খড়কুটোর বাসা পর্ব ১৭

0
1080

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১৭
#Jhorna_Islam

জায়গা ভাগাভাগি নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে ইমন আর ইশানের মাঝে। তারা চায় দুইজনের নামে যেনো সব জায়গা সম্পত্তি লিখে দেয় তাছলিমা বানু।

সব অবশ্য চলবে আগের মতোই।তবে জায়গা ভাগাভাগি করে ফেলতে চায় এখন।যার যার ভাগ সে বুঝে নিতে চায়।

দুই ভাই চায় নিজেদের নামে সব নিয়ে নিতে এখনই।দুই ভাই আলোচনা করে তারপর তাছলিমা বানুর কাছে গিয়ে বলে,,যেনো তাদের নামে এখনই লিখে দেয় সব।

তাছলিমা বানু সব শুনে ছেলেদের দিকে তাকিয়ে বলে,, তোরা এতো পা’গল হয়েছিস কেন?

লিখে দিলেই কি না দিলেই কি এসব তো তোদেরই।আমার সব কিছু মানেই তোদের দুইজনের। বুঝলাম না তোদের মাথায় এখন লিখে দেওয়ার ভূ’ত চাপলো কেন?

ইমন বলল,,মা তোমার ভালোর জন্য বলছি, বয়স হয়েছে তোমার এসব নিয়ে চিন্তা করলে অসুস্থ হয়ে পরবা।তাছাড়া এসব দেখাশোনা তো আমাদের ই করতে হবে তাই লিখে দিতে সমস্যা কি?

কোনো সমস্যা নেই তো এসব তো তোদের জন্যই করেছি।

তাহলে?

কিছু দিন যাক দিয়ে দিবো।আর এসব লিখে কেন দিতে হবে বুঝলামনা।তোরাই তো সব পাবি। সব সমান সমান ভাগ পাবি তাহলে?

সমান ভাগ পেলেও লিখে দিলে ভালো কোনো ঝামেলার সৃষ্টি হবে না।

তাছলিমা বানু বলে বুঝলাম।তোরা যেভাবে চাবি সেই ভাবেই হবে।

ইশান বলে,,খুব তারাতাড়ি যেনো সেই দিন টা আসে মা।

তোরা কি জায়গা জমি বেচে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছিস নাকি? একদম ভুলেও এমন চিন্তা মাথায় আনবি না।

ইমন ইতস্তত করে বলে,,আরে মা কি বলছো জায়গায় জমি বেচবো কেন?

দরকার পরলে এক বেলা না খেয়ে থাকবি তবুও জায়গা বেচার কথা কখনো মাথায় আনবি না। যার জায়গা আছে মানেই তার নিরাপদ আশ্রয় আছে। মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকলে দুনিয়ায় টিকে থাকা যায় বুঝলে?

দুই ভাই মিলে এবার কিছু একটা করার চেষ্টা কর।এতোদিন তো ঐ ইরহান ছিলো।আমাদের সব খরচা সে চালাতো।এখন তো নাই যা টাকা আছে আর কয়মাস যাবে। এই টাকা গুলো শেষ হলে পরে কি করবো? পরেতো ইরহানের এখন যা অবস্থা তখন আমাদের ও হবে।তাই হাতের টাকা পয়সা শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই কিছু একটা করার চেষ্টা কর।

ইশান কথাটা শুনে চোখ মুখ কোচকে ফেলে। মা ঐ ইরহানের সাথে আমাদের তুলনা দিতে আসবে না কখনো।

ইরহান পরের কা’মলা গিরি খাটার জন্য জন্ম নিয়েছে। তাকে ঐ সবেই মানায়। আমরা কোনো পরের কাজ করবোনা।

অন্য লোক কেনো আমাদের হুকুম দিবে? আমরা এমন কিছু করবো যাতে করে আমরা অন্য কে হুকুম দিবো পায়ের উপর পা তুলে।

ইমন ভাই আর আমি তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে বলছি তোমাকে যেনো আমাদের নামে সব লিখে দেও।পরে ঐ জায়গা বিদেশি কোম্পানির লোকদের কাছে ভাড়া দিবো। শুধু টাকা আর টাকা আসবে।তারপর দুই ভাই সারাজীবন নিজেদের পায়ের উপর পা তুলে বসে বসে খাবো।

