#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_৩৪
____________________________
বিকেলের অলস প্রহর, অলতার মধ্য দিয়েই কাট/ছে সূচনার। মিসেস আফিয়া আর ইসহাক সাহেব উত্তরা গিয়েছেন মিসেস আফিয়ার ভাইয়ের বাসায় কোনো কাজে।ইরা তার রুমে,তিথি ঘুমাচ্ছে। প্রণয় সেই দুপুরের পর থেকে ল্যাপটপ নিয়ে বসেছে।সূচনার মূলত রা/গ উঠছে এখন একা বসে থাকতে।ইরার ওপর ও রা/গ উঠছে।এই মেয়েটা এমন কেন?তাকে প্রথম দেখে ভেবেছিল -এই মেয়ের সাথে তার ভালো জমবে,একদম কথার ঝুলি নিয়ে বসবে দুজন অথচ তাকে দেখ তার দেখা পাওয়াটাই যেন দু/স্কর।কাউকে না পেয়ে একা একা চুপচাপ বসে আছে ব্যালকনিতে। মেঘের চাদরে ঢা/কা আকাশ।এদিকে বিষন্নতা উপচে পড়ছে সূচনার মনে।প্রবাহমান বাতাসে বৃষ্টির ঘ্রাণ।প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্যের রূপ দৃশ্যমান।মন খা/রাপ আর নীরবতায় সূচনা উপভোগ করছে সেই সৌন্দর্য।কী সুন্দর! এক কাপ চা আর পাশে সে থাকলে মন্দ হতনা।একদম অজান্তেই ভাবনা টা আসলো সূচনার মনে।নিজেই লজ্জা পেল,আজকাল তারও এসব শখ জাগে?তার মতো নিরামিষ মেয়ে আবার এসব ভাবে? তাও প্রণয়ের সাথে,প্রণয় ও নেহাৎ নিরামিষ।জ্বরের ঘোরে কিসব করেছে আর জ্বর যেতেই যেন তাকে চিনতেই পারছেনা।সে তো অবাক।যাক সেসব ভাবনা সব সাইডে রেখে প্রকৃতি দেখতে ব্যস্ত হলো।প্রকৃতি কখনো কোনো কিছু তে তাড়াহুড়ো করে না সব সুন্দর করে করতে।তবুও প্রকৃতিতে ঘটা একেকটা কাজ কতটা নিখুঁত, কত সুন্দর!সত্যি ই আল্লাহর সৃষ্টি অপরূপ। এজন্যই হয়তো বলা হয়েছে -আল্লাহকে না তার সৃষ্টি কে দেখো।মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থেকে যখন প্রকৃতির রূপ দেখতে মগ্ন সূচনা তখনই চোখে মুখে পানির ঝা/পটা লাগল।সে কেঁ/পে উঠলো খানিক।চোখ খুলে তাকালো।আকাশ ভে/ঙে যেন বৃষ্টির আগমন ঘটেছে।গতরাতের বৃষ্টির রেশ কা/টেনি,,সারাদিন মেঘাচ্ছন্ন ছিল আকাশ আর এখন অঝোর ধারায় বৃষ্টি।সূচনা আনমনে কন্ঠে সুর তুললো-
❝তুমি চাইলে বৃষ্টি মেঘও ছিল রাজী
অপেক্ষা সুদূর বর্ষনের…
মা/তাল হাওয়া বইছে দূরে পাখি গাইছে গান
বৃষ্টি তোমার আহবান।
তুমি চাইলে বৃষ্টি মেঘও ছিল রাজী
অপেক্ষা সুদূর বর্ষনের…
মাতাল হাওয়া বইছে দূরে পাখি গাইছে গান
বৃষ্টি তোমার আহবান…
সাদা রঙের স্বপ্ন গুলো দিল নাকো ছুটি
তাইতো আমি বসে একা
ঘাসফুলেদের সাথে
আমি একাই কথা বলি
ঘাসফুল গুলো সব ছন্নছাড়া
ছন্নছাড়া…ছন্নছাড়া….ছন্নছাড়া।❞
তুমি চাইলে জোছনা স্বপ্নীল কোনো এক রাতে
আকাশটা ঘিরে প্রার্থনা
চাঁদটা বলবে হেসে জোছনা এলে শেষে
জানিও তোমার অভ্যর্থনা..
