পরিপূর্ণতা পর্ব ৮

0
842

#পরিপূর্ণতা
#৮ম_পর্ব
#লেখনীতে_সুপ্রিয়া_চক্রবর্তী

মুক্ত ও নিলার বিয়ের খবর মুক্তর কানেও সবেমাত্র এলো। মহিমা বেগম তাকে জানালো তিনি নিলার সাথে মুক্তর বিয়ে ঠিক করেছেন। এটা শুনে মুক্ত বিন্দুমাত্র খুশি হয়নি, তার রাগ হয়েছে নিজের মায়ের উপর। মুক্ত সরাসরি বলে দেয়, আমি নিলাকে বিয়ে করতে পারব না। বিয়ের মতো এত বড় একটা ডিশিসন নেওয়ার আগে আমাকে অন্তত একবার জানাতে পারতে।

মহিমা বেগম কাপড় গোছাতে ব্যস্ত। সেই অবস্থাতেই বলেন, তুই আমার ছেলে মুক্ত। তাই তোর কিসে ভালো হবে কিসে খারাপ সেটা আমার থেকে ভালো নিশ্চয়ই তুই বুঝবি না? তাছাড়া নিলা যথেষ্ট ভালো মেয়ে। আমার পছন্দ অন্তত তোর মতো খারাপ নয়।

মুক্ত বেশ বুঝতে পারল তার মা তাকে খোটা দিয়েই কথাটা বলল। কারণ মুক্ত অহনাকে পছন্দ করেছিল। মুক্তও বা কম কিসে। সেও নিজের মাকে বলে দিল, আম্মু তুমিও কিন্তু অহনাকে পছন্দ করতে এমনকি নিজের মেয়ের মতো দেখতে ওকে। এখন ওর নিজের দোষে যেমন ও তোমার ভালোবাসা হারিয়েছে তেমন আমার ভালোবাসাও হারিয়েছে। যাক গে, সেসব ব্যাপারে কথা বলতে আমি ইচ্ছুক নই। আমি এখনই বিয়ে করার জন্য প্রস্তুত নই। এন্ড নিলাকে তো কখনোই না। আমি আমার ডিশিশন তোমাকে জানিয়ে দিলাম। আশা করি তুমি বুঝতে পারবে।

মহিমা বেগম আর কিছু বলতে পারেন না। তিনি জানেন তার ছেলে এক কথার মানুষ। একবার যা বলে তাই করে। তাকে হাজারবার বললেও সে আর নিজের সিদ্ধান্ত বদলাবে না। তাই তিনি নিজের বড় ছেলের বউকে গিয়ে বলেন, বৌমা তুমি তোমার বাপের বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দাও বিয়েটা হচ্ছে না। মুক্ত এই বিয়েটা করতে চাইছে না। আমি ওর উপর জোর খাটাতে পারব না।

অন্যদিকে, অহনা ও নিলা একসাথে হাটতে বের হয়েছে। নিলা তো মুক্তকে বিয়ে করার খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় তার বড় বোন তাকে ফোন করে। খুশি মনে ফোনটা রিসিভ করলেও নিজের বোনের সাথে কথা বলার পর নিলার সব খুশি হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। নিলার অভিব্যক্তির হঠাৎ এমন পরিবর্তন অবাক করে দেয় অহনাকে।

নিলা অহনার গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমি কি দোষ করেছি আপু। আমি তো মুক্ত ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসতাম। ওনার সাথে আমার বিয়ের কথা শুনে কত খুশি হয়েছিলাম। উনি কেন আমায় বিয়ে করতে চান না? আমি কি এতটাই খারাপ?

অহনা নিলার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে, তুমি খারাপ নও নিলা। কিন্তু কি বলো তো ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যা জোর করে আদায় করে নেওয়া যায়না। আমি নিজের জীবনের থেকে শিক্ষা নিয়ে এটা তোমাকে বলতে পারি। জানো একটা সময় আমিও একজনকে খুব ভালোবেসেছিলাম। তাকে পাওয়ার জন্য এতটাই মরিয়া হয়ে গিয়েছিলাম যে ভালো মন্দের জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। যার জন্য চরম মূল্য আমায় দিতে হয়েছিল। তাই তোমাকে আমি উপদেশ দেবো তুমি আর ভালোবাসা নিয়ে পাগলামি করো না। যারা তোমায় ভালোবাসেনা তাদের কথা ভেবো না। যারা তোমায় প্রকৃত ভালোবাসে তাদের কথা ভাবো। তোমার মা-বাবাই কিন্তু তোমাকে প্রকৃত ভালোবাসে। সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখো। দেখবে জীবনে ভালো কিছুই হবে।

নিলাকে বুঝ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় অহনা। নিজেও হোস্টেলে চলে আসে। নিজের হোস্টেল রুমে এসে মাহিদকে দেখে অবাক হয়ে যায় অহনা। মাহিদ অহনাকে দেখে একগাল হেসে বলে, তোমার জন্য খাবার নিয়ে এলাম। দেখ তো এগুলো তোমার পছন্দ হয় কিনা।

