অবহেলিত ভালোবাসা শেষ_পর্ব

0
1476

অবহেলিত ভালোবাসা
শেষ_পর্ব
Writer:Shakif Arefin

তাসু নীল কে দেখে জিজ্ঞেস করে __কি হয়েছে আপনার.?? এমন দেখাচ্ছে কেন..??কিছু হয়েছে..?? নীল এক ফালি মুচকি হেসে বলে__ নাহ..আমার কিছুই হয় নি।তাসু বলে__ তাহলে আপনাকে এমন চিন্তিত দেখাচ্ছে কেন..?? মনে হচ্ছে দুনিয়ার সব চিন্তা পেরেশান আপনার মাথায় এসে পড়ছে…??নীল বলে__আজ অফিসে কাজের খুব চাপ গেছে,, হয়তো এর জন্য এমন দেখাচ্ছে। আচ্ছা তুমি আমার জন্য পানি নিয়ে আসো খুব তৃষ্ণা পেয়েছে।

__এরপর নীল চলে যায় তার রুমে৷বসে আছে চিন্তিত মনে। মাহিরার কথা গুলো নীল কে খুব ভাবাচ্ছে। সত্যি সত্যি মাহিরা উল্টো পাল্টা কিছু করবে না তো.??এমন হাজারো প্রশ্ন নীলের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। তাসু দরজা টা আটকিয়ে নীলের জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে যায়। তাসু দেখে নীল এখনো সোফায় বসে আছে।ফ্রেশ পর্যন্ত হয় নি।অফিস থেকে আসার পর ড্রেস টাও চেঞ্জ করে নাই। আনমনে কি যেন ভেবে যাচ্ছে।

__তাসু বলে__ আপনার পানি। তাসুর কথায় নীল ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে।নীল তাসুর হাত থেকে পানির গ্লাস টা নিয়ে এক ঢোকে পুরো পানি খেয়ে নেয়। তাসু বলে_ পানি আরো দিবো.??নীল বলে__ না আর লাগবে না।তাসু গিয়ে নীলের পাশে বসে বলে__ আচ্ছা আপনি সত্যি করে বলেন তো আপনার কি হয়েছে…??অফিস থেকে আসার পর থেকে দেখছি কি নিয়ে যেন আপনি খুব পেরেশানে আছেন।

__নীল তাসুর মুখের দিকে মায়াবী চোখে তাকিয়ে আছে। নীল ভাবে __ তাসু কে মাহিরার কথা কিছুই বলা যাবে না।বললে হয়তো শুধু শুধু পেরেশানি করবে। আমি তোমাকে আর কোন কষ্ট পেতে দিবো না।তাসু বলে__ এভাবে তাকিয়ে থেকে কি ভাবছেন..?? কি হয়েছে সেটা বলবেন তো..??নীল বলে __সত্যি বলছি আমার কিছুই হয় নি।কাজের খুব চাপ গেছে তো তাই একটু খারাপ লাগতেছে। একটু রেস্ট নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

__তাসু বলে__ বেশি খারাপ লাগতেছে ..?? বেশি খারাপ লাগলে বলেন আপনার শরীর টা টিপে দেই ভালো লাগবে।নীল বলে__ না লাগবে না,, এমনেতেই ঠিক হয়ে যাবে।তাসু আর কিছু না বলে চলে যায় রান্না করতে। নীলের হঠাৎ করে কি হয়ে গেলো তাসুও ঠিক বুঝতে পারছে না।তাসু ভাবে__ রাতের জন্য কি উনি আমার উপর রেগে আছে ..??রাতের জন্য এমন করলে তো চিন্তিত দেখা তো না।

__এদিকে নীল ফ্রেশ হয়ে এসে মাহিরা কে একবার ফোন দেয়।কারণ মাহিরার সাথে কথা বলে তাকে বোঝিয়ে সব কিছুর সমাধান করতে হবে। কিন্তু মাহিরার ফোন বন্ধ বলছে। বারবার ফোন দেওয়ার পরেও একই কথা বলছে যে ফোন বন্ধ আছে। নীলের পেরেশান যেন আরো বেড়ে গেলো।রান্না শেষ হওয়ার পর তাসু এসে খেতে বলে নীল কে।

