#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#অন্তিম_পর্ব(শেষাংশ)
_______________________________
–‘ভাইয়া দেখ আর একবার যদি কিছু বলিস না তাহলে তোর খবর আছে।
ইরা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে ঈষৎ চেচিয়ে উঠে প্রণয়কে কথা টুকু বললো। দেখতে দেখতেই মাঝে তিনদিন কে টে গেছে।আজ এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট বের হবে।সকাল থেকে সেজন্য সূচনা,ইরা আর মিহু তিনজনেরই টেনশনে মরি মরি অবস্থা।মিহু তাদের বাসাতেই, সূচনা চিন্তায় কালকে থেকে খাওয়াদাওয়া ও করছে না ঠিকমতো। ইরা অবশ্য আগেই বলে দিয়েছে –
–‘ভাবি আমার অত টেনশন নেই যা দিয়েছি এক্সপেক্ট যা করছি তাই আসবে ইনশাআল্লাহ। তুমিও টেনশন করিওনা।
এদিকে প্রণয় সূচনার টেনশনের মধ্যে বেচারিকে আরও বেশি টেনশন দিচ্ছে। এই যে একটু আগে, চিন্তিত মুখে সোফায় বসে টেবিলের ওপর রাখা ল্যাপ্টপের স্ক্রিনে তাকিয়ে ছিল সূচনা।রেজাল্ট বের হতে এখনও সময় আছে, কিন্তু প্রণয় আগেই সব সামনে নিয়ে বসেছে।দাত দিয়ে নখ কাম ড়াচ্ছিল সূচনা তখনই প্রণয় বলে উঠলো-
–‘ইরাকে তো আমি নিজে পড়িয়েছি, আর ও তেমন ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ও না। যা পড়িয়েছি পাশ অন্তত করবে কিন্তু তোমার ওপর ভরসা নেই। কী পড়েছো কে জানে?না জানি আমার মান সম্মান কোথায় যেয়ে পড়ে।রক্ষা করিয়েন আল্লাহ।
সকাল থেকে এ জাতীয় বেশ কয়েক কথা শুনিয়েছে প্রণয়।মূলত ইরা এজন্য ই প্রণয়ের ওপর রেগে ছে।প্রণয় তার জবাবে কিছু বলবে তার আগেই সূচনা সেখান থেকে উঠে চলে গেল।সূচনা যাওয়ার পরই ইরা আর প্রণয় দুজন দুজনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। ইরা প্রণয়কে দোষী সাবস্ত করে জোর গলায় বললো-
–‘তোমার জন্য, তোমার কথায় ভাবি রা গ করেছে। তোমার মোটেও উচিত হয়নি এভাবে বলা।এমনিতেই সে টেনশনে পাগল হয়ে যাচ্ছে আর তুমি সেই সকাল থেকে বলেই যাচ্ছ।এবার যাও কি করবে করো গিয়ে।
প্রণয় যাবে তো দূরের কথা সে আরও আরাম করে বসলো সোফায়।ল্যাপ্টপ কোলে নিয়ে মনোযোগ দিল ল্যাপ্টপে।
.
.
.
–‘ইরাবতী রেজাল্ট দিয়েছে আজকে আপনার।
রাত নয়টা বাজে এখন। রেজাল্ট দিয়েছে সেই দুপুরে।ফোনের ওপাশ থেকে ইরাকে প্রশ্ন করলো মুগ্ধ। ইরাহ্যা সূচক জবাব দিল-
–‘হ্যা,মেসেজ করেছিলাম তো।
–‘অভিনন্দন।আচ্ছা কালকে দেখা করা যায়?
ফোনের ওপাশ থেকে মুগ্ধ মোহ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো মুগ্ধ। ইরা লজ্জা পেল,একদম লজ্জায় সিটিয়ে যাওয়ার মতো সেই লজ্জা।নরম স্বরে বললো-
–‘ভাইয়া জানলে?
–‘আপনার ভাইয়ার কাছ থেকে অনুমতি যদি নিই?
ইরা কিয়ৎ কাল চুপ করে রইল।অতঃপর নরম স্বরে শোধালো-
–‘ঠিক আছে, কোথায় বলুন?
