#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ২৮
#Jhorna_Islam
বিয়ে বাড়িতে এধরনের বিষয় অ’হ’র’হ ঘটে থাকে।কারো টাকা পয়সা,গয়না,মোবাইল চু’রি হয়ে যায়। এতো লোকের মাঝে কিভাবে যেনো নিয়ে যায় কেউ বুঝতেই পারে না। বিয়ে বাড়িতে দাওয়াত খাওয়ার উ’ছি’লা’য় চু’রি করে চলে যায়। মাঝে মাঝে বাইরের লোকও এসে চু’রি করে।
লিমা একনাগাড়ে কান্না করে চলেছে। তার সখের গয়না গুলো। এখন যেই দাম স্বর্ণের। সাধারণ মানুষের জন্য কিনা খুবই কষ্টের। আর এই গয়না গুলোতো সব বিদেশি।ঐ গয়না গুলোর মান ভালো।
এরকম গয়না তো আর জীবনেও পরা হবে না। ইমনতো জীবনে ও পারবে না গয়না গড়িয়ে দিতে। এতোদিন নিজে পরের কাঁধে কাঁঠাল ভেঙে খেয়েছে। এখন তো পা একটা গেছে। উফফ কোন দুঃখে এখানে আসতে গেলো আর কেনোই বা আসলো? আসলো তো আসলো গয়না গুলো কেনো পরে গেলো? না পরে আসলে তো কিছুই হতো না। শ্বাশুড়ি আর দিনার গয়না ঠিক আছে। তারটাই পেলো চু’রি করার জন্য?
তাছলিমা বানু অনেক রাগারাগি করছে। সীমার বাবার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করছে।কেমন লোকদের দাওয়াত দেয়? যে গয়না চু’রি হয়ে যায়। এসব চো’র ছে’চ’ড়’দের দাওয়াত দিলে উনাদের কেনো দাওয়াত দিয়েছে। এই গয়না গুলোর মূল্য জানে কতো?
তাছলিমা বানুর চিৎকার চেচামেচি তে পুরো বিয়ে বাড়ির লোকজন এসে জমা হয়।
যুথি এসে একপাশে দাঁড়িয়ে এদের তামশা দেখছে।লিমার গয়না চু’রি হয়েছে শুনে প্রথমে খুশি হলেও পরোক্ষনে এটা ভেবে মন খারাপ হয়ে যায় যে তার বোকা পুরুষের পরিশ্রমের টাকায় কিনা গয়না গুলো। তারপর আবার ভাবে আমার মন খারাপ করে কি লাভ? এসব তো আর পেতো না। বেশ হয়েছে নিয়ে গেছে।
যার টাকায় কিনা গয়না তার বউয়ের সাথেই কি অহংকার দেখিয়েছে। গয়না পরে বেশ রং ঢং করছিল বেশ হয়েছে চো’র মহাশয় সঠিক কাজ করেছে।বেছে বেছে এই শ/য়তানির গয়নাই নিয়ে গেছে। সাথে ঐ দুটোর গুলো নিয়ে গেলো না? নিয়ে গেলে খুশি হইতো।
যুথির ভাবনার মাঝেই তার পাশে এসে দাদি দাঁড়ায়। তারপর যুথির দিকে তাকিয়ে জানতে চায় কোথায় গিয়েছিলি বু তুই? কখন থেকে খুজতেছি।
কোথাও যাইনি দাদি।তোমার নাত জামাই কল দিয়েছিলো তাই একটু বাইরে গিয়ে কথা বলতেছিলাম। তুমি কোথায় ছিলে?
আমিতো সীমার দাদির সাথে কথা বলতেছিলাম আর পান খাইতে গিয়েছিলাম।
ওহ আচ্ছা।
হ। কিন্তু এইখানে কি হইছেরে?
