অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০৬
Writer:Shakif Arefin
মাহিরা বলে__এই তুমি কোথায়.?? নীল বলে__ কেন আমি তো বাসায় যাচ্ছি।মাহিরা বলে__আমি তোমার বাসার কাছাকাছি আছি।তুমি সোজা আমার কাছে চলে আসো।
__কিছুক্ষণ পর নীল মাহিরার কাছে যেতেই মাহিরা রেগে বলে~ তুমি আমার ফোন ঠিক মতো রিসিভ করছো না কেন..? রিসিভ করলেও কাজের অজুহাত দেখিয়ে কেটে দাও।এভাবে এভয়েড করার মানে টা কি..??আমি তো দেখছি তুমি আমার সাথে কিছু টা গরমিল করার চেষ্টা করছো।
__নীল বলে __ তুমি যা ভাবছো তার কিছুই হয় নি।আমি তোমাকে কোন প্রকার এভয়েড করছি না।সত্যি এখন আমার কাজের খুব প্রেশার যাচ্ছে। তাই তোমাকে সময় দিতে পারছি না।
__মাহিরা বলে__তোমার কি এতো কাজের প্রেশার যে আমাকে সময় দিতে পারছো না.?? নাকি এখন বউ কে মনে ধরেছে..?? নীল একটু রেগে বলে~মাহিরা কি এসব আজেবাজে বকছো..? মাথা তোমার ঠিক আছে..?? মাহিরা বলে __হুম আমার মাথা সম্পূর্ণ ঠিক আছে।
__নীল বলে__ এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না।বাসায় চলো সব বোঝিয়ে বলছি তোমাকে।নীল মাহিরা কে নিয়ে বাসায় গিয়ে কলিংবেল বাজাতেই তাসু এসে দরজা খুলে দেয়। নীলের সাথে মাহিরা কে দেখে তাসুর মনে কেমন উতালপাতাল ঢেউ বয়ে গেলো।মাহিরা কে নীলের সাথে দেখে তাসুর খুব কষ্ট হচ্ছে। এই বোঝি চোখ দিয়ে পানি চলে আসবে।
__তাসু বলে __আজ এতো তাড়াতাড়ি অফিস থেকে চলে আসলেন যে..??নীল তাসুর কাছে অফিসের ব্যাগ টা দিয়ে বলে __আজ অফিসে তেমন কোন কাজ ছিল না তাই বাসায় চলে আসছি।তাসু নীল কে কথা টা জিজ্ঞেস করায় মাহিরার কাছে জিনিস ভালো লাগলো না।তাই মাহিরা কেমন ভয়ংকর চোখে তাসুর দিকে তাকায়।
__নীল বলে__ব্যাগ টা রেখে আমাদের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আয়।তাসু বলে__ জ্বি। নীল রুমে গিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। মাহিরা ড্রয়িং রুমে বসে আছে। তাসু কফি নিয়ে এসে বলে__ আপু তোমার কফি। মাহিরা কফি টা হাতে নিয়ে বলে __ স্বামীর খেদমত দেখা যায় ভালোই করিস..??কথা টা শুনে তাসু মাহিরার দিকে তাকায়। মাহিরা কফি টা মুখে দিয়ে সাথে সাথে আবার ফিক করে ফেলে দেয়। মাহিরা কিছু না বলে ঠাসস করে তাসুর গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
__মাহিরা বলে_তুই কি কফিতে চিনি দিতে ভুলে গেছিস.??জানিস না কফিতে চিনি বেশি দিতে হয়।তাসু বলে__ আপু চিনি তো পরিমাণ মতোই দিয়েছি। এর আগেও তো তোমার কফিতে এই পরিমাণ চিনি দিয়েছিলাম। মাহিরা বলে__ তুই কিন্তু বড্ড বেশি কথা বলছিস।