পারলে ঠেকাও পর্ব ২৬

0
866

#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ২৬
#লেখিকাঃদিশা_মনি

মধুজা থমকে যায় নিজের বাবার অসুস্থতার কথা শুনে। আর বেশি দেরি না করে বেরিয়ে পড়ে হাসপাতালের উদ্দ্যেশ্যে। মধুজা হাসপাতালে পৌছেই দেখে তার বাবার অবস্থা এখন আগের থেকে কিছুটা হলেও ভালো।

মিলন হাসানের চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন রাহেলা খানম। মধুজা রাহেলা খানমের সাথে নিজের বাবার ব্যাপারে কথা বলে। রাহেলা খানম বলেন,
‘ওনার অবস্থা স্থিতিশীল। কিছুদিন অবর্জারভেশনে থাকতে হবে। আশা করি উনি সুস্থ হয়ে যাবেন।’

মধুজা অনেকটা নিশ্চিত হয়। নিজের বাবার সুস্থতার কথা শুনে। অক্ষর মধুজার উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘চলো এখন আর সময় নষ্ট করে লাভ নেই। আমাদের ফিরে যেতে হবে। যেহেতু উনি সুস্থ আছেন।’

‘হ্যা চলো।’

মধুজা ও অক্ষর মিলে একসাথে ফিরে আসে। বাড়িতে গিয়ে সবাইকে বর্ণ ও মিলন হাসানের ব্যাপারে খবর দেয়। অনীল চৌধুরী বেশ রাগারাগি করেন তবে মমতা চৌধুরী কিছু বলেন না। বরাবরের মতো গম্ভীরভাব নিয়ে সবকিছু ভাবতে থাকেন।


অক্ষর ও মধুজা সকাল সকাল হাসপাতালে বেরিয়ে গেছে। প্রথমে মধুজা অক্ষরকে সাথে নিয়ে সিটি হসপিটালে যায়। সেখানে নিজের বাবার সাথে দেখা করে। মিলন হাসানের জ্ঞান ফিরেছে। মধুজা নিজের বাবার মাথার কাছে বসে বলে,
‘তোমার উপর কিন্তু আমি খুব রাগ করেছি আমি৷ নিজের একটুও খেয়াল রাখো না কেন বলো তো? এবার সুস্থ হলে কিন্তু নিজের খেয়াল রাখবে।’

‘আচ্ছা ঠিক আছে৷ আমাকে এত শাসন করতে হবে না।’

ডাক্তার রাহেলা খানম ততক্ষণে চলে আসেন। মধুজাকে দেখে বলেন,
‘তুমি এসেছ। বাহ বেশ ভালো। তোমার বাবার খেয়াল রাখবে কিন্তু। এখন থেকে ওনার এক্সট্রা কেয়ার দরকার।’

মধুজা আফসোস করে বলে,
‘আমি এখন কিভাবে খেয়াল রাখব ম্যাডাম? আমার নিজের সংসার হয়েছে। বাবাকে আমি কতবার বলেছি বিয়ের ব্যপারে ভাবতে। কিন্তু বাবার একটাই কথা লোকে কি ভাববে। এই বয়সে অন্তত একজন সঙ্গীর তো প্রয়োজন নাকি?’

মিলন হাসান চোখ রাঙান। কিন্তু মধুজা সেসবে পাত্তা না দিয়ে বলতে থাকে,
‘আপনি কিছুদিন আমার আব্বুর খেয়াল রাখুন। এবার বাবা সুস্থ হয়ে ফিরলে আমি বাবার বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করব।’

রাহেলা খানম স্মিত হাসেন। মধুজা বিদায় নিয়ে চলে যায়।

৫১.
বর্ণ হাসপাতালে বেডে শুয়ে ছিল। আরহা আজকেও এসেছে বর্ণর সাথে দেখা করতে। শুধু তাই নয় বর্ণর জন্য নিজের হাতে বিরিয়ানি তৈরি করে এনেছে। আরহা বিরিয়ানিটা বর্ণর মুখের কাছে ধরে বলে,
‘নিন খেয়ে নিন। আমি অনেক কষ্ট করে বানিয়েছি। খেয়ে বলুন তো কেমন লাগে।’

