খড়কুটোর বাসা পর্ব ৭

0
1159

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৭
#Jhorna_Islam

আমার কথা মতো চললে সব ঠিক থাকবে।নয়তো সব উলট পালট হয়ে যাবে। এমন কিছু করবো না তোমরা কিছু বলতে পারবে আর না কিছু করতে পারবে।শুধু চুপচাপ দেখা ছাড়া কিছু করতে পারবে না।

ভালো আছি ভালো থাকতে দাও।খারাপ হতে বাধ্য করো না। এতোদিন যেমন সব কিছু চলেছে তেমন ভাবেই যেনো সব কিছু চলে। আমি আর আমরা ভালো থাকলে তোমরা ও ভালো থাকবে।

তাই আগে থেকেই সাবধান করছি বোঝাও ইরহান কে।দেশে এসেছে থাকুক ছুটি শেষ হলে যেনো আবার ফিরে যায়। নয়তো আফসোসের শেষ থাকবে না।

“কথায় আছে না অতি বাড় বেড়োনা ঝড়ে পরে যাবে।”

যুথি এবার মুখ খুলে,,,,, কেন উনি দেশে থাকলে আপনার কি সমস্যা?৷ এটা তো আরো ভালো খবর ঘরের ছেলে ঘরে থাকবে। আপনার এই দুই ছেলে বাড়িতে থাকবে উনি কেন গিয়ে দূরে পরে থাকবে?

যা জানোনা তা নিয়ে কথা বলবে না।

জানতাম না তো।এখন সব জানতে পারতেছি খুব ভালো করে জানতে পারছি।

নিজের ছেলেদের সময় ষোল আনা উনি নিজের পেটের ছেলে না বলে এক আনা ও না তাইনা নকল শ্বাশুড়ি আম্মা?

ভুলে যেওনা মেয়ে আমি তোমার কি হই সম্মান দিয়ে কথা বলবে।আর এটাও ভুলে যেওনা এই বাড়ির বউ হয়ে আসতে পেরেছো আমার বদৌলতে। তাই বুঝে শুনে কথা বলবে।

আমি ইরহানের বউ করে না আনলেতো কোনো রিকসাওয়ালার ঘরে জায়গা হতো।অল্প পানির মাছ এখন বেশি পানিতে পরে লাফালাফি করছো? আমি যা বলি চুপচাপ শুনবে।

আমি যা বলি তাই করবে।নয়তো এই বাড়ির ভাত জুটবে না কপালে।
ভুলে যেওনা আমার পছন্দ করে আনা মেয়ে তুমি।

সেইটাইতো আমাকে পছন্দ করে নিজের ভালো করতে গিয়ে খারাপ করে ফেললেন। ভুল জায়গায় সঠিক মানুষ টা পছন্দ করে এনেছেন।

“কথায় আছে না পরের জন্য গ’র্ত করলে সেই গ’র্তে নিজেকেই পরা লাগে।”

তাছলিমা বানু যুথিকে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ইরহান এসে ঐ জায়গায় উপস্থিত হয়। মোবাইল টা পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে তাছলিমা বানু ও যুথির দিকে ব্রু কোচকে তাকায়।

আমি দুই দিনের ভিতরে শহরে যাবো আমার পরিচিত লোক আছে সেখানে সে ও ব্যবসা করে তার সাথেই আলাপ আলোচনা করে যেটা করলে সুবিধা হবে সেটাই করবো। তোমার একাউন্টে গত মাসে যে টাকা গুলো পাঠিয়েছি সে গুলো ব্যবসা করার পরিকল্পনা করেই পাঠিয়েছি।কথা গুলো বলে ইরহান তাছলিমা বানুর মুখের দিকে তাকায়। তাছলিমা বানু থো’ম ধরে দাঁড়িয়ে আছে।

— কি হলো মা? আশা করি বুঝতে পারছো আমি কি বলছি?

— গত মাসে যে টাকা গুলো পাঠিয়েছিলি সেই টাকা গুলো নেই ইরহান।

— নেই মানে? তিন লাখ টাকা নাই হয়ে গেলো কি করে? কি করেছো মা টাকা দিয়ে। আমার জানামতে তো কোনো কিছু করোনি।

— টাকা গুলো ইমন আর ইশান নিয়ে ছিলো।

— ওরা কেন আমার টাকা আমার অনুমতি ছাড়া নেবে? এতো টাকা দিয়ে ওদের কি কাজ? কি করেছে টাকা দিয়ে। সারাদিন তো শুয়ে বসেই কাটে ওদের। আর আমিতো ওদের খরচের জন্য আলাদা টাকা দিতামই।ঐখান থেকে কেনো আবার টাকা নিয়েছে?

