#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_২৭
_________________________
ভেন্যু তে পোঁছে সূচনাকে ইরা,ফিহা দের সাথে রেখে গিয়েছে প্রণয়।যাওয়ার আগে কড়া কণ্ঠে কয়েকবার বলে গিয়েছে -” এখান থেকে একদম নড়বে না,ফোন কাছে রাখবে যেন কল দিলে সাথে সাথে রিসিভ করতে পারো।আগ বাড়িয়ে কোনো কাজ করতে যাবে না।
জবাবে মাথা দুলিয়ে হ্যা বলেছে সূচনা।প্রণয় চলে গেছে তার কাজে।সে ব্যস্ত ভীষণ।এই যে প্রায় ঘন্টা খানেক পার হয়ে গেছে একবার ও এখানে আসেনি। সূচনা চুপটি করে বসে আছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দিনার দিকে।মেয়েট কি সুন্দর লাল টুকটুকে বউ সেজে বসে আছে। একদম পু/তুলের মতো। দিন কয়েক আগে সে ও তো ছিল এই জায়গায়। মাথা ভর্তি চিন্তা ছাড়া তখন কিছু ই ছিল না তার। কিন্তু বিয়ে ও হয়ে গেল আবার দিন ও পার হয়ে যাচ্ছে। সময় বহমান তার প্রমাণ জীবনের প্রতি মুহূর্তে ই পাওয়া যায়। ভাবনার মাঝেই কানে আসলো, কেউ চেচি/য়ে বলছে-
–‘বর এসে গেছে।
দিনার মুখে তখন লজ্জার হানা।তার লাজুক হাসি দেখে সূচনা স্মিত হাসলো।তার মনে পড়েনা যখন প্রণয় বিয়ের দিন তার জন্য অপেক্ষা করছিলো তখন তার অনুভূতি টা কেমন ছিল।থাকবে কিভাবে?প্রণয় তো ঝড়ে/র বেগে এসেছিল তাকে বিয়ে করতে।সে তো জানত ও না প্রণয়কে।সে জায়গায় দিনা আর জাওয়াদ তো একে অপরকে ভালোবাসে।বর এসেছে শুনে তিথি, ইরা,তৃণা,তাসনিন,মিহু সবাই উঠে চলে গেল গেটের কাছে।সূচনা দিনার কাছে এসে বসলো। তার দিকে মুখ তুলে তাকালো দিনা। কিছুটা ভীত মুখশ্রীতে বললো-
–‘ আমার খুব টেনশন হচ্ছে ভাবী।আম্মু কোথায়?
সূচনা মিহি হাসলো। জীবনে সুখের বা কঠি/ন মুহূর্ত যাই হোক না কেন সবার আগে মা নামক মানুষ টাকে প্রয়োজন।তার ছায়া তলে আসলে যেন সব দুঃখ নিমিষেই শেষ হয়ে যায়। সুখগুলো যেন অতিমাত্রায় আনন্দ দেয়। সূচনা হাসি টেনেই বললো-
–‘তুমি বসো,,আমি মামিকে ডেকে দিচ্ছি।
দিনার কাছ থেকে উঠে সামনে পা বাড়ালো সূচনা। একটু খুঁজতেইপাওয়া গেল মিসেস আফিয়া কে।মিসেস দিশার সাথে কথা বলছিলেন উনি। সূচনা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। ইতিমধ্যে মিসেস দিশার চোখে পড়েছে সূচনা। সূচনা এগিয়ে গেল।মিসেস আফিয়া কে বললো-
–‘ মামী দিনাপু আপনাকে ডাকছে।
মিসেস আফিয়া হালকা হেসে মিসেস দিশা কে বললেন –
–‘ আমি একটু আসি আপা,আপনি সূচনার সাথে কথা বলেন।
মিসেস দিশা ও হালকা হেসে “আচ্ছা ” বললেন।মিসেস আফিয়া চলে যেতেই সূচনা জিজ্ঞেস করলো-
–‘কেমন আছো আম্মু? তোমরা কখন এসেছো?
–‘এই তো মিনিট পাচেক আগে। আলহামদুলিল্লাহ,, তুই কেমন আছিস?
–‘আলহামদুলিল্লাহ।
মিসেস দিশা কিছুটা নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করলেন –
–‘সবকিছু ঠিকঠাক আছে না মা?