অহনা প্যাকেট খুলে দেখল সেখানে চিকেন কাটলেট আর ফ্রাইড রাইস রয়েছে। মাহিদের দিকে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকিয়ে অহনা বলে, এসবের কি দরকার ছিল মাহিদ ভাইয়া? আমি হোস্টেলের খাবারই খেয়ে নিতাম।

আমার সাথে একদম এরকম ফর্মালিটি দেখাবে না। এগুলো তোমার জন্যই এনেছি চুপচাপ খেয়ে নাও। এখন আমি আসছি। আর হ্যাঁ কোন প্রয়োজন হলে সবার আগে আমাকে জানাবে। আমি চলে আসবো তোমাকে সাহায্য করার জন্য।

অহনা খেতে বসে পড়ে। মাহিদ চলে যায়। যাওয়ার আগে অহনার দিকে তাকায়। মেয়েটাকে অনেক বেশি ভালো লাগে তার কাছে। এর আগে চারটি মেয়ের সাথে ভালোবাসার অভিনয় করে তাদের সাথে ইন্টিমেট হয়ে ছেড়ে দিয়েছে মাহিদ। মেয়েদের মন নিয়ে এভাবে খেলা তার কাছে পেশা হয়ে গেছে। মাহির নিজের ফোন বের করে তারিখ দেখে নিয়ে বলে, তুমি যা মেয়ে দুইদিনেই পটে যাবে। তোমার পেছনে বেশি সময় ব্যয় করতে হবে না।

এদিকে অহনা ভাবছে মাহিদ সাক্ষাত দেবদূত হয়ে এসেছে তার জীবনে। এই শহরে এখন তার আপন বলতে শুধু মাহিদই আছে যাকে সে ভরসা করতে পারে। মাহিদই তাকে আগলে রাখার মতো কেউ।

❤️
একটি দরকারী কাজে অহনার ভার্সিটির কাছে এসেছিল মুক্ত। সে জানতো না যে অহনা এই ভার্সিটিতে পড়ে। অহিমা বেগমের মৃত্যুর পর অহনার সাথে আর কোন যোগাযোগ করেনি মুক্ত। সে কোথায় আছে কিভাবে আছে এই নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ তার মনে নেই।

কিন্তু হঠাৎ করেই অহনার সাথে দেখা হয়ে গেল মুক্তর। তবে এই সাক্ষাৎ ছিল অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত। কারণ মুক্ত দূর থেকে অহনা ও মাহিদকে একসাথে হেসে হেসে কথা বলে আসতে দেখছিল।

এই দৃশ্য মুক্তর অন্তরজ্বালার জন্য যথেষ্ট ছিল। হঠাৎ নিজের পিঠে কারো হাতের স্পর্শে পিছনে ফিরে তাকায় মুক্ত। নিলাকে দেখে বিরক্তির দৃষ্টি ফেলে।

নিলা মুচকি হেসে বলে, তুমি এখানে কি করছ মুক্ত ভাইয়া?

কিছু জরুরি কাজে এসেছিলাম।

ওহ। তোমাকে ধন্যবাদ আমাদের বিয়েটা বাতিল করে দেওয়ার জন্য। আমি আগে থেকেই জানি তোমার মনে আমার জন্য কোন ফিলিংস নেই। আমি ভেবেছিলাম বিয়ের পর হয়তো সব আপনাআপনি ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। আসলে বিয়ে এমন একটি সম্পর্ক যার মধ্যে দুটি প্রাণ পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর এই পরিপূর্ণতা লাভের জন্য সবথেকে বেশি প্রয়োজন মনের মিল। যেটা আমাদের মধ্যে কোনদিনও হতো না। তাই আমাদের সম্পর্ক পরিপূর্ণতা পেতো না।

মুক্ত অহনা ও মাহিদের দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বলে, কাউকে ভালোবাসলেই যে পরিপূর্ণতা পাওয়া যায় এমনটা নয়। অনেক সময় ভালোবাসাই সবথেকে বড় অপরিপূর্ণতার কারণ হয়। যাইহোক তুমি যে আমার উপর রাগ করে নেই এটা জেনে ভালো লাগল। আশ করি তুমি লাইফে আমার থেকে ভালো কাউকে পাবে। যে নিজের ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে আগলে রাখবে।

একনিঃশ্বাসে কথাগুলো বলা শেষ করে চলে যাচ্ছিল মুক্ত। অহনা মুক্ত দেখতে পেয়ে যায়।

একপ্রকার দৌড়ে এসে মুক্তকে পেছন থেকে ডাক দেয়, কেমন আছ মুক্ত ভাইয়া?

মুক্ত কন্ঠস্বর শুনেই বুঝতে পারে এটা অহনা। পেছনে না তাকিয়েই বলে, এতক্ষণ ভালো ছিলাম। এখন আর ভালো নেই।

অহনা সরে আসে সেখান থেকে। সে বুঝতে পেরেছে তার খালা আর মুক্ত ভাইয়া কোনদিন তাকে ক্ষমা করবে না।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here