তুমি চাইলে জোছনা স্বপ্নীল কোনো এক রাতে
আকাশটা ঘিরে প্রার্থনা
চাঁদটা বলবে হেসে জোছনা এলে শেষে
জানিও তোমার অভ্যর্থনা
সাদা রঙের স্বপ্ন গুলো দিল নাকো ছুটি
তাইতো আমি বসে একা।
ঘাসফুলেদের সাথে আমি একাই কথা বলি
ঘাসফুল গুলো সব ছন্নছাড়া।
ছন্নছাড়া…ছন্নছাড়া…ছন্নছাড়া।❞
থেমে গেল প্রণয় ও।সূচনার দুইপাশে দুইহাত গ্রিলে রেখে নিজের মাঝে আ/টকে দিল যেনয়।থুতনি তার সূচনার ঘাড়ে।সূচনার কপোলে কপোল স্পর্শ করছে প্রণয়ের।খোঁচা খোঁচা দাড়ির স্পর্শে কেঁ/পে কেঁ/পে উঠছে সূচনা।তা দেখে শব্দহীন হাসল প্রণয়।ফিসফিস করে বললো-
–‘কা/পছ কেন?
………
–‘বলো।
–‘আ,,আপনার জ্বর কি এখনও কমেনি?
সূচনার এমন প্রশ্নে ভ্যাবা/চেকা খেয়ে গেল প্রণয়।হালকা গলা খা/কারি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
–‘জ্বর,, জ্বরের কথা জিজ্ঞেস করছ কেন?
–‘আপনি জ্বরের ঘোরে উল্টাপাল্টা ব/কেছেন সকালে কিন্তু যখন জ্বর কমলো তখন তো আর আপনাকে আমার আশেপাশে ও দেখিনি।এখন আবার সকালের মতো কাহিনি শুরু করেছেন তাই ভাবলাম আবার জ্বর এসেছে কিনা।
নিজ কায়দায় ছোট্ট করে হাসলো প্রণয়।দুষ্টুমির স্বরে বললো-
–‘তার মানে তুমি চাইছিলে যেন আমি সকালের মতো আচরণ করি।তাই তো?
–‘মো,,মোটেও না৷ সে কথা কে বললো?
–‘তুমি ই তো বললে।
–‘আমি কখন বললাম আশ্চর্য!
–‘মুখে বলোনি,,কিন্তু মনের চোখ দিয়ে তোমার মন পড়ে নিয়েছি।
–‘ভালো করেছেন। ছাড়ুন।
–‘যাও,,আমি ধরে রাখিনি তো।
–‘হাত না সরালে যাব কিভাবে?
–‘যেতে পারলে যাও।না পারলে এভাবেই থাকো,আমার তো ভালোই লাগছে।
–‘আমি একটু ছাদে যাব,,বৃষ্টি তে ভিজতে দিবেন আজকে?
–‘অসময়ের বৃষ্টি তে ভিজলে জ্বর উঠবে।
–‘বেশি না একটু ভিজব।
–‘না..
–‘প্লিজ।
–‘ঠিক আছে তবে আমিও যাব।
–‘কে,,কেন?
–‘তুমি বৃষ্টি তে ভিজবে আমি দেখব তোমাকে।
–‘আমি যাবনা তাহলে।
–‘কেন?
–‘এমনি,,
–‘বলো।
–‘ আপনি দাড়িয়ে থাকলে আমার লজ্জা লাগবে।
প্রণয় শব্দ করে ই হেসে দিল।যার দরুন সূচনা সত্যি লজ্জায় পড়ে গেল এখনই।প্রণয় হাসি থামিয়ে গাড় কণ্ঠে বললো –
–‘লজ্জাবতী লজ্জা না পেলে কিভাবে হবে?তার লজ্জা রাঙা মুখ দেখার যে তীব্র তৃষ্ণা এই নেত্র জোড়ায়।লজ্জাবতীর লজ্জা পাওয়ার ব্যবস্থা করব আমি,লজ্জাবতী লজ্জা পাবে সেদিকে চেয়ে হাসব আমি আর বুদ্ধি আট/ব তাকে আরও লজ্জা দেয়ার।
চলো।
________________________________
বাধ ভাঙা বৃষ্টি।ছাদের মধ্যিখানে দাঁড়িয়ে একজন মানবী।ভিজে একাকার অবস্থা তার।পড়নের প্রিন্ট করা শাড়িটা লেপ্টে আছে গায়ে।সন্ধ্যা নামবে নামবে এমন, সাথে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ায় অন্ধকার লাগছে।বৃষ্টির বেগও তীব্র যার দরুন আশেপাশের ছাদ থেকে তেমন বোঝা যাবেনা তাদের অবস্থান।সূচনার সাথে প্রণয় ও ভিজছে।তার না শোনেনি প্রণয়।ভিজছে তার সাথে।সূচনার থেকে কিছুটা দূরেই রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছে প্রণয়। বৃষ্টির ঝুম শব্দ।আসৃতে বললে শোনা যাবেনা তাই সূচনা উচ্চ স্বরে বললো-
–‘আর ভিজবেন এবার আসুন।
প্রণয় শুনলো কি না কে জানে।কিন্তু জবাব আসলো না কোনো।সূচনা এবার এগিয়ে গেল তার দিক।তার পাশে তার দিক মুখ করে দাড়ালো।বললো-
–‘অনেক ভিজেছেন এবার আসুন।আজকেই জ্বর হয়েছে পুরোপুরি না কমতেই আবার আসবে।কথা শোনেননা কেন?কত করে বললাম ভিজবেন না,আমিও ভিজব না চলুন চলে যাই।কিন্তু না কথা শোনে কে?ঘা/ড়ত্যা/ড়া একটা।চলুন।
নিজের মতো করে বকব/ক করে চলেছে সূচনা কিন্তু প্রণয় জবাব দেয়নি কথার।তা দেখে সূচনা আবার কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে নিবে তার আগেই হাত ধরে ফেলল প্রণয়।হাত ধরে টে/নে নিজের সামনে দাড় করালো তার দিকে পিঠ করে।আবারও থুতনি রাখল সূচনার গ্রীবায়।সূচনা বিমুঢ় হয়ে গেল। চুপ করে রইলো সে।তার থুতনি টা সূচনার ঘাড়ে রাখা অবস্থায় নড়চড় হচ্ছে।সেখান টায় আলতো ভাবে স্পর্শ করছে ঠোঁট।প্রণয়ের এক হাতর বিচ/রণ সূচনার উদ’রে।সূচনা শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছে।তাকে স্বাভাবিক দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার কানের কাছে ফিসফিস করে প্রণয় জিজ্ঞেস করলো-
–‘তোমার লজ্জা লাগছে না?