__নীল বলে__ তুমি যাও আমি আসছি। একটু পর নীল খেতে বসে।কোন কিছুই যেন আজ নীলের কাছে ভালো লাগছে না।এমন কি খেতেও ভালো লাগছে না।নীল প্লেটে কিছু খাবার নিয়ে তাসু কে বলে__ তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন..?? খেতে বসো।নীল কে আজ অন্য রকম লাগছে তাই তাসু কিছু না বলে চুপচাপ প্লেট নিয়ে খেতে বসে।নীল অল্প কিছু খেয়ে উঠে চলে যায়। তাসু কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না।এর আগেই নীল উঠে চলে যায়।

__রাতে নীলের ঘুম আসছে না।মাহিরা হয়তো ঠিকই বলেছিল__যে নীলের রাতের ঘুম হারাম করে ছাড়বে।সত্যি আজ নীলের চোখের ঘুম কে এক কথায় মাহিরা কেরে নিয়েছে।

__এভাবে চিন্তার মধ্য দিয়ে নীলের কেটে যায় আরো দুই দিন। এই দুই দিনে নীল মাহিরার সাথে দেখা করা বা যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছে বাট কোন টাতেই সফল হয় নি।নীল চলে যায় অফিসে। কাজ করতে থাকে নিজের ল্যাপটপে।তাসুও নীল কে অফিসে পাঠিয়ে নাস্তা করে বাসার টুকটাক কাজ করতে থাকে। এরই মধ্যে কলিংবেলের শব্দে তাসুর বুক টা কেঁপে উঠে। তাসু ভাবে এমন সময়ে আবার কে আসতে পারে। উনি তো মনে হয় এতোক্ষণে অফিসে পৌঁছে গেছে।আবার ফিরে আসলো না তো..??

__এসব আর বেশি কিছু না ভেবে তাসু গিয়ে দরজা খুলে দিতেই অবাক হয়ে যায়। দুই জন মাস্ক পরিহিত ব্যক্তি সাথে সাথে তাসু কে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে দরজা আটকিয়ে নেয়। তাসু আশ্চর্য হয়ে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে__এই আপনারা কারা..?? আমার বাসায় এভাবে আসছেন কেন..??দরজা আটকিয়ে তাসু কে আর কোন কথা বলতে না দিয়ে ছেলে দুই জন তাসু কে থাপ্পড় দিয়ে ফেলে দেয়। এতে তাসু আরো ভয় পেয়ে যায়। কাঁদতে শুরু করে দেয়,, ভয়ে ধম বন্ধ হয়ে আসছে। তাসু কে মারতে গেলে তাসু উঠে নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করে।দৌড়ে চলে যেতে চায় অন্য রুমে কিন্তু সাথে সাথে ছেলে দুই জনও রুমে চলে যায়।

__তাসুর চুলে ধরে ইচ্ছে মতো মারতে থাকে। এলোপাতাড়ি ভাবে চড়থাপ্পড়,, ঘুসি,, পেটে পিটে লাথি মারতে থাকে। তাসু এখনো বুঝতে পারছে না কেন তাকে এভাবে মারা হচ্ছে। তাসু তাদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু পারে নাই। তাদের পায়ে ধরে অনেক চেষ্টা করেছে বাঁচার জন্য। কিন্তু তারা তাসুর কোন কথাই শুনে নি। কারণ তারা মাহিরার টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। পাশে থাকা ফুলদানি টা নিয়ে তাসুর মাথায় আঘাত করতেই তাসু ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে।মাথা দিয়ে অঝোর দ্বারায় রক্ত পরতে থাকে তাসুর। রক্ত পড়ার কোন বাধ মানছে না।আসতে আসতে তাসুর চোখ দুটি বন্ধ হতে থাকে। চোখে সব কিছু ঝাপসা দেখতে থাকে তাসু।

__ঐ দিকে নীলের কিছু ভালো লাগছে না।আজ নীলের মনটা কেমন অস্থির অস্থির লাগতেছে।কোন কাজই ভালো লাগছে না।মনটা কেমন তাসুর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। নীল আজ অফিস না করে বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। তাই অফিস থেকে ছুটি নিয়ে বাসায় চলে আসে।

