#তীব্র_প্রেমের_নেশা (১১)
#বোরহানা_আক্তার_রেশমী
__________________
ফোন হাতে নিয়েই কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেলো আমার। হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম বিছানায়। জিনিয়া কি বেঁচে আছে? কিন্তু এটা কিভাবে হবে? ‘ও’ তো আমার সামনেই সেদিন! মাথা ঘুরিয়ে উঠলো যেনো৷ আমার ভাবনার মধ্যেই তীব্র শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসলো। আমাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে চুল মুছতে মুছতেই বললেন,
‘সত্যি সত্যি শ্বাস আটকে গেছে নাকি প্রানেশা? এখনই এমন করলে চলবে! আরো কত কিছু দেখার আছে এখনো।’
আমি উনার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলাম। উনি চুল মুছা শেষ করে চুপচাপ এসে আমার থেকে ফোন নিয়ে একপাশে রেখে শুয়ে পড়লেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ঘুমাও!’
কিন্তু আমার চোখ থেকে ঘুম যেনো হাওয়া হয়ে গেছে। তীব্রর কথা অনুযায়ী জিনিয়া বেঁচে আছে। তবে কি আমি এতোদিন ভুল করেছি! তীব্রকে এতো এতো অপমান করেছি শুধু জিনিয়ার জন্য। তার ভালোবেসে করা স্পর্শ গুলো নোং’রা বলেছি। বি’ষাক্ত বলেছি। তীব্র কি এজন্য আমাকে বলতো আমি সত্যিটা জানলে নিজেকে ঘৃ’ণা করবো! তীব্রকে হারিয়ে ফেলবো! শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেনো হিম শীতল হাওয়া বয়ে গেলো। কেঁপে উঠলাম কিছুক্ষণ। নিজের অজান্তেই কি কি করে বসেছি তা ভাবতেই মাথা জ্যাম হয়ে গেলো। বসে রইলাম ওভাবেই। অনেকটা সময় পর যখন সাহস করে তীব্রর মুখের দিকে তাকালাম তখন তার ঘুমন্ত মুখটাই চোখে পড়লো। মানুষটা এতটুকু সময়েই ঘুমিয়ে গেছে। এতদুর জার্নি করে নিশ্চয় ভীষণ ক্লান্ত! আমি আস্তে করে শুয়ে পড়লাম। নীরব হয়ে তার মুখের দিকে শুধু তাকিয়েই রইলাম। পরপর কয়েকবার ঢোক গিললাম। প্রথমদিন থেকে তার এখন পর্যন্ত বলা প্রত্যেকটা কথায় যেনো পরপর মনে পড়লো। বুকের বাম পাশে চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করলাম। এ ব্যাথা কি তীব্রকে হারানোর ভয়ে নাকি অজানা কোনো সত্যর মুখোমুখি হওয়ার ভয়!
___
লিভিং রুমে সবার মাঝখানে বসে আছি। চরপাশ থেকে কয়েকজোড়া চোখ আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। উনাদের এমন দৃষ্টিতে বেশ অস্বস্তি বোধ করলাম। ফাঁকা ঢোক গিললাম কয়েকবার। ছোট মামী, বড় খালা, ছোট খালা, বড় খালার মেয়ে হামিদা আপু আর হাফিজা, ছোট খালার ছেলে রাসেল আর সজীব, মিলি, তিহা, মুন্না, বিপ্লব সবাই আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। একেই তো জিনিয়ার বিষয়টা নিয়ে আমার ভাবনার শেষ নেই তারওপর এদের এমন দৃষ্টিতে আমার জান যায় যায় অবস্থা। আমার ভাবনার মাঝেই ছোট মামি চকচকে চোখ নিয়ে বললেন,
‘মাশাল্লাহ। আপা বউ তো মাশাল্লাহ খুবই সুন্দর আর তীব্রর সাথেও কিন্তু মানিয়েছে খুব।’
