#পারলে_ঠেকাও
#পর্বঃ৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি
মধুজার খুব রাগ হয় অক্ষরের উপর। একেই তো সে বিছানা থেকে পড়ে গিয়ে কোমড়ে ব্যাথা পেয়েছে। কোথায় ভালো স্বামীর দায়িত্ব পালন করে তাকে টেনে তুলবে তা না কিরকম নির্দয়ের মতো হাসছে। মধুজা যার কারণে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। বিয়ের পর থেকেই একের পর এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে চলেছে তার সাথে। মধুজা বিড়বিড় করে বলে,
‘সব হয়েছে এই লোকটার জন্য। পাগলা ডাক্তার একটা।’
অক্ষর এবার বিছানা থেকে হাত বাড়িয়ে বলে,
‘আমার হাত ধরো উঠে এসো।’
মধুজা একা ওঠার চেষ্টা করতে করতে বলে,
‘থাক। আর জুতো মে’রে গরুদান করতে হবে না। আমি একাই উঠতে পারব।’
মধুজা নিজের জেদে অনড় থেকে একাই উঠে দাড়ায়। ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে যেতেই অক্ষর বলে,
‘ওয়াশরুমে যখন যাচ্ছ গোসলটাও করে নিও।’
মধুজা মুখ বাকিয়ে বলে,
‘আমার কি ঠ্যাকা পড়েছে এই শীতের সকালে গোসল করার।’
অক্ষর ঠোট টিপে হেসে বলে,
‘গোসল না করে নিচে গেলে সবাই কি ভাববে? যে নতুন বউ বাসর রাতের পর গোসলও করেনি।’
মধুজা অক্ষরের কথার মানে বুঝতে পারে। রেগে বলে,
‘একদম ফালতু কথা বলবেন না। আমাদের মধ্যে কিছুই হয়নি।’
অক্ষর বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে নিজের শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বলে,
‘হয়নি তো হতে কতক্ষণ। তুমি চাইলে কালকের রাতের কাজটা এখনো করে নিতে পারি।’
মধুজা নিজের রাগকে যথাসাধ্য নিয়ন্ত্রণ করে বলে,
‘আপনি আসলেই একটা পাগলা ডাক্তার।’
এবার অক্ষরও রেগে যায়। রাগী গলায় বলে,
‘খবরদার আমাকে ঐ নামে আর ডাকবে না। নাহলে আমি উল্টোপাল্টা ডাকনাম দিলে তখন কিন্তু কোন অভিযোগ শুনব না।’
মধুজা জেদি কন্ঠে বলে,
‘আমি আপনাকে পাগলা ডাক্তারই ডাকব।’
অক্ষর মধুজার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। অনেকটা কাছে এসে বলে,
‘ঠিক আছে। তোমার নামের শুরুতে আছে মধু। আই লাইক ইট। মধুকে ইংরেজিতে কি বলে জানো? হানি। আজ থেকে আমি তোমাকে হানি বলে ডাকব।’
মধুজা হতবাক হয়ে অক্ষরের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘কি!!!!’
অক্ষর বাকা হেসে বলে,
‘আমি একবার যা বলি সেটাই করি। এখন হাজার মানা করলেও আমি তোমাকে হানি বলে ডাকব। সবার সামনেই এই নামে ডাকব।’
অক্ষর কথাটা বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। ভেতরে গিয়ে বলে,
‘সবসময় লেডিস ফাস্ট এই রুলস মানতে আমি রাজি নই। যে আগে আসবে সেই ফাস্ট। আমার পরে তোমার সিরিয়াল।’
মধুজা বলতে থাকে,
‘এই পাগলা ডাক্তারের সাথে সংসার করা কোনভাবেই পসিবল। আমি কিছুতেই এই তারছেড়া লোকের সাথে সংসার করবোনা। ‘
৭.
