#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ৩০ (২য় খণ্ড)
[অন্তিম পর্বের প্রথমাংশ]
নিস্তব্ধ, বিমূঢ় অভিরূপ। হাত-পা অসার হয়ে আসছে। সাদা চাদরে মোড়ানো অবিকৃত সেই দেহের দিকে তাকাতেও রুহ্ কেঁপে উঠছে তার। ম্লান চোখে তবুও বহু কষ্টে তাকাল সেদিকে। সে বিশ্বাস করেনি রাগিনীর পড়া চিঠির কথা। সে মানে না, ওই চিঠি রূপার। সে শুধু জানে রূপাঞ্জনা নামক নারী যার সারাজীবন ছিল জটিলতায় পরিপূর্ণ সেই নারীর সঙ্গে বহু পথ চলা বাকি। তার জীবনের জটিলতা কাটানো বাকি। হাতে হাত রেখে একে অপরকে ভরসা জোগানো বাকি। এসবকিছু ফেলে রূপা যেতে পারেনা! চোখ বন্ধ করে কিছু একটা বিড়বিড় করতে থাকে অভিরূপ। নোমান দূর থেকে এবার নিকটে আসে তার। কাঁধে রাখতেই অভিরূপ ভারাক্রান্ত গলায় বলে,
“আই থিংক ইটস ড্রিম! অ্যা ব্যাড ড্রিম!”
নোমানের ইচ্ছে করছে না অভির আশা ভাঙতে। কিন্তু সত্যের সামনাসামনি তাকেও অবশ্যই হতে হবে। এখানে মিথ্যে আশা দিয়ে লাভ কী? নোমান উপলব্ধি করেছে, তার প্রাণপ্রিয় বন্ধু সব ছেড়ে এই মেয়েটাকেই ভালোবেসেছে।
“ইটস নট ড্রিম অভি!”
চোখ খুলতে পারল না অভিরূপ। তার আগেই গগনবিদারী চিৎকার দিয়ে মাথা নুইয়ে ফেলল সে। বুকে যন্ত্রণা হচ্ছে। যেন শ্বাস রোধ করছে কোনো অজানা শক্তি! নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না সে। তার চিৎকারে জমা হলো সমস্ত লোকজন। অভিরূপ সকলের পরিচিত মুখ। সকলে হতভম্ব এমন একজন মানুষকে এখানে ভেঙে পড়তে দেখে কানাঘুষা শুরু হলো পরক্ষণেই। অভিরূপের সেসবে ভ্রুক্ষেপ নেই। দিশাহারা হয়ে পড়েছে সে। ফট করেই অভিরূপ টান দিলো সাদা কাপড়টি লা;শের মুখের কাছ থেকে। আকস্মিকতায় এমন দগ্ধ মুখ থেকে চোখমুখ খিঁচে ফেলল সকলে। এমন চেহারা দেখার মতো নয়। চেনা যায় না। তবে অভিরূপের মাঝে ভাবান্তর দেখা গেল না। ভেজা জায়গায় পা জড়িয়ে বসে সেই বিশ্রী মুখশ্রী মনোযোগ দিয়ে দেখল অভিরূপ। পোড়া গালে হাত রাখল সে। নোমান তার এক হাত ধরে দূরত্ব সুরে বলল,
“অভি কী করছিস?”