বর্ণ ভ্রু কুচকে বলে,
‘আপনার কি কোন কমন সেন্স নেই? এই সময় আমি এরকম খাবার খাবো? ডক্টর আমাকে বলেছে হেলদি খাবার খেতে। আর আপনি এসব আন-হেলদি ফুড এনেছেন।’

আরহা দাত দিয়ে জ্বিহা কামড়ে ধরে। আমতাআমতা করে বলে,
‘ওহ আমার বোঝা উচিৎ ছিল। কোন ব্যাপার না। আমি কমলাও এনেছি। কমলা খাইয়ে দিচ্ছি খেয়ে নিন।’

আরহা যত্ন করে কমলার খোসা ছাড়িয়ে বর্ণকে খাইয়ে দিতে থাকে। বর্ণ আর অমত করে না। বর্ণকে খাওয়ানোর পর আরহা বর্ণর সামনেই বিরিয়ানি খেতে থাকে। বর্ণর বেশ লোভ লাগছিল কিন্তু সে কিছু করতেও পারছিল না।

মধুজাও বর্ণর কেবিনে এসে হাজির হয়৷ সে আরহাকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
‘তুই এখানে কি করছিস?’

আরহা বাকা হেসে বলে,
‘একজন মানুষ অসুস্থ থাকলে তাকে দেখতে আসতে হয়। এটাই তো নিয়ম।’

মধুজা বেশ বুঝতে পারে আসল ব্যাপার কি হয়েছে। তবে সেসব নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি না করে বলে,
‘আচ্ছা এসেছিস যখন ভালো কথা। তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যা। কাল না তোর একটা চাকরির ইন্টারভিউ আছে। ভালো করে প্রস্তুতি নে।’

বর্ণ অবাক হয়ে বলে,
‘আপনি চাকরির ইইন্টারভিউ দেবেন মানে আপনার পড়াশোনা কমপ্লিট।’

আরহা বত্রিশ পাটি দাত বের করে বলে,
‘হ্যা এক বছর আগেই মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। এখন চাকরির জন্য ঘুরছি।’

‘তাহলে তো আপনি আমার দুই বছরের সিনিয়র।’

বর্ণর এহেন কথা শুনে বিষম খায় আরহা। মধুজা আরহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
‘হ্যা, আরহা তোমার দুই বছরের বড় হবে। তুমি ওকে আপু বলে ডাকতে পারো।’

আরহার চোখ এবার কোটর থেকে বেরিয়ে আসার যোগাড়৷ সে রাগী দৃষ্টিতে মধুজার দিকে তাকিয়ে বলে,
‘বয়স শুধুই একটি সংখ্যা। তাছাড়া তোর দেবরকে দেখেছিস কিরকম শরীর। আমার থেকে কত লম্বা। কে বলবে এই ছেলে আমার থেকে দুই বছরের ছোট। ওনার পাশে দাড়ালে তো আমাকেই বাচ্চা মনে হয়।’

মধুজা দুষ্টুমি করে বলে,
‘তো এখন তুই কি কর‍তে চাচ্ছিস?’

আরহা প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার জন্য নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,
‘আমার বাড়ি ফেরার টাইম হয়ে যাচ্ছে। আমি এখন আসি।’

কথাটা বলেই আরহা বেড়িয়ে যেতে থাকে। তখন বর্ণ বলে ওঠে,
‘আসি বলতে নেই বলতে হতো যাই। নাকি আপনার আবার এখানে আসার ইচ্ছা আছে?’

