#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২৪ (২য় খণ্ড)
বরাবরের মতো অভিরূপের গলার মধুর সুর! অন্যদিনের চেয়ে আজ তার কণ্ঠ যেন আরো বেশি উজ্জীবিত হয়েছে। সেটা অভি নিজেই অনুভব করতে পারছে। তার কারণটাও সে জানে। তার সামনে যে তারই স্বপ্নের রানি! যার উ/গ্র পরিচয় তার ভালোবাসায় বাঁধা হয়নি। অভিরূপ বাঁধা হতে দেয়নি। লাল বেনারসি, হাত ভর্তি চুড়ি, সুন্দর গয়না দ্বারা পরিপূর্ণ হয়েছে রূপাঞ্জনার পুরো আপাদমস্তক। অভিরূপ খুশিতে দিশাহারা! সে জানত তারও এমন একটা দিন আসবে। ধৈর্য ধরে ছিল বলে এমন দেখা পেয়েছে। তার অন্ধকার নিজ শহরে সূর্যের আলোর মতো দেখা দিয়েছে রূপাঞ্জনা। বধূ বেশে রূপা খিলখিলিয়ে হাসছে। সেই থেকে অভিরূপ নিজ গলায় গান গাইছে এবং তাকে কাছে টেনে গানের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে পা মেলাচ্ছে।
“পাগল এ মন সে বোঝে না
ঠিক না ভুল তা জানে না
কে যেন ডেকে কানে বলে যে বারে বার…
ইয়ার ইটস অনলি পেয়ার
হুয়া হায় পেহলি পেহলি বার…”
একটা ধা/ক্কা অনুভূত হলো অভিরূপের। কানে এলো একটা পুরুষালি মোটা সুর। সব দৃশ্য মিলিয়ে গেল যেন। রূপার বধূরূপ সহ রূপাও হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। দীর্ঘ ঘুমটা আপনাআপনি ভেঙে গেল অভির। পুরো শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল তার। বিছানায় পাশে দেখল নোমানকে। যে সদ্য ঘুম ভাঙা চোখে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
“ঘুমের সময় অন্তত গান করিস না। ঘুমের দফারফা করিস না।”
আশেপাশে তাকাল অভিরূপ। সে ঘরে রয়েছে। বিয়ের সাজসজ্জা কিছুই নেই। উঠে দ্রুত বসে পড়ল সে। এতক্ষণ যেন ঘোরের মধ্যে ছিল! বুঝতে পারল সে স্বপ্ন দেখেছে। এক কঠিন স্বপ্ন! যা বাস্তবায়ন করা খুবই দুর্বোধ্য। নোমান উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ল অন্যদিকে মুখ করে। আর বলল,
“কী এমন স্বপ্ন দেখছিলি যে পেয়ার, ভালোবাসা সব বেরিয়ে যাচ্ছে গানের মাধ্যমে!”
“মিষ্টি একটা স্বপ্ন! আমি বিশ্বাস করি সেটা পূরণ আমি করতে পারব। এখন কয়টা বাজে রে?”
“ঘড়িতে দেখ।”
পাশে থাকা ফোনের স্ক্রিন অন করল অভিরূপ। সবে পাঁচটা পার হয়েছে। সময় দেখে সে পুলকিত হলো। উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল,
“আচ্ছা, সবাই বলে না? যে ভোরবেলা স্বপ্ন দেখলে সত্যি হয়? বিশেষ করে পাঁচটার দিকে দেখলে!”
নোমান ঘুমের চোটে মিনমিন করে বলল,
“তা তো বলে! তুই এসব বিশ্বাস করতে শুরু করলি কবে থেকে?”