অভিরূপ ঘাড় ঘুরিয়ে নোমানের দিকে তাকাল। নিজের হাত ছাড়িয়ে অদ্ভুত দৃষ্টিপাত করে সেই হাতের আঙ্গুল ঠোঁটে এনে ইশারায় চুপ থাকতে বলল নোমানকে। ছেলেটার এমন র;ক্তিম, ম/রো ম/রো, নিষ্প্রাণ দৃষ্টি দেখেই আঁতকে উঠল নোমান। কথা বাড়াল না। অভিরূপ ফের তাকাল মৃ/তদেহের দিকে। রাগিনী তখনও চিঠি ধরে মুখ লুকিয়ে কেঁদে চলেছে একাধারে। দগ্ধ মুখটির উপর উপুড় হতেই অভিরূপের চোখের পানির একটা ফোঁটা পড়ল সেই মুখে।
“শেষ কবে কেঁদেছি মনে নেই। আমি কাঁদার মানুষ নই। কারণ জীবনে কখনো কষ্ট জিনিস আমি অনুভব করিনি। যখন যা মন চেয়েছে করেছি, যখন যেখানে ইচ্ছে হয়েছে গিয়েছি। ব্যস…শুধু তোমায় আঁকড়ে ধরে এক অজানা গন্তব্যে হাঁটা দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম। এটা অপূর্ণ হয়ে গেল। তুমি আমার হবে না তাহলে কেন এসেছিলে রূপা আমার জীবনে? এক রাশ তীব্র যন্ত্রণা আর অপূর্ণতায় ভরিয়ে দিলে আমাকে। আমি মানতে পারিনা রূপা! তোমার সব অপরাধ আমি মেনে তোমায় চেয়েছি! কিন্তু তুমি এত জেদি যে আমায় ছেড়ে চলে গেলে। কেন রূপা?”
কোহিনূর বুঝতে পারল এসব লা;শ যতক্ষণ এখানে রাখা হবে ততক্ষণ অভিরূপের পাগলামি বাড়বে, রাগিনী অসুস্থ হয়ে পড়বে। ইতিমধ্যে বাড়তি লোকজনও অভিরূপকে দেখতে পেয়ে ছবি তোলা থেকে শুরু করে ভিডিও করা অবধি শুরু করে দিয়েছে। তাই সে সেখানে উপস্থিত হওয়া রায়ানকে ইশারা করতেই রায়ান মাথা দুলিয়ে তার কনস্টেবলদের উদ্দেশ্যে বলল,
“এই তোমরা তাড়াতাড়ি করি যত লা/শ আছে গাড়িতে তোলো। পোস্টমর্টেম, ডিএনএ টেস্টের দরকার আছে। ফরেনসিক ল্যাবে নিয়ে যাও। ফাস্ট!”
তিনজন কনস্টেবল মেহরাজকে ধরল। বাকি তিনজন ধরতে গেল সেই ম/রদেহকে যাকে রূপা বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। তবে তাকে স্পর্শ করার আগেই শাসিয়ে উঠল অভিরূপ। কনস্টেবল-গুলো পিছু সরে গেল।
“আমার রূপাকে কেউ ধরলে হয় আমি তাদেরকে মে/রে দেব নয়ত নিজে ম;রে যাব!”
“অভি! কী বলছিস এগুলো? এখানে কতক্ষণ লা/শ রাখবে ওরা?”
নোমানের করা প্রশ্নে অভিরূপ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“লা/শ? কীসের লা/শ?”
“তুই যার সামনে বসে আছিস। পুলিশকে তার কাজ করতে দে।”
হুট করেই দগ্ধ দে-হটাকে আগলে ধরল অভিরূপ। পাগলের মতো প্রলাপ বকতে থাকল।
“না দেব না ওকে নিয়ে যেতে। ও আমার সাথে থাকবে।”
“তুই কী করবি ডে/ড বডি নিয়ে?”
অভিরূপ অসহ্য হয়ে প্রতিত্তোরে উচ্চস্বরে বলল,
“বারবার কেন ডে/ড বডি বলছিস ওকে? আমি ওকে আমার সাথে নিয়ে যাবো। স্বপ্নে যেমন দেখেছিলাম। তেমন বউ সাজাব। আমি গান গাইব ও আমার সঙ্গে তাল মেলাবে।”
কথাগুলো বলে সেই দগ্ধ কালো মুখশ্রীতে নিজের ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে ফেলল অভিরূপ। এটাই তার প্রথম ভালোবাসার পরশ। আর হয়তবা এটাই শেষ! রাগিনী তখন অভিরূপের কাণ্ড দেখে স্তব্ধ। অন্যদিকে রূপার মৃ/তদেহ দেখে মর্মাহত। কান্নার শব্দও আসছে না তার। তবে চোখ দিয়ে ঠিকই অনবরত অশ্রুপাত হয়ে যাচ্ছে। কোহিনূর গিয়ে একহাতে আগলে দাঁড়াল রাগিনীকে। ভরসার স্থান পেয়ে কোহিনূরের কাঁধে মাথা রাখে রাগিনী। ম্লান গলায় বলে,
“আত্মগ্লানিতে আমি শেষ হয়ে যাব, কোহিনূর!”
