#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ২৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি
মধুজা ও অক্ষর উপস্থিত হয়েছে ডাক্তার রাহেলা খানমের কেবিনে। উদ্দ্যেশ্য তার সাথে বিয়ের ব্যাপারে কথা বলা। কিন্তু কিভাবে কথা বলবে সেটা ভেবে উঠতে পারছিল না।
অনেক এদিক সেদিকের আলাপ করার পর মধুজা সাহস করে বলে,
‘আচ্ছা আপনি কি জীবনকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দেওয়ার ব্যাপারে কিছু ভেবেছেন?’
এহেন প্রশ্ন শুনে হকচকিয়ে যান রাহেলা খানম। তিনি ভ্রু কুচকে বলেম,
‘মানে কি বলতে চাইছ তুমি মধুজা?’
‘মানে আপনি কি বিয়ের ব্যাপারে কিছু ভেবেছেন?’
রাহেলা খানম টেবিলে রাখা এক গ্লাস পানি খেয়ে বলেন,
‘না আমি এইরকম কিছু ভাবিনি। কারণ আমার মনে এখনো কবিরের জন্য যায়গা আছে। সেই যায়গা অন্য কাউকে দেওয়ার কথা ভাবতে পারি না।’
‘কিন্তু আপনার স্বামী তো আপনাকে ঠকিয়েছিল। অন্য একজন নারীর সাথে তার অবৈধ সম্পর্ক ছিল।’
মধুজা মুখ ফসকে কথাগুলো বলে ফেলে। রাহেলা খানম শক্ত ভাবে বলেন,
‘সেসব আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার ছিল। তাছাড়া যেই মানুষটা এখন বেচে নেই তার ব্যাপারে এরকম কথা না বলাই বেটার। আর মধুজা একটা কথা জানো কাউকে মন থেকে ভালোবাসলে তাকে এত সহজে ভোলা যায়না। সে যতই কষ্ট দিক, আঘাত করুক না কেন, আমাদের মনে তার স্থান সর্বদা থাকে। যাইহোক আমি কি জানতে পারি তুমি আমাকে এধরনের প্রশ্ন কেন করছিলে?’
মধুজা রাহেলা খানমকে এবার সব কথার বিস্তারিত বর্ণনা করে। যে সে নিজের বাবার সাথে রাহেলা খানমের বিয়ের ব্যাপারে ভাবছিল। কিন্তু মিলন হাসান বিয়ের ব্যাপারে কথা শুনলেই রেগে যান। আর এখন রাহেলা খানমও রেগে গেলেন।
মধুজার সব কথা শুনে রাহেলা খানম বলেন,
‘তোমার বাবা যেই রিয়্যাক্ট করেছেন সেটা একদম সঠিক। দেখো তোমার বাবার যদি বিয়ে করার হতো তাহলে তোমার মায়ের মৃত্যুর পরেই তিনি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি কি সেটা করেছেন? না করেননি। এতগুলো বছর ধরে একা থেকেছেন। কারণ তিনি আজও তোমার মাকে ভালোবাসেন। তার মনে তোমার মা রয়ে গেছেন। নাহলে ভেবো দেখো না কোন মানুষ এভাবে স্ত্রীর মৃত্যুর পর একা হাতে নিজের সন্তানকে মানুষ করে? তারাই করে যারা নিজেদের স্ত্রীর যায়গা আর কাউকে দিতে পারে না। তাই তোমার উচিত তোমার মায়ের প্রতি তোমার বাবার এই ভালোবাসাকে সম্মান জানা নো। আশা করি, তুমি আমার কথাটা বুঝতে পেরেছ।’
মধুজা সত্যিই বুঝতে পারে। রাহেলা খানমকে জড়িয়ে ধরে প্রায় কান্না করে দেয় মধুজা। নিভু নিভু কন্ঠে বলে,
‘আমি বুঝতে পেরেছি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনাকে নিজের মা বানানোর অনেক ইচ্ছা ছিল। সেটা নাহোক কিন্তু আপনাকে আজীবন মায়ের মতো সম্মান করে যাব।’
৫৭.
আমিনুল হক আরহার উপর অনেক রাগারাগি করেন। আরহা মাথা নিচু করে সব শুনছিল। এখন তার একটু খারাপ লাগতে শুরু করে। হয়তোবা নিজের বাবাকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে আরহা।
আরহা আমতাআমতা করে বলে,
‘আমাকে ক্ষমা করে দিও আব্বু। আমি বুঝতে পারিনি তুমি আমার ব্যবহারে এত কষ্ট পাবে। যদি জানতাম তাহলে এমন করতাম না।’
‘ঐ ছেলেটা কি বলে গেল? তুই অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসিস! আমি জানি তুই বিয়ে ভাঙ্গার জন্য মিথ্যা বলেছিস।’
‘না আব্বু। আমি মিথ্যা বলিনি। আমি সত্যি একজনকে ভালোবাসি।’
‘কাকে ভালোবাসিস তুই?’
