প্রণয়ের সূচনা পর্ব ৫

0
811

#প্রণয়ের_সূচনা
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_০৫
_________________________
চ’মকিত দৃষ্টিতে সামনের মানুষটার দিকে তাকিয়ে আছে সূচনা।মানুষটা আর কেউ না প্রণয় ই।এই মূহুর্তে এখানে তার উপস্থিতি একদমই অকল্পনীয় ছিল।তার ব্যাপারটা যেন এক মূহুর্তের জন্য মাথা থেকে বে’ড়িয়ে গিয়েছিল।হুট করে তাই সামনে আসাতে হতবিহ্বল সূচনা।সে অবশ্য একা নয়।তার সাথে আরেকটা ছেলে আছে।তার বয়সী হবে বা দু-এক বছরের ছোট ও হতে পারে।প্রণয় সূচনাকে তার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মিহি স্বরে জিজ্ঞেস করলো-

–‘কেমন আছো?

সূচনা আরেক দফা অবাক। অবাকের কারণ ‘কেমন আছে’ সেটা জিজ্ঞেস করা না।কারণ হচ্ছে প্রণয় তাকে তুমি বলে সম্বোধন করছে।প্রণয়ের তুমি সম্বোধন যেন তার মন গহীনে অন্য রকম এক অনুভূতির জোগান দিল।সূচনার উত্তরের আশায় প্রণয় তাকিয়ে আছে তার মুখপানে।সূচনা মিনমিন করে বললো-

–‘আলহামদুলিল্লাহ।আপনি?

স্মিত হেসে প্রণয় জবাব দিল-

–‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
.
মিহু কথা বলছে একাধারে,তার সাথে তাল মিলিয়ে প্রণয় ও ব’কবক করছে।সূচনা ভ্রুকুটি করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।’এই লোক এত কথা বলতে পারে?প্রথম দেখে তো মনে হয়েছে একেবারে গম্ভীর স্বভাবের মানুষ।আর মিহুটা এমনভাবে কথা বলে যাচ্ছে যেন কত বছরের পরিচয় তাদের।হুহ।মিহু কথা বলার সাথে সাথে আড়চোখে প্রণয়ের পাশে বসা ছেলেটাকে পরখ করছে।এ দিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে সে দিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার ফোন আর ফাইল নিয়ে ব্যস্ত।একবার ফোনের দিকে তো আরেকবার ফাইল পরখ করছে।তার মাঝেই ভুলবশত তার চোখ চলে যায় মিহুর দিকে।মিহু আগে থেকেই তাকিয়ে ছিল যার দরুন চোখাচোখি হয়ে যায় দু’জনের।তার চোখে চোখ পড়তেই মিহু ভে’ঙচি কাট’লো তাকে।ছেলেটা হতবাক হয়ে গেল।কথা নেই বার্তা নেই মুখ বা’কালো কেন?সে কি করেছে?আশ্চর্য!
সে দিকে না ভেবে নিজের কাজে মনোযোগ দিল সে।কথায় কথায়,জানা গেল তার নাম তন্ময়,প্রণয়ের এসিসট্যান্ট।ক্লাইন্টের সাথে মিটিং এসেছিল তারা।যাওয়ার সময়ই মিহুর ডা’ক পড়ে।তাদের অর্ডার করা খাবার ও এসে পড়েছে ইতিমধ্যে। সূচনা কাচুমাচু’ হয়ে বসে আছে। এমনিতেই বে’চারি সর’মে ডুবে যাচ্ছে তারওপর প্রণয় সামনে আবার সাথে আর একজন ছেলে এখন তো মনে হচ্ছে টু’স করে টেবিলের নিচে ঢু’কে যায়।কোনোরকম খাওয়ার পর্ব শেষ করলো। খাওয়া শেষে বাধলো আর এক বিপত্তি। বিল কে দিবে?তর্কবিতর্কের পর অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো যার যার বিল সেই দিবে। অন্য সময় ট্রিট দেওয়া যাবে।রেস্টুরেন্ট থেকে বেড়িয়ে মিহু বললো-

–‘আমরা তাহলে আসি ভাইয়া।

বাধ সাধলো প্রণয়। বললো-

–‘তোমাদের আমি পৌঁছে দিয়ে আসবো।

সূচনা তড়িৎ গতিতে জবাব দিলো –

–‘না না দরকার নেই।আমরা যেতে পারব।

–‘আমিও জানি তোমরা যেতে পারবে।কিন্তু আমার সাথে দেখা যেহেতু হয়েছে সো এখন আমার সাথেই যেতে হবে।