কোহিনূর আলতো করে রাগিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আস্তে করে বলে,
“ঠিক হয়ে যাবে। সব ঠিক হয়ে যাবে সময়ের সাথে।”
রায়ান নোমানের পাশে এসে দাঁড়ায়। ফিসফিসিয়ে বলে,
“অভিরূপ ইজ আউট ওফ হিজ কন্ট্রোল। ওকে ওখান থেকে সরাতে হবে।”
“কিন্তু কী করে? ও এখন যেমন আচরণ করছে ওকে কখনোই এমন করতে দেখিনি আমি।”
“দরকার হলে জোর করে সরাতে হবে। কতক্ষণ ওই মৃ/তদেহ নিয়ে নিজের আবেগ ভাসাবে? আমি জানি এটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। যদি সে সত্যি ওই মেয়েটাকে ভালোবেসে থাকে তাহলে এটা ওর জন্য খুবই কঠিন একটা সময়। কিন্তু যতক্ষণ ও এখানে থাকবে ও আরো ভেঙে পড়বে।”
রায়ানের কথায় সম্মতি প্রকাশ করে নোমান। অভিরূপের দিকে অসহায় পানে চাইল নোমান। বড্ড আফসোস হচ্ছে তার। নিজের উপর ক্ষুদ্ধ সে। যদি জোর করে অভিকে ফিরে নিয়ে যেতে পারত দেশে তাহলে বোধহয় তার এই বিধ্বস্ত অবস্থা হতো না।
মৃ/ত্যুর পর শরীর ভারী হয়। তবুও সেই প্রাণহীন শরীরটাকে নিজের বুকে টেনে তবে দম নিলো অভিরূপ। দুহাতে জড়িয়ে থমথমে গলায় বলল,
‘তুমি চিন্তা করো না রূপা! আমি জানি তুমি পুলিশে ভয় পাও। কিন্তু এখন ভয় পাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি আছি। আমি থাকতে তোমায় কেউ নিয়ে যেতে পারবে না। শান্তিতে থাকো আমার কাছে।”
এসব কথাবার্তা কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই আরো ভেঙে পড়ল রাগিনী। অনুনয়ের সুরে বলল,
“অভিরূপকে দেখছেন, কোহিনূর? আমার জন্য সে আজকে এতটা বিধ্বস্ত! ভালোবাসা পূর্ণতা দিলে সব সুখ একত্রে বয়ে আসে। কিন্তু অপূর্ণতা দিলে সব দুঃখ, ব্যথা একসাথে জীবনে হানা দেয়।”
কথার মাঝে থেমে একটা শ্বাস নিয়ে রাগিনী ফের বলল,
“আর উনার অপূর্ণতার কারণ আমি। একদিন উনি আমাকে তোমার কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। পূর্ণতা প্রদানে সাহায্য করেছিলেন। আমি তার বদলে শুধু একরাশ যাতনা দিলাম।”
“ওকে এখন সামলাতে হবে রাগিনী। মৃ/ত্যু রূপাকে ডেকেছিল। তাকে সাড়া দিতে হতো। নিজেকে দোষ দিও না।”
“মস্তিষ্ককে বোঝানো যায় যে যাকে সে চায় তাকে পাওয়া সম্ভব নয়। তাকে নিজের ভাষায় ঠিকই সামলে নেওয়া যায়। কিন্তু মন অবাধ্য, অবশীভূত! ওকে আমরা নিজের ভাষা বোঝাতে পারি না। অভিরূপকে কী করে বোঝানো যাবে?”