–‘না থাক।
মুগ্ধর কথা শুনে ইরা মুখ বা কালো,মুগ্ধর চোখে অবশ্য পড়েনি কিন্তু তাতে কী?ইরা মুখ ফুলিয়ে ই বললো –
–‘এসবের মানে কী?
–‘কোন সবের?
–‘এই যে বললেন দেখা করবেন, এখন বলছেন থাক।
–‘এমনি বলেছি,শুনুন আমরা দেখা করব না,আপনাকে আমার ইরাবতী করে নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত কিছু করবনা।আর আপনার রেজাল্ট এর জন্য একটা ছোট্ট গিফট ও দিব।আপবি গ্রহণ করবেন?
এবারের কথায় যেন পূর্বের থেকে আরও বেশি লজ্জা পেল ইরা।কিছু বলতে পারলনা,কানে ফোন ধরে চুপ করে বসে রইলো।ইরা চুপ করে থাকায় মুগ্ধ শান্ত কিন্তু শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
–‘চুপ করেই থাকবেন?চুপ করে আছেন মানে গ্রহন করবেন না?আবার কবে কথা হবে জানিনা,ভেবে নিন,নাহলে কল কে টে দিই?
–‘না না।নিবনদ কেন আপনি দিবেন আর আমি নিষেধ করে দিব সেই সাধ্যি আমার নেই।
তৎক্ষনাৎ বলে উঠলো ইরা।মুগ্ধ হাসলো,দুই ঠোঁট প্রসারীত করে,সেই হাসি ইরার নজরে পড়লো না।যদি পড়তো, যদি সে দেখতো সেই হাসি কত স্নিগ্ধ আর সুন্দর সে বুঝি আবারও তার প্রেমে পড়ে যেত!
–‘ কে টে দিলাম।
মুগ্ধ আবারও বলতেই ইরা পুনরায় ‘না’ বলে ঈষৎ চেচিয়ে উঠলো।মুগ্ধ কিঞ্চিৎ ধমকের স্বরে বললো-
–‘ তাহলে কী বলবেন বলুন।
ইরা চমকে উঠলো।ঠোঁট উল্টে বললো –
–‘এভাবে ব কা দিচ্ছেন কেন?
–‘ব কা দিলাম কোথায়?
নিরুত্তর রইলো ইরা,সাথে মুগ্ধ ও।নীরবতায় ছেয়ে গেল আবার।দুই পাশে নীরবতায়,দুইজন বিনাবাক্য ব্যয়ে ফোন কানে নিয়ে বসে আছে।কেমন যেন মৃদুমন্দ বাতাসের শো শো আওয়াজ কানে আসলো ইরার।সেই শব্দ শ্রবণ হতেই তার খুব করে জানতে ইচ্ছে করলো-তার মুগ্ধ সাহেব এত রাতে বাইরে বাইরে ঘুরছে?কোনোরকম ভণিতা ছাড়াই এক সাথে কয়েকটা প্রশ্ন জুড়ে বসলো ইরা-
–‘আওয়াজটা কীসের?সত্যি ই বাতাসের?আপনি এখন কোথায় মুগ্ধ?এত রাতে,এই ঠান্ডায় আপনি বাইরে কি করছেন?অসুস্থ হয়ে গেলে দেখবে কে?আর আপনি অসুস্থ থাকলে আঙ্কেল এর দেখাশোনা করবে কে?
–‘আপনাকে নিয়ে আসি?একেবারের জন্য?