মুচকি হাসে অভিরূপ। মিইয়ে যাওয়া সুরে উত্তরে বলে,
“যখন আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্বপ্নটা দেখলাম তখন থেকে।”
নোমানের প্রতিত্তোর আর এলো না। ছেলেটা ঘুমিয়ে গিয়েছে। অভিরূপ কথা বাড়াল না। চাদর টেনে শুয়ে পড়ল আবারও। হাসিটা মুখ থেকে সরলো না। সে অপেক্ষা করবে স্বপ্ন সত্যি হওয়ার। বিশ্বাস রাখে ভোরে দেখা সেই নিদ্রিত অবস্থায় কাল্পনিক দৃশ্যগুলোও একদিন বাস্তবে ঘটবে।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে নিজের চিপচিপে ভিজে চুলগুলো টাওয়াল দিয়ে মুছতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল রাগিনী। পরনে নীল শাড়ির আঁচল ঠিকঠাক করে বিছানার দিকে তাকাল সে। কোহিনূর নেই। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সে মানুষটিকে পায়নি। হয়ত নিচে আছেন! এই ভেবে মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে দ্রুত ঘর থেকে বের হলো সে। হাঁটতে গিয়ে নয়নের ঘর পড়ল সামনে। দরজা খোলা থাকায় ঘাড় বাঁকিয়ে তাকাল ঘরের ভেতরে। নয়ন তখন কফি খেতে ব্যস্ত। কোল্ড কফি! চুমুক দিতে গিয়ে রাগিনীকে দেখে পেলে কফি দিয়েই দ্রুত বাহিরে আসে নয়ন। উল্লসিত হয়ে বলে,
“গুড মর্নিং, ভাবিজান! কফি খাবে? বানিয়ে দেব? ঠান্ডা নাকি গরম?”
রাগিনী মাথা নাড়ায়। অর্থাৎ সে কফি খেতে চায় না এখন। কোহিনূর বাড়িতে আছে কিনা জিজ্ঞেস করতেও অস্বস্তি লাগছে তার। তবুও আমতা আমতা করে বলে ফেলল,
“তোমার বিগ ব্রাদার নিচে আছে?”
ফিক করে হেঁসে দিলো নয়নতাঁরা। ব্যস…তাতেই লজ্জায় নুইয়ে পড়ল রাগিনী। মজা করে নয়ন বলে দিলো,
“কী ভালোবাসা! সকালে উঠেই বরকে খোঁজার মিশন শুরু?”
“না আসলে এখন তো অনেক সকাল। মাত্র সাড়ে সাতটা বাজে। ঘরে উনার ফোনও দেখলাম না তাই…”
এবার নয়ন রাগিনীকে কথার মাঝে থামিয়ে আফসোসের সঙ্গে বলে উঠল,
“বিয়ে করেছ তো এক ঘোড়ার মতো ছুটতে থাকা অফিসারকে। যার কাজ সারাদিন ছুটবে! না আছে টাইমটেবিল আর না আছে সময়ের জ্ঞান! গার্ড বলল সে নাকি একদম ভোরবেলা বেরিয়ে গিয়েছে গাড়ি নিয়ে। অফিসেই গিয়েছে বোধহয়। আই এম সরি ভাবি! আমি জেগে থাকলে একদমই যেতে দিতাম না। নতুন বউকে ফেলে চলে গেল! নিজের বেইজ্জতি তো করলই তার বোন হিসেবে আমারও বেইজ্জতি করাচ্ছে।”
নয়নের শেষ কথাগুলো শুনে লাজুক মুখে হাসল রাগিনী। নয়নের কাঁধ ধরে নিবৃত্ত হয়ে বলল,
“ইটস ওকে, ইটস ওকে! এখানে বেইজ্জতি হওয়ার কী আছে? আমার মনে হয় নিশ্চয় কোনো কাজ পড়ে গিয়েছে। তাছাড়া তুমি তো বাড়িতেই আছো! তোমার সঙ্গে আমার অনেক ভালো সময় কাটবে।”
নয়নতাঁরা আকাশসম খুশি হলো যেন। গালের সঙ্গে গাল চেপে ধরল সে রাগিনীর সঙ্গে। আহ্লাদী হয়ে বলল,
“মাই সুইট সিস্টার ইন লো!”
