অবহেলিত ভালোবাসা পর্বঃ১১

0
1209

অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ১১
Writer:Shakif Arefin

__তাসু নীলের প্লেটে তাকিয়ে বলে__ এমা..আপনার প্লেটে দেখি কিছুই নাই। তাসু নীলের প্লেটে খাবার দিতে গেলে নীল বলে__ এই আমার প্লেটে আর খাবার দিবানা পেট ভরে গেছে।তাসু আর নীলের প্লেটে খাবার দিলো না।

__ তবে নীল বুঝতে পারছে তাসুর এই টুকু খাবার খাওয়ার কারণ টা কি।তাসু নীলের সামনে সহজে বসে থাকতে পারছে না
যার কারণে হয়তো তাসু এই অল্প পরিমাণ খাবার খেয়েছে।অবশ্য এই সবের একমাত্র কারণ তাসুর প্রতি নীলের খারাপ ব্যবহার আর অবহেলা।
নীল তাসু কে আর কিছু বলে নাই হাত ধুয়ে নিজের মতো রুমে চলে যায়।

__তাসু খাবার টেবিলের সব কিছু পরিষ্কার করে খাবার গুলো ফ্রিজে রেখে ঘুমাতে যাবে এমন সময় তাসু দেখে নীল ল্যাপ্টপ নিয়ে আবার কাজ করতে বসছে।তাসু ভাবে রাত এতো গভীর হয়ে গেছে উনি এখন না ঘুমিয়ে ল্যাপ্টপে আবার কি কাজ করবে..?? কিছুক্ষণ আগে তো অফিসের কাজ শেষ করছে মনে হয়।

__ তাসু দাঁড়িয়ে না থেকে নীলের কাছে গিয়ে বলে__ এতো রাতে আবার ল্যাপ্টপ নিয়ে বসছেন যে..??ঘুমাবেন না..?নীল বলে__ হুম ঘুমাবো একটু লেট হবে।হাতে আরো ত্রিশ মিনিটের মতো কাজ বাকি আছে। তাই ভাবছি মোড যেহেতু ভালো আছে কাজ সেরেই ফেলি।সকালে অফিসে গিয়ে আবার তাড়াহুড়ো করতে ভালো লাগবে না।

__নীল বলে__ তুমি ঘুমাবে না..??তাসু বলে__ হুম আমি তো এখনই ঘুমাতাম। আপনি এখন আবার ল্যাপ্টপ নিয়ে বসছেন তাই জিজ্ঞেস করতে আসছিলাম। নীল বলে__ এখন না ঘুমিয়ে একটা কাজ করতে পারো।তাসু বলে__ কি কাজ শুনি..??নীল বলে__ তুমি এখন না ঘুমিয়ে আমার কাজ না হওয়া পর্যন্ত আমার সাথে বসে আড্ডা দাও।আমার জন্যও একটু ভালো হবে। কাজ টা খুব সহজে করতে পারবো।

__ নীল তাকিয়ে আছে তাসুর মুখের দিকে হ্যাঁ বাচক উত্তর শুনার জন্য। তাসু একটু ভেবে বলে__ হুম থাকা যায়। আচ্ছা আপনি এখন কফি খাবেন..?? কফি বানিয়ে নিয়ে আসি..?? এই মূহুর্তে আমার কফি খেতে ইচ্ছে করছে। নীলের এই মূহুর্তে কফি খাওয়ার মোটেও ইচ্ছে নাই। কারণ নীল সবে মাত্র খাবার খেয়ে আসছে।তবে তাসু যেহেতু এখন কফি খেতে বলছে তাই নীল আর না করে নাই। নীল একটু মুচকি হেসে বলে__ হুম খাওয়াতে পারো।

__ তাসু কিচেনে গিয়ে সাত আট মিনিটের মধ্যে দুই মগ কফি বানিয়ে নিয়ে আসে।নীল কে কফি দিয়ে তাসু দাঁড়িয়ে আছে। সাহস পাচ্ছে না মেয়ে টা নীলের পাশে খাটের উপর বসতে।তাসু কে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীল বলে__ এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন..? বসো আমার পাশে।তাসু কথা টা শুনে অনেক খুশি হয়।তাসুও খুব সাহস করে নীলের পাশে বসে পরে।

___ নীল ল্যাপ্টপে বসে কাজ করছে আর একটু পরপর কফির মগে ঠোঁট লাগাচ্ছে। তাসুও কফি খাচ্ছে আর নীল কি কি কাজ করছে এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে।তাসু বলে__ আচ্ছা আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি..??নীল ল্যাপ্টপে কাজ করতে থেকেই বলে~হুম জিজ্ঞেস করো না.?? কোন সমস্যা নাই।