সেকেন্ড দুয়েক চুপ থেকে অনুনয়ের স্বরে বললো মুগ্ধ। ইরা ভড়কালো এবার আর লজ্জা পেল না।লজ্জা নামকে বস্তু টাকে ঠেলে,ধাক্কিয়ে দূরে সরিয়ে শীতল, শান্ত গলায় বললো-
–‘আপনাকে ভালোবাসি,অনেক ভালোবাসি।একদম নিজেকে বিলীন করে দেয়ার মতো যেমন ভালোবাসা ঠিক তেমন ভালোবাসি।একেবারে আসতে কোনো আপত্তি নেই।
মুগ্ধ চমকালো,অবাক হলো,বিস্ময়ে চোখজোড়া বড় ও হলো।কী সুন্দর সহজ স্বীকারোক্তি দিল ইরা!কিন্তু সে তো ভাবেনি তার প্রশ্ন উত্তর ইরা এমনভাবে দিবে।মুগ্ধ নিজেও কী কম যায়?সে ও মোহময়ী কণ্ঠে বলে উঠলো-
–‘ইরাবতী কে ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি,এত ভালেবাসি যে তার রা গ হোক আর অভিমান,সব ভাঙানোর দায়িত্ব আমার।’
ইরা শুনলো, খুব মনোযোগ দিয়ে,কিছু বললো না,কী বলবে?লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে রইলো। মুগ্ধ ইরার অবস্থা বোধহয় বুঝতে পারলো তাই তড়িঘড়ি করে ‘রাখি’ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলো।কিন্তু কল কে টে গেছে টের পেয়েও কিছুক্ষণ ফোন কানে নিয়ে বসে রইলো ইরা।এই কথোপকথন, এই লজ্জা,প্রেমের স্বীকারোক্তি তাদের চলতে থাকুক,ইরার মুগ্ধ সাহেব, মুগ্ধর ইরাবতী,তারা ও এরূপেই থাকুক।
.
.
.
–‘আমার বেবি লাগবে।
বিছানায় বসে আবদারের স্বরে জাওয়াদকে কথাটুকু বললো দিনা।জাওয়াদ কিঞ্চিৎ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
–‘হঠাৎ এইসব কি বলছো দিনা?
–‘জানিনা অতকিছু আমার বেবি লাগবে মানে লাগবে।
আর সেটা খুব শীঘ্রই।
–‘ঠিক আছে আমিও তো না করিনি।কিন্তু এখন না তোমার পড়ালেখা শেষ হোক,কিছু সময় পার হোক তারপর না হয়।
–‘না,আমি পড়ালেখা করবনা,সংসার করব সেই সংসারে আমাদের ছোটো ছোটো দুটো রাজকন্যা থাকবে।
–‘আচ্ছা থাকবে শুধু দুইটা বছর তারপর ঠিক আছে?
–‘না তার আগে।
–‘আচ্ছা আল্লাহ দিলে হবে।না দিলে কীভাবে হবে বলো?
দিনা এবারে শান্ত হলো,আজকাল প্রায়ই সে এমন বায়না ধরে জাওয়াদের কাছে।কয়েকদিন আগেই তার এক বান্ধবীর জমজ মেয়ে হয়েছে, তাদের দেখে আসার পর থেকেই তার ওপর এই ভূত চড়েছে। যদিও সে নিজেও জানে বললেই হয়ে যায় না।কিন্তু ঔ যে বাচ্চা দের প্রতি তার অদ্ভুত টান আছে। সেজন্য বারবার বলে ফেলে।
–‘দিনা?