ইরহানের কথা শুনে ইশান কিছু বলতে নিবে তার আগেই ইমন আটকে দেয়। ইশান রাগে ফুসছে।এমনিতেই তার মাথা গরম। বেশ করেছে শুয়ে বসে খায় এটা ইরহান বলবে কেন?

ইশান ইমনের দিকে ফুসতে ফুসতে তাকায়।ইমন আস্তে করে বলে,, চুপ থাক ভাই মাথা গরম করিস না।ঠান্ডা রাখ মাথা।মায়ের উপর ভরসা রাখ যা বলার মা কেই বলতে দে।

তুই এখন কিছু বলতে গেলে বা বাড়াবাড়ি করলে হিতে বিপরীত হবে।আমাদের মা যথেষ্ট বুদ্ধিমতি।আামাদের থেকে ভালো বুঝে কি করলে আমাদের ভালো হবে সেটাই উনি করবেন।ভরসা রাখ।

ইশান ইমনের কথায় চুপচাপ শান্ত হয়ে দাড়িয়ে থাকে।তার এমন ভাবে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে ইরহান কে গিয়ে কয়েক ঘা লাগিয়ে দিতে।

ইরহান তাছলিমা বানুর দিকে তাকিয়ে আছে তার উত্তরের আশায়।

তাছলিমা বানু বলে,,,, ঐ টাকা গুলো ইমন আর ইশান একটা জায়গা কিনার জন্য বায়না দিয়েছিলো।কিন্তু লোকটা নকল দলিল দেখিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে।

আমার টাকা নিয়ে ওরা জায়গা কিনতে গেলো।সেখানে গিয়ে ধোকা খেয়ে টাকা ও হারালো অথচ আমিই কিনা জানিনা।একবার জানানোর প্রয়োজন ও মনে করোনি তোমরা বাহ্। বলেই ইরহান হাত তালি দেয়।

এতোগুলা টাকা ওরা নিয়ে গেছে ভালো কথা সেটা যে ধোকা খেয়ে হারিয়ে ও এসেছে সেটা কি আমার জানার অধিকার ছিলো না মা?

তুই তো এই ব্যাপারে থাকিস না ইরহান।আর আমি অবাক হচ্ছি এটা ভেবে তারপর তুই আমার কাছে কৈ’ফি’য়’ত চাইছিস? এক দিনেই এতো উন্নতি হয়ে গেছে? এসব নিশ্চয়ই তোর বউয়ের জোরে করছিস।

এর মধ্যে যুথিকে কেন টানছো মা।ও তো কিছু বলেনি।আর আমি কৈ’ফি’য়’ত চাইছি না।এটা জানার আমার অধিকার আছে। এত কষ্ট করে টাকা রোজগার করে যদি শুনি সেই টাকা অন্যরা নিয়ে গেছে তাহলে নিশ্চই এটা শুনে আমার ভালো লাগবে না।

সে যাই হোক এই টাকা গুলোতো আর ফেরত আসবে না। একাউন্টে তো আরো টাকা আছে। ঐখান থেকেই নিয়ে কাজ শুরু করবো। ঐ খান থেকেই দেও।

চে’ক এ সাইন করে দাও কাল সকাল সকালই বের হবো।ঐখান থেকে আসার সময় উঠিয়ে নিয়ে আসবো।

ইরহান মায়ের কথা শুন।এসব ব্যবসা বা দেশে কাজ করার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল।দেখলিতো মানুষ কিভাবে ঠ’কায়। আর এসব করে যে সফল হবি তা ও তো না।শুধু শুধু কেনো টাকা গুলো নষ্ট করবি। আমার অবাধ্য তো তুই ছিলিনা কখনো ইরহান তাহলে আজ কেনো আমার কথা শুনছিস না?

যা বলছি ঠান্ডা মাথায় ভাব।

ইরহান তার মায়ের দিকে তাকায়। তারপর এসব কথায় পাত্তা না দিয়ে বলে উঠে,,,, চে’ক বই টা কোথায় আছে মা?