উনার কথায় বড় খালা, ছোট খালা এবং বাকি সবাইও তাল মেলালো। আড়চোখে তাকিয়ে দেখলাম আমার শ্বাশুড়ি, বড় মামি আর তানহার মুখটা জ্বলে উঠলো। এত প্রশংসা তাদের মোটেও সহ্য হলো না। আমি মাথা নিচু করে ঠোঁট চেপে হাসলাম। তিহা আগুনে ঘি ঢালার মতো করে বললো,
‘হ্যাঁ ছোট মামি ঠিক বলছেন। আমার ভাইয়া আর ভাবি বেষ্ট।’
ডাইনিং এ বসে তীব্র জুস খাচ্ছিলেন। তিহার কথায় তিনি বিষম খেলেন। তানহা ছুটে গিয়ে পানি ধরলেন তার সামনে। কটমট করে উঠলাম আমি। এরমধ্যেই কেউ একজন বললো,
‘আমার তানহার থেকে সুন্দরী না কিন্তু! তানহা আর তীব্রকেই বেশি মানায়।’
একথা শুনে সেদিকে তাকালাম। একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বেশভূষা ভালোই মডার্ণ। আমি তার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করতেই তানহা ছুটে গিয়ে ‘আপু’ বলে জড়িয়ে ধরে। মিলি নাক মুখ কুঁচকে বলে,
‘আমার এই বড় বোনটাই এই মেজো বোনটারে ন’ষ্ট করে ফেললো একদম। একটারও লজ্জা শরম নাই। অন্যের জামাই নিয়ে টানাটানি! ফা’ল’তু কাজ।’
ওর কথা শুনে হাসি পেলেও নিজেকে সামলে নিলাম। ছোট মামি সবাইকে তাড়িয়ে দিলেন। যে যার মতো উঠে চলে গেলো। তীব্র এতক্ষণ বসে বেশ মজা নিচ্ছিলেন। কিন্তু সবাই যেতেই সে নিজেও বুক টান টান করে উঠে দাড়ালেন। তারপর চুপচাপ সিড়ি ডিঙিয়ে চলে গেলেন। উনার পিছু পিছু তানহা আর ওর বোনও চলে গেলো। সম্ভবত এটাই শোভা। ওরই কয়েকদিন পর বিয়ে। আমি নিজেও তীব্রর পিছু যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই ছোট মামি হাত ধরে আটকে দিলেন। আমার তো তীব্রর সাথে কথা আছে কিন্তু! ছোট মামির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই তিনি চোখ গরম করে বললেন,
‘না খেয়ে কোথায় যাচ্ছো? আগে খেয়ে নাও আসো!’
আমি কিছু বলার আগেই ছোট মামি হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিলেন। খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘সবটা খেয়ে শেষ করো। আমি এখানেই আছি কিন্তু!’
আমি ড্যাবড্যাব করে তাকালাম ছোট মামির দিকে। সে অদ্ভুত ভাবে হেঁসে বললো, ‘কি দেখো? খাও আগে!’
বলেই মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলালেন। ভীষণ কান্না পেয়ে গেলো। ফাঁকা ঢোক গিলে একটু খানি খাবার মুখে দিলাম। সত্যি বলতে এর আগে কখনো আমাকে কেউ এতো যত্ন করে খাওয়ায়নি আর না এতো যত্ন করে মাথায় হাত রেখেছে! যখন ভীষণ কান্না করতাম তখন পলি এভাবে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতো। অনেকদিন পর কারো থেকে ‘মা মা’ গন্ধ পেলাম। ভাবতেই চোখের কোণ ভিজে আসে। মুহুর্তেই গলায় খাবার আটকে যায়। ছোট মামি দ্রুত পিঠে হাত বুলিয়ে পানি খাওয়ায়। আমি কোনো রকমে কান্নাটা গিলে নিলাম। ছোট মামি পাশেই চেয়াট টেনে বসলেন। থুতনীতে হাত রেখে মুখটা উচু করে বললেন,
‘কি হয়েছে মা? চোখ মুখ এমন লাগছে কেনো? মন খারাপ? মনে হচ্ছে কান্না করছো! তীব্র কিছু বলেছে?’
আমি ঠোঁট কামড়ে মাথা দুদিকে নাড়ালাম। ছোট মামি প্লেট নিজের দিকে নিয়ে খাবার আমার দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘খাওয়ার সময় চোখের পানি ফেলতে নেই। ধীরে সুস্থে বলো কি হয়ছে!’