মধুজা গোসল করে এসে ঠান্ডায় কাপতে থাকে। মনে মনে হাজারটা গালি দেয় অক্ষরকে। আজ শুধুমাত্র অক্ষরের জন্য জীবনে প্রথমবার শীতের সকালে তাকে গোসল করতে হলো। অক্ষর মধুজাকে একা দাড়িয়ে বিড়বিড় করতে দেখে ভড়কে যায়। মধুজার সামনে এসে দাড়িয়ে পকেটে হাত গুজে বলে,
‘যা বলার সামনাসামনি বলো। আমার পিছনে সমালোচনা কারি মানুষদের ভালো লাগে না।’
‘আপনার জন্য আমাকে সকাল সকাল এই ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে হলো।’
‘আমি তো কিছু করিই নি। আমাকে দো’ষ দিচ্ছ কেন? ঠিক আছে। যদি কোন কিছু না করেই আমাকে দোষ দাও তাহলে আমিও চুপ থাকবো না। কিছু না করে কথা শোনার থেকে ভালো করে তারপর কথা শুনি। কাল থেকে তোমাকে সকালে গোসল করার ব্যবস্থা সত্যি সত্যি করে দিবো।’
মধুজা আতঙ্কিত হয়ে বলে,
‘একদম না। আমাকে স্পর্শ করবেন না আপনি। নাহলে আমি,,’
‘কি করবে?’
‘আজ রাতে আপনার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।’
‘তুমি তো খুব দুষ্টু। একেবারে সরাসরি বলতে না পেরে ইশারা দিয়ে বলছ। কোন ব্যাপার না। বিয়ের পর আমার বউ পিওর ভার্জিন থাকবে সেটা তো হতে পারে না। আমি আজ রাতে অবশ্যই নিজের স্বামীর দায়িত্ব পালন করব।’
মধুজার এবার খুব বিরক্তি হয়। সে মনে মনে বলে,
‘ এই লোকটা সবসময় এত বেশি বেশি বোঝে কেন? এই লোকটাকে ডিভোর্স দিতেই হবে। পাগলা ডাক্তারের সাথে থাকতে থাকতে আমি নিজেই নাহলে পাগলী সাংবাদিক হয়ে যাবো।’
অক্ষর আচমকা মধুজার ভেজা চুলে স্পর্শ করে। মধুজা আতকে ওঠে। অক্ষর এগিয়ে আসতে থাকে মধুজার দিকে। মধুজা চোখ বন্ধ করে নেয়। অক্ষর আরো কাছে আসতে চাইলেই তাকে ধা’ক্কা দেয়। লজ্জায় আর এক মুহুর্ত দাড়িয়ে থাকতে পারে না মধুজা।দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
অক্ষর মধুজার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
‘এভাবে পালিয়ে লাভ নেই। ধরা তোমাকে আমার কাছে দিতেই হবে হানি।’
মধুজা দৌড়ে নিচে আসার সময় মমতা চৌধুরীর মুখোমুখি হয়। মমতা মধুজাকে এভাবে দৌড়াতে দেখে ভ্রু কুচকে ফেলেন। গম্ভীর হয়ে বলেন,
‘এভাবে ছুটোছুটি করো না সবসময়। পড়ে গেলে ব্যাথা পাবে।’
মধুজার এই শাসনটুকুতে মন খারাপ হয় না। অনেক আগে নিজের মাকে হারানোর পর এই শাসনটুকুই তো মিস করছিল। মধুজার মায়ের মৃত্যুর পর তার বাবা তাকে কখনো কড়া গলায় কথা পর্যন্ত বলেনি। আজ অনেকদিন পর যেন মায়ের মতো শাসন করার মতো কাউকে ফিরে পেলো মধুজা।
৮.
বাড়িতে আজ বৌভাত উপলক্ষে চলছে বিরাট আয়োজন। কার্ডিওলজিস্ট অক্ষর চৌধুরীর বিয়েতে খুব কম মানুষ উপস্থিত থাকলেও বউ ভাতে আমন্ত্রিত মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয়।
মধুজা সেই কখন থেকে আয়নার সামনে দাড়িয়ে একটার পর একটা শাড়ি দেখে যাচ্ছে। কোন শাড়িই তার যেন পছন্দ হচ্ছে না। শেষে বিরক্ত হয়ে বিছানায় বসে পড়ল মধুজা।
অক্ষর রুমে এসে মধুজাকে মলিন মুখে বিছানায় বসে থাকতে দেখে বলল,
‘কি হয়েছে আমার হানির? মুখটা এরকম বাংলার পাচের মতো করে রেখেছ কেন? চকলেট খাবে?’
