#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_১০
__________________________
সকাল পেড়িয়ে দুপুর আর দুপুর পেড়িয়ে এখন প্রায় বিকেল ছুইছুই।সময়টা এখন প্রায় পৌনে চারটা।সূচনাদের বাসায় এসে সবাই পৌছেছে সবে পাঁচ কি দশমিনিট।মিহুর সাথে ইরা,দিনা আর তিথিকেও নিয়ে এসেছে সূচনা, তার ওপর মিসেস দিশার ও জোর গলার আদেশ -“চারজনকেই নিয়ে আসবি।ভুল যেন না হয়।” মায়ের আদেশ রাখতে আর নিজের ইচ্ছে দু’টো রক্ষার্থে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে এসেছে চারজনকেই।ইরা টা তো আসতেই চাইছিলনা।সূচনা শুরুতে অবাক হয়েছিল। তার একমাত্র ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে অথচ তার মধ্যে কোনো উত্তেজনা নেই,না আছে কোনো কিছু নিয়ে আগ্রহ। প্রথমবার ভাইয়ের শশুর বাড়ী আসবে তা নিয়েও এত অনীহা।কিন্তু কেন?পরমুহূর্তে নিজেই নিজেকে শুধিয়েছে-“সবাই তো আর এক হয়না,সে তাদের পরিবারের নতুন সদস্য তাই হয়তো তার সাথে সহজ হতে ইরার সময় লাগছে।সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে।
ড্রয়িংরুমে মুখ লট’কে বসে আছে সূচনা।তার পাশে বসেছে দিনা,তিথি আর ইরা।তাদের সামনের সোফায় নিহাদ আর প্রণয়। টুকটাক কথা হচ্ছে তার আর প্রণয়ে মাঝে।মিহু আর মিসেস দিশা ব্যস্ত পায়ে রান্নাঘর টু ড্রয়িংরুম, ড্রয়িংরুম টু রান্নাঘর করতে ব্যস্ত।সূচনা একবার বলেছিল তাকে সাহায্য করার কথা।সবার সামনে ধম’ক খেয়ে ইজ্জতের যায় যায় অবস্থা। তাই দ্বিতীয় বার আর বলেনি। সূচনার লট’কানে মুখশ্রীর কারণ তার ফুপি মিসেস আফরোজা।আজকেই তাদের বাসায় এসেছে সে।সূচনা ভালো করেই জানে তার বাবা-মা’য়ের সাথে তার বিয়ের ব্যাপার নিয়ে সে কোনো না কোনো ঝামেলা করেছে।জানার জন্য মন আনচান করছে তার।
–‘তোমরা একটু বসো, আমি রান্নাঘর থেকে আসছি একটু।
ইরা,দিনা আর তিথিকে উদ্দেশ্য করে বললো সূচনা।
তারাও হাসি মুখে সায় জানালো।ড্রয়িং রুম থেকে রান্নাঘরে আসতেই দেখল মিসেস দিশা রান্না করতে ব্যস্ত।ঘামে ভিজে উঠলো একেবারে বা’জে অবস্থা।তার সাথে হাতে হাতে কাজ করছে আফরিন। নিহাদের স্ত্রী আফরিন।সূচনার দিকে চোখ পড়তেই আফরিন কাজ করতে করতেই জিজ্ঞেস করলো-
–‘কেমন আছো নন্দিনী?
–‘আলহামদুলিল্লাহ,, তুমি কেমন আছো?
–‘আলহামদুলিল্লাহ।
–‘হৃদু কোথায়?
–‘ও রিশার কাছে।
–‘আচ্ছা কিন্তু রিশাকে দেখলাম না তো।নিচেও আসলোনা।কোথায় দু’জন?
আফরিন কণ্ঠে একটু উদাস উদাস ভাব এনে বললো-
–‘রিশা ওপরের রুমে।ওরা দু’জন কিন্তু তোমার ওপর বেশ রে’গে আছে।হৃদু তো সেই অভিমান করেছে, বলেছে আর কথাই বলবেনা।
সূচনা মুখ ল’টকে বললো-
–‘কেন?কথা ই বলবেনা?