দেখতে থাকো মজার সা’র্কা’স চলছে।
যুথির দাদি বুঝতে পারছেনা এখানে কি হচ্ছে।
যুথি তারপর দাদিকে সব খুলে বলে।তারপর মিটমিটিয়ে হাসতে থাকে।
তাছলিমা বানুর তখন যুথির দিকে চোখ যায়।
যুথিও তখন তাছলিমা বানুর চোখের দিকে তাকায়।
তাছলিমা বানু এবার বলে,,, চো’র এখানেই আছে।সকলকে চে’ক করা হবে।কেউ যেনো এখান থেকে না যায়।আর চে’ক করা থেকে কেউ যেনো বাদ না পরে।
তাছলিমা বানুর এমন ধরনের কথায় কয়েকজন অমত জানায়। তাদের সম্মানে লাগে বিষয়টা। প্রথমে রাজি না হলেও পরে নিজেদের নির্দশ প্রমাণ করার জন্য রাজি হয়ে যায় ।
একে একে সকলেকে চে’ক করা হয়।যুথি আর তার দাদিকে যখন চে’ক করতে আসে তখন তাছলিমা বানু বলে ভালো করে ওদের কে চে’ক দিতে। যুথি কিছু বলেনি।বরং নিজে থেকে সহায়তা করেছে চে’ক করার জন্য।
যুথির কাছে কিছু পায় নি। তাছলিমা বানু আশায় আছে যুথির দাদির কাছে পাওয়ার।কিন্তু তার ধারণা ভুল করে যুথির দাদির কাছে ও পেলোনা।এমনকি কারো কাছেই পেলো না। চো’র কি চু’রি করে এখনো এতো দামি গয়না নিয়ে বসে থাকবে? কখন হয়তো চলে গেছে।
শেষে কোনো উপায় না পেয়ে বাড়িতে চলে যায় তিনজন।
ভাগ্যিস এখনো বরযাত্রী আসেনি নয়তো সীমার বাবা কে লজ্জাতে পরতে হতো।
যুথিরা ও বেশি সময় থাকেনি।সীমার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়।
———————————-
এই নিয়ে দুইবার বাড়িতে বিচার এসেছে ইশানের নামে।মেয়ে নিয়ে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ায়। পার্কে, রাস্তা ঘাটে বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় ইশান কে একেক সময় একেক মেয়ের সাথে।
সি’গা’রে’ট খায় মুরুব্বিদের সামনেই। আবার কিছু বললে সি’গা’রে’টে’র ধোয়া ছাড়ে মুখের সামনে। বড়দের মুখের উপর কথা বলে। মারামারি তো আছেই।
আরো নানান ধরনের বিচার দিয়ে যায় এসে গ্রামের লোক তাছলিমা বানুর কাছে। তাছলিমা বানু পরেছে বি’পাকে।এমনিতেই ইমনের চিন্তায় ঘুম হা/রাম।আবার ছোট ছেলেটা ও কি শুরু করেছে।
ঐদিনের স্বপ্ন টা চেয়ে ও ভুলতে পারছে না। ইরহানের বাবার কথাটা বুঝি সত্যি হতে চলল।না এ হতে দিবে না তাছলিমা বানু। কোনমতেই।
ইশান কে নিজের কাছে ডেকে এনে ভালো করে বোঝায়।এসব ছেড়ে দিতে বলে।ঘরেতো বউ আছে তাহলে বাইরের মেয়েদের নিয়ে ঘুরাঘুরি কেনো? ঘুরে ভালো কথা কাছাকাছি কেন ঘুরাঘুরি করে যেটা গ্রামের লোকদের চোখে পরে।
আর বড়দের সাথে কেন ত’র্কে জড়ায়।ওরা মুরুব্বি মানুষ একটা সমাজে বাস করতে হলে এটা মাথায় রাখতে হবে। নয়তো সমাজ থেকেই বিতারিত করে দিবে।
ইশানের এক কথা সে এইসব লোকদের তো’য়া’ক্কা করে না। সে তার ইচ্ছে মতো চলবে।মেয়ে নিয়ে রাস্তা ঘাটে আরো বেশি করে ঘুরবে।কে কি বলবে তাতে তার কিছু আসে যায় না। এই লোকদের কি সমস্যা?
তোর নামে বিচার দিয়ে গেছে ইশান।
কে বিচার দিয়ে গেছে? নাম বলো এ শা*লা কে আমি দেখে নিচ্ছি।কতো বড় সাহস আমার নামে বিচার দিতে আসে বাড়িতে। নাম বলো মা হা*রা*ম*জা*দা দের বাপের নাম ভুলিয়ে দিবো।
তুই এসব করিস না ইশান।তোর ভাইয়ের অবস্থা টা তুই দেখতে পারছিস? সে হাটতে পারে না। তুই এখন গ্রামের লোকদের সাথে মারামারি করলে হবে? ওরা এতোগুলা লোক মিলে যদি তোর কিছু করে? তখন কি হবে তুই একা পারবি ওদের সাথে?