সূচনা বুঝেও না বোঝার ভান করে বললো-
–‘কিসের কথা বলছো আম্মু?
–‘আসলেই বুঝতে পারছিস না?নাকি না বোঝার ভান করছিস?
–‘ তা করব কেন?সত্যি ই বুঝতে পারছিনা।
–‘আমার ভাগ্যটা না আসলেই খারা/প এদিক থেকে। একটা মাত্র মেয়ে আমার,মেয়েদের নাকি মায়ে/দের সাথে বন্ধুর মতো সম্পর্ক থাকে আর আমার একটা মেয়ে হয়েছে তার মুখ থেকে দু’টো কথা বের করা যায় না। সবকিছু নিজের মাঝে আট/কে রাখে।আমাকে কি তোর কিছু মনে হয় না? নাকি আমি ধরে নিব মা হিসেবে ব্যর্থ আমি,নিজের মেয়ের বন্ধু হতে পারিনি।তার কথা বন্ধু হতে পারিনি।
মা/য়ের কথা শুনে সূচনার বুকটা ছে/ত করে উঠল একদম। অতি ব্যস্ত গলায় বললো –
–‘ তুমি ভুল ভাবছ আম্মু। মা হিসেবে তোমার কোনো ব্যর্থতা নেই বরং মেয়ে হিসেবে ব্যর্থ আমি।নিজের মা’কে ভালো বন্ধু বানাতে পারিনি, মন খুলে কথা বলতে পারিনি।তুমি তো জানো আমি কেমন, সবার মতো সবকিছু অত সহজভাবে বলতে পারিনা আমি।
সূচনা উদাস কণ্ঠে কথাগুলো বললো। মিসেস দিশা তার মন খারা/প দেখে প্রসঙ্গ বদলানোর জন্য তার করা প্রশ্ন টা আবার ও করলেন-
–‘বললি না সব ঠিক আছে কি না?
সূচনা বুঝল উত্তর না নিয়ে ছাড়বে না তাকে।কিন্তু উত্তর টা কি দিবে? আদৌ কি সব ঠিক আছে?মন গহীন হতে উত্তর আসলো-
–‘ হ্যা ঠিকই তো আছে, এই যে তিনবছর আগের সেই বিষা/দময় ঘটনা গুলো সে ভুলতে পেরেছে এতদিনে।আগে কোনো না কোনো না ভাবে তার সামনে চলে আসত সে গুলো কিন্তু এই ক’দিনে ভুল করেও সেগুলো মনে পড়ার ভুল হয়নি তার।এই যে এত সুন্দর পরিবার,সবাই কত ভালোবাসে তাকে,এই যে কালকের ঘটনাটা যদি আগে ঘটতো তখন হয়তো সে আবারও ডুব দিত বি/ষাদে, দুঃখ বিলাস করত তার ভু/লের জন্য। কিন্তু,, কিন্তু প্রণয় কত সুন্দর করে সামলে নিলো তাকে। কত সুন্দর বুঝে তাকে সেগুলো কি ভালো থাকার জন্য যথেষ্ট না? সম্পর্কটা শুধু স্বাভাবিক হয়নি আর পাঁচটা স্বামী স্ত্রীর মতো তাই বলে তারা কি ঠিকঠাক ভালো থাকতে পারে না?
–‘কিরে কোথায় হারা/লি।
নিজ ভাবনায় মত্ত সূচনা খানিক চম/কে উঠল মিসেস দিশার কথায়।তাকে চমকা/তে দেখে মিসেস দিশা ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন –
–‘কিরে কি হয়েছে?এমন করলি কেন?
সূচনা মিহি হেসে বললো-
–‘কিছু না তো মিসেস দিশেহারা।এমনি,আপনার মেয়ে ভালো আছে আলহামদুলিল্লাহ। ঠিকঠাক ই আছে সব আর যা ঠিক নেই তাও ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
সূচনার জবাবে মনে শান্তি আসলো যেন মিসেস দিশার।সূচনাকে হালকা করে জড়িয়ে ধরতেই সূচনা জিজ্ঞেস করলো-
–‘ আব্বু কই?
