধলো আরেক জামেলা। দরজা তো লাগাতে পারছে না।যাক অবশেষে দরজা লাগাতে পারলো।
শো পিসটা হাতে নিয়ে কয়েক ছবি তুলে নিলো।খুবই সুন্দর এটা। কাল কে পুরো মার্কেট এটা খুঁজবে। না পেলে রুদ্রকে বলবে এটা ওকে দিয়ে দিতে ও টাকা দিয়ে দিবে। শো পিস রাখতে গিয়ে মনে হলো ওয়াশরুমের দরজা কেউ খট করে খুললো। ভয়ে নূরের হাত পা একদম জমে গেছে। সে কোনো কিছু ভয় না পেলেও ভূত খুব ভয় পায়। যদিও ভূত বলতে কিছু আছে বলে ও বিশ্বাস করে না। তবুও বান্ধবীদের মুখে ভূত সম্পর্কে অনেক কিছু শুনেছে। টিভিতে অনেক বার ভূত দেখেছে।
ওর ভাবনার মাঝেই কেউ বলে উঠলো, ” এই তুমি এই রুমে কি করছো?”
নূরের হঠাৎ রুদ্রের কন্ঠ শুনে ভয়ে হাত থেকে পড়ে শো পিসটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।নিমিষেই ভূতের ভয় উবে গেলো। শো পিস এর দিকে তাকিয়ে মনে হলো,রুদ্র ও ওকে ঠিক এই শো পিস টার মতো করে বেলকনি থেকে টুপ করে নিচে ফেলে দেবে।ভয়ে গলা শুকিয়ে এলো। ভয়ে ভয়ে পিছনো ফিরে চিৎকার দেওয়ার আগেই নিজের মুখ নিজেই চেপে ধরলো। সাথে সাথে অন্য দিকে ফিরে গেলো।
এই সাদা হনুমান তো হসপিটাল থাকার কথা। এখানে কি করছে। আর ছি! এই সব কি পড়ে বের হয়েছে।
রুদ্র খালি গায়ে পরনে সাদা টাওয়াল,চুল থেকে টপটপ করে পানি পরছে। নিশ্চয়ই এখন গোসল করে বের হয়েছে।
রুদ্র এতোক্ষন নূরের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে ছিলো।
রুদ্রঃ তুমি এই রুমে কি করছো?
………
রুদ্রঃ কি হলো কথা বলছো না কেনো?
নূর মিনমিন সুরে বললো, ” ভাইয়া আপনি তো হসপিটাল থাকার কথা। বাসায় কি করছেন? ”
রুদ্রঃ কেনো!! আমার কি এই সময় বাসায় আসা নিষেধ!!?
নূর কি বলবে বুঝতে পারছে না। উনার এতো সুন্দর শো পিস ভেঙে ফেললো এখনো এত শান্ত ভাবে কথা বলছে কিভাবে?? উনার তো রেগে যাওয়ার কথা।
রুদ্রঃ ওই দিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে আছো কেনো?
[তো কি করবো!! তোর মতো সাদা হনুমানের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকবো নাকি! ছি!? ]
নূরঃ ভাইয়া আপনার লজ্জা না থাকতে পারে। আমি তো আর আপনার মতো লজ্জাহীন নই!!..
নূরের কথা শুনে রুদ্র শব্দ করে হেসে উঠলো।
রুদ্রঃ আচ্ছা তাই নাকি!! তোমার এতো লজ্জা। তোমার লজ্জা দেখে তো আমারো লজ্জা লাগছে। ইসস এত লজ্জা যে একটা প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের রুমে নক না করে ঢুকে পরেছো। আবার দরজাও ভেতর দিয়ে আটকে দিয়ে রেখেছো!!