একা কখনোই ওদের সাথে তুই পারবি না। কেন এমন করছিস বাপ? নিজের ক্ষ’তি কেন নিজে ডেকে আনছিস?
ইশান তাছলিমা বানুর কথা শুনেনি। আরো রাগারাগি করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। তার এক কথা যেইটা ইচ্ছে সেইটা করবে কেউ যেনো নাক বা গলায়।
তাছলিমা বানু ইশানের কথায় হতাশ হোন।ছেলেটা উনার কথা বুঝতে কেন চাইছে না। মায়ের মন তো কু ডাকছে।ইশানের এই মেয়েদের প্রতি নেশা আর একঘে’য়ে’ মির জন্য না কোনো বড় বিপদ আসে।
———————–
কয়েকদিন হয়ে গেলো ইমন কে দেখতে যাওয়া হয় না। দিনা ও বাড়িতে নেই বাপের বাড়ি গেছে কয়েকদিন হলো।
ইশান এমনিতেও বাড়িতে থাকে না। অনেক রাত অবধি বাড়ির বাইরে থাকে।ঠিকমতো বাড়িতে এক বেলা ও খায় না।
তাই তাছলিমা বানু ইশানের কাছে বাড়ির চাবি দিয়ে ইমনকে দেখতে লিমাদের বাড়িতে চলে যায়। বলে যায় আজকের দিন থেকে আগামীকাল বিকেলে আসবে।নয়তো না আসতে পারলে পরশু আসবে।
ইশান ও বলে থেকে আসার জন্য। আসলে তার মনে অন্য কিছু চলছে যা তাছলিমা বানু জানে না।
তাছলিমা বানু্ চলে যাওয়া ইশান বেশ খুশি হয়। সূচনা কে ফোন দেয়।দিয়ে জানায় আজকে অন্য কোথাও আর যেতে হবে না।
তোমাকে আমার বাড়িতে নিয়ে আসবো।পরে তুমি আর আমি।বাড়ি পুরাই ফাঁকা কেউ নেই।
সূচনা গ্রামের লোকের কথা জানতে চাইলে বলে,,ওসব নিয়ে তুমি মাথা ঘামাইও না।তুমি শুধু আজকের জন্য প্রস্তুতি নাও আর কিন্তু ছাড় পাবে না।
আমার ভয়,করছে ইশান।অন্য কোথাও না হয়।তোমাদের বাড়িতে যাওয়া কি ঠিক হবে?
এই মেয়েটার অবাধ্যতা তে ইশান মনে মনে বেশ রে’গে যায়। তাও যথা সম্ভব নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ভালো করে বুঝিয়ে রাজি করায় এই বাড়িতে আসার জন্য।
সূচনা ও আর অমত করেনি। কেনই বা করবে? ইশানের টাকা পয়সার প্রতি তার ও লোভ জেগেছে। এই কয়েকদিনে অনেক কিছু পেয়েছে ইশানের থেকে।
সন্ধায় সূচনা কে ইশান নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। সূচনা কে ঘুরে ঘুরে সব দেখিয়ে বলে এসব এখন নিজেরই। ভাই আর আসবে না। তারপর দুইজন নিজেদের মতো করে সময় কাটায়।
পরের দিন সকালে তাছলিমা বানু জানায় সে আজও মনে হয় আসতে পারবে না। ইশান বলে আসার দরকার নেই থেকে আসো। সূচনা কে ও রেখে দেয়। বিকেলে গিয়ে দিয়ে আসে।কারণ সূচনার হাসপাতালে ডিউটি আছে।
বাড়িতে এসে ঘরে না গিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে পুকুর পাড়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো ইশান।কিন্তু একটু যেতেই থমকে যায় ইশান।চোখ দুটো নেশাতর দৃষ্টিতে সামনে নি’ব’দ্ধ।
#চলবে,,,,,,
কেমন হলো জানাবেন? সবাই একটু রেসপন্স করবেন।❤️