ইমন ও ইশানের সাথে তাল মিলায়।হ্যা মা ইশান ঠিকই বলেছে। ঐ জায়গা বিদেশি কোম্পানিদের কাছে ভাড়া দিবো। টাকার কু’মির তৈরি হবে।এই গ্রামে কেন আশে পাশে সকল গ্রামে সবচাইতে বেশি ধনী হবো আমরা দুই ভাই। লোকে আমাদের মান্য করে চলবে।

তাছলিমা বানু দুই ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে,, তোরা ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিবি এবার।একবার কিন্তু ধো’কা খাইছস।এইবার এমন হলে পথে বসা লাগবো।

ইশান তাছলিমা বানুর হাত ধরে বলে,, কিছুই হবে না মা।এইবার কোনো ভুল হবে না।

ঠিক আছে তোরা যা ভালো বুঝিস।কিছু দিন সময় দে তারপর তোদের নামে সব করে দিবো।বলেই তাছলিমা বানু রুমে চলে যায়।

ইমন আর ইশান দুইজন দুইজনের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,, আমরা আরো বড়লোক হয়ে যাবো।

————————————

যুথি ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। সে মধ্যে পর্যায়ের ছাত্রী ছিলো।

দাদি তো বাড়িতে ছাড়া অন্য কোথাও কাজ করতে দিতো না।তাই বাড়ির কাজ শেষ করে স্কুলে চলে যেতো। এই বাড়িতে কেউ অবশ্য জানেনা যুথি ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে।

হুট করে একদিন ইরহানের কাছে আবদার ধরে সে কাজ করবে।

ইরহান কে রাগানোর জন্য যুথির এই একটা কথাই যথেষ্ট ছিলো।

“তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে যুথি।আমি বেঁচে থাকতে তুমি গিয়ে কাজ করবে? ”

আপনি আমার কথাটা আগে শুনুন বোকা পুরুষ।

কিছু শুনতে হবে না যুথি।তোমার কোনো দোষ নেই। আমিই স্বামী হিসাবে ব্যর্থ।তোমার চাওয়া পাওয়া কিছু পূর্ণ করতে পারছিনা।তোমার কাজ করতে চাওয়া টা অস্বাভাবিক কিছু না। আসলে আমার মরে যাওয়া উচিত।

যুথি ইরহানের মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয়। বোকা পুরুষ চুপ করুন। এই কথাটা মুখে ও আনবেন না। আপনি না থাকলে যে এই যুথির ও অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। আপনিই তো আমার সব। কে বলেছে আপনি স্বামী হিসাবে ব্যর্থ? আমার চোখে পৃথিবীর সেরা স্বামী আপনি।

আপনার কিছু হয়ে যাওয়ার আগে যেনো আমার কিছু হয়ে যায় গো।

ইরহান এবার যুথিকে থামিয়ে দেয়। এসব কি কথা যুথি রানী?

ঠিকই বলেছি।

তোমাকে কে বলেছে ঠিক বলতে? এসব কথা মুখে আনবে দূরে থাক ভাবনা তে ও যেনো না আসে।

কেন আসবে না? আপনি বলেন সময় ও আমার খারাপ লাগে।আপনি বলতে পারলে আমি কেনো বলবো না?

ঠিক আছে কেউই এসব কথা বলবো না আমরা।

হুম। এবার আমার কথাটা আগে মন দিয়ে শুনুন। কিছু দূরে একটা স্কুল আছে না? কিন্টারগার্ডেন যে ঐটায় চাকরি করতে চাইছিলাম।আমি তো বাড়িতেই বসে থাকি সারাদিন। তেমন কোনো কাজ ও নেই। আপনি ও দোকানে লেগেছেন সারাদিন বাড়িতে থাকেন না। আমার একা একা সময় কাটেই না।তাই ভাবছিলাম ঐটায় বাচ্চাদেরকে পড়ানোর দায়িত্ব নিতে। আমার সময় ও কেটে যাবে কিছু টাকা ও আসবে।

আপনি একদম না করবেন না।এই সংসারটা আপনার একা না আমারও। আপনি এতো কষ্ট করতে পারলে আমি কেন পারবো না? তাছাড়া বাচ্চাদের পড়ানো তো খারাপ কিছু না তাই না?