__তাসু বলে__ আমি কিছু দিন ধরে লক্ষ্য করছি আপনি অফিসে কাজ করার পরেও বাসায় এসে দেরি করেন না আবার ল্যাপ্টপ নিয়ে কাজ করতে বসে যান।আপনার কাছে খারাপ লাগে না..??নীল তাসুর কথা টা শুনে একটু হেসে দেয়। নীল বলে__ নারে পাগলী,, খারাপ লাগলে কি আর সবাই দিনে রাতে এক সমানে কাজ করতো..??এটা যে পরের কাজ সময় মতো কাজ শেষ করে জমা দিতেই হবে।

__নীলের মুখ থেকে পাগলী শব্দ টা শুনে তাসুর বুকে গিয়ে একটু মুচড় দেয়। পাগলী শব্দ টা শুনতে যে তাসুর কাছে ভালোই লাগছে। তাসু তাকিয়ে আছে কাজে মনযোগ দেওয়া মানুষটার দিকে।

__তাসু নীলের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে__ মানুষ টাকে কতো শান্ত লাগে দেখতে। কিন্তু কে বলবে এই মানুষ টার হাতেই আমার মার খেতে হয় কারণে অকারণে।প্রতিদিন এই মানুষ টার অবহেলা সহ্য করে নিতে হয়।কে বলবে এই মানুষ টা ঘরে নিজের স্ত্রী রেখে অন্য মেয়ের সাথে রিলেশনশিপে জড়িয়ে আছে। আমার মনের ভিতর তার প্রতি কি পরিমাণ ভালোবাসা জমে আছে সে কখনো দেখবে না।

__না কখনো জানতে চাইবে আমি তার কাছে কি চাই..?? মাহিরা আপু কে বিয়ে না করেও তার জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। তাহলে আমাকে বিয়ে করেও,, সে কি একটুও ভালোবাসতে পারে না..??

তাসু দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে ভাবে __অবশ্য তার মুখ থেকেই শুনেছিলাম তার জীবনের সব টা জুড়ে নাকি মাহিরা আপু।তাহলে আমি তার কাছ থেকে ভালোবাসা কি করে পাবো..??বিয়ের পর থেকে অপমান,, অবহেলা,, চড়থাপ্পড়,, মার এসবই জুটে এসেছে এই অভাগা কপালে। শ্বশুর শ্বাশুড়ি বা চাচী সবাই হয়তো ভাবছে আমি স্বামীর বাসায় খুব সুখেই আছি। তারা হয়তো জানে না স্বামীর ঘরে আমার বিয়ের পরের জীবন টা কিভাবে কাটতেছে।তারা জানতে পারলে হয়তো কেঁদেই দিবে।

__এসব ভাবতে ভাবতে অজান্তেই তাসুর চোখে পানি চলে আসে। নীল যেন বুঝতে না পারে তাই মুখ মুছার ছলে চোখের পানি গুলো মুছে নেয়।

__নীল বলে__ আর সবচেয়ে বড় কথা হলো __ আমার কাজ দেখে ক্লায়েন্টের যদি পছন্দ হয় তাহলে আমার প্রমোশন হবে সেই জন্যই দিন রাত এক করে কাজ করে যাচ্ছি। তাসু বলে__ চিন্তা করিয়েন না। আপনি আপনার পরিশ্রমের ফল পাবেন ইনশাআল্লাহ।

__নীল তাসুর দিকে তাকিয়ে বলে__ তুমি কিভাবে এতো টা শিওর হলে__ তাসু মুচকি হেসে বলে__ আপনার এতো পরিশ্রম আর আমার মন বলছে তাই। নীল তাসুর আত্মবিশ্বাস দেখে তাসুর দিকে তাকিয়ে আছে। নীল ভাবে তোমার আগে যদি আমার জীবনে মাহিরা নামক মেয়ে টা না আসতো তাহলে হয়তো আজ তুমি আর আমি রাজা রানী হয়ে থাকতাম। থাকতো না তোমার আর আমার মধ্যে এতোটা দূরত্ব।

__নীল বলে__ আচ্ছা তোমাকে তো এই পর্যন্ত আমি কিছুই দেয় নি।আর তুমিও আমার কাছ থেকে কিছু চাওনি।তাই ভাবছি আমার প্রমোশন হলে তোমাকে গিফট দিবো।আর তুমিও আমার থেকে কি চাও সেটা বলো।তাসু কিছু বলছে না।নীল বলে__ কি চাও বলো না..??যেটা চাইবে সেটাই দিবো। তাসু নীলের দিকে তাকিয়ে বলে__ যা চাইবো সেটা দিবেন তো..??নীল বলে __ হুম দিবো.. একবার চেয়েই দেখো।