–‘কিন্তু,, আমরা তো

–‘বিশ্বাস হচ্ছে না?রিল্যাক্স আই কেন আন্ডারস্ট্যান্ড, কি ভাবছো তুমি।আমারও বোন আছে।ইউ কেন ট্রাস্ট মি।

আর কিছু বললো না সূচনা।রেস্টুরেন্ট থেকে একটু দূরেই পার্ক করা ছিল গাড়ি।তাই হেঁটেই সেখানটায় যেতে হবে।শুরুতে তন্ময় তারপর মিহু তার পেছনে সূচনা আর তার থেকে এক কদম পেছনে প্রণয়।ফোন স্ক্রোল করতে করতে হাঁটছে সে।

–‘তুমি বলে সম্বোধন করায় সে কি রাগ হয়েছে?

আচমকা কানে’র কাছে বে’জে উঠলো কথাটা।পা থেমে গেল সূচনার। তার সাথে প্রণয় ও থেমে গেল। সূচনা আমতাআমতা করে বললো-

–‘আসলে,,

–‘আমার উত্তর এটা না।আঙ্কেলের কাছ থেকে জেনেছি সে নাকি আমার থেকে সাত -আট বছরের মতো ছোট হবে।তাই তাকে আপনি বলে সম্বোধন করাটা আমার কাছে মানানসই মনে হয়নি তাই তুমি বলেই সম্বোধন করলাম।

এবার সূচনা স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো –

–‘আমি রা’গ করিনি।

তার জবাবে ছোট্ট করে হাসলো প্রণয়।এদিকে মিহু তন্ময়ের পেছনে হাঁটতে হাটতেই বিড়বিড় করছে।’ভাব কত!পেছনে যে কেউ আছে সেদিকে একটুও পাত্তা নেই।হুহ!মি.তেলময়!

–‘কিছু বললেন?

মিহু হকচকিয়ে বলে উঠলো-

–‘আব,,ব,,ক,,কই কিছু বলিনি তো।

–‘আমি তো শুনলাম।

–‘বেশি শোনেন।কা’নে সমস্যা আছে।

তন্ময় একটু রা’গ দেখিয়ে বললো-

–‘কি বললেন?

মিহু মুখ ল’টকে বললো-

–‘এমা,,আপনার তো দেখি আসলেই কা’নে সমস্যা। কানে কম শোনেন।

–‘কি উল্টাপাল্টা ব’কছেন? কা’নে সমস্যা হতে যাবে কেন?ঠিকঠাক ই আছে।

মিহু চিন্তিত গ’লায় বললো-

–‘সেটা বড় কথা না। আমিতো ভাবছি আপনার ভবিষ্যৎ এর কথা।সে তো পুরো অন্ধকার আর অন্ধকার।

তন্ময় কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো-

–‘ভবিষ্যত অন্ধকার হতে যাবে কেন?

–‘আরে এমন কা’লা ছেলেকে কে বিয়ে করবে?যদি বিয়ে করে ও দেখা যাবে বিয়ের পর বউ বলবে চাল আনতে আপনি নিয়ে আসবেন তেল।রোজ রোজ একই কাজে অতিষ্ঠ হয়ে বউ ঝ’গড়া করে চলে যাবে।তো বউ না থাকলে হলো না আপনার ভবিষ্যত অন্ধকার।

কথাগুলো বলে মিহু তন্ময়কে পাশ কা’টিয়ে চলে গেল।তন্ময় বো’কার মতো দাড়িয়ে রইলো। তাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রণয় বললো –

–‘এমন মূ’র্তির মতো দাড়িয়ে আছো কেন?তোমায় আবার কে কি করলো?

তন্ময় থতমত খেয়ে বললো-

–‘আব,,ব আমায় কে কি করবে স্যার।কিছু না এমনি।

গাড়ীর পেছনের সিটে সূচনা আর মিহু।ড্রাইভিং সিটে তন্ময় আর তার পাশে প্রণয়।

সূচনাদের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলো সূচনা আর মিহু গাড়ি থেকে নাম’লো সাথে প্রণয় ও।সদর দরজার সামনে যেয়ে কলিং বেল দেয়ার সাথে সাথে ই দরজা খুলে দিলেন মিসেস দিশা।প্রণয়কে দেখেই মিষ্টি হাসলেন।প্রণয় ও হাসিমুখে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো।তারপর বললো-

–‘আপনার কথা মতো ঠিকঠাক ভাবে পৌঁছে দিয়ে গেলাম।এবার তাহলে যাই।

–‘সে কি ভিতরে তো আসবে

–‘না আন্টি দেরি হয়ে যাবে।আসি।

প্রণয় চলে গেল।সূচনা অবাক দৃষ্টিতে তাকালো মিসেস দিশার দিকে।অবাক কণ্ঠে ই জিজ্ঞেস করলো-

–‘তোমার কথামতো দিয়ে গেছে মানে?