–‘যেখানে আমিই রে’গে আছি সেখানে আমার মেয়ের আর নাতনির রে’গে থাকা তো স্বাভাবিক।
পেছন থেকে উক্ত বাক্যটুকু কর্ণধার হলো সবার।সূচনা না দেখলেও কণ্ঠ ধরতে দেরি হলো না।চোখমুখ শক্ত হয়ে গেল সাথে সাথে। পেছন ঘুরে শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো-
–‘আপনার এমন রে’গে থাকার কারণ কি?সেটা জানতে ইচ্ছুক না আমি।রা’গ ভাঙানোর ও কোনো ইচ্ছে নেই।
সামনে ঘুরে আফরিন আর তার মা’য়ের উদ্দেশ্যে বললো-
–‘আমি উপরে যাচ্ছি রিশা আর হৃদুর কাছে।
আবার মিসেস আফরোজার দিকে ঘুরে বললো-
–‘তাদের রা’গ ভা’ঙাতে।
সূচনার কথায় ফু’সে উঠলেন মিসেস আফরোজা।রা’গে ফুস’তে ফুস’তে মিসেস দিশা কে বললেন-
–‘কেমন পরিবারে মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন ভাবি।দুইদিন না যেতেই ব্যবহারের এমন অধঃপতন।কেমন ছেলে না আছে মা না আছে বাবা।থাকে মামা-মামীর সাথে,আবার ছেলের নিজের বোন আছে।বোনপর দায়িত্ব নিতে হবে।কিভাবে বিয়ে দিলেন এমন ছেলের কাছে।কিভাবে টি’কবে সংসার?মেয়ের ব্যবহার দেখেছেন?অস’ভ্য!একদিনেই কি জা’দু করেছে ঔ ছেলে কে জানে!
রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ই যাচ্ছিল সূচনা কিন্তু মিসেস আফরোজার কথা শুনে থমকে দাড়িয়েছে।রা’গে তার মাথার র’গ ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম।মানুষের মানসিকতা এত নিচু?মা-বাবা নেই সেটা নিয়েও কথা শোনাতে হবে?মা-বাবা না থাকলে সে ঘরের ছেলে মেয়েদের কি বিয়ে হয়না?পুনরায় পেছন ঘুরে দাড়ালো মিসেস আফরোজার পেছনে।মিসেস দিশা বারবার বলছেন তাকে -“আপা এখন এসব কথা আর বলিয়েননা,কেউ শুনলে সমস্যা হবে।কিন্তু তার কথা কানে নিচ্ছেন না উনি।মনে মনে হয়তো নতুন কিছু কথা ঠিক করছেন শোনানোর জন্য।মিসেস দিশার কথা উপেক্ষা করে সূচনা শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো তার মা’য়ের দিকে।তারপর শীতল কণ্ঠে শোধালো তাকে-
–‘তুমি রিকোয়েস্ট করছ কেন আম্মু?হু ইজ সি?কোন অধিকারে কথা বলছে আমার বিষয়ে?বলে দাও আমার ব্যাপারে,প্রণয় আর ওনার পরিবারের ব্যাপারে কোনো ধরনের কথা যেন না বলে।এসেছেন ভাইয়ের বাড়িতে, খা’ক,ঘুমাক,থাকুক যতদিন মন চায় কিন্তু কোনোধরনের বাড়তি কথা যেন না বলে।আর হ্যা এমন নিচু মানসিকতার মানুষ প্রণয় বা তার পরিবার না।সুখে থাকার অধিকার সবারই আছে,মা-বাবা থাকুক আর না থাকুক।আর কে বলেছে ওনার মা-বাবা নেই?মামা-মামী আছেন ওনারাই তার আরেক বাবা-মা আর আমার শশুর শাশুড়ী।আর সংসার টেকা’তে হলে শশুর শাশুড়ীর দরকার হয়না।ভাবি আপনার সংসার টি’কে আছেনা।কেউ একজন তো শত কুট’নীতি, চাল চেলেও পারেনি আপনার সংসার ভাঙতে।তাহলে?কিছু মানুষের চিন্তা ধারাই লো ক্লাস মানুষদের মতো অথচ তারা আবার নিজেদের হাই ক্লাস সোসাইটির বলে দাবি করে।হাহ!