__বাসায় এসে নীল কিছু টা আশ্চর্য হয়ে যায়। দরজা টা একেবারে খুলা।নীল ভাবে __তাসু হয়তো দরজা লাগাতে ভুলে গেছে। কিন্তু ঘরে প্রবেশ করে নীল আরো বেশি আশ্চর্য হয়ে যায়। বাসার জিনিস পত্র গুলো কেমন এলোমেলো হয়ে আছে।সব কিছু এদিক সেদিক ছিটে ছাঁটে পড়ে আছে। নীল সব চিন্তা বাদ দিয়ে তাসু কে খুঁজতে থাকে।নীল তাসু কে ডাকতে থাকে কিন্তু কোন সাড়া পাচ্ছে না।নীলের মধ্যে ভয় ঢুকে গেলো। তাসুর আবার কিছু হয়নি তো..??

__এইদিকে তাসু রক্তাক্ত শরীর নিয়ে পরে আছে ফ্লোরে। তাসুর গলায় পা দিয়ে চেপে ধরাতে তাসু কথা বলতে পারছে না।নীল কে জোর করে ডাকতে গেলে কণ্ঠনালীতে আঘাত পাওয়ায় কথা আটকে যাচ্ছে। তাই নিচে পরে থাকা ফুলদানির এক খন্ড টুকরো নিয়ে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দেয় তাসু। যেন নীল বুঝতে পারে এই দিকে কেউ আছে। নীল কিছু একটা পরে যাওয়ার শব্দ শুনে দৌড়ে সেই দিকে যায়।

__নীল সেখানে গিয়ে তাসুর এই অবস্থা দেখে নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না।পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। নিমিষেই কান্নায় ভেঙ্গে পরে নীল। নীল গিয়ে জড়িয়ে ধরে তাসুকে। তাসু একটু একটু করে চোখ মেলে নীলের দিকে তাকায়। নীল কে জড়িয়ে ধরে তাসু।নীল জিজ্ঞেস করে কিভাবে এমন হলো কিন্তু তাসু কিছুই বলতে পারছে না।বারবার কথা বলার চেষ্টা করার পরেও বলতে পারছে না।মুখে শুধু ইশারা করে যাচ্ছে। নীল আর এক মহূর্তও দেরি না করে সোজা হসপিটাল নিয়ে যায়।

__ডাক্তার এসে তাসু কে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যায়। তাসুর চিকিৎসা শুরু হয়ে যায়। নীল অপারেশন রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। নীলের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কাঁদতে কাঁদতে চোখ দুটি লাল করে ফেলছে।নীল বারবার উঠে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।নীল তার বাবা মার কাছে ফোন করে সব জানিয়ে দেয়। তারা কথা টা শুনে বিশ্বাস করতে পারছে না।দ্রুত তারা হসপিটালের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেয়। নীল বুঝতে পেরে যায় যে এটা মাহিরার কাজ ছাড়া অন্য কারোর কাজ না।মাহিরা ঠিকই বলেছিল সে নীলের হতে না পারলে কাউকে নীলের হতে দিবে না।

__ নীলের বাবা মাও দ্রুত হসপিটাল এসে পৌঁছে যায়। নীল তাদের কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। নীলের বাবা নীল কে জড়িয়ে ধরে শান্তনা দিতে থাকে। নীলের বাবা জিজ্ঞেস করে__ তাসনুভা কোথায়..? নীল কেদে কেদে বলে__ বাবা আমার তাসু এটার ভিতর আছে। বাবা ডাক্তার এখনো আসছে না কেন..??তাসু এখন কেমন আছে কিছু বলছে না কেন..?? নীলের বাবা বলে__ বাবা তুই কোন চিন্তা করিস না তোর তাসুর কিছু হবে না একটু ধৈর্য ধর।