ঠোঁ’ট কাম/ড়ে ধরলো সূচনা।ইশশশ,,এমন প্রশ্ন ও করতে হয়?সে কি এতটুকু ও বোঝেনা যে তার কী পরিমাণ লজ্জা লাগছে।সূচনা নির্বাক দাঁড়িয়ে রইলো সামনে তাকিয়ে।প্রণয় মাথা বাা/কিয়ে সূচনাকে দেখছে।মিনিটের নিরবতা,অতঃপর প্রণয়ে গাড় কণ্ঠের উক্তি-
–‘সে বৃষ্টি বিলাসে ব্যস্ত আর আমি তাকে।এমন মুহুর্ত শত বার আসুক হাজার বার আসুক।
–‘একবার জ্বর হোক তখন বুঝবেন।
ফ/ট করে বললো সূচনা। তার কথার পিঠে প্রণয় বললো-
–‘জ্বর হোক, জ্বরের ঘো/রে সুখ’ময় সব অঘ’টন ঘ’টুক আমার দ্বারা।সে অঘ’টনের কথা চিন্তা করে লজ্জায় মিয়িয়ে যেয়ে মুখ লুকাক সে আমার বু/কে।
সূচনাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে মাথার সাথে মাথা ঠে/কিয়ে দাড়ালো।ফিচেল কণ্ঠে বললো –
–‘তুমি জানো তোমার শরীরের প্রতিটা ভা/জ আন্দাজ করতে পারছি আমি।
সূচনা চ/কিতে দৃষ্টিতে তাকালো।তা দেখে বা/কা হাসলো প্রণয়। বললো-
–‘সত্যি বলছি।বৃষ্টি তে তুমি আমি একা, যদি কোনো ভুল হয়ে যায়, তাহলে কি ক্রো/ধ দেখাবে নাকি সাদরে গ্রহণ করবে?
চোখ খিঁ/চে বন্ধ করে নিল সূচনা।লজ্জায় কান গ/রম হয়ে গেছে তার।প্রণয় বললো-
–‘চলো তাহলে।
______________________
–‘এমনই এক দিন ছিল ইরাবতী, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ বৃষ্টি ছিল না যদিও।কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে নীল জামদানী পড়া, মুখে প্রসাধনীর আলিঙ্গন, হিজাবে আবৃত্ত এক রমনী।স্টেজের সামনে এক পাশে বসে ছিল সে।প্রথম দেখাতেই হৃদ/পিন্ডের অস্বাভাবিক স্পন্দন জানান দিয়েছিল এই মেয়ের মধ্যে কিছু আছে।দেখো সত্যি ই হয়েছে তা, আনার হৃদ রাজ্যে রাজ করছো তুমি, আমার সমস্ত প্রেমাবেগ তোমার জন্য। আমার ইরাবতী, মুগ্ধর ইরাবতী।তোমার
অভিমান ভা/ঙাতে হবে।তর সইছে না, কবে দেখব তোমাকে?তোমার অভিমান ভাঙা/তে পারব তো?
জানালার ধারে দাড়িয়ে নিজেই নিজের সাথে কথাগুলো বলছিল মুগ্ধ। প্রেমিক হৃদয়ের আ/কুলতা।আচ্ছা এই আকু/লতা কি পারবে ইরার মন গ/লাতে?নাকি নতুন কোনো বিচ্ছেদের গল্প র/টবে?
#চলবে