#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি
অক্ষর মধুজার কথাগুলো মনযোগ সহকারে শোনে। যদিওবা তার অনেক রাগ হচ্ছিল তবুও অনেক কষ্টে নিজের রাগ দমানোর চেষ্টা করে অক্ষর। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে,
‘ওকে ফাইন। তুমি যা চাইছো তাই হবে। তোমার সব শর্ত আমি মেনে চলব। তবে আমিও একটা কথা বলে দিচ্ছি এই ছয় মাসের মধ্যে তুমি নিজে থেকে আমাদের মধ্যে সবকিছু ঠিক করে নিতে চাইবে। নিজে চাইবে আমার সাথে সংসার করতে। আমি তোমার মতো ওতোটা নির্দয় নই, তাই ফেরাবো না তোমাকে। কিন্তু মনে রেখো, অবহেলায় ফলে অনেক গাঢ় ভালোবাসাতেও মরিচা ধরে। তাই আমার ধৈর্যের বেশি পরীক্ষা নিও না। আমি প্রতিঘাত করা শুরু করলে তুমি নিজেও টিকতে পারবা না।’
কথাগুলো বলে অক্ষর রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মধুজা অক্ষরের কথায় না শোনার ভান করে ছিল। অক্ষর চলে যেতেই গভীর মনযোগ দিয়ে মধুজা তার বলা কথাগুলো একটু ভাবে। নিজ মনেই বলে,
‘আমি যেটা ভেবেছি সেটাই করব।’
মধুজা অক্ষরের পছন্দ করা লাল শাড়িটাই তুলে নেয়। শাড়িটা তারও বেশ পছন্দ হয়েছে। অক্ষরকে মুখে যাই বলুক মধুজা এটা মেনে নিয়েছে যে তার পছন্দ সত্যি অনেক ভালো।
মধুজা শাড়ি পড়ে নিয়ে আয়নার সামনে দাড়ায়। শাড়িটাতে সত্যি খুব ভালো মানিয়েছে তাকে। আচমকা কারো কাশির শব্দে পিছনে ঘুরে তাকায়। অক্ষরকে দেখে মধুজা হা হয়ে যায়। অক্ষর মধুজার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছিল। অক্ষরকে হাসতে দেখে মধুজা নিজের ভ্রু কুচকে ফেলে।
‘এভাবে হাসছেন কেন?’
‘হানি,,তুমি আমার পছন্দ করা শাড়ি পড়েছ। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। সত্যি করে বলো তো তুমি আমার বউ নাকি অন্য কেউ?’
মধুজার বিরক্তি লাগে অক্ষরের কথা শুনে। তাই সে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। অক্ষর পেছন থেকে মধুজার হাত ধরে টান দিয়ে তাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নেয়। মধুজা অক্ষরের বুকে কান দিয়ে স্পষ্ট তার বুকের ঢিপঢিপ শব্দ শুনতে পারছিল। কিছুক্ষণ এভাবে থেকে তড়িৎ বেগে অক্ষরের থেকে দূরে সরে আসে মধুজা। এভাবে থাকলে আর একটু হলেই হয়তো নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলত। অক্ষর মৃদু হেসে বলে,
‘৬ মাস কেন আমার তো মনে হচ্ছে ৬ দিনেই তুমি কাবু হয়ে যাবে। ৬ মাসের আগেই সুখবর পেয়ে যাব আমরা।’
মধুজা অক্ষরের কথার মানে বুঝতে পেরে বড় বড় চোখ করে তাকায়। কটমট করে বলে,
‘আপনি ঐ স্বপ্নই দেখুন। আপনার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নাই। তাই কোন সুখবরও আপনি পাবেন না।’
অক্ষর মধুজার কাছে এসে তার খোপা করা চুল এলোমেলো করে দেয়। বাকা হেসে বলে,
‘আমারও তোমার উপর কোন ইন্টারেস্ট নেই। শুধু বউ জন্য ইন্টারেস্ট আনার চেষ্টা করছি। কিন্তু তুমি তো আমাকে একটু হেল্পও করছ না। কোথায় একটু ইশারা ইঙ্গিত করবে, বুকের সাথে লেপ্টে থাকবে একটু চুমু টুমু দিয়ে আমাকে নিজের প্রতি আকর্ষন করবে তা না,,,’
মধুজা এবার রুম থেকে একেবারে বেড়িয়ে যায়। পাগলা ডাক্তারের পাগলামী আর সহ্য হচ্ছে না।
৯.
