#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৪৫
_____________________________
–‘কিছু বলবে না?
ঘোর ভাঙলো সূচনার,ভাবনা শেষ হলো সব,পাল্টা প্রশ্ন করলো-
–‘কী বলবো?
–‘কিছু বলার নেই?
উত্তর দিল না সূচনা, বলার তো অনেক কিছু আছে আর সেটা জানা স্বত্তে ও জিজ্ঞেস করছে।সূচনা চুপ করে রইলো। প্রণয় আদেশের স্বরে বললো-
–‘বারান্দায় আসো।
সূচনা অবাক হলো,রাত সাড়ে দশটা বাজে এখন,এই সময়ে বারান্দায় কেন যাবে সে?তা ও কোনো কারণ ছাড়া।সে সাথে সাথে জিজ্ঞেস করলো-
–‘কেন?
প্রণয় সহসা জবাব দিল-
–‘কারণ আমি বলেছি নাও কাম ফাস্ট।
সূচনা রা/গ দেখালো,মুখ বা/কিয়ে বললো-
–‘ আসবো না,আপনি বললে ই কেন আসতে হবে?আমার ইচ্ছের দাম নেই?
–‘তুমি আসবে না?
–‘না।
প্রণয় চুপ রইলো মিনিট খানেক। তারপর করুণ কণ্ঠে বললো-
–‘আমি ঠান্ডায় জমে যাচ্ছি জান।
সূচনার বুক ধ্বক করে উঠলো।এটাই আশঙ্কা করছিলো সে,তাহলে প্রণয় সত্যি ই এসেছে,এত রাতে,এই ঠান্ডার মধ্যে।ফোন কানে নিয়েই ঝট করে উঠে পড়লো, ব্যলকনির দরজা খুলে দৌড়ে গিয়ে দাড়ালো,সামনের রাস্তায় দৃষ্টি দিতেই দেখা গেল..ফোন কানে নিয়ে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে প্রণয়। রাস্তার নিয়ন বাতির আলোয় স্পষ্ট মুখখানা,চিনতে এক বিন্দু অসুবিধা হয়নি সূচনার।এমন শীতের মধ্যে ও প্রণয়ের পড়নে শীতের কোনো কাপড় নেই,অফিসের ফর্মাল গেট আপে এখনও। সূচনা ধমকের স্বরে জিজ্ঞেস করলো-
–‘এত রাতে কেন এসেছেন আপনি?সকাল হওয়া অব্দি অপেক্ষা করতে পারলেন না?
–‘না পারলাম না,আই নিড ইউ মিনস আই নিড ইউ রাইট নাও।সকাল হওয়ার তো অনেক দেরি।
–‘পাগলামো করছেন।
–‘করছি তো?
–‘কিন্তু কেন?
টুট টুট শব্দ জানান দিল কল কে/টে দিয়েছে প্রণয়।অবাক হলো সূচনা,পুনরায় কল করলো ফোন অফ।আশ্চর্য মাত্রই না কথা বলছিল,পায়চারি করতে করতে ইতিমধ্যে ব্যালকনি থেকে রুমে এসে পড়েছে সূচনা।পুনরায় ব্যালকনিতে যেয়ে নিচে তাকিয়ে দেখলো রাস্তা ফাঁকা। তাজ্জব বনে গেল সূচনা, সাথে ভয় ও পেল কোথায় গেল প্রণয়?নাকি এতক্ষণ কল্পনা করছিলো আগের বারের মতো।আবারও প্রণয়ের নাম্বারে কল করলো সূচনা কিন্তু বন্ধ ই শোনালো।সূচনা বিড়ম্বনায় পড়ে গেল একদম।কি হচ্ছে এসব?মিসেস দিশা আর আরহাম সাহেব শুয়ে পড়েছেন আর এতক্ষণে ঘুমিয়ে ও পড়ার কথা, এত রাতে সদর দরজা খুলে বাইরে যাওয়া, মন সায় দিল না সূচনার।মিসেস দিশাকে ডেকে যে কিছু বলবে তা ও উচিত মনে হলো না। কী বলবে ওনাকে?চিন্তা ভাবনা করতে করতে ব্যালকনি থেকে রুমে আসলো সূচনা খুব সাবধানে রুমের দরজা খুলে ধীর পায়ে বেরোলো।ড্রয়িং রুমের সামনে যেতেই দেখা গেল ড্রয়িং রুমের লাইটগুলো জ্ব/লছে,সে অবাক হলো,আরেকটু এগোতেই যা দেখা গেল তা দেখে আজকালকার ছেলেমেয়েদের ভাষায় বললে বলা যায় -‘সে রীতিমতো টাস্কি/ত।’ ড্রয়িং রুমে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কথা বলছে প্রণয় আর মিসেস দিশা।সূচনা সেখানে আর পা বাড়ালো না, তড়িৎ গতিতে ছুটলো রুমের উদ্দেশ্যে।রুমে এসে দরজা লক করে বড় বড় শ্বাস নিতে লাগলো।মানে তার আম্মু ও জানতো যে প্রণয় আসবে।ভাবতেই রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে সূচনা বললো-