কোহিনূর আর কথা বাড়াল না। কেননা, রাগিনী যেটা বলছে সেটা সত্যি কথা। শেষমেশ অভিরূপে পাঁচ-ছয়জন সহ নোমান টেনে তুলল সেখান থেকে। গাড়িতে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেওয়া হলো তাকে। নোমান গাড়ির দরজা লক করে দিলো। তবুও হার মানল না অভিরূপ। চিৎকার, চেঁচামেচি ছটফট করতে থাকল অনবরত। তবুও না পেরে গাড়ির জানালা হাত দিয়ে ভাঙতে চাইল সে। নোমান তৎক্ষনাৎ তার হাত ধরে রুক্ষ সুরে বলল,
“পাগল হয়ে গিয়েছিস? এখন ক্ষতি করবি তুই? বাহিরে সব লোকজন তোর তামাশা বানাচ্ছে। আর এমন করিস না প্লিজ!”
“তুই আমাকে বুঝতে পারছিস না। বাহিরের লোকজন যা ইচ্ছে ভাবুক, যা ইচ্ছে করুক। আই ডোন্ট। আমাকে রূপার কাছে যেতে দে। ওকে পুলিশ নিয়ে যাবে নোমান। আমাকে যেতে দে।”
অভিরূপের কান্নারত গলা ব্যথিত করল নোমানকে। কিন্তু নিজেকে শক্ত রেখে বলে উঠল,
“পুলিশ কিছু করবে না। তোর রূপা ফিরে আসবে।”
থমকাল অভিরূপ। চোখ দুটো ভরে গেল উচ্ছ্বাসে। মুখরিত হয়ে উঠল তার লাল চেহারা। নোমানের হাত ধরে বলল,
“সত্যি?”
নোমান ঢক গিলল। সে জানে না সে কী বলছে! তবে এটা জানে যা বলছে এই মুহূর্তে তা না বললে অভিরূপকে সামলানো যাবে না। তাই বুকে পাথর চেপে বলল,
“ওটা রূপা তোকে কে বলল? পোস্টমর্টেম, ডিএনএ টেস্ট সব হোক। দেখা গেল ওটা রূপার লা/শই নয়।”
অভিরূপের মনে জাগল আকাশ সমান আশা। নিজের আলাদা চিন্তা শক্তি করার ক্ষমতা নেই তার বিধায় নোমানের প্রতিটা অক্ষর সে বিশ্বাস করছে। মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল,
“হ্যাঁ ঠিক বলেছিস। রূপাঞ্জনা আমাকে ছেড়ে যাবে না। ভোরের স্বপ্ন তো সত্যি হয়। ঠিক আমার ভোরের সুন্দর স্বপ্নও সত্যি হবে।”
ঠান্ডা পরিবেশ। শিরশির করছে শরীর। তবুও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সেই শীতল ঘরে প্রবেশ করল কোহিনূর। সবেমাত্র তার কপালে ব্যান্ডেজ পড়েছে। বুকে কাঁচের টুকরো দিয়ে আ/ঘাত করা স্থানেও পড়েছে মোটাসোটা ব্যান্ডেজ। একহাত প্লাস্টার করা। পায়ের কদম পড়তে চাইছে না তবুও জোর করেই এগিয়ে এলো সে। চারিদিকে মৃ/তদেহ! কোহিনূর খুঁজে ঠিক মেহরাজের নিকট পৌঁছে গেল। প্রিজারভেশন করে রাখা হয়েছে মেহরাজের শরীর। তবে বেশিক্ষণের জন্য নয়। রাতের মধ্যেই শেষ কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। চাদরটা উল্টে মেহরাজকে শেষবারের মতো দেখে নিলো কোহিনূর। তার কপালে হাত ছোঁয়াল একবার।
“তোমাকে বড্ড মিস করছি মেহরাজ! কথায় কথায় নিজের রাগ উপড়ে ফেলার মানুষ আর পাব না।”
মেহরাজ নিরুত্তর। তার উত্তর পাওয়ার কথাও না। কোহিনূর জানে। সব জেনেও এসেছে এখানে। নিজের মনে জমানো কথাগুলো সব বলে দিতে। আর তো সুযোগ পাবেনা কখনো!