নয়নতাঁরার সঙ্গে সময় কাটিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের ঘরে এসে ঢুকল রাগিনী। নিজের ফোনের রিংটোন শুনতে পেয়ে তড়িঘড়ি করে খুঁজতে লাগল ফোন। সোফায় পড়ে থাকতে দেখে তা উঠিয়ে কোহিনূরের নামটা দেখে বিলম্ব না করেই দ্রুত রিসিভ করে কানে ধরল। কম্পিত কণ্ঠে বলল,
“হ্যালো!”
বলতে বলতে হাঁচি দিলো পরপর দুবার রাগিনী। ওপাশ থেকে কোহিনূরের বিনাশিত গলা শোনা গেল।
“শীতের মৌসুমে দুবার শাওয়ার নিয়ে হাঁচি ফেলতে হচ্ছে আমার জন্য! মনে মনে বেশ ঝেড়ে নিশ্চয় উদ্ধার করছ আমাকে?”
“বর হয়েছেন কী জন্য? একটু আধটু ঝাড়ি তো খেতে হবে।”
রাগিনী মিষ্টি রিনরিনে শব্দে সকল দুশ্চিন্তা উধাও হলো কোহিনূরের। মনটা মানছিল না। ব্যস্ত সময়ও মাথায় শুধু মেয়েটার কথা ঘুরপাক খাচ্ছিল। বারবার ভাবনায় আসছিল, মেয়েটা রাগ করল না তো? অভিমান করল না তো? দুঃখ পেল না তো? এখন কথা বলে শান্তি অনুভব করছে সে। স্বস্তি পেয়ে বলল,
“আমার রাগের রানির প্রতিটা ঝাড়ি দিয়ে বলা কথাও মিষ্টির চেয়ে মিষ্টি লাগে।”
“আচ্ছা! শুনলাম ভোরবেলা বেরিয়ে গিয়েছেন? কোনো সমস্যা হয়েছে নাকি?”
একটু ভাবনায় পড়ল কোহিনূর। উত্তরে কী বলবে? কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“ধরে নাও আমার এই মি/শনের কমপ্লিট করার খুব কাছে আমি। একটু দরকারি কাজে আমাকে ডেকেছিল। তাই না বলে চলে এসেছি। এজন্য কি আমার নতুন বউ ক/ষ্ট পেল?”
রাগিনী নির্দ্বিধায় বলল,
“মোটেও না। আমি সব জেনেশুনেই আপনাকে চেয়েছি। আমি জানি আপনি অন্য সব স্বামীর মতো নিজের বউকে দেওয়ার জন্য আলাদা সময় বের করতে পারবেন না। কিন্তু যা পারবেন সেই ছোটো ছোটো মূহুর্তই আমার কাছে শ্রেষ্ঠ হবে!”
“তোমার চিন্তাধারা, তোমার ভাবনা তোমার মতোই সুন্দর এবং কোমল।”
“বাড়ি কখন ফিরবেন? অনেক রাত হবে বুঝি?”
কোহিনূরের মলিন কণ্ঠসুর শোনার গেল এবার।
“সময় লাগবে বেশ। আমি নিজেও জানি না কখন ফিরতে পারব। কিন্তু চিন্তা করবে না। তোমার কাছে ফিরবে কোহিনূর। ফিরবেই।”
কথাগুলো আর কিছুক্ষণ। কল কাটল কোহিনূর। রাগিনী খুশিমনে ফোন ছাড়তেই রিও এবং ফিওনা হাজির হলো ঘরে। এক গাল হেসে তাদের যত্ন করতে ব্যাকুল হলল সে।
কল কাটার মূহুর্তেই হন্তদন্ত হয়ে হাজির হলো রায়ান কোহিনূরের সম্মুখে। পিছু পিছু দেখা দিলো মেহরাজ। চিন্তিত হয়ে কোহিনূরের চোখে চোখ রেখে রায়ান স্পষ্ট করে জিজ্ঞাসা করল,
“তুই যা করতে বলছিস আমাকে সেটা সিউর হয়ে বলছিস?”