–‘তুমি আমার আম্মু তুমি আমার কথা শুনবে তা না আমার বিপক্ষে কাজ করা শুরু করেছে।হুহ।
দরজায় নক পড়ায় ধ্যান ভাঙ/লো সূচনার।শুনেও না শোনার ভান করতে চেয়েছিল কিন্তু পারলো না।দরজা খুলে দিল,প্রণয় প্রবেশ করলো রুমে,দরজার সামনে থেকে সরে আসলো সূচনা,প্রণয় দরজা লক করে সূচনার দিকে ঘুরলো,হাতের শপিং ব্যাগটা পাশে থাকা হ্যাঙ্গিং এ রাখলো।এক পা এক পা করে এগিয়ে আসলো সূচনার দিক।সূচনা মুখ ভাড় করে নিচের দিকে তাকিয়ে ছিল।তাকে অবাক করে দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো প্রণয়।কোনো প্রকার নড়াচড়া করলো না সূচনা।মিনিট কয়েক বাদে প্রণয় নিজেই ছেড়ে দিল তাকে।শপিং ব্যাগ তেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
রুমের বাইরে থেকে মিসেস দিশা ডাকলেন সূচনাকে।সূচনা বেড়িয়ে গেল রুম থেকে।
____________________________
রুমে খাবার নিয়ে এসেছে সূচনা।প্রণয় খাবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।সূচনা আবারও বললো-
–‘কী সমস্যা খাবেন না কেন?
–‘ক্ষুধা নেই তাই, আমার ঘুম প্রয়োজন।
–‘কেন রাতে ঘুমান নি?
–‘না
–‘কেন?রাতে কী তারা গুনেছেন?
মুখ বা/কিয়ে বললো সূচনা।সে আবারও বললো-
–‘একটু খেয়ে নিন কী সমস্যা?
_____________________________
হিমশীতল হাওয়ায় এলোমেলো হয়ে দোল খাচ্ছে সূচনার খোলা চুল গুলো।প্রণয় রুমে,খাওয়া শেষ তার,জেদ ধরেছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত খেয়েছে।সূচনার মাথায় আসছে না তার কেমন ব্যবহার করা উচিত প্রণয়ের সাথে।সে রা/গ করে থাকবে আর একটু সময়?নাকি মানিয়ে নিবে?
ঘাড়ে খোচা খোচা কিছু স্পর্শ পেতেই শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠলো সূচনার,একদম প্রস্তুত ছিল না বিধায় রিয়েকশনটা একটু বেশিই হয়ে গেছে। উদরে শীতল ছোয়া পেতেই যেন শরীরের সব শক্তি হারিয়ে ফেলল সূচনা,শরীরের ভার ছেড়ে দিল প্রণয়ের ওপর,প্রণয় সামলে নিল।চুল গুলো এক পাশে সরাতেই উন্মুক্ত হলো পিঠের কিছু অংশ।প্রণয় বার কয়েক সেখানটায় ছোয়া দিল ঠোঁ/টের।সূচনাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে প্রণয় খুব যত্ন সহকারে চুমু খেল তার কপালে।আবেশে চোখ বন্ধ করে নিল সূচনা। চোখ বদ্ধ অবস্থায় ই অভিমানে কণ্ঠে বললো-
–‘এতদিন পড়ে আপনার মনে হয়েছে দেট ইউ নিড মি?
–‘সেটা তো আমি জানি মনে হবে কেন?শুধু একটু দেখতে চেয়েছিলাম তোমাকে ছাড়া আমার অবস্থা এখন কেমন হয়?
–‘কী দেখলেন?কী বুঝলেন দুইদিনে?
