#এই_অবেলায়_তুমি
#পর্ব_২
লেখিকা #sabihatul_sabha
“আমার ভালো লাগছে না আমি খাবো না আম্মু।”
আনিতা বেগমঃ খাবি না মানে কি?অল্প করে হলেও খেয়ে যা।
নূরঃ উঁহু খাবো না পেট ভরা।
মাহিঃ নূর এভাবে রাতে না খেয়ে ঘুমাতে নেই।চুপচাপ খেয়ে নে।
নূরঃ বললাম তো খাবো না।
ভাবি এসে বললো,” চলো নূর আজ আমি তোমাকে খাইয়ে দেই।চোখ মুখ কেমন দিন দিন শুকিয়ে যাচ্ছে। “(জিসান ভাইয়ার বউ। বাড়ির বড় বউ। তবে ভাবি খুব ভালো আর মিশুক ও।)
আরে আমি বুঝতে পারছি না। ও যেহেতো খেতে চাচ্ছে না। তাহলে এতো জোরাজুরি করার কি আছে।আর ছোট মা তোমার মেয়েকে দেখে মনে হচ্ছে বেচারিকে তার প্রেমিক ছেড়ে চলে গেছে।বলেই হাসা শুরু করলো আদি ভাই।
সবাই অবাক হয়ে নূরের দিকে তাকালো। নূরের আম্মু আনিতা বেগম তো নূরকে বললো,’ কি রে মা সত্যি কি এমন কিছু হয়েছে।?
নূর ছলছল চোখে ওর আম্মুর দিকে তাকালো।
মাহি রেগে বলে উঠলো, ” মানুষের লজ্জা বলতে কিছু একটা থাকে। কিন্তু আদি ভাই তোমার দেখি লজ্জা শরমের ছিটে ফোঁটা ও নেই।
নূর ঘৃণার চোখে আদির দিকে তাকালো। আগে যেই চোখে এক সমুদ্র ভালোবাসা নিয়ে লোকটার দিকে তাকাতো। আজ সেই মানুষটার দিকেই এক আকাশ সমান ঘৃণা নিয়ে তাকালো।কত টা নিচে নামতে পারে মানুষ এই মানুষটাকে না দেখলে বুঝতেই পারতো না নূর। ছলনার আরেক নাম হলো পুরুষ তা নূর তার আদি ভাইকে দেখেই বুঝলো। আর কোনো দিন সে কাউকে ভালোবাসবে না, বিশ্বাস করবে না।এক বার বিশ্বাস করে ঠকেছে সে খুব বাজে ভাবে ঠকেছে।
নূর উঠে চলে গেলো।অনেক বার পিছু ডাকলো আনিতা বেগম কিন্তু নূর একটা বার ফিরেও তাকালো না।
মাহিও হাতের প্লেট টা আওয়াজ করে টেবিলে রেখে নূরের পিছু পিছু চলে গেলো।
আনিতা বেগম খুব চিন্তিত তার দুই মেয়েকে নিয়ে। এতো হাসি খুশি মেয়েগুলো হঠাৎ কেনো এতো নিশ্চুপ হয়ে গেলো। এসব ভাবতে ভাবতে উনি রান্না ঘরে চলে গেলেন।
আদি একটা শয়তানি হাসি দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।
——
গিটার হাতে মাঝ রাতে ছাঁদের কিনার ঘেঁষে বসে আছে একটি এলোকেশী মেয়ে। আকাশের দিকে তাকিয়ে গিটারে টুংটাং আওয়াজ তুলে গেয়ে উঠলো,
থাকনা কিছু কথা…
পুরনো ডাইরীর ওই ধুলো মাখা পৃষ্ঠাটায়….
খুঁজবে না কেউ সেই পৃষ্ঠার
মুছে যাওয়া শব্দটা…
ভালো না মন্দ সমৃদ্ধ মনের..
সেই নদীর ভাঁটা..
দড়ি হীন শুন্য ভ্যালায়..