“আমার সিক্রেট ফাঁস করে দিতে হলেও তোমার বেঁচে থাকা জরুরি ছিল মেহরাজ।”
কোহিনূর থামল। চোখের পানি ঠেলে বেরিয়ে আসছে। কোহিনূর আঁটকে রাখছে। ঢক গিলে বলল,
“সারাজীবন আগ বাড়িয়ে কাজ করে গেলে তুমি। ইউ নো হোয়াট? আমার সব সিক্রেট তো তুমি জানতে! শেষ সিক্রেটটাও জানিয়ে দিতে এসেছি তোমাকে।”
মেহরাজের ফ্যাকাসে মুখে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও কোহিনূর নিজে উপলব্ধি করে নিলো মেহরাজের পুলকিত মুখ। চোখ বন্ধ করে বলল,
“তুমি আমার কাছে শুধুমাত্র সিক্রেট টিমের সাধারণ একটা মেম্বার ছিলেনা। আমার ছোটো ভাই ছিলে। এই ছোটো ভাইটাকে খুব স্নেহ করতাম আমি। ভালোবাসতাম। ছোটো ভাইটাকে হারিয়ে বড়ো ভাই আজকে একা হয়ে পড়েছে।”
ফরেনসিক ল্যাবের জুনিয়র ডক্টর সাদিফের আগমন ঘটে সেখানে। ধীর গলায় কোহিনূরের উদ্দেশ্যে বলে,
“স্যার, আপনাকে সিনিয়র ডেকেছেন।”
মেহরাজকে ভালোমতো ঢেকে দিলো কোহিনূর। বুক চিড়ে এক দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো তার। বলল,
“যাচ্ছি আমি।”।
ডক্টর সাদিফ চলে গেলে কোহিনূরও বেরিয়ে আসে। ডক্টর আবসারের ল্যাবের দিকে হাঁটা দেয়। কাঁচের গেট ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে রায়ানের দেখাও পেয়ে যায় সে। রায়ানের পাশাপাশি গিয়ে দাঁড়াতেই ব্যস্ত ডক্টর আবসার বলে ওঠেন,
” সব কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে। রিপোর্ট চলে এসেছে।”
“কী এসেছে রিপোর্টে?”
ভার গলায় প্রশ্ন করল কোহিনূর। মাঝখান থেকে ডক্টর সাদিফ বলল,
“এই বডি রূপাঞ্জনার। তবে পোস্টমর্টেম অনুযায়ী বো/ম ব্লা/স্ট সে ম/রেনি। মেয়েটার মৃ/ত্যুর কারণটা ভিন্ন।”
“ভিন্ন মানে? তাহলে কীভাবে…”
কোহিনূরের কথার মাঝে ডক্টর আবসার ফোঁড়ন কেটে বলে,
“মেয়েটার ব/ডি চেক করেছি। তার বডির কিছু অঙ্গ ঠিক নেই। তার ব্রেইন স্ক্যান করে দেখা গিয়েছে তার ব্রেইনের নিউরন প্রায় নিরানব্বই পার্সেন্ট ড্যামেজ। শুধু তাই নয়, তার মৃ/ত্যুর কারণ এই ব্রেইন ড্যামেজই।”
রায়ান আর কোহিনূর হতভম্ব হলো এবার। বিস্ময় নিয়ে রায়ান জিজ্ঞেস করল,
“কিন্তু ওর ব্রেইন ড্যামেজ হলো কী করে? হাউ?”