কোহিনূরও নির্বিঘ্নে বলল,
“ইয়েস। আই এম সিউর।”
“এটা ভুলিস না, নির্জন! তুই যাকে কাস্টারিতে এনে সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছিস তিনি এখন তোর বউয়ের বাবা মানে তোর ফাদার ইন লো!”
“আমার শ্বশুর হলেই যে সে কোনো ভুল বা অ/ন্যায় করবে না তার গ্যারান্টি কী? উনি নিশ্চয় কিছু লুকিয়েছেন আমাদের কাছ থেকে। আর আমাদের সেটা জানতে হবে।”
রায়ান তবুও মানতে চাইল না। আসলে বিষয়টাতে তার মন টানছে না। সে আবারও সন্দিহান হয়ে বলে উঠল,
“বাট যদি বিষয়টা ভুল হয় মানে উনি যদি সত্যি ইনোসেন্ট তাহলে তোর তোদের সম্পর্ক খা;রাপ হয়ে যাবে।”
“ইনোসেন্ট হওয়ার মতো কোনোকিছু করেন নি তিনি। গতকাল বিয়েতে আমি আমার সঙ্গে আমার ফোর্স নিয়ে গিয়েছিলাম। তারা ওই লোকটার ভালো করে সার্চ করেছে। অ্যান্ড গেস হোয়াট…”
বলেই থামল কোহিনূর। নিজের টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা পেপার ছুঁড়ে দিলো রায়ানের দিকে। রায়ান সেটা ধরে দেখল সেখানে একটা নম্বর। সেটা দেখে কিছুই না বুঝে ভ্রু কুঁচকে ফের কোহিনূরের দিকে তাকাতেই কোহিনূর অবিরাম বলতে থাকে,
“এই নম্বরটা কার জানিস? সেই ডার্ক ম্যাক্স যার মৃ/ত্যু পাঁচ বছর আগে ঘটেছে। তার আসল নাম ছিল রামিন দেওয়ান এবং তার ভাই সুমন দেওয়ান যে কিনা রামিন দেওয়ানকে প্রথমে পুলিশে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করেছিল উনাকে তো মে/রে ফেলা হয়েছে। যার ক/ঙ্কাল আমরা কিছুদিন আগে পেয়েছি। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে সেই ডার্ক ম্যাক্স তিন ভাই! রামিন, সুমন এই দুই ভাইয়ের কথা আমরা জানি! আরেকজন কে? হতে তো পারেই এই আরেকজনই পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে!”
“তাহলে ডার্ক ম্যাক্সের আরেক ভাই হিসেবে তুই কি রাশেদ আঙ্কেলকে সন্দেহ করছিস?”
চেয়ারে মাথা লাগিয়ে দিলো কোহিনূর। সে নিজেও জানে না সে কী বলছে! দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আমি জানি না। কিন্তু উনাকে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে আমার কাছে। কুড়িগ্রামের ওই জায়গাটাতেই আমি উনাকে দেখেছিলাম। দেওয়ান বাড়ির নাম বলাতে উনার প্রতিক্রিয়া অদ্ভুত ছিল। তার উপর এই নম্বরের সঙ্গে উনার সংযোগ! আরো একটা বড়ো কারণ আছে।”
“কী সেটা?”