তবুও কেনো বার বার ভেঙে পরে মন…
কখন যে আশে সেই অন্তিম ক্ষন..(সাবহা)
গান থামিয়ে ডুপ দিলো সে তার অতীতের স্মৃতিতে…
তখন নূর ক্লাস নাইনের ছাত্রী। প্রতি দিন আদি ওকে বাইকে করে স্কুলে দিয়ে আসতো আবার নিয়ে আসতো।আদি নিজে ওকে পড়াতো।
নূরের প্রতি আদি খুব সিরিয়াস ছিলো। প্রতি সপ্তাহে একবার করে ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যেতো।আসতে আসতে নূরের ছোট্ট মনে আদি জায়গা করে নিলো।
ক্লাস টেনে উঠার পর আদি আর নূরের মধ্যে সম্পর্ক শুরু হয়। নূরের বেস্ট ফ্রেন্ড হলো রুহি। রুহি আদি আর নূরের সব কিছুই জানতো। আসতে আসতে নূর আর আদির ভালোবাসা আরো গভীর হতে লাগলো। স্কুল শেষে কত জায়গায় ঘুরতে যেতো।দিনগুলো কতই না সুন্দর ছিলো।
নূর কলেজে উঠলো। একদিন আদি তার জন্মদিনে উপহার হিসেবে নূরের কাছে একটা রাত চাইলো।
নূর তাতে না বলে দিয়েছিলো। আদি অনেক রকম ভাবে নূরকে বুঝানোর পরেও যখন নূর রাজি হলো না। তখন রেগে ব্রেকআপ করে দিয়েছিলো। নূর সেই দিন বাসায় এসে প্রচুর কান্না করেছে। তারপর ছাঁদে এসে গিটার বাজাতে শুরু করলো। নূরের একটা বাজে সভাব, যখন মন খারাপ থাকে তখনি গিটার বাজায়।
নূর গাইতে শুরু করলো,
দেহের জন্য ভালোবাসা…
মনের জন্য না…
এমন পিরিত করবি বন্ধু..
জানা ছিলো না..
এভাবে অনেক দিন পেরিয়ে যায়। নূর আর আদির সম্পর্ক আবার ঠিক হয়ে যায়।
একদিন নূর সন্ধায় ছাঁদে যায়।ছাঁদে গিয়ে নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকে সামনে দোলনায় বসে থাকা নরনারীর দিকে।
নূরের চোখের সামনে তার ভালোবাসার মানুষটি দোলনায় বসে আছে, কোলে গলা জরিয়ে ধরে বসে আছে তারি বেস্ট ফ্রেন্ড। নূরের চোখ দিয়ে সাথে সাথেই কয়েক ফোঁটা পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পরলো নিচে।
আদিঃ তো কেমন লাগলো আমাদের এক সাথে।ওফ্ফ আমি তো ভাবলাম আর কয়েক দিন পুতুল পুতুল খেলবো তা আর হলো না,দেখে ফেললি আমাদের। আমাদের নিশ্চয়ই খুব মানিয়েছে তাই না।
শুন তকে এই দুই বছরে অনেক বার বিছানায় নিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই তো শুধু বিয়ে বিয়ে। বিয়ের আগে কিছুই না। কখনো জরিয়ে ও ধরতে দেসনি।তুই এই দুই বছরে যা দিতে না পেরেছিস রুহি আমাকে এই কয়েক দিনে দিয়েছে। আমার ভাবনার থেকেও বেশি দিয়েছে।
নূরঃ ছি ভাইয়া তুমি আমার চাচাতো ভাই সেটা ভাবতেই আমার ঘৃণা হচ্ছে। আমি তোমাকে ভালোবাসতাম, তোমার মতো এতোটা নিকৃষ্ট মানুষকে আমি কিভাবে ভালোবাসলাম। নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা হচ্ছে ।
এতোটা নিচে নামতে পারলে তোমরা। আর রুহি তুই তো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলি। সব থেকে বড় কথা তুই আমার ফুপিমণির মেয়ে। আমার বোনের মতো।
রুহিঃ হে বোনের মতো কিন্তু বোন তো নই। তাই না।আর সারপ্রাইজ কেমন লাগলো?বলেই দু’জনে হাসতে লাগলো।
আদিঃ আচছা তোর কি মনে হয় তোর মতো গাধা, বোকা, আনস্মার্ট, আন্টি মার্কা মেয়েকে আমি বিয়ে করবো। আমার জন্য রুহির মতো স্মার্ট, মডার্ন,মেধাবী মেয়ে ডিজার্ভ করে।তোর মতো মেয়ের সাথে শুধু প্রেম প্রেম পুতুল খেলা যায়।