আরহা কোন উত্তর না দিয়েই চলে যায়। বর্ণ এসব ভেবে হাসতে থাকে।

মধুজা বর্ণর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
‘তোমার আব্বু কিন্তু তোমার উপর রেগে আছে। তোমার আম্মু যদিও কিছু বলছেন না তবে তার মুখ দেখেও এটা স্পষ্ট যে তিনিও খুব একটা খুশি নন।’

বর্ণ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
‘কোন ব্যাপার না। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’

৫২.
মধুজা বাড়িতে এসে রান্নাঘরে প্রবেশ করেছে। রাওনাফ চলে যাওয়ার পর এখন মমতা চৌধুরীকেই বাড়ির সব কাজ একা হাতে করতে হয়। তাই মধুজা মনে করে এইরকম সময় তারও কিছু করা উচিৎ।

মধুজা ইউটিউবে দেখে মুরগীর মাংস রান্না করে। মধুজা আগে কোনদিন এসব রান্না করে নি। তবুও নিজেকে নিয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিল সে। মধুজার রান্না শেষ হওয়া মাত্র অক্ষর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরে আসে। মধুজা অক্ষরকে দেখামাত্র মিষ্টি হাসি উপহার দিয়ে বলে,
‘যাও উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে এসো। আমি নিজের হাতে তোমার জন্য রান্না করেছি৷ খেয়ে দেখো কেমন লাগে।’

অক্ষর বেশ ভাবনায় পড়ে যায়। যদিও গতকাল মধুজার হাতের রান্না খেয়েছিল যা মোটামুটি ভালো লেগেছে। তবে সেটাতে তো অক্ষরের মা সাহায্য করেছিল। মধুজা একা হাতে কত ভালো রান্না করবে সেই নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে অক্ষরের। তবুও কোন স্বামী তার বউকে রাগিয়ে দিতে চায়না। বিশেষ করে বউ যখন এভাবে মিষ্টি সুরে কথা বলে তখন তো একেবারেই না। অক্ষর তাই বলে,
‘আচ্ছা তুমি খাবার পরিবেশন করো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।’

মধুজা গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে খাবার পরিবেশন করছিল। তার মতে আজ অক্ষর তার হাতের খাবার খেয়ে খুব বেশি খুশি হবে।

ততক্ষণে অক্ষরও ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে এসেছে। মধুজা অক্ষরের সামনে খাবার রেখে দেয়। মৃদু হেসে বলে,
‘মুরগীর মাংসটা আমি নিজ হাতে রান্না করেছি। খেয়ে দেখো তো কেমন লাগে।’

অক্ষর মুরগীর ঝোল দিয়ে ভাত মেখে মুখে দেয়। একটু মুখে দিতেই তার বমি চলে আসে। কারণ মুরগীর মাংসে অতিরিক্ত নুন দেওয়া হয়েছে। মধুজা আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিল অক্ষরের দিকে। অক্ষর মধুজার মুখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলল না। ভাবল,
‘বেচারি কত কষ্ট করে রান্না করেছে৷ এখন যদি বলি রান্না ভালো হয়নি তখন কষ্ট পাবে।’

এসব ভেবে অক্ষর বলে,
‘মাংসটা খুব ভালো হয়েছে। মনে হচ্ছে একদম পাকা হাতের রান্না।’

মধুজা বুক ফুলিয়ে বলে,
‘কে রান্না করেছে সেটা দেখতে হবে না। তোমাকে আরো একটু দিচ্ছি দাড়াও।’

‘থাক থাক আর লাগবে না। আমি বেশি খেতে পারিনা।’

‘ঠিক আছে। যতটুকু পারো খাও।’

অক্ষর চুপচাপ খেতে থাকে। মধুজার মুখের দিকে তাকিয়ে এই অখাদ্যও অমৃত মনে করে খেতে থাকে। খাওয়া শেষ করে উঠে যায়। নিজের রুমে গিয়ে বমি করতে থাকে। ভাগ্য ভালো মধুজা নিচে ছিল তাই কিছু দেখতে পারেনি।

অক্ষর ভাবে,
‘এই খাবার যদি বাড়ির বাকিরা খায় তাহলে সবাই ধরে ফেলবে। তখন মধুজার খারাপ লাগতে পারে।’

এই ভেবে অক্ষর বেরিয়ে পড়ে। পাশের একটি রেস্টুরেন্ট থেকে মুরগীর মাংস কিনে আনে। সুযোগ বুঝে রান্নাঘরে গিয়ে বদলে দেয়।

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here