উৎসুক হয়ে জানতে চাইল রায়ান। কোহিনূর দম ছেড়ে গম্ভীর গলায় বলতে লাগল,
“শামীমা! শামীমা ইয়াসমিন নামের একটা মহিলার খোঁজ পেয়েছি। গতকাল সকালে যখন নয়ন রাগিনীদের বাড়িতে কিছু গয়না পাঠাতে গিয়েছিল তখন শামীমা আর শাহ্ রাশেদ স্যারের কিছু কথোপকথন নয়নের সন্দেহজনক লাগে। ওই মহিলা নাকি বারবার বলছিল, উনার বাচ্চা উনাকে ফিরিয়ে দিতে। নয়ন সাথে সাথেই আমায় মেসেজ করে। আমি মহিলাটাকে ট্র্যাক করার ব্যবস্থা করি। উনার সঙ্গে ইতিমধ্যে কথাও হয়েছে আমার। আর উনি জানিয়েছেন, এই শাহ্ রাশেদ স্যার অন্তত নিকৃষ্ট একটা মানুষ। বিবাহিত থাকা সত্ত্বেও তিনি অন্য নারী মানে শামীমা নামক মহিলাটির সঙ্গেই সম্পর্কে জড়ান। যার ফসল হিসেবে মহিলাটি একটা সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু, এসব ঝামেলায় জড়াতে না চাওয়ায় এবং বিবাহিত হওয়ায় তিনি শামীমার জন্ম দেওয়া সদ্য বাচ্চাকে সরিয়ে ফেলেন। সন্তানটিকে তিনি কী করেছেন সেটা শামীমার জানা নেই। প্রথমে রাশেদ স্যারের ডাক্তারি চাকরি চট্টগ্রামে থাকায় এসব সেখানেই ঘটে। তারপর তিনি ট্রান্সফার নেন।”
রায়ান হতবাক হয়। বিস্মিত হয়ে কিছুক্ষণ নীরব থেকে কৌতূহল নিয়ে বলে ওঠে,
“এটা কতটুকু সত্যি আসলে? মিথ্যাও হতে পারে তো তাই না?”
“ইয়েস, হতে পারত মিথ্যে। বাট স্যার চট্টগ্রামের সিক্রেট টিমকে খবর নিতে বলেছিল। তারা খবর নিয়েছে রাশেদ সাহেব যেই হসপিটালে ছিলেন সেখানে। আর বিষয়টা সত্যি! শামীমা একটা বাচ্চার জন্ম দিয়েছিলেন এবং বন্ড পেপারে শাহ্ রাশেদের সই ছিল।”
মেহরাজের বক্তব্য শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে হুড়মুড়িয়ে চেয়ারে বসে পড়ে রায়ান। কপালে হাত ঠেকিয়ে চুপচাপ থাকে কিছুক্ষণ। কোহিনূর এবার তাকে কটাক্ষ করে প্রশ্ন করল,
“এরপরেও বলবি আমার ডিসিশন ভুল?”
“না। তুই ঠিকই করছিস। আমাদের এবার স্টেপ নেওয়া উচিত।”
“আরো অবাক করার মতো জিনিস দেখাই ওয়েট।”
কোহিনূর এবার পেপারের ভাঁজে থাকা দুটো ছবি বের করে রায়ানের সামনে তুলে ধরল। একটা রাশেদ সাহেবের ছবি আরেকটা এক মেয়ের ছবি। মেয়েটাকে চেনা চেনা লাগল রায়ানের। মস্তিষ্কে কিছুটা চাপ দিতেই মনে পড়ল বলে ওঠে,
“এটা তো সেই মেয়ে তাই না? যে কিনা চট্টগ্রামে ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল? কায়া, ললিতা, রূপাঞ্জনা ইত্যাদি নাম ইউজ করেছিল?”
“ইয়াপ! মেয়েটার আসল নাম সম্ভবত রূপাঞ্জনাই। রাগিনীর মুখে শুনেছি ওর নাম। এই মেয়েটাই হয়ত সার্জারি করে রাগিনীর মতো দেখতে হয়েছে। বাট ওর আগের চেহারার সাথে রাশেদ স্যারের চেহারা কতটা মিলে যায় খেয়াল করেছিস?”