আমি কোনো রকমে বললাম, ‘আসলে আমার মা নেই তো। তাই কখনো কেউ এতো যত্ন করে খাওয়ায়নি, মাথায় হাতও রাখেনি। তার কথা খুব মনে পড়ে গেছে।’
ছোট মামির হাত থেমে গেলো। তিনি একহাত দিয়ে জাপ্টে ধরলেন আমাকে। আমি উনার বুকে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে উঠলাম। ছোট মামি ভাঙা ভাঙা ভাবে বললেন,
‘খাবার সময় একদম কাঁদবে না মেয়ে। আর মা নেই মানে কি! আমি আছি, তোমার শ্বাশুড়ি আছে। তোমার দুই দুইটা মা থাকা স্বত্বেও বলো মা নেই! একদম হাড়গোড় ভে’ঙে দেবো।’
কাঁদতে কাঁদতেই হেঁসে ফেললাম। অনেকটা সময় পর স্বাভাবিক হতেই তিনি আমাকে সবটুকু খাইয়ে দিলেন। ঘড়ির কাঁটায় তখন অলরেডি ৩ টা বাজে। ছোট মামি আমাকে খাওয়ানো শেষ করে বললেন,
‘শোনো কারো কথায় কান দেবে না! তীব্রর সাথে তোমার বিয়েটা ভাগ্যে ছিলো তাই হয়েছে। কে কি বললো! কার সাথে কাকে মানালো এসব কখনোই ভাববে না। শুধু এটুকুই মনে রাখবে তুমি আর তীব্র একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ আছো। তোমরা দুজন একে অপরের পরিপূরক তাই অন্যের কথায় কান দিয়ে নিজেদের মধ্যে অশান্তি করবে না।’
আমি মাথা নাড়ালাম। ছোট মামি রুমে যেতে বললে চুপচাপ চলে আসলাম। তীব্র তখন পায়ের ওপর পা দিয়ে ল্যাপটপে কিছু করতে ব্যস্ত। আমি ধীর পায়ে তার সামনে গেলাম। সে দেখেও না দেখার ভান করে বসে রইলো। আমি নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলাম,
‘জিনিয়া কি সত্যিই বেঁচে আছে?’
উনি ল্যাপটপে মনোযোগ দিয়ে বললেন, ‘তোমার কি মনে হয়!’
‘আমার মনে হওয়া না হওয়া দিয়ে তো কিছু যায় আসে না তাই না! আপনি বলুন জিনিয়া বেঁচে আছে?’
‘ফটো দেখে তো তাই মনে হলো। বাকিটা তুমি সামনাসামনি দেখা করে জেনে নিও কেমন!’
উনাার কথায় চোখ ছোট ছোট করে তাকালাম। উনি উঠে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলেন। আমি সেদিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। উনি বের হলেন একেবারে রেডি হয়ে। আমাকে কিছু না বলে নিজের পার্স, ঘড়ি, ফোন নিয়ে চলে যেতে নিলে জিজ্ঞেস করলাম,
‘কোথায় যাচ্ছেন?’