তোর এমন হাল করবো না নীলের বউ হয়ে থাকার সখ মিটে যাবে।
__মাহিরা বলে__ তুই খুব শক্ত একজন মেয়ে রে।এতো মার খাওয়ার পরেও নীলের পায়ের নিচে পরে আছিস।নীলের বউ হয়ে এই বাসায় থাকা তোর খুব সখ তাই না..??আমিও দেখে নিবো নীলের বউ হয়ে তুই কিভাবে এই বাসায় থাকিস।
__কথা গুলো শুনে তাসুর খুব কষ্ট হচ্ছে। স্বামীর হাতেও মার খেতে হয় আবার এখন অন্য মেয়ের হাতেও থাপ্পড় খেতে হয়।তাসু বলে__আপু তোমাদের মাঝখানে আমি কখনো বাধা হয়ে দাড়াবো না।তোমরা যেন এক সাথে থাকতে পারো সেই চেষ্টাই করবো।এটা বলে তাসু কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে যায়।
__তাসু চলে যাওয়ার পর মাহিরা ইচ্ছে করে নিজের জামার উপর কফির মগ টা ফেলে দেয়। নীল ফ্রেশ হয়ে আসার পর মাহিরা নীল কে বলে __ তুমি কি এখানে আমাকে অপমান করার জন্য নিয়ে আসছো..?দেখে তোমার বউ আমার কি অবস্হা করেছে..??ইচ্ছে করে আমার উপর কফির মগ ঢেলে দিয়েছে। যেন আমি বাসায় যেতে না পারি।
__এটা শুনে নীলের মাথায় আগুন উঠে যায়। নীল সত্য মিথ্যে যাচাই না করে বলে__ তুমি বসো আমি আসছি।নীল তাসুর সামনে গিয়ে ঠাসস ঠাসস করে কয়েক টা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।তাসু থাপ্পড়ের আঘাত সামলাতে না পেড়ে পরে গিয়ে খাটের কোনায় লেগে কপাল ফেটে যায়। তাসু বোঝতে পারছে না কি অপরাধের জন্য তাকে মারা হচ্ছে।
__নীল বলে__ তোর সাহস কি করে হলো মাহিরার গায়ে গরম কফি ফেলার..?? তাসু কান্না মিশ্রিত স্বরে বলে__সত্যি আমি আপুর গায়ে কফি ফেলি নি।আমি তো কফি দিয়ে চলে আসছি। নীল বলে__ তুই আবারও আমার সামনে মিথ্যা বলছিস..?তাসু বলে __আপনি বিশ্বাস করুন কফিতে চিনি কম হওয়াতে আপু আরো আমার গালে থাপ্পড় দিয়েছে। তাই তো আমি সাথে সাথে চলে আসছি।আপুর সামনে আর যায় নি।
__তাসুর কান্না ঝরিত মুখ টা থেকে নীলের মনে হচ্ছে তাসু মিথ্যে বলতে পারে না।আর নীল এও খেয়াল করে মাহিরার কথা বলার সময় কথার ভাব টা মিথ্যা মিশ্রিত ছিল। নীল দেখে মাহিরার মুখে খুব হাসি। তাসু কে মারতে দেখে সে হাসছে। এটা দেখার পর নীল আর বোঝতে বাকি রইলো না যে, এ সবই হচ্ছে তার প্ল্যান।
__নীল মাহিরার কাছে গিয়ে বলে __তুমি যে এতো বড় মিথ্যা কথা বলবে আমার জানা ছিল না।নীলের কথায় মাহিরা বসা থেকে উঠে চোখ বড় করে তাকায় নীলের দিকে। মাহিরা বলে __কি আজবাজে কথা বলছো..?নীল বলে __ আমি আজেবাজে কথা বলছি..?? তুমি ইচ্ছে করে কফি টা নিজের উপর ঢাললে তাসু কে শুধু শুধু থাপ্পড় দিলে আবার মিথ্যা কথা বলে আমার হাতে মারও খাওয়ালে তাই না..?তুমি তো খুব চমৎকার অভিনয় পারো!!