সূচনার কথাগুলো যে তার উদ্দেশ্যেই বলা ছিল তা বুঝতে বিন্দু পরিমাণ বেগ পেতে হলো না মিসেস আফরোজাকে।শীতল কণ্ঠে করা সেই অপমান।সূচনা আর এক সেকেন্ড ও দাড়ালো না সেখানে।রান্নাঘর থেকে বের হতেই দেখা হলো প্রণয়ের সাথে।প্রণয়কে এখানে দেখে ভ’য় পেয়ে গেল সূচনা।তবে কি প্রণয় কিছু শুনে ফেলেছে?শুনলে কি ভাববে সে?রা’গের পরিমান তার দ্বিগুণ থেকে দ্বিগুণ হলো।এমন কেন এই মহিলাটা?সবসময় একটা না একটা ঝা’মেলা পা’কাবে।
–‘সূচনা?
আচমকা প্রণয়ের ডা’ক।হকচ’কিয়ে গেল সূচনা।তার চেয়ে বেশি অবাক হলো প্রণয়ের মুখে প্রথমবারের মতো নিজের নাম শুনে।
–‘সূচনা?
আবারো শান্ত কণ্ঠের ডা’ক।সূচনা নিচু স্বরে সাড়া দিল ডাকে’র-
–‘জ্বি বলুন।
–‘ফ্রেশ হব,,রুমে চলো।
–‘জ্বি।ইরা,তিথি ওরা কোথায়?
–‘মিহুর সাথে গেছে।
–‘ওও।
প্রণয়কে সাথে নিয়ে নিজের রুমে আসলো সূচনা।ব্যাগ থেকে তার জন্য ট্রাউজার,টি-শার্ট বের করে দিয়ে তার হাতে দিয়ে বললো-
–‘আপনি ফ্রেশ হন আমি রুমেই আছি,কিছু লাগলে বলবেন।
মাথা নাড়ালো প্রণয়।পা বাড়ালো ওয়াশরুমে।
.
.
–‘আম্মু ওনার সমস্যা কী?কেন এসেছেন উনি?নিশ্চয়ই আব্বুকে জেরা করতে।আম্মু তখন প্রণয় রান্নাঘরের বাইরেই ছিল।কিছু শুনেছেন কি না কে জানে।শুনলে কি হবে ভাবতে পারছ?বিয়ের পরেরদিন ই শশুর বাড়ী এসে এ ধরনের কথা নিশ্চয়ই আশা করে না।আগেই জানতাম আমি উনি আসবেন, আর ওনার উল্টা পাল্টা কথা তো বলবেনই। আম্মু ওনার আর একটা বোন ও তো আছেন কিন্তু ওই ফুপ্পি তো এমন না।প্রণয় যদি শুনে থাকে তাহলে কষ্ট পাবেন কারণ ওনার বাবা -মা কে নিয়ে কথা বলেছেন উনি।
একনাগাড়ে মিসেস দিশা কে কথা গুলো বললো সূচনা।মিসেস দিশা হালকা অবাক হলেন। মেয়ে এক রাতেই তার বর আর তাার পরিবার সম্পর্কে এত ভাবছে!ভালো ই তো।
–‘আম্মু তুমি কি শুনছো না আমার কথা?
কিছুটা বিরক্তিমাখা কণ্ঠে ই বললো সূচনা।
মিসেস দিশা হালকা হেসে বললেন-
–‘শুনছি তো।
–‘কী শুনছো?
–‘আমার বুদ্ধিমান মেয়ের কথা।আমার মেয়েটা কেমন যেন এক রাতেই হুট করে বড় হয়ে গেল।যাক গে শোন বাদ দে এসব উনি চলে যাবেন।তুই আয় তো আমার সাথে কথা আছে।
–‘চলো।
.
.
–‘কেমন আছিস বেলী রানী?
মিসেস দিশার সাথে কথা বলে নিজের রুমের দিকেই যাচ্ছিল সূচনা।আচানক পেছন থেকে কারো ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে করা উক্তি।পা থেমে গেল সূচনার।সে জানে মানুষটা কে।কিন্তু সময়,সম্পর্ক আর পরিস্থিতি ঠিক রাখার সুবিধার্থে মানুষটা এখন অচেনা।চোখ মুখ স্বাভাবিক রেখে পেছন ঘুরে তাকালো সূচনা।হ্যা সেই তো।কিন্তু আগের আর এখনের মধ্যে যে ফারাক স্পষ্ট।চোখ নামিয়ে নিল সে।করার কিছুই নেই এছাড়া।
#চলবে