–‘হু।
–‘চলো ঘুমাবে।
–‘হু।
তৎক্ষনাৎ ই বিছানায় যেয়ে দিনাকে বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লো জাওয়াদ।এটা অভ্যাসে পরিনত হয়েছে তাদের এখন। নাহলে ঘুম হয় না কারোরই।শুয়ে পড়তেই দিনা জাওয়াদ কে জড়িয়ে ধরে আলতো স্বরে বললো-
–‘আমাদের ও বেবিড হবে,হ্যাপি ফ্যামিলি হবে তাই না?জানেন আপনাকে ভালোবাসি অনেক।
জাওয়াদ দিনার মাথায় চুমু খেয়ে বললো –
–‘জানি তুমি আমাকে ভালোবাসো।থ্যাঙ্কিউ ফর কামিং টু মাই লাইফ দিনা।
ভালোবাসি বলতে হয় না,জীবনে কার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু সেটা বোঝানোর মধ্যেও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটে যেমনটা জাওয়াদ করলো।সবাই তো আর প্রকাশ করে না,করতে পারেনা বা সুযোগ পায় না।
___________________________
ইরা আর সূচনা তাদের আশানুরূপ ফল পেলেও মিহু পায়নি।সেটা নিয়েই মিহুর সাথে কথা বলছিলো সূচনা।সাড়ে দশটার মতো বাজে এখন।ইরা এ গ্রেড আর সূচনা এ প্লাস পেয়েছে। মিহু এ প্লাসের আশা ই করেছিল কিন্তু হয়নি।তার ও এ গ্রেড ই এসেছে তবে যা এসেছে সেটা নিয়ে আক্ষেপ করছে না মিহু।মিসেস দিশা আরহাম সাহেব দুজন ই কল দিয়ে কথা বলেছেন সূচনার সঙ্গে। সূচনা খুশি হলেও তার মুখশ্রী তে মন খারাপ এর আভাস দেখা যাচ্ছে। সেটা যে প্রণয়ের চোখে পড়েনি তা ও না।কিন্তু প্রণয় কিছু বলেনি,রেজাল্ট টা দেখে শুধু ইরাকে বলেছে আর ইরা ই খবরটা দিয়েছে সূচনাকে।ওযু করে দু রাকআত নফল নামাজ পড়ে শুকরিয়া আদায় করে নিয়েছে আগে।তারপর আস্তে আস্তে সবার কল,রেজাল্ট কী?পয়েন্ট কত?এসবের উত্তর দিতে দিতে পেরিয়েছে সারা দুপুর।তার অবশ্য বিরক্ত লাগে,যারা বছরে একূিন কল দিয়ে ‘কেমন আছি’? জিজ্ঞেস করে না অথচ তারাই আবার এসব বোর্ড রেজাল্ট এর দিন রেজাল্ট জানার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে।অসহ্য!প্রণয়ের সাথে সূচনার কথা হলো না এই অব্দি।শীতের প্রকোপ আজ কম, তাই শাড়ীর ওপর একটা হ্যান্ড পেইন্টেড শাল জড়িয়ে ব্যালকনিতে রাখা বেতের চেয়ারটাতে বসেছে সূচনা। মৃদু মন্ড বাতাসের তোড়ে এলেমেলো হচ্ছে তার চুলগুলো।মাঝে মাঝে কেঁপে উঠছে তার শরীর।সামনের দিকেই নজর ছিল তার,হঠাৎ চোখের সামনে একটা বক্স দেখতেই চোখ আট কে গেল সেটার ওপর।বক্স টা ধরে রাখা হাতটা অনুসরণ করে হাতের মালিকের দেখা মিললো।সে আর অন্য কেউ না,স্বয়ং প্রণয়ই।সূচনা শান্ত চোখে তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিক। প্রণয় পাশের চেয়ারটা টেনে বসলো সূচনার পাশে।সূচনাটর হাত টেনে হাতে ধরিয়ে দিল বক্সটা। সূচনা বক্সটা হাতে নিয়ে খুললো না সাথে সাথে, বসে রইলো।তা দেখে প্রণয় নিজেই বক্সটা খুললো।বক্স টার ভেতরে আরও দুইটা বক্স আছে।প্রথম বক্সটা খুলতেই সেটাতে একটা লকেট আর একটা রিং পাওয়া গেল।আর একটা বক্স আছে, সেটাতে দুটো মোটা চুড়ি।রিং আর লকেটের সাদা পাথরগুলো জ্বলজ্বল করছে।সূচনা প্রণয়ের দিক তাকিয়ে প্রশ্ন করলো-
–‘এসব কী?
প্রণয় সহসা জবাব দিল-
–‘কাপকেকের সাকসেস এর গিফট,আমার তরফ থেকে।রিং আর লকেট টাই শুধু ডায়মন্ড এর, চুড়ি গুলো না।তবে আমি নিজে ডিজাইন দেখিয়ে অর্ডার দিয়ে বানিয়ে নিয়ে এসেছি। স্পেশালি ফর মাই স্পেশাল পার্সন, ফর মাই কাপকেক।দেখো ভাল্লাগে কি না?
সূচনা মুখ বা কালো,মুখ ঘুরিয়ে বললো-
–‘কেন আপনার তো সন্দেহ হচ্ছিল আমি কি না কি রেজাল্ট করি,আপনার মান সম্মান কোথায় যেয়ে ঠেকে সেগুলো ভেবে।তাহলে এখন আবার গিফট দিচ্ছেন কেন?