_কিছুক্ষণ পরই দুই জন ডাক্তার অপারেশন রুম থেকে বেরিয়ে আসে। তাদের দেখে নীল দৌড়ে তাদের কাছে যায়। নীল বলে__ ডাক্তার আমার তাসু এখন কেমন আছে,, ভালো হয়ে গেছে তো..?কি হলো আপনি কিছু বলছেন না কেন..?? নীল তাসুর কাছে যেতে চাইলে ডাক্তার বলে__ আপনি শান্ত হোন।আপনার স্ত্রীর খুব সিরিয়াস অবস্থা। মাথায় প্রচন্ড আঘাত পরার কারণে মস্তিষ্কে সমস্যা হয়েছে।আর কন্ঠ নালী দিয়ে প্রচুর রক্ত বের হয়েছে। আমরা যতোটুকু সম্ভব চিকিৎসা করেছি রক্ত দিচ্ছি

_কথা টা শুনে নীল মাথায় হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পরে। তাসুর এমন অবস্থা টা নীল মেনে নিতে পারছে না।নীলের মা বাবা নীল কে ধরে নিয়ে বেঞ্চে বসায়।ডাক্তার বলে_ মিস্টার নীল! আপনি পাগলামো শুরু করছেন কেন..?? আপনি প্লিজ শান্ত হোন।আপনি আপনার স্ত্রী কে যত সম্ভব পারেন কালকের মধ্যে কলিকাতা নিয়ে যান। সেখানে আপনার স্ত্রীর ভালো অপারেশন করা হবে। আমরা সেখানকার ডাক্তারের কথা বলে নিচ্ছি। আপনারা যে কোন একজন আমার সাথে আসুন।

__নীলের বাবা ডাক্তারের সাথে চলে যায় কথা বলার জন্য। নীল এখনো বসে কাঁদতে থাকে। আসতে আসতে তাসুর কাছে যায়। তাসু বেডে শুয়ে আছে এখনো জ্ঞান ফিরে আসে নি।ডাক্তার বলছে চার ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরে আসবে।নীল তাসুর পাশে বসে অশ্রুভেজা চোখে তাকিয়ে আছে। তাসু কে যত দেখছে তত বেশি নীলের চোখ দিয়ে পানি পরছে। তাসুর পুরো মাথা ব্যান্ডেজ করানো।গলায়,,মুখে,, হাতেও ব্যান্ডেজ করানো।তাসুর হাত জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে নীল।

_বিকাল ছয় টা বেজে গেছে তাসুর এখনো জ্ঞান ফিরছে না।এইদিকে ডাক্তারের সাথে কথা বলে তাসু কে কলিকাতা নিয়ে যাওয়ার জন্য সব কিছু ইমারজেন্সি ভাবে করা হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে তাসুর জ্ঞান ফিরে আসে।তাসু চোখ খুলে দেখে নীল তার পাশে বসে আছে। তাসুর জ্ঞান ফিরে আসছে দেখে নীল যেন তার নতুন জীবন ফিরে পেয়েছে। এতোটাই আজ খুশি হয়েছে। তাসু কথা বলতে চাইছে কিন্তু মুখে অক্সিজেন মাস্ক পড়ানো তাই কথা বলছে পারছে না।মাথা টাও যে নড়াচড়া করতে পারছে না।
নীলও মানা করছে যেন কথা বলার চেষ্টা না করে।মাথাটা নড়াচড়া বেশি না করে।তাসু খেয়াল করে তার মানুষ টা আজ খুব কেঁদেছে। চোখ মুখ গুলো ফুলে একাকার হয়ে গেছে।

__রাত প্রায় দশটা বাজে নীল এখনো তাসুর হাত ধরে বসে আছে। তবে নীলের চোখে কান্নার ভাজ দেখতে পাচ্ছে তাসু।তাসু তার এক হাত দিয়ে মুখ থেকে মাস্ক টা সরিয়ে শক্ত করে নীলের হাত ধরে। তাসুর স্পর্শ পেয়ে নীল তাসুর দিকে মায়া ভরা চোখে তাকায়। নীল শান্ত গলায় বলে__ মুখ থেকে মাস্ক সরালে কেন.? কিছু বলবে…??তাসু মাথা নাড়িয়ে বুঝিয়ে দেয় যে কিছু বলতে চায়। তাসুর কথা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে তারপর বলার চেষ্টা করছে। তাসু বলে__ আপনি কাঁদছেন কেন…?? নীল কিছু বলছে না নিরব হয়ে গেছে। তাসু বলে__ আপনি কাঁদবেন না। আপনার চোখ থেকে পানি পড়াটা মানায় না।

