#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ৬
#Jhorna_Islam
প্রতিটি ভোর মানে একেকটা নতুন দিনের সূচনা।পাখির কিচিরমিচির ও মোরগের ডাকে ঘুম ভেঙে যায় যুথির। চোখ পিটপিট করে তাকায়। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে।
পাশে তাকিয়ে দেখে ইরহান গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। হয়তো শীত করছে।ভোর হলে এমনিতেও শীত শীত ভাব থাকে।
যুথি পাশে থাকা কাঁথাটা ইরহানের গায়ে ভালো করে দিয়ে দেয়। তারপর ইরহানের দিকে কিছু সময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে।
কাল ইরহানের বুকে পরে যখন যুথি কাঁদছিলো,,ইরহান তখন কতো শান্তনা দিতেছিলো।মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে ছিলো। কখন যে যুথি তার বোকা পুরুষের বুকে পরম শান্তিতে সে ঘুমিয়ে গিয়েছিল সে নিজেও জানেনা।
এখন সময় ভোর সাড়ে পাঁচটা যুথি উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়। দাঁত মেজে হাত মুখ ধুয়ে বের হয়ে আসে। তারপর নামাজ টা পরে নেয়।এখন কেমন শান্তি শান্তি লাগছে। বাইরে গিয়ে হাটাহাটি করতে মন চাচ্ছে। কারণ যুথি প্রতিদিন খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে। তারপর একটু ঘুরতে বের হয়।
ঘুরে এসে রান্না বান্না করে। যুথির দাদি অন্যর বাড়িতে কাজ করতে চলে যায়। তাই বাড়িতে সব যুথিকেই করতে হয়। যুথি কতো করে দাদিকে বলতো এবার তুমি কাজ করা বাদ দাও দাদি বিশ্রাম নাও।অনেক তো কাজ করেছো।এবার আমি কিছু করি।
দাদি তখন বলতো খবরদার যুথি এমন চিন্তা মাথায় আসলেও ঝেড়ে ফেল।আমি যতোদিন আছি ততোদিন মানুষের বাড়িতে তোকে কাজ করতে দিবো না।
যুথি তখন বলতো আমিকি বলেছি তোমায় মানুষের বাড়িতে কাজ করবো?
যুথির দাদি কথা শোনা তো দূর কিছু বলতেই দিতো না।এটা বোঝাতে পারতো না যুথি যে কোনো ভালো কিছু করতে পারবে।
কালকের রাখা প্লেট নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে যুথি। আশে পাশে তাকিয়ে রান্না ঘরের দিকে চলে যায়। এখনো একটা ও ঘুম থেকে উঠে নি।
যুথি কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। এমন করে বসে থাকতে ও ভালো লাগছে না।
সকাল সকাল উঠলে এমনিতেই তারাতাড়ি খিদে লেগে যায়।
বাড়ির কারো উঠার নাম গন্ধ নেই।আটটা নয়টার আগে যে কেউ ঘুম থেকে উঠবেনা বুঝে গেছে যুথি।সব গুলো জ’মি’দারের বে’টি।
এদের কথা না ভেবে নিজেদের জন্য সকালের নাস্তা তৈরি করে আগে খেয়ে নিবে ঠিক করে নেয়। তারপর ভাবতে থাকে কি করা যায়। তখনই চোখের সামনে আটার ব’য়াম দেখতে পায়। ভেবে নিলো পরোটা আর ডিম ভেজে নিবে।অন্য কিছু করতে গেলে বেশি সময় লাগবে এখন আপাতত এগুলোকে দিয়ে পেট ঠান্ডা করবে। যেই ভাবা সেই কাজ ঝটপট আটা গুলিয়ে দুই জনের জন্য চারটা রুটি বেলে নেয়।তারপর ফ্রিজ থেকে দুটো ডিম নিয়ে ভেজে নেয়। পরোটা আর ডিম ভেজে রান্না ঘর টা আগের মতো গুছিয়ে রাখে যেনো বুঝাই না যায় এখানে অন্য কেউ রান্না করেছে।
খাবার নিয়ে নিজেদের রুমের দিকে যেতে যেতে মনে মনে আওড়ায় তোমরা আমাদের কথা ভাবোনি আমিও ভাববো না।তোমরা যদি ভালো হইতা এতোসময়ে আমি সব করে তোমাদের মুখে খাবার ধরতাম।ঘুম থেকে উঠেই সামনে খাবার পাইতা।
খাবার নিয়ে রুমে ঢুকে দেখে ইরহান রুমে নেই।বাথরুম থেকে পানির শব্দ ভেসে আসছে। যুথি প্লেট টা রেখে খাটে বসে । কিছু সময় পরই ইরহান বেরিয়ে আসে যুথির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
খাবারের প্লেটের দিকে চোখ পরতেই বেশ অবাক হয়। এতো সকাল সকাল খাবার? সবাই উঠে গেছে? কিন্তু ওদের তো নয়টার আগে কারো ঘুম ই ভাঙে না।
আমি করে নিয়ে এসেছি। ওরাতো ন’বা’বের বংশের লোক। আসেন খাবেন একদম ওদের কথা আর ভাববেন না।
এখন খেতে ইচ্ছে করছে না যে।
আসেন আমি খাইয়ে দিচ্ছি। তারপর একটু বাইরে থেকে দুজন ঘুরে আসবো। এটুকুই তাছাড়া খেতে অনেক দেরি আছে এগারোটার আগে যে খাবার জুটবে না জানা আছে।
ইরহান আর কিছু বলেনি দুইজন এক সাথে খেয়ে নেয়। তারপর বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে হাঁটার জন্য।
দুইজন সকালের পরিবেশ উপভোগ করছে নানান ধরনের কথা বলছে। কথার এক পর্যায়ে ইরহান জানায় সে ঠিক করে এসেছিলো দেশ ছেড়ে আর যাবে না।
অনেক তো অন্য দেশে ছিলো এখন নিজের দেশেই কিছু একটা করার চিন্তা ভাবনা।যদিও তার মাকে ছাড়া এই বিষয় টা কাউকে বলেনি। তাছলিমা বানু কে বলার পর চুপ ছিলো কিছু বলেনি। দেশে আসার পরের দিন টুকটাক কথা বলার মাঝখানে বলেছিলো। টাকা পয়সা তো অনেক করেছে।ব্যাংকে যে টাকা আছে তা দিয়ে অনায়াসে কিছু একটা করতে পারবে।
যুথি সব শুনে বলে,,টাকা তো সব ব্যাংকে তাই না?