–‘কারণ আমি জানতাম তুমি কেমন স্টুডেন্ট।তো সেখানে খা রাপ করার প্রশ্ন ই আসে না।আগেই অর্ডার করেছিলাম, দুইদিন আগেই হাতে পেয়েছি।আর ঔ কথা গুলো ইচ্ছে করেই বলেছিলাম আমি।তোমার মাইন্ড ডাইভার্ট করতে যেন আমার ওপর রে গে যেয়ে একটু হলেও রেজাল্ট এর টেনশন বাদ দাও তুমি।কিন্তু তুমি তো তুমি ই।কিসের রা গ কিসের কী টেনশনে পাগল প্রায়। বাদ দাও ঠিক আছে সব, এখন এটা দেখো।
প্রণয়ের কথাগুলো কর্ণকুহরে ঠেকতেই সূচনা অবাক সাথে খুশি হয়ে সিক্ত চোখে তাকিয়ে রইলো প্রণয়ের দিক। প্রণয় লকেট টা সূচনার গলায় পড়িয়ে দিয়েছে।রিং ফিঙ্গারে আগে থেকেই প্রণয়ের দেয়া একটা রিং পড়া ছিল, প্রণয় আর সেটা খুললো না।চুড়ি দুটো হাতে পড়িয়ে দিতে দিতে বললো-
–‘এখন থেকে এগুলো পড়ে থাকবে।এই যে লকেট এটাতে আমার নামটা খোদাইকৃত, মানে আমি সবসময় তোমার বুকের সাথে লেপ্টে থাকব।আর এই চুড়ি দুটো সবসময় তোমার হাতে থাকলে আমার কথা তোমার মনে পড়বে তোমার প্রতিনিয়ত ই,আমি থাকি আর না থাকি।
সূচনা খুশি হয়েও আবার নারাজ হলো, মুখ ভাড় করে বললো-
–‘থাকবেন না কেন?এভাবে বলবেন না কখনো।
–‘ঠিক আছে বলবনা,কিন্তু মানুষ ম রণশীল সেটা তো জানো।
সূচনা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে,নিজের চেয়ার থেকে উঠে যেয়ে প্রণয়ের কোলে বসে পড়লো,দু হাত দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রাখলো।দুজনের মধ্যে পিনপতন নীরবতা চললো কিছু ক্ষণের জন্য। তারপর সূচনা নিজেই বললো-
–‘একটা প্রশ্ন করি?
সূচনাকে দুহাত দিয়ে চেপে ধরে প্রণয় ছোট্ট করে জবাব দিল-
–‘হুম করো।
–‘এত টাকা কেন খরচ করলেন?
–‘আমি টাকা ইনকাম কেন করি?নিজের ফ্যামিলির জন্য। তো তাদের করব না তে কাদের করব?
–‘তবুও কতগুলো টাকা খরচ হলো।
–‘হুশশ।বললাম না!
–‘আচ্ছা আরেকটা প্রশ্ন করি?
–‘হুম।
–‘আপনি এত সব কিছু কীভাবে করলেন?স্নেহা, মাহিরা ওদের ব্যাপারে জানলেন কী করে?এত কিছু ম্যানেজ করলেন কীভাবে?সত্যি করে বলেন তো আপনি কী কোনো সিক্রেট এজেন্ট?
–‘সিক্রেট এজেন্ট যদি হতাম তাহলে সবকিছু করতে পারতাম আরও আগেই।
–‘সত্যি বলছেন?আমার তো মনে হচ্ছে আপনি সত্যি ই…
–‘সেটা হলে তোমাকে জানাতাম তাই না?
আর কথা বাড়ালো না সূচনা।বড় করে শ্বাস ফেলে বললো-
–‘হুম তা ও তো ঠিক।
–‘হুম।
–‘আরেকটা কথা জিজ্ঞেস করি?
প্রণয়ের বুক থেকে মাথা উঠিয়ে জিজ্ঞেস করলো সূচনা।প্রণয় মাথা নাড়িয়ে বললো-
–‘হুম করুন,একটা কেন হাজারটা মহারাণী।
–‘আমি মহা রাণী?