মধুজা বিরক্তি নিয়ে বলে,
‘আমাকে কি আপনার ছোট বাচ্চা মনে হচ্ছে যে আমি চকলেট খাবো। পাগলা ডাক্তার একটা। সমস্যার সমাধান তো করে দিতে পারবে না শুধু জানে সমস্যা তৈরি করতে।’
‘মিথ্যা অভিযোগ কিন্তু আমি একদম পছন্দ করি না। আমি তোমার কোন সমস্যা তৈরি করেছি বলে তো মনে হয়না। আর হ্যা তোমার চকলেট খাওয়ার বয়স সত্যি নেই তোমার তো এখন জামাইয়ের আদর খাওয়ার বয়স। কিন্তু তুমি তো,,,’
‘আপনার এসব ফালতু আলাপ বন্ধ করুন। আমি এমনি বুঝতে পারছি যে কোন শাড়িটা পড়ব আর আপনি,,’
‘কথাটা আগে বললেই হতো।’
অক্ষর সবগুলো শাড়ি দেখে তার মধ্য থেকে লাল টুকটুকে একটা জামদানী শাড়ি এনে মধুজাকে বলে,
‘এই শাড়িটা পড়ে নেও। আমার লাল টুকটুকে হানিকে এই লাল শাড়িতে খুব ভালো মানাবে।’
মধুজা শাড়িটার দিকে তাকায়। আসলেই শাড়িটা অনেক বেশি সুন্দর। কিন্তু মধুজার মাথায় যেন জেদ চেপে বসে। সে দাতে দাত চেপে বলে,
‘এই শাড়ি আমি পড়বো না। আপনার পছন্দ একদম ভালো না।’
এপর্যায়ে আর নিজেকে শান্ত রাখতে পারে না অক্ষর। মধুজাকে শক্ত করে ধরে বলে,
‘আমার পছন্দ সবসময় সেরা। এই যে আমার সামনে দাড়িয়ে আছ সেই তুমিকেও কিন্তু আমি পছন্দ করেছি। তাই আমার পছন্দের দিকে আঙুল তুলো না।’
মধুজাকে বেশ শক্তভাবেই ধরে রেখেছিল অক্ষর। যার ফলশ্রুতিতে ব্যাথা অনুভব করে মধুজা। অক্ষর সেটা বুঝতে পেরে মধুজার বাধন হালকা করে। মধুজা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অক্ষরের দিকে।
কথায় আছে রাগ মানুষের বড় শত্রু। রাগের বশে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ভুল কিছু করে ফেললে পরে আফসোস করতে হয়। এজন্যই তো বলে রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। মধুজাও এই রাগের বশবর্তী হয়ে কোন কিছু না ভেবেই অক্ষরকে বলে দেয়,
‘আপনার মতো একটা পাগলা ডাক্তারের সাথে আমি সংসার করবো না। ৬ মাস পরই আমি ডিভোর্সের আবেদন করব। আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।’
‘মধুজা!!’
অক্ষর ভীষণ জোরে ধমক দেয়। তাতে মধুজার বিন্দুমাত্র পরিবর্তন হয় না। সে নিজের সিদ্ধান্তে অনড় হয়ে বলে,
‘আপনাকে ৬ মিনিট সহ্য অসম্ভব সেখানে আমি ৬ মাস সহ্য করবো। কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে। এই ছয় মাসে আপনি আমাকে স্পর্শ করতে পারবেন না,আমরা এক বিছানায় ঘুমাবো না। আর আমরা একে অপরের ব্যক্তিগত জীবনেও হস্তক্ষেপ করবো না। একেবারে ৬ মাস অতিবাহিত হলে ডিভোর্সের আবেদন করব। আমাকে কেউ ঠেকাতে পারবে না।’
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