নূরঃ আমি কি জানতাম নাকি.. আপনি রুমে আছেন। প্রতি দিন তো এই সময় হসপিটালে থাকেন। তাই আজও ভেবেছেন হসপিটালে আছেন।
রুদ্রঃ তাই সুযোগ বুঝে আমার রুমে চলে আসছো চুড়ি করতে!!৷
নূর রেগে বললো,” আমি একদমি চুড়ি করতে আসিনি।আমি তো শুধু শো…..আর কিছু না বলে চুপ হয়ে গেলো।
রুদ্র এবার নূরকে বললো,” এদিকে আমার দিকে ফিরো!”
নূরঃ না!না!না আ..আপনি আগে কাপড় চেঞ্জ করে আসেন!..
রুদ্রঃ আমার হাতের মার না খেতে চাইলে এদিকে ফিরো। আর ছোট থাকতে তো একটা হাফ পেন্ট পরে, খালি গায়ে আমার আশপাশে ঘুর ঘুর করতে।
নূরের মনে হচ্ছে কান দিয়ে লজ্জায় গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে।
নূর রুদ্রের দিকে তাকিয়ে দেখে কালো শার্ট আর পেন্ট পরে নিয়েছে রুদ্র। কোন সময় চেঞ্জ করলো!!?
রুদ্র নূরের সামনে দাড়িয়ে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো, ” এই রুমে কেনো এসেছো? এসেছো ভালো কথা দরজা কেনো বন্ধ করেছো?আর তুমি সব সময় আমার শো পিস এর দিকে কেনো নজর দাও!!?ওই দিন ও আমার পছন্দের শো পিসটা তুমি ভেঙে ফেললে। আজ কে ও আমার পছন্দের শো পিসটা ভেঙে ফেললে!! ”
নূর মনে সাহস জুগিয়ে বলে উঠলো, ” ওই দিন তো আমি না। আপনি ভেঙে ছেন৷ জেদ না করে ওইটা আমাকে দিয়ে দিলেই তো ভাঙতো না।”
রুদ্রঃ আচ্ছা মানলাম ওইটা আমার জন্য ভেঙেছে। তবে আজকেরটা কেনো ভাঙলে!!?
নূর আমতা আমতা করে বললো,” এটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তাই আপনি বাসায় নেই। দরজাও খোলা ভাবলাম কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে যাই।মার্কেট থেকে এটার মতো আরেকটা কিনে আনবো। কিন্তু আপনি তো সব শেষ করে দিলেন!”
রুদ্র অবাক হয়ে বললো,” আমি শেষ করেছি মানে?”
নূরঃ আপনি পিছন থেকে আওয়াজ না করলে তো আর আমি ভয় পেতাম না আর এটাও হাত থেকে পড়ে যেতো না।”
রুদ্রঃ যত যাই বলো। আমি তোমাকে শাস্তি না দিয়ে সারছি না!!
নূর ভয়ে এদিক ওদিকে তাকাচ্ছে যদি দৌড়ে চলে যাওয়ার একটা রাস্তা পায়।এই রুম থেকে বের হতে পারলে। রুদ্র আর ওর কিছুই করতে পারবে না।কিন্তু বের হওয়ার রাস্তা যে ও নিজেই বন্ধ করে এসেছে। কি দরকার ছিলো দরজাটা বন্ধ করার।রুদ্র বুঝি এখন ওকে খোলা বেলকনি থেকে টুপ করে ফেলে দিবে!!!?
——
আদিবাঃ ভাইয়া আপনি এই পিক কোথায় পেয়েছেন!!?
মাহিন হাসতে হাসতে বললো,” এখন বাসায় যাও। অন্য কোনো একদিন দেখা হলে বলবো। কাউকে কিছু আর না বলতে দিয়ে মাহিন আর তার বন্ধুরা চলে গেলো।
মাহি আর আদিবা বাসায় ঢুকে সামনে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলো। সামনের মানুষগুলো কে দেখে!!।
আদিবার মুখ দিয়ে আপনা আপনি বেরিয়ে আসলো “মামী!!!”…..
চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।