অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০৯
Writer:Shakif Arefin
রুমে গিয়ে নীলের চোখে মোটেও ঘুম আসছে না।তাসুর কথা গুলো বারবার স্বরণ হচ্ছে। তাসুর কথা নীল কে খুব ভাবাচ্ছে এবং কাঁদাচ্ছে।
__সকালে নীল ঘুম থেকে উঠে ওয়াসরুমে যাবে তখনই তাসুর কথা মনে পড়ে।রাতে মেয়ে টা জ্বরে খুব কষ্ট করেছে। তাই ওয়াসরুমে না গিয়ে আগে তাসুর রুমে যায়। নীল গিয়ে দেখে তাসু এখনো খুব আরামে ঘুমাচ্ছে। জ্বরের কারণে তাসু রাতে একটুও ঘুমাতে পারে নি তাই তো এখন খুব আরামে ঘুমাচ্ছে।
__নীলও তাসুর আরামের চিন্তা করে ডাক দেয় নি।সব সময় তো সকাল সকাল উঠে কাজের মেয়ের মতো কাজ করেই যায় আজ না হয় একটু নিজের মতো আরামে ঘুমাতে থাকুক। সেই চিন্তা করে নীল তাসু কে না ডেকে রুমে গিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।
__কিছুক্ষণ পর তাসুর ঘুম কিছু টা হালকা হতেই নীলের কথা মনে পরে যায়। তাসু ভাবে উনি তো অফিসে যাবে তাড়াতাড়ি নাস্তা বানাতে হবে তা নাহলে যে আজ মেরেই ফেলবে। তাসু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে আট টা পয়ত্রিশ বাজে। দ্রুত শরীর থেকে চাদর টা সরিয়ে নীলের রুমে যায়।
__তাসু নীলের রুমে গিয়ে দেখে নীল সবে মাত্র সাওয়ার নিয়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়েছে। নীল শর্ট প্যান্ট পরে আছে আর তাওয়ালে দিয়ে খালি গায়ের পানি মুছতেছে।নীল কে এই অবস্থায় দেখবে তাসু ভাবতেও পারেনি।তাসু নীল কে ওই অবস্থায় দেখে অনেকটাই ইতস্ততবোধ করে।নীল পিছনে তাকিয়ে দেখে তাসু দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। নীল দেখে তাসু লজ্জায় তার দিকে তাকাতেই পারছে না।তাসু কে এমন করতে দেখে নীল দ্রুত টি শার্ট টা পরে নেয়।
__নীল বলে __ কিছু বলবা আমাকে…??তাসু বলে__আপনি কি এখনই অফিসে চলে যাবেন..??নীল অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে নিতে বলে__হুম এখনই চলে যাবো। তাসু বলে __ আপনি আমাকে দশ মিনিট সময় দেন আমি এখনই আপনার জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়ে আসছি।
__তাসু দ্রুত চলে যেতে গেলে নীল আটকিয়ে বলে__ এই দাঁড়াও দাঁড়াও কোথায় যাচ্ছো..??তাসু বলে__বারে আপনার জন্য নাস্তা বানাতে..?? নীল বলে __ লাগবে না আমার নাস্তা। তাসু আশ্চর্য হয়ে বলে__ আজব তো!! তাহলে আপনি না খেয়ে অফিসে যাবেন নাকি..?? নীল বলে_ _ না খেয়ে থাকবো না,, অফিসের কেন্টিন থেকে খেয়ে নিবো।
__ তাসু বলে __ আমার তো মনে অফিসে সকালে নাস্তা বানানো হয় না।শুধু দুপুরের খাবার বানানো হয়।নীল বলে__ হুম… তাও ঠিক বলেছো।সমস্যা নাই রেস্টুরেন্ট থেকে নাস্তা করে নিবো।তাসু বলে __ দূর এতো কিছু করতে হবে না।আপনি কয়েক মিনিট অপেক্ষা করেন আমি নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি।
__ নীল বলে __ বললাম তো আমার জন্য নাস্তা বানাতে হবে না।আর তুমি এখন ঘুম থেকে উঠতে গেলে কেন..?? আজ তোমার কিচেনে যাওয়ার কোন প্রয়োজন নাই। বাসার কোথাও কোন কাজ করবে না।রুমে গিয়ে আরাম করতে থাকো।আমি তোমার জন্য বাহির থেকে খাবার অর্ডার করে দিয়েছি।কিছুক্ষনের মধ্যেই খাবার চলে আসবে। নাস্তা করে ঠিক মতো ঔষধ খেয়ে শুয়ে থাকবে।
তাসু বলে__ আপনি এটা করতে গেলেন কেন..?? বাহিরে খাবার অর্ডার করার কি প্রয়োজন ছিল..? আমি তো বাসায় খেয়ে নিতে পারতাম..?? নীল একটু এগিয়ে গিয়ে তাসুর কপালে হাত দিতে যাবে তখনই তাসু দুই পা পিছনে সরে যায়। নীল এবার আরো এগিয়ে তাসুর কপালে হাত দিয়ে বলে~তোমার জ্বর এখনো পুরোপুরি সারে নাই।তুমি পুরোপুরি সুস্থ হও তার পরে রান্নাবান্নার কাজে হাত দিবে।এখন এসব করার প্রয়োজন নাই।