___ হয়তো চোখ থেকে পানি পড়া টা আমাকেই মানায়। সুখ তো কখনো পায় নি সব সময় দুঃখ টাই আমার পাশে ছিল। তাই তো আজ দুঃখ টাই আমার সঙ্গী।নীল বলে__ তাসু তুমি এখন এতো কথা বলো না।সমস্যা হবে ডাক্তার কথা বলতে মানা করেছে।তাসু বলে__ আমি আর এতো কষ্ট সহ্য করতে পারছি না।জানেন আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি মনে হয় আর বেশিক্ষণ বাচবো না মরে যাবো।মাথা টা খুব যন্ত্রণা করছে। নীল আশ্চর্য হয়ে বলে__ কি বলছো এসব..??তোমার কিছুই হবে না।ডাক্তারের সাথে কথা বলে রেখেছি কালকেই তোমাকে কলিকাতা নিয়ে যাবো ভালো অপারেশন করার জন্য।

__তাসু বলে__ তার মনে হয় আর প্রয়োজন হবে না।নীল বলে__ কি সব আবোল তাবোল বলছো..?? প্লিজ তাসু এসব বলা বন্ধ করো।তাসু বলে__আপনি আমার কাছে একটু ভালোবাসা চেয়েছিলেন কিন্তু আমি দেয় নি।এর জন্য আমি আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। নীল বলে__তাসু এখন এসব বলার সময়..??প্লিজ তুমি এটা মুখে দাও।তাসু নীল কে আটকিয়ে বলে__শুনেন না..? শেষ বারের মতো আপনি আমার একটা কথা রাখবেন..?? নীল বলে_ হুম বলো..?তাসু বলে__ আমি তো আর আপনার কাছে থাকবো না।আপনি আমার কাছে একটু ভালোবাসা চেয়েছিলেন দেয় নি।তার জন্য আপনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন।আপনি মাহিরা আপু কে বিয়ে করে নেন।আপনারা খুব সুখে থাকবেন। মাহিরা আপু আপনাকে অনেক ভালোবাসে।

__মাহিরার কথা শুনে নীলের রাগ উঠে যায়।আজ মাহিরার জন্য তাসু এখানে শুয়ে আছে।তাসু এখনো জানে না তার এই অবস্থা টা মাহিরা করেছে। নীলের কাছে প্রমাণ না থাকাতে নীল মাহিরার কিছু করতে পারছে না।আর যারা তাসুর এই অবস্থা করেছে তাসু তাদের কারোর-ই চেহারা দেখে নি।তারা কারা তার কিছুই বলতে পারছে না।

তাসু বলে__ বলেন না..? আপনি মাহিরা আপু কে বিয়ে করবেন।নীল বলে__ তাসু তুমি কি পাগল হয়ে গেছো…?? যে আমি তার মতো একজন বাজে মেয়ে কে বিয়ে করবো।আমি তোমাকে ভালোবাসি তোমাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে আমার জীবনে চাই না বুঝছো তুমি..?? নীলের কথা টা শুনে তাসুর মুখে একটু খুশির হাসি ফুটে উঠে।

__তাসু বলে__ আপনি আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবেন..?? আপনার একটু স্পর্শ পেতে খুব ইচ্ছে করছে। প্লিজ একটু জড়িয়ে ধরেন…??আজ কে আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।তাসুর কথা গুলো আজ কেমন অন্য রকম লাগছে। মনে হচ্ছে শেষ বারের মতো কথা গুলো বলছে। নীলের চোখ দিয়ে পানি পরছে।কষ্টে কলিজা টা ফেটে যাচ্ছে। তাসু বলে__ আপনি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন..??আপনি একটু আমাকে জড়িয়ে ধরেন না…??