রায়ান মনোযোগের সহিত দেখে তড়তড় করে বলল,
“আরে হ্যাঁ! তাই তো! আগে খেয়াল করা হয়নি।”
“খেয়াল হয়ত করা হয়েছিল। কিন্তু বিষয়টাতে আমরা নজর দিইনি। কারণ আমাদের তো মাথাতেই এসব বিষয় আসার কথা নয়। রায়ান, প্লিজ! এখন ওই লোকটার মুখ থেকে সত্যি বের করার দায়িত্ব তোর হাতে। তোকে সত্যিটা জানতে হবে। এট এনি কস্ট। এমনিতে অনেক চাপে আছি। আজ ভোরে আমায় পাঠানো মেসেজ, চিরকুটে লেখা কথা! সিটি হসপিটালে অনেক মানুষ রয়েছে। হয়ত ওখানেই কিছু ঘটতে চলেছে।”
কোহিনূরের কাঁধে হাত দিয়ে ভরসা দিলো রায়ান। সাহসের সহিত বলল,
“যদি ঘটনা সত্যি হয়! তবে উনি স্বীকার করতে বাধ্য হবেন।”
কোহিনূর বিশ্বাস রাখে রায়ানের উপর। কারণ সে রায়ানকে চেনে। তবে তার চিন্তা রাগিনীকে নিয়ে। যদি কথাগুলো সত্যি হয় তবে সে কী করে কথাগুলো মানবে? জানা নেই।
আজ অনেকদিন পর ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে উর্মিলা। পা এখনো ঠিকঠাক নয়। তবে ভার্সিটিতে যেতেই হবে। রেজাল্ট বেরিয়েছে। উর্মিলা পড়াশোনায় বরাবরই আহামরি ভালো নয়। ফাঁকিবাজি করেছে প্রতিটা ইয়ারেই। এবারও মনে মনে দোয়া করছে এবং খুব করে চাইছে কোনোমতে এই ইয়ার টপকাতে পারলেই হলো। পরের বার ভালো করে পড়াশোনায় মন দেবে। অবশ্য এটা তার প্রতিবারের কথা! ভার্সিটি গেটে এসে রিকশা থেকে নামলেই ভাড়া দিতে ব্যাগের চেইন খুলে টাকা হাতালে এক ভরাট গলা শোনা যায়।
“এই মামা, নেন টাকা রাখেন। উর্মির থেকে টাকা নিতে হবে না। আমার থেকে নেন।”
চকিতে পাশ ফিরে তাকায় উর্মিলা। সে জানে তাকে ‘উর্মি’ নামে সম্বোধন করে একজনই এবং তার ধারণা ঠিক ছিল। টাকা দেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়েছে আফরান! এই ছেলেটাকে ভার্সিটির সকলেই চেনে। এক কথায় সিনিয়র ভাই বলা চলে। রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত! উর্মিলা বেশ বুঝতে পারে এই ছেলেটা তার মনোযোগ হরণ করতে চায়। তবে উর্মিলা আফরানকে খুব একটা পছন্দ করে না। এড়িয়ে চলে! তবুও হুটহাট চলে আসে কোত্থেকে যেন।
“রিকশায় আমি এসেছি আপনি কেন টাকা দেবেন?”
উর্মিলার প্রশ্নে ঠান্ডা গলায় আফরান জবাব দেয়,
“কেন সমস্যা কী টাকা দিলে? যে আসবে তাকেই টাকা দিতে হবে সেটা কে বলেছে?”
“আমি এসেছি আমাকেই ভাড়া দিতে দিন। রাস্তায় ঝামেলা করবেন না।”
আফরান বেশ বিরক্ত হলো এবার। অল্পতেই রেগে যায় সে। কাঠ কাঠ গলায় বলল,
“আমি ঝামেলা করি তোমার মনে হয়? তুমিই তো ঝামেলা করছ উর্মি!”
উর্মিলা কথা বাড়াল না। রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিতেই আরো চটে গেল আফরান। কিছুটা হুংকার ছেড়ে বলল,
“আমি ভাড়া দিলে তোমার সমস্যা কী ছিল?”
উর্মিলা উত্তর দেয় না। মাথা নিচু করে থাকে। রাস্তায় এসব ভালো লাগছে না। সে জানে এর প্রতিত্তোরে আরো কিছু বললে আরো চেঁচামেচি করবে এই ছেলে। মনে মনে শুধু কেটে পড়ার রাস্তা খুঁজতে থাকল।
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]