“তোমরা আমাকে যেসব ইনফরমেশন দিয়েছ সেটা থেকে আমি ওর ব্রেইন নষ্ট হওয়ার কারণ বুঝতে পেরেছি। অফিসার কোহিনূর বলেছিল, ওই ডার্ক ম্যাক্স একসময় কাউকে দিয়ে অদ্ভুত এক্সপেরিমেন্ট করেছিল। সেটা হলো কারোর চিন্তাশক্তি নষ্ট করে দেওয়ার এক্সপেরিমেন্ট। আর ওই পরীক্ষা এই মেয়ের উপরই করা হয়েছিল। তবে হ্যাঁ, তার চিন্তা ক্ষমতা নষ্ট করার কারণে আস্তে আস্তে সে বুঝতে পারে না কোনটা সঠিক কোনটা ভুল। যখন সে যার সঙ্গে সময় কাটায় তখন তার কথা ঠিক মনে হয়। কিন্তু এভাবে আস্তে আস্তে ওর ব্রেইন ড্যামেজ হতে থাকে। ওর কানে চেক করে দেখলাম অনেক র;ক্ত জমাট বাঁধা। বোঝাই যাচ্ছে নিউরন নষ্ট হওয়ার কারণে কান দিয়ে র;ক্ত গড়ানোতে তার মৃ;ত্যু ঘটেছে। বো/ম ব্লা/স্ট না হলেও তার মৃ/তদেহই পেতে তোমরা। জীবিত পেতে না।”
কোহিনূর ভেতর থেকে মুষড়ে পড়ে। হাত দিয়ে নিজের চুলটা চেপে ধরে। ভবতেও পারছে না! এই মেয়েটাও কোথাও গিয়ে কোনো ষড়/যন্ত্রের শিকার! এটা ভাবলে তার শিরদাঁড়া সোজা হয়ে যাচ্ছে যে এসবের পেছনে কোনো না কোনোভাবে তার স্ত্রীর পিতা অর্থাৎ রাশেদ সাহেব দায়ী! বেঁচে যেত মেয়েটা! সুস্থভাবে বড়ো হতে পারত। কিন্তু, অবৈধ সম্পর্কের মাশুল গুনতে হলো তাকে।
রাগিনীকে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে ছাঁদে খুঁজে পাওয়া গেল তাকে। হাঁটতে দম বেরিয়ে যাচ্ছে কোহিনূরের। তবুও জোর খাটিয়ে এসে হুট করে রাগিনীর পাশ ঘেঁষে বসতেই আনমনা রাগিনী চমকে তাকাল। পরক্ষণেই নিজের প্রিয় মানুষটিকে দেখে শান্ত হয়ে গেল সে। হলো অন্যমনস্ক! কোহিনূর দম নিয়ে বলল,
“কী ভাবছ?”
“ভাবছি আমার হসপিটালে যাওয়াটাই ভুল ছিল। আমি না গেলে রূপাকে ম;রতে হতো না আমার জন্য। আমার জন্য প্রাণ চলে গেল মেয়েটার। ওর মায়ের সঙ্গে দেখা করেছি। উনার কান্নাকাটি দেখে আমি মুষড়ে পড়েছি। আমার তো মা নেই। কিন্তু দেখুন, আমি অন্য এক মায়ের থেকে তার সন্তানকে কেঁড়ে নিলাম। এখন তো মনে হচ্ছে, আমি আর আমার বাবা একই। বাবা যা করেছিল আমিও তা করেছি। সন্তানের থেকে মাকে আলাদা করেছি।”
ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিজের ক্রন্দন বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করল রাগিনী। পারল না। ঝুঁকে পড়ল কোহিনূরের বুকে। মুখ লুকিয়ে ফেলল উষ্ণ স্থানে। এখানে মন ভরে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা যায়। কোহিনূর নিজের শুষ্ক ঠোঁট ভিজিয়ে তার প্রিয়তমাকে নিজের নিকটে এনে বলল,
“সিলি গার্ল! তুমি মোটেও এমন কিছু করো নি। তুমি রূপাঞ্জনার মৃ;ত্যুর জন্য দায়ী নও। তার মৃ/ত্যুর কারণ সম্পূর্ণ ভিন্ন।”
চলবে….