অপমানে নূরের চোখ দিয়ে অনর্গল পানি পরছে। আর কিছু না বলেই নূর যখন চলে যাওয়ার জন্য পিছন ফিরলো ছাঁদের দরজা থেকে একটা ছায়া সরে আড়ালে চলে গেলো।
রুহি দৌড়ে নূরের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। একি নূর এটা কিন্তু একদম ঠিক না। তুই কিছু না বলেই চলে যাচ্ছিস। আচ্ছা শুন কাল না তোর জন্য অনেক বড় একটা সারপ্রাইজ আছে।
নূর রুহিকে ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দৌড়ে ছাঁদ থেকে নেমে নিজের রুমে চলে গেলো।
অতিরিক্ত কান্না করার ফলে নূরের মাথা বেথা শুরু হয়। সারা রাত মাথার বেথায় ছটফট করে।শেষ রাতের দিকে মাহি ওকে মেডিসিন খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়ে যায়।
সকালে উঠে বাসায় চেচামেচির আওয়াজ শুনে নিচে গিয়ে শুনে আদি আর রুহির বিয়ে ঠিক হয়েছে।
এটা শুনার পর নূর নিজের রুমে আশার সময় রুহির সাথে দেখা হয়।
রুহি একটা গা জ্বালানো হাসি দিয়ে বলে,” কেমন দিলাম সারপ্রাইজটা। নিশ্চয়ই খুব সুন্দর। আমাদের খুব মানাবে তাই না।তুই আমার একমাত্র কলিজার টুকরো বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার বিয়েতে কিন্তু সব কিছু তুই করতে হবে।
নূর একটা সুন্দর মুচকি হাসি দিয়ে বলে। হা ঠিক বলেছিস বেস্ট ফ্রেন্ড। শুন তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড বলেই বলছি,যেই মানুষ এতো দিন একজনের সাথে সম্পর্কে থেকে দুই দিনের সুখের জন্য ছেড়ে দিতে পারে। সেই মানুষটা যে আরেক জনের জন্য তোকে ছেড়ে যাবে না তার কি গ্রান্টি আছে বল।তাই বলি ভেবে চিন্তে করিও কাজ, করিয়া ভাবিয় না।বলেই নূর নিজের রুমে চলে গেলো।
নূরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রুহি রাগে গজগজ করতে করতে বললো,’ ভাঙবে তাও মচকাবে না।তেজ দেখে মনে হয় প্রিন্সেস ডায়না।’
তারপর আদি আর রুহির বিয়ে হয়ে যায়। নূর ও রুহির কথা রাখে।রুহির বিয়ের কেনাকাটা হতে শুরু করে বিয়ের দিনও নূর খুব সুন্দর করে সব কিছুতেই সবার সামনে থাকে।
বর্তমানে,
নূর এসব ভাবছে আর নিশ্বব্দে চোখের জল ফেলছে।মুখ দিয়ে যেনো শব্দ বের না হয় তাই ঠোঁট কামড়ে আছে..
চোখের পানি মুছে নিলো তারপর হাতটা শক্ত করে মুঠ করে বললো,’মিস্টার আদি চৌধুরী আপনি একটা চিটার,একটা ঠকবাজ,একটা প্রতারক,একটা মিথ্যাবাদী,আমার কি দোষ ছিলো? কেনো আমার মনটা নিয়ে এভাবে খেললেন কেনো?কেনো আমার বিশ্বাস নিয়ে দিনের পর দিন খেললেন?আমি আপনাকে কোনো দিন ও ক্ষমা করবো না। কোনো দিন না…আজ আমি যেই আগুনে জ্বলছি একদিন আপনিও জ্বলবেন খুব বাজে ভাবে জ্বলবেন।
——
সকালে নূর বাদে সবাই বসে আছে ড্রয়িং রুমে। তখনি কলিং বেল বেজে উঠলো।
মাহির বড় আম্মু বললো,’ যা তো মাহি দেখ এখন আবার কে আসলো!!
আচ্ছা বলে মাহি গেলো দরজা খুলতে। দরজা খুলে স্ট্যাচু হয়ে গেলো মাহি,
প্রায় ছ’ফিট লম্বা, একটা সুদর্শন যুবক দাড়িয়ে আছে। তার পরনে সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট।ব্রান্ডেড ঘড়ি,ব্লেজারটা ভাজ করে হাতের উপর রাখা।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।
চলবে…..
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।