#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ১২ (২য় খণ্ড)
নির্ণিমেষ এবং দুর্বল দৃষ্টিপাত করে রূপা বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে দিলো। অভিরূপের কথার মানে তার বোধগম্য হলো না কিছুতেই। আশপাশের জায়গাটি না চিনতে পেরে হুট করে বলতে লাগল…
“আমি…”
পুরো বাক্য সম্পূর্ণ করা হলো না রূপার। তার আগেই মনে হুটোপুটি করে আরেক প্রশ্নের উদ্ভব ঘটল। অভিরূপ কি কোনোভাবে তাকে চিনে ফেলেছে? তৎক্ষনাৎ নিজের চুলে হাত রেখে দেখল রূপা। তার খোলা ছোটো চুল অগোছালো এবং স্পষ্ট হয়ে মেলে রয়েছে। তার ভাবভঙ্গি দেখে অভিরূপ কিছু একটা আন্দাজ করতে পেরে বলল,
“বহুরূপী! আসল নাম তো জানি না তোমার। আমার মনে হলো এই নামটা সবচেয়ে বেশি তোমায় মানাবে তাই বহুরূপী ডাকলাম।”
রূপাঞ্জনা চমকে ওঠে। গলা শুকিয়ে আসে। তাহলে সবটা অভিরূপের অবগত। তবে কি লোকটি তাকে পু’লিশের কাছে ধরিয়ে দেবে? এখন রূপার কী করা উচিত? অভিরূপকে অনুরোধ করা? না, সে মোটেও মাথা নুইয়ে মিনতি করার মতো মেয়ে নয়! রূপা তেজি সুরে বলে ওঠে,
“আমারও নিজের একটা চেহারা ছিল! সেটা হয়ত রাগিনীর মতো মাধুকরী সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ ছিল না। কিন্তু আমারও একটা রূপ ছিল।”
“তবে বদলাতে হলো কেন? নিজেদের মি*শন কমপ্লিট করতে?”
অভিরূপের এমন কথায় যেন রূপাঞ্জনার মুখশ্রী আরো বিবর্ণ হতে শুরু করল। ফ্যাকাশে ভাবটা প্রগাঢ় হলো। অভিরূপ এখনো দূর থেকে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ছে। রূপা এবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই অভিরূপ চেঁচিয়ে বলে উঠল,
“ওখানেই বসে থাকবে তুমি। নড়ার চেষ্টাও করবে না।”
রূপা জুবুথুবু হয়ে বসে ভীরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অভিরূপ সেই জানালার কাছ থেকেই দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
“কী পাও মানুষকে জ/খ/ম করে?”
বেশ প্রতাপ নিয়ে করা অভিরূপের প্রশ্নে মাথাটা আপনাআপনি যেন নিচু হয়ে গেল রূপাঞ্জনার। তার কাছে উত্তর নেই। সে এসব কিছু করে কী পেয়েছে সে নিজেও জানে না। কোথাও একটা লক্ষ্য পূরণ হওয়ার আনন্দ খুঁজে পেয়েছিল। কিন্তু আদেও কি সেটা তার জীবনের লক্ষ্য ছিল? অভিরূপের উদাস কণ্ঠ শোনা গেল এবার।
“যদি বুঝতে পারতে কাউকে বাঁচতে সাহায্য করলে কতটা আনন্দ পাওয়া যায়! যদি নি’ষ্ঠুরতা কাটিয়ে উঠে নিজেকে নতুনভাবে সাজাতে তাহলে বুঝতে পৃথিবীতে আ/তঙ্কে না বেঁচে আনন্দেও বাঁচা যায়। নিজেদের কর্মকান্ড নিয়ে তোমরাও আত/ঙ্কে থাকো সেই সাথে আমরাও। লাভটা কীসে?”
রূপা তবুও নীরব এবং নির্জীব! নিস্ক্রিয় তার ভূমিকা। মাথাটা ছিঁ/ড়ে যাচ্ছে যন্ত্র/ণায়। দোটানায় পড়েছে প্রবৃত্তি। তার কি জানানো উচিত অভিরূপকে তার পালিয়ে আসার কথা? তার চুপ থাকাটা সহ্য হচ্ছে না কোনোমতেই অভিরূপের। রাগে চিল্লিয়ে বলে ফেলল,
“যদি এমনটা না করতে, যদি এমন কাজে না জড়াতে তুমি আর আমি একসাথে থাকতাম। একসাথে থাকা মানে বোঝো? বুঝবে কী করে? তোমার এসব তো বোঝার কথাও না। আমিই পা/গলের প্রলাপ বলছি তোমায়। ড্যাট ইট!”
নিজের ক্রো/ধ অবরোধ করতে পারল না অভিরূপ। বেশ জোরেশোরে পা দিয়ে একটা লা/থি মে/রে বসল সামনে থাকা সুন্দর চেয়ারে। তা গিয়ে লাগল সোজাসুজি আলমারিতে। উদ্ভট শব্দের সৃষ্টি এবং অভিরূপের রোষানলের স্বীকার হওয়া রূপাঞ্জনার শ্বাস-প্রশ্বাস ঘন হতে থাকল। তৎক্ষনাৎ দরজার ওপার থেকে নোমানের আওয়াজ এলে যেন নিজের হুঁশে ফিরল অভি। চোখ বড়ো বড়ো করে রূপার দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে দিলো যেন সে চুপ থাকে।
“অভি! কী করছিস ভেতরে? এমন শব্দ এলো কেন? দরজা খোল।”
অভিরূপ এবার নিজে স্থানচ্যুত হলো। গিয়ে দাঁড়াল একেবারে দরজার কাছে। কান লাগিয়ে দিলো দরজায়। নিজের সমস্ত রা/গ চাপা দিয়ে ব্যস্ত গলায় বলার চেষ্টা করল,
“কিছু হয়নি। কী হবে আবার? হাত লেগে ড্রেসিংটেবিল থেকে কিছু জিনিস পড়ে গিয়েছে।”
“তাহলে দরজা খুলছিস না কেন? আমার তোর কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা। দরজা খোল তো তুই।”
নোমানের কণ্ঠে শোনা যায় ব্যাকুলতা। অভিরূপ বিরক্ত হওয়ার ভান ধরে বলে,
“আশ্চর্য! শাওয়ার নিয়েছি ড্রেস চেঞ্জ করছি। এই অবস্থায় দরজা খুলব?”