মিসেস দিশা মুখ ছোট করে বললেন-
–‘ আমার কাছে থাকতে তো ভালো লাগেনা।খালি আব্বু আব্বু, সব ভালবাসা আব্বুর জন্য ই।
সূচনা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসলো।বললো-
–‘ হ্যা আমার সব ভালোবাসা তার জন্য ই।তোমাকে একটুও ভালবাসিনা।এক রত্তিও না।আমি আমার আম্মুকে ভালোবাসি।
–‘ কে আপনার আম্মু?
–‘ উমমম,,,ওনার নাম মিসেস দিশেহারা।
দু’জন একত্রে হাসল।সূচনা হাসছে মিসেস দিশা অপলক তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে। হাসলে কত সুন্দর লাগে তার মেয়েটাকে। সবসময় এভাবেই না হয় খুশি থাকুক তার গম্ভীর স্বভাবের মেয়েটা।
.
.
.
অতি কাঙ্ক্ষিত এক মুহূর্ত এসে আবার চলেও গেল।কাঁদতে কাঁদতে সেই পবিত্র শব্দ উচ্চারিত হলো দিনার মুখ থেকে। সবাই একসাথে বলে উঠল আলহামদুলিল্লাহ।জাওয়াদ নিজের স্ত্রী রূপে গ্রহণ করল দিনাকে।দিনার নতুন পরিচয় যোগ হলো, সে এখন জাওয়াদের স্ত্রী। কান্নার মাঝে কথাটা ভেবে যেন আরও কান্না আসলো তার।সুখের কান্না।কত প্রহর অপেক্ষা করেছে দুজন এই মুহূর্তের জন্য। দিনা আর জাওয়াদ দু’জন কে একসাথে বসানো হয়েছে এখন। কান্না আর লজ্জা দুয়ে মিলে চোখ তুলে তাকাতে পারছে না দিনা। পাশ থেকে জাওয়াদ ফিসফিস করে বললো-
–‘ বলেছিলাম না এবার যা করার করে দেখাব।আজকে রাতে সব হিসাব নিব পই/পই করে।
কিছু বলতে পারলনা দিনা।সেই ফিসফিসানি কণ্ঠ আর উক্তি,,ইশশ।দুটো ই যেন মারা/ত্মক।আজকে রাতে সব হিসাব নিবে কথাটার মানে পরিষ্কার দিনার কাছে যা লজ্জার পরিমাণ তার বাড়িয়ে দ্বিগুণ করছে। জাওয়াদ আবার ও ফিসফিস করে বললো-
–‘আমার দিকে তাকাও।
দিনা তাকালো না।উল্টো চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিল।জাওয়াদ হতাশ চোখে তাকালো।দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে বললো -আজকে রাতে দেখব কোথায় পালাও।
–‘ আপনাদের প্রেমালাপ হয়ে গেলে আমরা একটু ছবি তুলি এখন?
দুজনেরই হুশ ফিরল।সামনে তাকিয়ে দেখল জাওয়াদ এর কয়েকটা কাজিন দাড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে কেউ একজন বলেছে হয়তো।’এমনিতেই বউ লজ্জায় বা/চে না একটু কথা বলতে নিয়েছি আর লম্বা নাক নিয়ে চলে আসছে গ/লাতে’। জাওয়াদ মনে মনে কথাগুলো বললেও মুখে হাসি টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বললো-
–‘হ্যা ছবি তো তুলবেই বিয়ে তো আর আমার না তোদেরই।নেয় তোল আমি চলে যাই।
জাওয়াদ এর কথা শুনে দিনাসহ সবাই হাসল ঠোঁট টিপে।
.
.
–‘ এমন মন খারা/প করে বসে আছ কেন?
মন খা/রাপ করে এক কোণে বসেছিল ফিহা। সূচনা পাশে বসে কথাটা জিজ্ঞেস করলো। ফিহা উদাস কণ্ঠে বললো –
–‘ভাইয়ার জন্য চিন্তা হচ্ছে।
নিষাদের কথা মনে পড়তেই মুখ ভা/ড় হলো সূচনার। কিছু টা গম্ভীর গলায় বললো-
–‘এত চিন্তা করো না,ঠিক হয়ে যাবে।এই ছোট্ট মনে এত টেনশন দিচ্ছ কেন? সবসময় হাসি খুশি থাকবে,মানুষকে বুঝতে দিবেনা তোমার মনের অবস্থা। স্ট্রং রাখবে নিজেকে।
ফিহা বুঝতে পারেনি তার কথার পিঠে সূচনা এমন কঠি/ন কিছু কথা বলবে।কিন্তু তার ভালো লেগেছে কথাগুলো।মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো-
–‘থ্যাঙ্কিউ ভাবি।তুমি অনেক ভালো।
বিনিময়ে মুচকি হাসি দিল সূচনা।একটু চুপ থেকে জিজ্ঞেস করলো-
–‘নিহা কোথায়?