‘বর্ণ। তুমি ওকে হয়তোবা চিনবে না। আরহার দেবর হয়।’
‘বর্ণ চৌধুরী? বিখ্যাত বিজনেসম্যান অনীল চৌধুরীর ছোট ছেলে।’
‘জ্বি।’
‘এক থা’প্পর দিয়ে তোমার বত্রিশ পাটি দাত আমি ফে’লে দিব বেয়াদব মেয়ে। তুমি কি ভেবেছ আমি কোন খোজ খবর রাখিনা? ঐ বর্ণকে তো কিছুদিন আগে গ্রেফতার করা হয়েছিল। মধুজার বরকেও তো শুনলাম গ্রেফতার করা হয়েছিল। তুমি ভাবলে কি করে এমন একটা ফ্যামিলিতে আমি তোমার বিয়ে দিব। অনেক হয়েছে আর না। ভালো কথায় তুমি বুঝবে না। আমি এবার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করছি। তুমি শুধু দেখে যাও।’
আরহা তার বাবার পায়ের কাছে বসে বলে,
‘প্লিজ আব্বু তুমি এমন করোনা। আমি বর্ণকে অনেক বেশি ভালোবাসি। ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারব না।’
‘আরহা!’
আচমকা কারো কন্ঠস্বর শুনে দরজার দিকে তাকায় আরহা। বর্ণকে দেখে বেশ খানিকটা অবাক হয়। বর্ণ আমিনুল হককে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
‘আপনার মেয়ে আমাকে ভালোবাসলেও আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি না। তাই আপনার ইচ্ছা হলে আপনি যেখানে খুশি তার বিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে কোন খারাপ কথা বলবেন না।’
আরহার বুক চিনচিনে ব্যাথা শুরু হয় বর্ণর এই ধরনের কথা বার্তা শুনে। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই বর্ণ হনহন করে চলে যায়। আরহা ঠায় তাকিয়ে থাকে সেদিকে। তার ইচ্ছা করছিল ছুটে চলে যেতে। কিন্তু আজ বর্ণ তাকে যেভাবে বলল তাতে আরহার আত্মসম্মানে অনেক বেশি আঘাত লেগেছে। আরহা এমনিতে বয়সের তুলনায় অনেক কম ম্যাচিউর। ছোটবেলা থেকে বাবার আদরে বড় হওয়ায় ম্যাচুউরিটি তার মধ্যে কম। বাস্তবতা সম্পর্কে সেরকম ধারণাও নেই। তাই বর্ণর জন্য এতদিন পাগলামি করছিল। তবে আজ বর্ণর কথাগুলো শুনে সে অনেক বেশি আঘাত পেয়েছে। সেই আঘাত থেকে আরহা আমিনুল হককে বলে দেয়,
‘তুমি যা চাও তাই হবে আব্বু। আমার জন্য ছেলে দেখা শুরু করো। এবার আমি তোমার পছন্দ করা ছেলেকেই বিয়ে করব।’
৫৮.
মধুজা হাসপাতালে রাহেলা খানমের সাথে দেখা করে সরাসরি নিজের বাবার বাড়িতে চলে এসেছে। মিলন হাসান একটু রাগ করে ছিল মধুজার উপর। তবে মধুজার আগমনে সেই রাগ গলে পানি হয়ে যায়।
মধুজা মিলন হাসানের পাশে বসে বলে,
‘আমি জানি আব্বু তুমি আম্মুকে কতোটা ভালোবাসো। তোমার মনের মনিকোঠায় এখনো আম্মু রয়ে গেছে। আমি বুঝতে পারিনি সেটা। তোমার কথাই ঠিক। আমি মেনে নিলাম। আমি একজন লোককে ঠিক করেছি তোমার দেখাশোনার জন্য। তিনি তোমার সব খেয়াল রাখবেন।’
মিলন হাসান মধুজার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
‘আমি তোর উপর রাগ করে ছিলাম এটা ঠিক মধু। কিন্তু তোর মতো মেয়ে পেয়ে আমি নিজেকে সত্যি ভাগ্যবান মনে করছি। আজকালকার যুগে যেখানে ছেলে মেয়েরা বাবা মায়ের কথা না ভেবে নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকে সেখানে তুই আমার কথা এত বেশি ভেবেছিস। আমি তোর জন্য দোয়া করি তুই সুখী হ।’
নিজের বাবার সাথে আরো অনেক সুন্দর মুহুর্ত অতিবাহিত করে মধুজা। সত্যি বাবা-মেয়ের সম্পর্ক পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর সম্পর্কগুলোর মধ্যে একটি। একজন বাবা তার মেয়েকে রাজকন্যার মতো মানুষ করে, আর একজন মেয়ের পুরো দুনিয়াজুড়েও রয়েছে তার বাবা।
দুপুরের খাবার খেয়ে মধুজা সবেমাত্র বিছনায় গা এলিয়ে দেয়। তখনই তার ফোনে লাবিবের কল আসে। মধুজা ফোনটা রিসিভ করা মাত্রই লাবিব বলে ওঠে,
‘আমার অবস্থা খুব খারাপ। ওরা আমাকে বাচতে দেবে না। আমার কিছু হয়ে গেলে তুমি আমার বোন লিয়ার খেয়াল রেখো।’
আর কিছু বলতে পারে না লাবিব। তার আগেই লাবিব শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। মধুজা এইদিক থেকে হ্যালো হ্যালো করতে থাকে কিন্তু বিপরীত দিক থেকে কোন উত্তর আসে না। মধুজা খুব ভয় পেয়ে যায়। সাথে সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