— হুম।
— কার নামে?
— ইরহান বলে মায়ের নামে।
যুথি তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।আপনার কি মনে হয় উনি টাকা দিবে আপনাকে?
— ইরহান থমকে যায়।আসলেই তো দিবে না। কাল তো টাকা পয়সা নিয়েই ওরা ভাগাভাগি করছিলো।তাছলিমা বানু তো স্পষ্ট বলল সব তার নিজের নামে করেছে যেনো ইরহান না পায়।
ইরহানের ভাবনার মাঝেই বলে৷ উঠে,,,, এখনো বুঝলেন না আপনার সাথে এখন কেন এমন ব্যবহার করছে? আপনি দেশে থেকে যাবেন।তাদের আর বিদেশি টাকা পয়সা পাওয়া হবে না। আপনার টাকায় রাজত্ব করতে পারবে না।আপনি দেশে থাকলেই তো সমস্যা সব কিছু তে ভাগ বসবে।
আপনাকে মিথ্যা বলে নানান অজুহাত দিয়ে টাকা পয়সা নিতে পারবে না।
জানি আপনি আর একটা টাকা ও পাবেন না ওদের থেকে। তবুও আজই সুযোগ বুঝে চেয়ে দেইখেন।
তারপর দুইজন বাড়ির রাস্তা ধরে।
—————————————————–
বিকেলের দিকে ইরহান সকলের উপস্থিতি তে তাছলিমা বানুর কাছে গিয়ে বলে,,তার আর প্রবাস যাওয়ার চিন্তা ভাবনা নেই।দেশেই ছোট খাটো একটা ব্যবসা করবে।তাকে যেনো ব্যাংক থেকে তিন লাখ টাকা দেয়।
ইরহানের কথা শুনেই তাছলিমা বানু আঁতকে উঠে। অদ্ভুত দৃষ্টিতে দুই ছেলের দিকে তাকায়। ওরাও কেমন করে তাকিয়ে আছে।
টাকা চাই মানে? তুই কি বলছিস ইরহান? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর?
মাথা খারাপের কি আছে মা? আমি দেশেই কিছু একটা করতে চাইছি স’ন্দিহান গলায় বলে ইরহান।
দেশে তুই কোন রাজ কার্য উদ্ধার করবি শুনি? এসব ভূ’ত মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। সুখে থাকতে ভূ’তে কিলায় না? চুপচাপ ছুটি শেষে চলে যাবি মন দিয়ে কাজ করবি।
মানে কি মা? আমি আর দেশের বাইরে যাবোনা ঠিক করেছি। আমি দেশে থাকবো এতে তো তোমার খুশি হওয়া দরকার তাই না?
তাছলিমা বানু ইরহানের কথায় হকচকায়। আরো কিছু বলতে নিবে তখনই ইরহানের ফোন টা বেজে উঠে।
ইরহান কথা থামিয়ে ফোন হাতে তুলে দেখে বিদেশ থেকে সে যে কোম্পানি তে কাজ করে সেই কোম্পানির ম্যানেজার ফোন করেছে।হয়তো জরুরি কিছু তাই ইরহান বলে আমি একটু আসছি বলেই নিজের রুমে চলে যায় কথা বলার জন্য।
তাছলিমা বানু এই সুযোগে যুথির কাছে এগিয়ে আসে।যুথি এতক্ষন একটা কথা ও বলেনি।চুপচাপ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।
তাছলিমা বানু যুথিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে,,, নিজের স্বামী কে বোঝায় মেয়ে।এমন বো’কামো করতে বারণ করো।দেশে কিছুই করতে পারবে না। বিদেশি ড’লার কামাবে।দেশে আর কয় টাকা পাবে? নুন আনতে পান্তা ফুরাবে। কিন্তু ঐদেশে ফিরে গেলে রানীর হা’লে থাকতে পারবে।
ভালো করে বুঝাও।নয়তো পস্তাতে হবে।খুব ভালো হবে না। এর জন্য আগেই বলছি চুপচাপ বলো আমি যা বলছি যেন মেনে নেয়। নয়তো এই তাছলিমা বানু কি করতে পারে তা তোমাদের ধারণার ও বাইরে।
যুথি তাছলিমা বানুর দিকে তাকিয়ে রয়।
#চলবে,,,,,,,
আজকে এতটুকুই। একটু বি’জি আছি।কাল ধা’মাকা আছে।🤭