ফিহা মুখ বা’কিয়ে বললো-
–‘জানিনা।
সূচনা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
–‘তোমার সাথে কথা হয়নি আসার পর?
ফিহা একটু মন খারা/প করে বললো-
–‘নাহ। আপু আমাকে তেমন পছন্দ করেনা, প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথা ও বলে না।
সূচনার মন ও খারা/প হয়ে গেল।তার ভাই বোন নেই সেজন্য তার এত আফসোস আর এদিকে এত সুন্দর বোন থাকার পরেও তাকে অবহেলা করছে। সত্যি ই মানুষ মাত্র ই বিচিত্র তার রঙ।দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল সূচনা।
________________________
–‘হাত কা/টল কিভাবে? কী করতে গিয়েছিলে? চুপচাপ এক জায়গায় বসে থাকতে পারো না?
কর্কশ গলায় উক্তি টুকু করলো প্রণয়।আশেপাশের অনেকেই তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। সূচনা টলমলে চোখে হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।ছোট্ট মনে অভিমান জমলো তার প্রণয়ের প্রতি।এভাবে সবার সামনে না ব/কলে হত না।মানুষ কিভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে। এত বড় মেয়ে হাত কে/টে ফেলেছে সেজন্য বরের কাছ থেকে ব/কা শুনছে? ছি/হ। অত বড় কিছু না হলেও কেন যেন চোখ থেকে কান্নারা উপচে পড়ছে। পিছিয়ে গেল সে লাগবে না তাকে দেখানো, এভাবেই থাকুক, কিছু করবেনা।সূচনার হাত থেকে চোখে চোখ পড়তেই বু/ক ধ্বক করে উঠলো প্রণয়ের। টলমলে চোখ সূচনার,এখনই বুঝি গড়িয়ে পড়বে অশ্রু কণা।নিজের ওপর রা/গ হলো প্রণয়ের।কেটারিং এর এক লোকের সাথে ঝামে/লা হওয়াতে এমনি ই মেজা/জ চ/টে ছিল তার।আর সূচনার কা/টা
হাত দেখেই যেন রা/গের মাত্রা বেড়ে গেল।কেন যাবে পা/কামো করতে? সে বলেছিল না এক জায়গায় বসে থাকবে।কিন্তু এক জায়গায় কতক্ষণ বসে থাকা যায়।সে তো রোবট না।কিন্তু বলে ফেলেছে সে রা/গের মাথায়। কথাটা এত জোরে বলে ফেলেছে বুঝতে ও পারেনি প্রণয়। সূচনা চলে গেছে সেখান থেকে।নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে এখন।কি করলো সে?তার প্রণয়ীকে এভাবে কষ্ট দিতে পারল?এখন যে নিজের কষ্ট হচ্ছে। পা/গল পা/গল লাগছে,কিন্তু সূচনার কাছে গেল না প্রণয়।পকেট থেকে ফোন বের করে কল লাগালো কাউকে।
___________________________
বিদায়ের লগ্ন। সবার চোখে ই অশ্রুর অস্তিত্ব। মিসেস আফিয়া ইসহাক সাহেব সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এখন প্রণয়কে জড়িয়ে ধরিয়ে কান্নায় ব্যস্ত দিনা।প্রণয় হালকা হেসে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো –
–‘ এমন ভাবে কাঁদছিস কেন? খুব তো উতলা হয়ে গিয়েছিলি বিয়ে করার জন্য তাহলে এখন কি হয়েছে?