__মাহিরা বলে__ ঐ থার্ড ক্লাস মেয়ে টা তার দোষ আমার উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। তার কথা তুমি একদম বিশ্বাস করবে না। তুমি একটু দাঁড়াও আমার নামে মিথ্যা কথা বলা বের করছি।
__মাহিরা তাসুর কাছে যেতে চাইলে নীল হাত ধরে বলে~ খবরদার তাসুর কাছে যাওয়ার জন্য এক পা-ও বাড়াবে না।বেচারি তোমার নামে কোন মিথ্যা কথা বলে নাই । তুমি তো ভালো করেই জানো আমি তাসু কে পছন্দ করি না। তাই তো তুমি বারবার ইচ্ছে করে আমার হাতে তাসু কে মার খাওয়াতে চাও।
তুমি যে এতো বড় মিথ্যা কথা বলে তাসু কে মার খাওয়াবে তা আমি কখনো ভাবতে পারি নি।
__আর আমিই বা কতো বড় বোকা।তোমার কথা শুনে তোমাকে বিয়ে করবো বলে ইচ্ছে মতো দিনের পর দিন সহজ সরল মেয়ে টার উপর অত্যাচার করেছি। আজ পর্যন্ত সে মুখের কথা টা পর্যন্ত বলে নাই। সব কষ্ট মুখ বোঝে সহ্য করে নিয়েছে শুধু আমাকে সুখে দেখবে বলে।আমার সুখ দেখতে গিয়ে নিজের সুখ কে বিসর্জন দিয়েছে।
__মাহিরা রেগে বলে~ এখন তোমার কাছে ঐ ফকিন্নি মেয়ে টা ভালো..??এখন তার প্রতি খুব মায়া হচ্ছে তাই না..??নীল কিছু না বলে ঠাসস করে মাহিরার গালে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। তোমার মতো একজন বাজে মেয়ের সাহস কি করে হলো তাসু কে ফকিন্নি বলার..?? আর কখনো তাসুকে নিয়ে কোন বাজে কথা বলবে না বলে দিলাম।
__মাহিরা তেলেবেগুনে রেগে বলে~ তুমি আমাকে ঐ মেয়ে টার জন্য গায়ে হাত তললে না..??নীল বলে_হ্যা তুলেছি তো কি হয়েছে..?
মাহিরা বলে__মনে রেখো এর ফল তুমি ভোগ করবেই।তোমরা কিভাবে সুখে থাকো সেটাও আমি দেখে নিবো বলে দিলাম।
__নীল বলে_তোমার মতো বাজে মেয়ে আমার কি করতে পারবে তা আমার জানা আছে। কি করবে সেটা দেখা যাবে।আমার বাসা থেকে তুমি এখনই বের হয়ে যাও। আর কখনো আমার সামনে আসবে না বলে দিলাম।
__মাহিরা বলে__ যাবো তো অবশ্যই,,তবে এও বলে দিচ্ছি তোমার আর ঐ ছোট লোক মেয়েটার রাতের ঘুম যদি হারাম না করছি তাহলে আমার নামও মাহিরা না। এসব বলে মাহিরা রাগ দেখিয়ে বের হয়ে যায়। নীল থাপ্পড় দেওয়াতে মাহিরার খুব রাগ উঠে যায়। মাহিরা খুব বদ মেজাজি একজন মেয়ে কেউ তাকে অপমান করলে সেটা মাহিরা সহজে মানতে পারে না।
__সোফায় বসে পড়ে নীল।নীলের মাথা টা চিনচিন ব্যথায় ধরে আছে।কখনো মাহিরার সাথে এতো টা রাগ দেখায় নি আজ যতটা রাগ দেখিয়েছে।কারণ নীল মাহিরাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।কি থেকে কি হয়ে গেলো নীল তার কিছুই বোঝতে পারছে না।হঠাৎ তখন তাসুর কথা মনে পরলো নীলের।
চলবে….
★কেউ কারো মনে আঘাত দিয়ে কখনো সুখী হতে পারে না★