__নীল বলে __ আমি অফিসে চলে গেলাম তুমি নাস্তা করে ঔষধ খেয়ে শুয়ে থাকবে।তাসু বলে__ হুমম।এরপর নীল বাসার নিচে গেলে তাসু দ্রুত বেলকনিতে চলে যায় নীল কে এক নজর দেখবে বলে।
__নীল নিচে গিয়ে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। তখন নীলের চোখ যায় বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা তাসুর দিকে।নীল দেখে তাসু বেলকনির রেলিং ধরে দাড়িয়ে থেকে নীল কে দেখছে।নীল তাসুর দিকে তাকাতেই তাসু মুচকি হেসে হাত নাড়িয়ে বায় দেয়।নীল তা দেখে অনেক খুশি হয়।নীলও মুচকি হেসে বায় দিয়ে রিকশা করে অফিসে চলে যায়।
__নীল অফিসে গিয়ে খুব আনন্দ মনেই কাজ করছে।মনটাও যে আজ বেশ ভালো তার।কিন্তু এই ভালো আর কতক্ষণ থাকবে..??মনে পড়ে গেলো মাহিরার সাথে কাটানোর সময় গুলো। মাহিরার কথা মনে হতেই অটোমেটিক নীলের মন খারাপ হয়ে গেলো।মাহিরা কে নীল এখনো যে ভুলতে পারছে না।কারণ এটা তার প্রথম ভালোবাসা। হাজার টা কষ্ট পেলেও কখনো কেউ প্রথম ভালোবাসার সৃতি গুলো মন থেকে মুছে ফেলতে পারে না।
__মাহিরা চলে যাওয়ার পর থেকে নীল আর তার সাথে যোগাযোগ করেনি।কারণ মাহিরার উপর তার প্রচুর রাগ আর ঘৃণা জমে গেছে।মাহিরা কে নিয়ে ভাবতেই মাহিরা ফোন দিয়ে বসে।নীলের বুকটা কেমন ধুপ করে উঠে। নীল মাহিরার ফোন রিসিভ করে নাই। এভাবে কয়েকবার ফোন দেওয়ার পরেও নীল ফোন রিসিভ করে নাই।নীল ফোন রিসিভ না করাতে মাহিরার রাগ উঠে যায়।ফোন রিসিভ না করাতে মাহিরা এবার ম্যাসেজ দেয়। কিন্তু নীল তার ম্যাসেজের কোন রেসপন্স দিচ্ছে না।
__এই দিকে তাসুর শরীর টাও ভালো হয়ে গেছে। সকালে নাস্তা খেয়ে ডাক্তারের লেখা অনুযায়ী ঔষধ খেয়ে নেয়।তাই বাসার কাজও আগের মতোই করতে পারছে।সন্ধ্যা সময় অফিস থেকে মন খারাপ করে বাসায় ফিরে নীল। কলিংবেল বাজালে তাসু এসে দরজা খুলে দেয়।বাসায় এসে তাসুর মুখ টা দেখে নীলের মনটা কিছু টা ভালো হয়ে যায়।
__নীল রুমে চলে যায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসে পরে। তাসু কে দেখে এখন বেশি বড্ড মায়া হয় নীলের।মনের গহীন বনে লুকিয়ে থাকা ভালো লাগাটা বের হয়ে আসতে বেশি সময় নেয় না।নীল সোফায় বসে ফোন টিপতে থাকে। তাসু কফি নিয়ে রুমে আসে। তাসু বলে__ আপনার কফি টা।নীল বলে __রেখে দাও।
__তাসু চলে যেতে গেলে নীল বলে__ তাসু শুনো না..??তাসু বলে__ জ্বি.. কিছু বলবেন..?? নীল কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারছে না।সাহস টা কেন না জানি কাজ করছে না।তাসু বলে __ কি হলো কিছু বলবেন..??? নীল কথা ঘুরিয়ে বলে__ আচ্ছা কি রান্না করেছো..??তাসু বলে__ এখনো রাতের জন্য কিছু রান্না করেনি।আচ্ছা রাতে কি রান্না করবো..?? কি খাবেন..??
__নীল বলে__ দুপুরে কি খেয়েছিলে..??তাসু কোন কথা বলছে না..??নীল বলে__ কি খেয়েছিলে বলো..??তাসু মাথা টা নিচু করে বলে__কিছু খায়নি।নীল আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে__ কেন কিছু খাওনি..??তাসু বলে __এমনেতেই,, তার মধ্যে আবার সকালে যেই খাবার পাঠিয়েছিলেন সেটা খেয়েই পেট ভরে আছে।
__তাসু বলে__ আপনি কি খাবেন বলেন..?? আমি আবার রান্না বসাবো।নীল বলে__ তুমি যেটা খেতে চাও সেটা তোমার পছন্দ মতো রান্না করো। সেটাই আজ আমি খাবো।
__তাসু বলে__ আমাকেই পছন্দ করেন না তাহলে আমার পছন্দের খাবার টা কি আপনার পছন্দ হবে..??তাসুর এমন কথা টা শুনে নীল আৎকে উঠে। মন কিছু টা খারাপ হয়ে যায়। নীল কিছুই বলছে না।তাসু বলে__ কি খাবেন বলেন না কেন..?? রান্না বসাতে হবে তো..??নীল একটু রেগে বলে~ তোর যেটা খুশি সেটা গিয়ে রান্না কর। সামনে থেকে যা এখন ভালো লাগছে না কিছু।
চলবে….
ব্যস্ততার কারণে আজ গল্প টা একটু ছোট করেই দিলাম। কেমন হচ্ছে আপাতত মনের অনুভূতি দিয়ে জানাবেন।