দিনা হালকা করে চাপড় মা/রল প্রণয়ের পিঠে।কাদতে কাঁদতে বললো-
–‘ আজকেও আমার সাথে এমন করবি। তুই অনেক খারা/প ভাইয়া।এতই খা/রাপ যে আমি তোর আপন বোন না হওয়া স্বত্বেও কত আদর দিয়ে আগলে রেখেছিস,এত ভালোবেসেছিস।আমি কিভাবে থাকব তোদের ছাড়া।
প্রণয় হাসল না, তার চোখ ও ছলছল করল না।নির্বাক রইলো।পাশ থেকে মিহু,তিথি ইরাও জড়িয়ে ধরলো দিনাকে।ভাই বোনের মধুরক্ষণের সাক্ষী হলো সবাই।দিনাকে ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিল প্রণয়ই।শেষবারের মতো ফিরে তাকিয়ে সবাইকে দেখল দিনা।ছলছল করা নয়নে তাকিয়ে রইলো। গতিশীল হলো সাদা রঙা প্রাইভেট কার টা। মিসেস দিশা আর আরহাম সাহেব ও চলে গেলেন বিদায় নিয়ে।প্রণয় সবকিছুর মধ্যেই বারবার তাকিয়েছে সূচনার দিকে,মূলত তার হাতের দিকে। হাতে ব্যান্ডেজ করা দেখে প্রশান্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। সূচনা তাকিয়ে ও মুখ ফিরিয়ে নিল।তার রা/গ হচ্ছে কিন্তু কেন? এত রা/গ কেন হচ্ছে তার।নিজেই কারণ বুঝতে পারছে না।
_____________________________
অন্ধকারাচ্ছন্ন রুম।হাটুতে মুখ গুজে ফ্লোরে বসে আছে ইরা। ভেন্যু থেকে সবাই ফিরে এসেছে ঘন্টা দুয়েক।কোনোরকম ফ্রেশ হয়ে রুমের দরজা লক করে, লাইট অফ করে ফ্লোরে বসে পড়েছে ইরা।কত আয়োজন করে কান্না করতে বসেছে। ভাবতেই কান্নার মাঝেও তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল।এতক্ষণ কান্না করার পর কেন যেন আর কান্না আসছে না তার।নিজকে নিষ্প্রাণ মনে হচ্ছে নিজের কাছেই।চোখের সামনে ভেসে উঠল তখনকার দৃশ্য টুকুন।কানে বেজে উঠলো তার কণ্ঠ।ইরা বিড়বিড় করে বলতে লাগলো –
–‘আজকে দিনাপুর বিয়ে তে তো কত সুন্দর পরিপাটি হয়ে এসেছিলেন আপনি মুগ্ধ সাহেব।একদম বরাবরের মতো ছিলেন আজকেও। সবসময় কার মতো আপনার অধর কোণে সেই হাসিটা ও ছিল।আপনি না ভালোবাসেন আমাকে কই বেশ তো চলছেন আপনি।সেই শাক/চুন্নি টাকে ও সাাথে নিয়ে এসেছেন আর আমাকে বলেছেন আমার জন্য ফিরবেন,আমাকে নিজের করে নিয়ে যাবেন।হাসালেন আমাকে।আপনি না ঔ দিন ঠিকই বলেছিলেন আমি সত্যি বো/কা, বড্ড বেশি বো/কা না হলে সেদিনের পর আবার ও আপানকে বিশ্বাস করতামনা,আপনার আশায় থাকতামনা।এই যে এখন কষ্ট পাচ্ছি কেন জানেন কারণ আপনার সেদিনের কথার পর আমি সত্যি ই আপনার অপেক্ষা করছিলাম। আজকে সবকিছুর ইতি ঘটিয়েছেন আপনি। কিন্তু এত সহজে যে আপনাকে ভুলতে পারবনা মুগ্ধ সাহেব কারণ আপনাকে নিজের সাথে এমন ভাবেই জড়িয়ে ফেলেছি আমি।
অন্ধকারে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ইরা।তার এখন কান্না আসছে আবার। চোখ ভড়ে এলো পানিতে,মনে মনে আবারও আওড়ালো ‘মুগ্ধ সাহেব’ বলে।জ্বলজ্বল করা চক্ষু থেকে পানি টুপ করে গড়িয়ে পড়ল কপোল বেয়ে। অস্ফুটে স্বরে বললো-
–‘ আমার এক একটা অশ্রু কণা,এক একটা দীর্ঘশ্বাস আট/কে থাকুক এই বদ্ধ কামড়ার প্রতিটা কোণায় তার বিনিময়ে সব সুখ আপনার হোক মুগ্ধ সাহেব।
#চলবে