–‘হ্যা তুমি।
–‘কোন রাজ্যের?
–‘প্রণয়ের রাজ্যের।এবার বলুন কী জিজ্ঞেস করবেন?
–‘আপনার বাবার মৃ ত্যুর ব্যাপারে কিছু জানার চেষ্টা করেননি আপনি? উনি মা রা গেলেন কীভাবে?
আমতা আমতা করতে করতে জিজ্ঞেস করলো সূচনা।প্রণয় নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দিল-
–‘হ্যা এটা সত্যি উনি আমার বাবা ছিলেন কিন্তু তার চেয়ে বড় সত্যি হলো উনি আমার মায়ের খু নি।তাই প্রয়োজন বোধ করিনি।
সূচনা থম মে রে রইলো।তার করা প্রশ্নের জবাব এর চেয়ে ভালো করে আর দিবেনা প্রণয়,সেটা জানে সে।আর কি ই বা দিবে?সত্যি ই তো সবচেয়ে বড় সত্য হচ্ছে উনি প্রণয়ের মায়ের খু নি। সূচনা চুপ করে থাকায় প্রণয় নিজেই সূচনাকে জিজ্ঞেস করলো-
–‘কী হলো?
সূচনা বাচ্চাদের মতো ঠোট উল্টিয়ে বললো-
–‘কিছুনা।
প্রণয়ের বুকে মাথা রেখে তার টি-শার্টের বুকের দিকটায় আঙুল দিয়ে আঁকিবুকি করতে লাগলো সূচনা।প্রণয় ভ্রু কুটি করে জিজ্ঞেস করলো-
–‘এটা কী করছো?
হাতের বাধন ঈষৎ ঢিলে হলো,বুক থেকে মাথা উঠিয়ে পরপর কয়েকবার পলক ঝাপটিয়ে সূচনা মুখ বাঁ কিয়ে বললো-
–‘আপনার কী?যা ইচ্ছে তাই করবো।এই মুখ,নাক,চোখ,ঠোট, এই বুক সব আমার।আমার মানে আমার।আপনার কোনো অধিকার নেই নিষেধ করার।
আপনি আমার।ছেড়ে যাবেন না একদম।ঠিক আছে?
–‘ঠিক আছে।
–‘আপনার মায়ায় পড়েছি কত কাল আগে,ভালোবাসা হলো কই?
–‘দু’জন মানুষ একসাথে থাকলে যে মায়া জন্মে ই যায়, আর মায়া জন্মালে ভালোবাসা টাও হয়ে যায়। তোমার ও হয়েছে।
–‘আপনার হয়েছে?
–‘হয়েছে।
–‘তাহলে আমি প্রকাশ করতে পারলাম না কেন?
–‘প্রকাশ না করলে কী ভালোবাসা ভালোবাসা থাকে না?প্রকাশ করতে হবে না। আমি জানি তুমি আমার মায়ায় পড়েছো আর আমায় ভালোবাসো।
–‘তাহলে #প্রণয়ের_সূচনা হয়েছে?
–‘প্রণয়ের প্রণয়ে নতুন সূচনা হয়েছে সেই কবে।আর এই #প্রণয়ের_সূচনা এর সূচনা অধ্যায়ে রোজ নতুন সকাল হবে আমাদের, রাতের আঁধারে এমন সময় কা টবে আমাদের।
কথাটুকু শুনে আবারও প্রণয়ের ওপর ভার ছেড়ে দিল সূচনা।সূচনার কান্ডে প্রথমে ভ্রু কুচকালেও সাথে সাথেই শব্দ করে হেসে দিল প্রণয়।তার হাসিতে অবশ্য তেমন হেলদোল দেখা গেল না সূচনার মধ্যে। সে পূর্বের ন্যায় জড়িয়ে ধরে ই বসে রইলো।প্রণয় ও আর কথা বললো না।আজ শীত একটু কম পড়েছে,দুজন দুজনের উষ্ণ আলিঙ্গনে ই আবদ্ধ রইলো।
#সমাপ্ত