__নীল কে কাঁদতে দেখে তাসু নীলের চোখের পানি মুছে বলে~ তুমি কাদবে না।তোমাকে কাঁদতে দেখলে আমার আরো বেশি কষ্ট হয়।তুমি আমাকে একটু জড়িয়ে ধরো না..?দেখ এমন যেন না হয় তুমি আমার কাছে আসলে একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কিন্তু তখন আামকে পাওয়ার জন্য আমিই রইলাম না।

__নীল আর তাসু কে জড়িয়ে না ধরে থাকতে পারে নি।আঁকড়িয়ে ধরে তাসু কে নিজের বাহুডোরে।নীলের স্পর্শ পেয়ে তাসু আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে নীল কে।আজ তাসু কাঁদছে,, ইচ্ছে মতো ঠুকরে ঠুকরে কাঁদছে।তাসু বলে__ আপনি আমাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরেন। প্লিজ আমাকে কোথাও ছেড়ে যাবেন না। নীল তাসুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে বলে __হুম তোমাকে আমি কোথাও ছেড়ে যাবো না।সব সময় আমার বুকে তোমাকে এভাবে আগলে রাখবো।

__নীল তাসুর কপালে একটু ভালোবাসার পরশ একে দেয়। নীলের ভালোবাসার পরশ পেতেই যেন তাসুর নিশ্বাস সেখানেই বন্ধ হয়ে যায়। নীলের পিঠ থেকে তাসুর হাত দুটো পরে যায়। হ্যা তাসু সবাই কে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।যেখান থেকে আর কেউ কখনো ফিরে আসতে পারে না।তাসুর পুরো শরীর আসতে আসতে ঠান্ডা হতে শুরু করে। নীল এক পর্যায়ে খেয়াল করে যে তাসুর কোন সারা শব্দ নেই। নিশ্বাস ফেলার শব্দ টুকু শুনতে পাচ্ছে না।

__নীল আরো খেয়াল করে তার কাঁধ থেকে তাসুর হাত দুটো পরে গেছে। নীল তাসু কে বেডে শুয়ে রেখে তাসুর মুখে হাত দিয়ে দেখে নিশ্বাস ফেলছে কি না।কিন্তু তাসুর নিশ্বাস ফেলার কোন শব্দ অনুভব করতে পারছে না।নীল কোন দিকবিদিক না পেয়ে বাবা বাবা বলে চিৎকার করতে থাকে। নীলের বাবা এসে দেখে নীল তাসু কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করছে।ডাক্তার আসলে নীল বলে __ ডাক্তার আমার তাসু কথা বলছে না কেন..??নিশ্বাসও তো ফেলছে না। কি হয়েছে আমার তাসুর।

–ডাক্তার তাসুর মুখে হাত দিয়ে চ্যাক করে নিয়ে তাসুর চোখ দুটো চিরতরের জন্য বন্ধ করে দেয়। ডাক্তার বলে__ স্যরি আপনার স্ত্রী আরো অনেক্ষণ আগেই মারা গেছে। কথা টা শুনে নীল বিশ্বাস করতে পারছে না যে,, তার তাসু তাকে এভাবে একা রেখে চলে যাবে।নীলের চিৎকারে পুরো হসপিটাল কেঁপে উঠে। তাসু কে জড়িয়ে ধরে বুকে নিয়ে কাঁদতে থাকে।

__নীল যদি শুরু থেকে তাসু কে এভাবে ভালোবেসে আসতো,, তাসুর ভালোবাসা টুকু অনুভব করতে পারতো। তাহলে আজ হয়তো তাসু কে এভাবে হারাতে হতো না।তাদের ভালোবাসা টুকু অমর হয়ে থাকতো তাদের মাঝে। কোন অপূর্ণ থাকতো না তাদের ভালোবাসা মাঝের।

★পুরো গল্প টা কেমন হয়েছে আশা করি সবাই কমেন্ট করে জানিয়ে যাবেন।কোন বাজে কমেন্ট করে কষ্ট দিবেন না।আজকের জন্য এই জিনিস টা থেকে সবাই দূরে থাকবেন।আর যারা পুরো গল্প টা শুরু থেকে পড়ে আসছেন সবাই কে অসংখ্য ধন্যবাদ। ★

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here