উনার সহজ জবাব, ‘কাজ আছে।’
আর কিছু না বলেই বেড়িয়ে গেলেন। আমি সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। জীবনটা একদম গোলকধাঁধার মতো হয়ে গেছে।
_________
রাত ১ টা বাজে অথচ তীব্রর পাত্তা নেই। সেই যে গেছে এখনও ফেরেনি৷ আমি পুরো বিকেল থেকে শুরু করে রাত ১০ টা পর্যন্ত তিহা, মিলি, মুন্না, বিপ্লব, হাফিজা ওদের সাথেই ছিলাম৷ এরপর রুমে চলে এসেছি। উনাকে কতবার কলও করেছি। প্রথম কয়েকবার কল গেলেও পরে ফোন সুইচড অফই দেখালেন। পুরো বাড়ির মানুষ ঘুমে কাঁদা অথচ টেনশনে আমার মাথার শিরা উপশিরাও যেনো ব্যাথা করছে। লোকটা গেলো কোথায়! কোনো বিপদে পড়েনি তো আবার! নতুন জায়গার কিছুই তো মনে হয় চিনে না জানে না। আবার নানুবাড়ির সুবিধার্থে হয়তো চিনতেও পারে। কিন্তু সে এখনো কেনো ফিরছে না! মাথা হ্যাং হয়ে গেলো যেনো। আমার ভাবনার মাঝেই দরজায় কড়া পড়লো। আমি ছুটে গিয়ে দরজা খুলতেই আঁতকে উঠলাম। এলোমেলো, বিধ্বস্ত অবস্থায় তীব্রকে দেখে আত্মা কেঁপে উঠলো। তীব্র কোনো শব্দ না করে এলোমেলো ভাবে রুমে ঢুকে পড়লেন। আমি দরজা আটকে কাঁপা কাঁপা হাতে উনাকে ধরলাম। উনি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে। চোখদুটো তে যেনো রক্ত জমে গেছে। সেই রক্তচক্ষুর দিকে তাকিয়ে থাকাার মতো দুঃসাহস বোধহয় আমার নেই৷ ফাঁকা ঢোক গিলে ভাঙা ভাঙা ভাবে বললাম,
‘আপনার এমন বিধ্বস্ত অবস্থা কেনো? কি হয়েছে তীব্র?’
তীব্র যেনো আমার প্রশ্নে জ্বলে উঠলেন। তার শার্টের কোণা থেকে আমার হাত সরিয়ে হুট করেই ঠাস করে থা’প্প’ড় বসিয়ে দিলেন। মুহুর্তেই জ্বলে উঠলো গাল। মাথা ঘুরিয়ে উঠলো। পিটপিট করে তার দিকে তাকালাম। তার ভ’য়ং’কর দৃষ্টি দেখে গলা শুকিয়ে গেলো। উনি রেগে আমার গাল চেপে ধরে বললেন,
‘হাউ ডিয়ার ইউ? কোন সাহসে তুই ফারদিনের সাথে যোগাযোগ করেছিস? কোন সাহসে তুই ওর সাথে দেখা করতে গেছিস? এতো সাহস তোকে কে দিয়েছে?’
উনার রাগী কন্ঠে চমকে উঠলাম আমি। উনি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলেন। নিজের ভারসাম্য রক্ষা করে অবাক চোখে তার দিকে তাকালাম। ব্যাথা ভুলে গেলাম নিমিষেই। তীব্র জেনে গেছে যে আমি ফারদিন ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গেছিলাম! এতো কিছু করেও উনার থেকে বিষয়টা লুকাতে পারলাম না! আর জানলো তো জানলো তাও ২ দিন পরই! আমি নিজেকে সামলে কোনো রকমে তীব্রর কাছে এগিয়ে বললাম,
‘তীব্র আ-আমি…’
‘স্টপ! জাস্ট স্টপ। আর একটাও মিথ্যা কথা বলবে না।’
আমি চুপ মে’রে গেলাম। উনি পুরো সত্যি না জেনে ভুল বুঝলেন আমাকে! আমাদের মধ্যেই কেনো বার বার এতো ভুল বুঝাবুঝি তৈরী হয়! ফাঁকা ঢোক গিললাম। দৃষ্টি এদিক ওদিক করলাম। সেদিন ফারদিন ভাই আমাকে ডেকেছিলো দেখা করার জন্য কিন্তু তাতে আমি না করে দিতেই সে আমাকে যা তা বলেছিলো, অনেকগুলো থ্রেটও দিয়েছিলো। আমি জানি তার সম্পর্কে। শুধু শুধু তো আর তাকে ভয় পাই না। সে সময়ে তীব্রও কথা বলতেন না আমার সাথে তাই তাকে জানানো হয়নি। আর ফারদিন ভাইয়ের সাথে দেখা করেছি শুনলে রেগে যাবে ভেবে আরো বলিনি। কিন্তু ওই ছোট্ট বিষয়টা এতদুর এভাবে গড়াবে বুঝলে তখনই তীব্রকে সবটা বলে দিতাম। গালের ব্যাথায় আর তীব্রর ব্যবহারে চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়ালো। তীব্র নিজেকে শান্ত করতে পারলেন কি না জানি না। কিছুক্ষণ ওভাবে দাঁড়িয়ে থেকেই জিজ্ঞেস করলেন,
‘তোমার বাবা-মা কিভাবে মা’রা গেছে তার কিছু জানো?’