বৌভাতের আয়োজনের কোন কমতি নেই চৌধুরী বাড়িতে। পুরো বাড়ি অতিথিতে পরিপূর্ণ। মধুজার বাড়ির লোকজনও এসেছে বৌভাতে। মধুজার গুটিকয়েক বান্ধবীও এসেছে। যাদের মধ্যে আরহাও রয়েছে।
আরহা তো এই বাড়িতে এসেই অক্ষরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। মধুজার পাশে এসে আরহা তখন থেকে অক্ষরের প্রশংসা করে যাচ্ছিল।
‘যাই বলিস ভাগ্য করে এমন একটা বর পেয়েছিস। তোর বর কি হ্যান্ডসাম৷ ইশ যদি আমি আগে দেখতাম তো বিয়েই করে নিতাম।’
মধুজা আনমনে বলে,
‘অসুবিধা কি। এখনও তো সুযোগ আছে।’
আরহা মুখ বাকিয়ে বলে,
‘তোর সতীন হওয়ার শখ আমার নাই৷ আমার সেকেন্ড হ্যান্ড জিনিস পছন্দ না। আচ্ছা তোর কোন দেবর নেই? থাকলে তার নাম্বার আমাকে দে আমি ট্রাই করে দেখব।’
মধুজা কিছু বলতে যাবে তখনই চৌধুরী বাড়িতে প্রবেশ করে একজন যুবক। যার মাথায় ব্যান্ডেজ করা। মধুজা ছেলেটির দিকে তাকায়। ছেলেটার চেহারার সাথে মমতা চৌধুরীর অনেক মিল আছে। মমতা চৌধুরীর মতোই মায়াবী চোখ তার। মধুজা ভাবে, তাহলে এটাই কি এই বাড়ির ছোট ছেলে যার কথা সে শুনেছিল।
আরহা ছেলেটির দিকেই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল। ছেলেটিকে দেখে সম্পূর্ণ বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে আরহা। মধুজার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
‘এই ছেলেটা কে? দেখতে কিন্তু সেই। আমার পছন্দ হয়েছে।’
ছেলেটি কারো সাথে কোন কথা না বলে নিজের মতো সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে যায়। একটু পরেই অক্ষর মধুজার কাছে আসে। অক্ষরকে দেখে মধুজা প্রশ্ন করে,
‘আচ্ছা ঐ ছেলেটা কে ছিল?’
অক্ষর পকেটে হাত গুজে বলে,
‘অন্য ছেলেদের ব্যাপারে এত ইন্টারেস্ট কেন তোমার? চোখের সামনে এত হ্যান্ডসাম একটা বর থাকতে অন্য ছেলেদের খোজ নেও। আমি তোমার হালাল বর। আমার উপর তোমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। আমাকে পুরোটা দেখতে পারো, খেতে পারো কিন্তু অন্য ছেলেদের দিকে একদম তাকাবে না। ‘
অক্ষরের কথা শুনে মধুজার মাথা ঘুরতে থাকে। তারই ভুল হয়েছিল এই পাগলা ডাক্তারের সাথে কথা বলা। মুখে কোন কিছুই আটকায় না৷ অক্ষর হালকা হেসে নিজে থেকেই বলে,
‘ও আমার ভাই বর্ণ। সম্পর্কে তোমার দেবর হয়। ওকে ভাইয়ের নজরে দেখবা৷ শুধু ওকে কেন এই পৃথিবীর সব ছেলেকে আজ থেকে ভাইয়ের নজরে দেখবা মনে থাকে জেনো।’
১০.