ঠিক আছে এটায় বাঁধা দিবো না আমি। কিন্তু ওরা কি তোমায় নিবে?

কেন নিবে না? মেট্রিক পাশ করলেই কিন্টার গার্ডেনে চাকরি করা যায়। তাছাড়া আমি একজনের সাথে কথা বলেছি।ঐ যে রাস্তার ঐ পাশে বাড়ি মেয়েটা সিমা। ও ঐখানে চাকরি করে এখন একটা নতুন টিচার লাগবে সে আমাকে বলতেছে করার জন্য।

কিন্তু তোমার পড়াশোনা?

আপনার কি আমাকে মূর্খ মনে হয়? ব্রু নাচিয়ে জানতে চায় যুথি।

না মানে,,,,,

আমি এস.এস.সি দিয়েছি।এটা আপনাদের বাড়ির কেউই জানে না। আমিই বলিনি। দাদিকে নিষেধ করেছিলাম বলতে।ভাগ্যিস করেছিলাম নয়তো ঐ কু’টনি বুড়ি তো আমায় আপনার বউই করতো না। লেখিকা ঝর্ণা ইসলাম। আমি আমার এই বোকা পুরুষ আর তার ভালোবাসা কই পেতাম তাহলে?

এই বোকা পুরুষের কাছে শুধু ভালোবাসা পাচ্ছো না কষ্ট ও পাচ্ছো।

আপনার ভালোবাসার কাছে এসব কষ্ট তুচ্ছ। এবার বলেন কি করবো।

তাহলে আমি আর কি বলবো? আমার যুথি রানী বাচ্চাদের যুথি ম্যাডাম হয়ে যাক।

তারপর দুইজন ই এক সাথে হেসে উঠে।

————————————
একদিন রাতে দোকান থেকে আসার সময় হুট করেই একজনের সাথে দেখা হয়ে যায় ইরহানের।

লোকটা বিদেশ ইরহানের তত্বাবধানেই কাজ করে।জিজ্ঞেস করে জানতে পারলো লোকটা ও ছুটি তে এসেছে। কয়েক গ্রাম পরই লোকটার বাড়ি।এই দিকে বোনের বাসায় এসেছে বেড়াতে।

ইরহান কে দেখে লোকটা কি খুশি। ইরহান কে জোর করে ধরে নিয়ে দোকানে বসায়। এটা ওটা কতো কিছু দিতে বলতেছে ইরহান কে খাওয়ার জন্য।

ইরহান সব মানা করে দেয়। শেষে এক কাপ চা খেতে রাজি হয়।

চা খেতে খেতে দুইজনের আলাপ চলে।

তা স্যার আপনার ছুটির আর কয়দিন আছে?

আছে অনেক দিনই।

— আমি শুনেছিলাম আপনি নাকি আর ফিরবেন না?

— আমারও তেমন ইচ্ছে ই ছিলো।দেশে কিছু একটা করবো ভেবে ছিলাম।তারপর সব উল্টো হয়ে গেলো।থাক সেসব কথা। এখন ভাবতেছি ঐ দেশে আবার পাড়ি জমাবো।

আরো কয়েকমাস ছুটি রয়েছে। তা বাতিল করে খুব শিঘ্রই চলে যাবো।

ঐসময় ইশান সিগারেট কিনার জন্য ঐ দোকানেই গিয়েছিল। ইরহানের আবার দেশের বাইরে যাওয়ার কথাটা তার শুনতে একটুও ভুল হয়নি। কিছু সময় দাড়িয়ে থেকে ইরহানের পিছন থেকে নীরবে প্রস্থান করে।

ইশান ইরহানের পিছনে ছিল বলে,, ইরহান ইশানকে দেখেনি।সে লোকটার সাথে আরো নানান বিষয়ে কথা বলতে থাকে।

#চলবে,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here