আমি কন্ঠ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে ছোট্ট করে বললাম, ‘শুনেছিলাম এক্সিডেন্টে মা’রা গেছে। এরবেশি কিছু জানি না।’
তীব্র আর কিছু না বলে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে গেলেন। দরজা বন্ধ করতে করতে বললেন, ‘ফারদিনের সাথে দেখা করে যে ভুলটা করেছো তার মাশুল না দিতে হয় আবার!’
তার ঠান্ডা গলার বাণীতে চমকে গেলাম। জ্ঞানশূণ্য হয়ে বসে রইলাম অনেকটা সময়। তীব্র ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লেন। এবং আমাকেও আদেশ বাণী জুড়ে দিয়ে বললেন, ‘লাইট অফ করে এসে শুয়ে পড়ো।’
আমি চুপচাপ লাইট অফ করে জিরো বাল্ব অন করে শুয়ে পড়লাম। তীব্রর দৃষ্টি তখনো আমার দিকে। আমি তার দিকে না তাকিয়েই উল্টো পাশ হয়ে শুয়ে পড়লাম। তখনো চোখ বাঁধ মানেনি। চুপচাপ নিজের মতো বর্ষণ করে যাচ্ছে। অনেকটা সময় পর তীব্র নীরবতার এই পরিবেশকে ছাপিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বললেন,
‘সরি প্রাণ!’
আমি সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে নিলাম। উনার অস্পষ্ট স্বরের সরি তে আরো বেশি কান্না পেলো। কিছু মানুষ হয় না যারা কান্নার সময় আদুরে কন্ঠে কিছু শুনলে বা যে কষ্ট দিয়েছে তার মুখ থেকে সরি শুনলেই কান্নার পরিমাণ দ্বিগুণ হয়! আমিও তাদের মধ্যেই পড়ি। তীব্র বোধহয় জানতেন আমি ঘুমাইনি। তাই সে একদম পাশ ঘেঁষে আসলেন। একহাতে জড়িয়ে নিয়ে নাক মুখ ডুবিয়ে দিলেন ঘাড়ে। মুহুর্তেই কেঁপে উঠলাম। কাঁধে তরল কিছুর ঠান্ডা ছোঁয়া পেলাম। উনি কাঁদছে! বেশ অবাক হলাম। তীব্র ভাঙা ভাঙা ভাবে বললেন,
‘আ’ম সরি প্রাণ। আমি তোমাকে আ’ঘাত করতে চাইনি। এজন্যই তো এতো দেড়ি করে বাসায় ফিরলাম কিন্তু বুঝতে পারিনি তুমি আমার অপেক্ষায় জেগে থাকবে। তোমাকে দেখতেই রাগটা মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো আর রাগের বসে তোমাকে আ’ঘাত করে ফেলেছি।’
উনার কথায় ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করলাম। কিছুটা সময় ওভাবে থাকতেই তীব্র আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন। আমি তখনো চোখ বন্ধ করেই আছি। উনি আমার চোখ মুছিয়ে চোখের পাতায় পরপর দুটো চুমু খেলেন। আমি শক্ত করে আঁকড়ে ধরলাম উনার টি-শার্ট। উনি কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলেন। তার গভীর চুম্বনে আরো একবার কেঁপে উঠলাম। উনি মুহুর্তেই যেনো উন্মাদ হয়ে উঠলেন। পরপর পুরো মুখে পাগলের মতো চুমু দিতে শুরু করলেন। উনার একটা হাত গিয়ে ঠেকলো উদরে। মুহুর্তেই পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। উনার টি-শার্ট আঁকড়ে ধরে রাখা হাতটা আরো শক্ত হলো। এরপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরলেন। উনার হাতের ছোঁয়া দৃঢ় হলো। একেকটা ছোঁয়া যেনো হৃদয় কাঁপানো।
চলবে..