আচমকা এমন একটা ঘটনা ঘটে যায় যার জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। পুলিশ এসেছে বর্ণকে গ্রেফতার করতে। যেই ঘটনার জের ধরে বৌভাতে উপস্থিত সকল মানুষদের সামনে অপমানিত হতে হচ্ছে অনীল চৌধুরীকে। মধুজা এই ঘটনার কিছু বুঝতে পারছে না। উপস্থিত সকল অতিথিরা নিজেদের মতো সমালোচনা করছে।
একসময় পুলিশ বর্ণর রুম থেকে তাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে আসে। অনীল চৌধুরী আর নিজের রাগ দমিয়ে রাখতে পারেন না। সবার সামনে বর্ণর গালে স’পাটে থা’প্পর দিয়ে বলেন,
‘তোর মতো কু’লা’ঙার জন্ম দেওয়াই আমার জীবনের সবথেকে বড় ভুল। আমার এক ছেলে একজন কার্ডিওলজিস্ট। যে আমার সম্মান বৃদ্ধি করেছে। আরেক ছেলে সারাদিন পাতি নেতাদের পেছনে ঘুরে। রাজনীতির নামে গু’ন্ডামি করে বেড়ায়। মা’রা’মা’রি জন্য জেলে যেতে হয়। অনেক হয়েছে আর না। আমি আর তোর ছায়াও এই বাড়িতে দেখতে চাইনা এই বাড়িতে। অফিসার ওকে নিয়ে যান। আর দেখবেন ও যেন আর ছাড়া না পায়। আর তুইও শুনে রাখ এই বাড়িতে আর কখনো পা রাখবি না। এখানে তোর আর কোন যায়গা নেই।’
মধুজা একপলক মমতা চৌধুরীর দিকে তাকায়। মুখে গাম্ভীর্য বজায় রেখেই শান্তভাবে দাড়িয়ে আছেন তিনি। যেন বর্ণকে এভাবে গ্রেফতার করা নিয়ে তার কিছুই আসে যায়না। মমতার চরিত্রর সাথে একজন মায়ের কোন মিল খুজে পায়না মধুজা। মমতার স্থলে অন্য কেউ থাকলে হয়তোবা এতক্ষণে কান্না করে দিতো নিজের ছেলের জন্য। অথচ মমতা কত শান্ত হয়ে আছে। মধুজা বুঝতে পারছে না যেই মহিলা তাকে একদিনেই নিজের মেয়ের মতো আপন করে নিল সে নিজের ছেলের প্রতি এত উদাসীন কেন।
এই বাড়িতে সত্যি যদি কেউ বর্ণর জন্য একটুও কেয়ার করে থাকে তাহলে সে হলো বর্ণ। নিজের ভাইয়ের হয়ে সে পুলিশদের বোঝানোর চেষ্টা করছে। বর্ণ এমন সময় বলে,
‘থাক ভাইয়া তোকে আর কিছু বলতে হবে না। অফিসার নিয়ে চলুন আমায়।’
বর্ণর কথায় অভিমানের ছাপ স্পষ্ট। মধুজার তার জন্য একটু খারাপ লাগে। সবার সামনে থেকে পুলিশ বর্ণকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। মুহুর্তেই বৌভাতের অনুষ্ঠানে ভাটা পড়ে। কারো আর মন মানসিকতা নেই। যে যার মতো চলে যেতে থাকে। আরহা এই ঘটনায় একটু বেশিই কষ্ট পেয়েছে। বর্ণকে প্রথম দেখাতেই তার ভালো লেগে গিয়েছিল। আর এভাবে তাকে তার সামনেই গ্রেফতার করে নিয়ে গেলো পুলিশ।
মিলন হাসান মধুজার কাছে আসেন। এতক্ষণ দূরে থাকলেও এখন নিজের মেয়েকে এসে শান্তনা দিয়ে বলেন,
‘এটা এখন তোর পরিবার। তাই এই পরিবারের বিপদে আপদে দূরে সরে না এসে সবার পাশে থাকবি। তবেই তো সবাইকে আপন করে নিতে পারবি।’
মধুজার মামার বাড়ির লোকেরা আবার এই বিষয় নিয়ে সমালোচনা শুরু করেছে। মধুজার মামী তো মিলন হাসানের মুখের উপরই বলে দিল,
‘এ কেমন পরিবারে মেয়ের বিয়ে দিলেন? যার দেবরকে পুলিশ গ্রেফতার করছে। আমাদের বললে তো আমরা ভালো পাত্র খুজে দিতাম।’
মিলন হাসান তাদের কোন কথায় পাত্তা দেন না। মধুজার উদ্দ্যেশ্যেও বলেন,
‘তোমার এখানে থাকতে হবে না। যাও এখন এই পরিবারের মানুষগুলোর তোমাকে প্রয়োজন। তাদের পাশে থাকো।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