তাছলিমা বানু রা’গী চোখে ইরহানের দিকে তাকায়।

নিশ্চই তোমার রুমে। আমি খুঁজে নিয়ে আসছি। বিছানার পাশে রাখা টেবিলের ড্রয়ারে নিশ্চয়ই আছে।ঐ খানেইতো কাগজপত্র রাখো। বলেই ইরহান তাছলিমা বানুর রুমে চলে যায়।

এই দিকে তাছলিমা বানু জোরে জোরে ইরহান কে ডাকছে।
ইরহান অনেক হয়েছে অনেক বাড়াবাড়ি করছিস।এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।

এরপর আমি যা করবো সেটা তুই কল্পনা ও করতে পারবিনা। এতোদিন যেটা না করেছি এখন আমি সেটাই করবো।
—————-

ইশান এবার তার মায়ের সাথে রে’গে রে’গে বলে,,ওকে এতো তে’ল মেরে কেন বোঝাচ্ছো? সে কি তোমার কথা শুনছে? দেখেছো কতো বড় সাহস আমাদের সাথে উঁচু গলায় কথা বলে। ইচ্ছে তো করছে কয়েকটা লাগিয়ে দেই।ইমন ভাইয়ের জন্য পারিনি।

মা তুমি এখনো চুপ করে থাকবে? কোনো ব্যবস্থা নিবে না? টাকা রোজগার করে সা’পের পাঁচ পা দেখেছে।দেখেছো দুই দিনে কি রকম রং পাল্টে ফেলেছে।আগে তোমার কথায় উঠতো আর বসতো।তুমি এতো করে বলতেছো তোমার কথা শুনছে?

এসব টাকা পয়সা ও রোজগার করলেও এখন এসবের প্রতি ওর কোনো অধিকার নেই।তুমি কিছু করো মা।এদের আর আমার সহ্য হচ্ছে না। ইচ্ছে করছে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বিদেয় করতে।

এইই ইশান মুখ সামলে কথা বলবে বলে দিলাম।ভুলে যেওনা কাকে কি বলছো।যার টাকায় জীবন চলে তাকে এসব বলার সাহস পাও কোথায় তুমি? নিজের তো দুই টাকা ও রোজগার করার মো’র’দ নাই আবার বড় বড় কথা!

যেই প্লেটে খাও সেই প্লেটে ফোটা করতে একবার ভাবে না। ছিঃ লজ্জা হওয়া দরকার আরেকজনের ঘা’ড়ে চ’ড়ে খাচ্ছো এমনিতেই তো মুখ লুকিয়ে চলার কথা। আবার সে গলা উচিয়ে কথা বলে। এক পয়সা কামানোর যার কা’ম্য নয় সে এতো বড় কথা বলে মানুষ শুনলে হাসবে।

বে’হা’য়া নির্লজ্জ পুরুষ। ঘরে চুড়ি পরে বসে থাকো। বলেই যুথি ইশানের দিকে রা’গী চোখে তাকায়।

যুথির কথা গুলো ইশানের শরীরে গরম তেলে পানি পরার মতো লাগে। এমনিতেই রা’গে মাথা ফেটে যাচ্ছে তারউপর যুথি এসব বলায় আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না ইশান।

যুথির দিকে তে’ড়ে যেতে যেতে বলে,,,ফ”কি’ন্নি’র বা”চ্চা তোর এতো সাহস তুই আমাকে কথা শুনাস?বলেই হাত উচিয়ে যুথি কে চ’ড় মারতে যায়।

হুট করে ইশান এগিয়ে আসায় যুথি চোখ বন্ধ করে ফেলে।
চোখ বন্ধ অবস্থাতেই ঠা’স করে চ’ড় দেওয়ার আওয়াজ হয়।কিন্তু সেটা যুথির গালে না।যুথি চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখে ইরহান ইশানের হাত মুচড়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। চ’ড় টা যে ইরহান ইশানের গালে দিয়েছে সেটা আর বুঝতে বাকি নেই।

ইরহান ইশানের হাত আরো জোরে মোচড় দিয়ে ধরে বলে তোর সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাই।তুই আমার বউয়ের গায়ে হাত তুলতে যাস?

এখন যে চড় টা মারলাম না তোকে? এটা আরো আগে মারা দরকার ছিলো। ওর দিকে যেখানে চোখ তুলে তাকানোর কথানা। সেখানে তুই ওর গায়ে হাত তুলতে যাস?

আমার টাকায় বসে বসে খেয়েতো শুধু ব’য়’লা’র মুরগির মতো ফুলেছিস।এই শক্তি নিয়ে তুই যুথি কে মারতে আসিস?আমার হাত দেখেছিস খেটে খাওয়া মানুষের হাত।এই হাত যেমন আদর,স্নেহ দিতে জানে তেমনি অন্যকে শাস্তি দিতেও জানে।বলেই ইরহান ইশান কে একটা জোরে ধাক্কা মারে। ইশান ছিটকে গিয়ে কয়েক হাত দূরে পরে।

#চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here