তাসু বলে__ আপনি আমাকে মারেন কাটেন কষ্ট দেন বা অবহেলা করেন যা ইচ্ছে তা_ই করেন আমি আপনাকে কিছুই বলবো না।কিন্তু আপনি আমাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলবেন না।আপনি মাহিরা আপু কে বিয়ে করে নেন তাতেও আমি কিছু বলবো না।সহ্য করে নিতে পারবো। কিন্তু ছেড়ে দিলে সেটা সহ্য করে নিতে পারবো না।যতক্ষণ আমি আপনাকে ছেড়ে না যাবো তার আগে আপনি আমাকে ছেড়ে দিবেন না। আমার এই চাওয়া টা আপনি পূরণ করবেন ..??বলেন না পূরণ করবেন কি না..??
নীল কি বলবে কিছুই ভাবতে পারছে না।

__ নীল কে এভাবে চুপ থাকতে দেখে তাসু কাঁদতে কাঁদতে বলে__ আসছি আপনি ঘুমিয়ে যাইয়েন। তাসু গিয়ে বিছানায় শুইয়ে ফুপাতে ফুপাতে ঘুমিয়ে যায়।

__সকালে নীল অফিসে যাবে তাই রেডি হচ্ছে অফিসে যাওয়ার জন্য। এদিকে তাসু রান্না শেষ করে টেবিলে নাস্তা সাজিয়ে দিচ্ছে। নাস্তার সময় হলে নীল টেবিলে আসে নাস্তা করার জন্য। তাসু নীলের জন্য চা বানিয়ে আনতে কিচেনে চলে যায়। কিচেন থেকে তাসুর চিৎকারের আওয়াজ শুনে নীল দৌড়ে তাসুর কাছে যায়। নীল গিয়ে দেখে তাসুর হাতে গরম পানি পরে হাত পুড়ে গেছে। নীল এটা দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়।

__ নীল তাসুর হাত ধরে পেরেশান হয়ে বলে__ তুমি হাত পুড়লে কি করে হুম..??তাসু বলে__ চায়ের কাপে গরম পানি ঢালতে গিয়ে হাতে পরে গেছে। নীল বলে__ তুমি একটু সাবধানে কাজ করবে না..??সাবধানে কাজ করলে হয়তো এখন তোমার হাত টা পুড়তো না।নীল তাসুর হাত ধরে মাথা টা নিচু করে ফুক দিতে থাকে।

__তাসু বলে__ আপনি এতো পেরেশান হচ্ছেন কেন…?? এটা তো শুধু সামান্য হাত টা পুড়েছে। এর চেয়েও বেশি প্রতিনিয়ত আমার কলিজা টা পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাচ্ছে। নীল কথা টা শুনে তাসুর দিকে তাকায়। তাসুও এক ম্লানমুখে নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। নীল তাসু কে টেবিলে বসিয়ে রেখে দ্রুত চলে যায় নিজের রুমে। ড্রয়ার থেকে বের করে বার্না ক্রীম এনে তাসুর হাতে লাগিয়ে দেয়।

__ক্রীম লাগিয়ে দেওয়ার পর নীল বলে__ এখনো কি হাত জ্বলছে..?? তাসু বলে__ হুম কিছু টা। নীল বলে__ কিছুক্ষণ পর ঠিক হয়ে যাবে।

__এরপর নীল কিছু টা নাস্তা করে অফিসে চলে যায়। অফিসে গিয়ে নীল নিজের মতো কাজ করতে থাকে।আজকে অফিসে বিকাল চারটায় মিটিং আছে। অফিসের বস নীল কে ডেকে নেয়। নীলের বস বলে__ নীল আপনাকে যেই কাজ টা দিয়েছিলাম সেগুলো কমপ্লিট করেছেন।নীল বলে__ জ্বি বস এখন শুধু আরেক বার দেখে নিলেই হয়ে যাবে। নীলের বস বলে__ আচ্ছা ঠিক আছে ভালো করে দেখে নেন।বিকালে ক্লায়েন্ট আসবে কোথাও যেন কোন ত্রুটি না থাকে। নীল বলে__জ্বি বস।

বিকালে মিটিং শেষ করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। আর সেই দিকে ক্লায়েন্ট নীলের কাজ দেখে পছন্দ হয়ে যায় এবং সাথে সাথে অফিসের পক্ষ থেকে তার প্রমোশন বেড়ে যায়।

__মিটিং শেষ করে বাসার উদ্দেশ্য রওয়ানা হতে অন্য দিনের তুলনায় আজকে অনেকটাই লেট হয়ে যায়। এদিকে নীলের দেরি হচ্ছে দেখে তাসু খুব অস্থির হয়ে যাচ্ছে। তাসু ভাবতে পারছে না কেন এতো লেট করছে। তাসুর চিন্তা আর অস্থির বেড়েই যাচ্ছে। নীল আসছে কি না সেটা দেখার জন্য তাসু বারবার বেলকনিতে যাচ্ছে। তাসু বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে মানুষ টা এখনো আসছে না কেন..??

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here