–‘হ্যা!তোদের সাথে রেস্টুরেন্টে নাকি দেখা হয়েছে। প্রণয় ফোন দিয়ে বলেছিল আমায়। আমি ই বলেছিলাম।সেসব বাদ দেয়।ফ্রেশ হয়ে আয় দু’জন।

–‘হ্যা চল(মিহু)
.
.
রাত সাড়ে দশটার কাছাকাছি।বারান্দায় কাউচে বসে আছে সূচনা।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি বাইরে,,বাতাসের বেগটা একটু বেশিই।আস্তে আস্তে হিমশীতল ঋতুর আগমন হওয়ার পথে।তারওপর এই শীতল ভেজা বাতাস,শরীর কা’টা দিয়ে উঠছে তার।গায়ে জ’ড়ানো ওরনা টা আরও ভালোভাবে জ’ড়িয়ে নিল।

–‘ঠান্ডা লাগ’ছে তবুও এখানে বসে আছিস কেন?রুমে যা।

তার পাশে বসতে বসতে উক্ত কথাটুকু বললো মিহু।তার দিকে তাকিয়ে সূচনা বললো-

–‘ঠান্ডা লাগছে কিন্তু প্রশান্তিময় অনুভূতি।আচ্ছা আন্টির সাথে কথা হয়েছে?

–‘হ্যা হয়েছে মাত্র।সন্ধ্যায় ফোন করে বলেছিলাম এখন আবার কথা বললাম।

–‘যাক ভালো করেছিস।

–‘হুম।একটা কথা বলি?

–‘তুই আবার জিজ্ঞেস করছিস?বলে ফেল।

–‘তুই বিয়ে করে ফেল।

–‘কি?

–‘না মানে বিয়েতে রাজি হয়ে যা আরকি।

–‘জানিনা,,দো’টানায় পরে গেছি জানিস।

–‘তুই এখনো সেখানেই,,

–‘আমি সেটা নিয়ে মোটেও ভাবছি না মিহু। অতীতে যে ছিল, ছিল।এখন নেই। তার সাথে জড়া’নো প্রথম আর শেষ স্মৃতি টুকুও আজকে শেষ করে দিয়েছি। ওই ডায়েরি টা জ্বালিয়ে দিয়েছি আজকে।আমি চাইনা ঔ ব্যাপারে আর কেউ জানুক।আমি নিজেও ভুলে যেতে চাই।

সূচনার কথা শুনে মিহু উৎফুল্লতা মিশ্রিত কণ্ঠে বললো –
–‘উফফ,,সূচি এতদিন পর একটা ভালো কাজ করেছিস।অনেক খুশি আমি।জানিস একজন ইংরেজ কবি বলেছিলেন- “We will meet many people along the way,we will be friends but at the end of the day only one person will remain who is perfect for us”. ঠিকই তো চলার পথে কত মানুষের সাথে পরিচয় হয় কিন্তু দিনশেষে একজনই থাকে যে বেস্ট হয়।তাই যাই করিস না কেন ভেবে চিন্তে করবি।যেন পরে না আফসোস করতে হয়।আর একটা কথা মনে রাখিস আমি সবসময় আছি তোর সাথে।

জবাবে একগাল হাসলো সূচনা।হাসতে হাসতেই বললো-

–‘থ্যাঙ্কিউ সবসময় পাশে থাকার জন্য আর এই প্রবাদ বাক্য যে কোন ইংরেজ কবি করেছেন তা আমার ভালো করেই জানা।এখন আয় রুমে।

সূচনার কথায় জিভ কা’মড়ে ধরলো মিহু।বুঝে গেছে মেয়েটা।ধ্যাত!বো’কা বো’কা হাসি দিয়ে সূচনার সাথে পা বাড়ালো রুমে।
.
.
.
-‘আব্বু আমি বিয়েতে রাজি।’

ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছিলেন আরহাম সাহেব।তখনই সূচনা এসে উক্ত কথাটুকু বললো।মেয়ের এমন সোজাসাপটা কথায় তিনি কিঞ্চিৎ অবাক হলেন।

#চলবে
(আসসালামু আলাইকুম।সবার কাছে প্রশ্ন -গল্পটা কি অগোছালো মনে হচ্ছে? ভালো হচ্ছে না?জানিয়ে যাবেন। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।ভালোবাসা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here