–‘আই রিলাইজড দেট আই নিড ইউ এভরি সেকেন্ড অফ মাই লাইফ।
কান অব্দি পোঁছাতেই বদ্ধ চোখ জোড়া নিমিষেই খুললো সূচনা, হেসে উঠলো সে,পরম আবেশে জড়িয়ে ধরলো প্রণয় কে।আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো প্রণয় নিজেও।অভিমানের পালা শেষ হলো তবে।নাকি বাকি?
____________________________
সকাল এগারোটা।সূচনাকে নিয়ে সবে মাত্র ই বাড়ি ফিরেছে প্রণয়।মিসেস দিশা অনেক করে বলেছেন দুপুরে খেয়ে বেরোতে।শোনে নি প্রণয়,চলে এসেছে।সূচনা ও তার আম্মুকে বুঝিয়ে বলেছে অবশ্য। মিসেস আফিয়া,ইরা আর তিথি তো অভি/যোগের খাতা খুলে বসেছেন সূচনার কাছে।সূচনা কেন এমন হুট করে চলে গেল?আবার দু’দিন পর আসলো তা ও।অনেপ বুঝিয়ে সুঝিয়ে বলে কয়ে মানিয়েছে সূচনা। নিচ থেকে রুমের দিকে অগ্রসর হয় সে।প্রণয় আগেই চলে গেছে রুমে।রুমের দরজা তার ভেড়ানো ছিল,হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল।ভেতরে প্রবেশ করতেই কেমন বিদ/ঘুটে একটা গন্ধ নাকে আসলো তার।অন্ধকারে ছেয়ে আছে পুরো রুম।রুমের প্রতিটা জানালা লক করা,ব্যলকনির দরজা ও লক করা এমনকি পর্দা ও দিয়ে রাখা।অন্ধকার তো লাগবেই।সূচনা অবাক হয়ে গেল,রুমের অবস্থা দেখে মেজাজ খা/রাপ ও হলো।’মেয়েরা গোছালো ছেলেদের একদম পছন্দ করে না কিন্তু তাদের গোছানো জিনিস নষ্ট করলে আবার তেতে উঠে।সূচনা ও মেয়েদের সেই অন্যতম বৈশিষ্ট্য ধরে রেখেই প্রণয়কে একদফা বকে দিল।প্রণয় চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো শুধু। তারপর সেই বাজে স্মেল টা কিসের জিজ্ঞেস করলো সে।কিন্তু জবাব দিল না প্রণয়।সূচনা জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়ে খুলে দিল জানালা, ব্যালকনির দরজা ও খুলে দিল পর্দা সরিয়ে।জিজ্ঞেস করলো-
–‘খালা রুম পরিষ্কার করতে আসে নি?
–‘রুম লক করা ছিল।
–‘কেন?
নিরুত্তর রইলো প্রণয়। বেডের অবস্থা ও যাচ্ছে তাই।সূচনার বেডের কাছে এগিয়ে যেয়ে বালিশ একটা হাতে নিতেই হাত ধরে বসিয়ে দিল প্রণয়।ধপ করে শুয়ে পড়লো সূচনার কোলে মাথা রেখে।আহ্লাদী স্বরে বললো-
–‘চুলে বিলি কে/টে দিবে কাপকেক?ঘুমাবো আমি,আমার ঘুম পেয়েছে।
সূচনা নাকচ করতে পারল না,সব ভুলে টুলে মাথায় যত্ন সহকারে হাত বুলাতে লাগলো প্রণয়ের।
________________________
কাবার্ড থেকে বেডের জন্য নতুন চাদর বের করতে যেয়ে যে এসব দেখবে সূচনা ভাবতেও পারেনি।প্রণয় এসব…ছিহ সে ভাবতে পারছে না।ঠাস করে শব্দ করে কাবার্ড লাগাতেই ওদিকে প্রণয় জেগে উঠলো।ঘুমু ঘুমু কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো-
–‘কী হয়েছে? শব্দ হলো কীসের?
–‘কী..কিছু না।সরি আপনার ঘুম ভা/ঙিয়ে দিলাম।
–‘এদিকে এসো।
ধীর পায়ে এগোলো সূচনা,পাশে বসে বললো-
–‘বলুন
–‘চিন্তিত লাগছে কেন?
–‘কই না তো।
–‘শিওর?
–‘হ্যা।
বালিশ থেকে মাথা সরিয়ে পুনরায় সূচনার কোলে মাথা রাখলো প্রণয়।মিহি স্বরে বললো-
–‘ঔটা থেকে এটা অনেকটা বেটার।
ভাবুক মনে পূর্বের ন্যায় প্রণয়ের চুলে হাত চালালো সূচনা।
#চলবে