নোমান হতবাক হলো।
“তুই কবে থেকে এত লজ্জা পাস?”
“জন্মের পর থেকে। তুই যা তো!”
যাচ্ছি, যাচ্ছি। এমনিতেও বাহিরে যাচ্ছিলাম। উর্মিলাকে দেখতে। তুই যাবি?”
অভিরূপ একঝলক রূপাকে দেখে নিলো। মেয়েটা চুপই আছে। তারপর আবার বলল,
“আমি তোদের মাঝে হাড্ডি হয়ে করব টা কী? তুই যা।”
“হাড্ডি মানে কী?”
“তর্ক করবি নাকি যাবি? দেরি হয়ে যাচ্ছে তোর।”
নোমান এবার হার মানে। হাফ ছেড়ে বলে,
“যাচ্ছি, যাচ্ছি।”
ওপাশ থেকে শব্দ শোনার জন্য কান লাগিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে অভিরূপ। বেশ কিছুক্ষণ পর বুঝল নোমান সত্যি চলে গিয়েছে। স্বস্তির শ্বাস নিয়ে রূপার দিকে ফিরে তাকাল সে। রূপা গোলগোল চোখে তার দিকে চেয়ে। যেন প্রচন্ড ভাবনা ঘিরে ধরেছে তাকে। এবার কৌতূহল ধরে রাখতে না পেরে প্রশ্ন করেই বসল,
“এখানকার কেউ জানে না আমি এখানে রয়েছি?”
“জানলে কি এই বিছানায় বসে থাকার ভাগ্য হতো তোমার? পুলিশ হাতকড়া পরিয়ে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেত।”
“তাহলে সবাই যদি আমায় পুলিশের হাতে তুলে দিতে চায় তবে আপনি আমায় আগলাচ্ছেন কেন এভাবে? আমি তো আপনাকেও মা/রার মি/শনে নেমেছিলাম সেটা বোধহয় আপনি জানেন। তবুও কেন এই প্রচেষ্টা?”
দরজার সঙ্গেই হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল অভিরূপ বুকে দুটো হাত জড়িয়ে। মলিন হাসল।
“কাউকে আগলানোর চেষ্টা করেছ কখনো? কাউকে কোনো বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছ?”
রূপা ফট করেই উত্তরটা দিয়ে ফেলল এবার।
“হ্যাঁ। আপনাকে বাঁচিয়েছি তো। যদিও মা/রার চেষ্টা আমিই করেছিলাম তবে…”
“তবে?”
অভিরূপ সূক্ষ্ম চোখে দৃষ্টিপাত করল উত্তর পাওয়ার আশায়। রূপাঞ্জনাও জবাব দেওয়ার প্রস্তুতিই নিচ্ছিল তবে তার বদলে মা/রাত্ম/ক কাশি উঠে গেল তার। বুকে হাত দিয়ে কাশি রোধ করার চেষ্টায় থাকতে থাকতে র/ক্ত উঠে গেল মুখ দিয়ে। থুঁতনি সহ জামা এবং কিছুটা বিছানায় পড়ে গেল সেই র/ক্ত। অভিরূপ তা দেখে হকচকিয়ে উঠল প্রথমে। কী করবে দিশেহারা না পেয়ে সবটা ভুলে এগিয়ে এলো রূপার দিকে। তার মাথায় হাত দিয়ে আস্তে আস্তে করে বুলিয়ে দিতে দিতেই কাশি থামল। তারপর টেবিল থেকে দ্রুত হাতে টিস্যু নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ল রূপাঞ্জনার মুখ খানা মুছতে। বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করল,
“কী করে হলো এমন? হঠাৎ র/ক্ত পড়ছে কেন?”
অভিরূপের এমন ব্যাকুলতা বেশ ভাবিয়ে তুলক রূপাকে। এই মানুষটার অন্তরের ভাষা বুঝে উঠতে পারছে না। ভাবনাশক্তি লোপ পাচ্ছে যেন। মুখ দিয়ে র/ক্ত ওঠার পর ঝিমঝিম করছে মাথা। কথা বলার মতো অবস্থায় নেই সে। তার এমন পরিস্থিতি বুঝতে পেরে অভিরূপ ফের বলল,
“থাক কথা বলতে হবে না।”
আলতো স্পর্শে ঠোঁটের আশেপাশে সেই লাল তরল পদার্থ মুছতে বেশ মনোযোগী হয়েছে অভিরূপ। টিস্যুর প্রতিটা অংশ এমনভাবে রূপার ত্বকে লাগিয়ে যাচ্ছে যেন একটু জোরে লাগিয়ে দিলেই ব্যথা পাবে মেয়েটা। এই বাহানায় অনিচ্ছাকৃতই আবারও কাছাকাছি এসেছে দুজন। অভির নিজের ক্রো/ধটা যেন মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে পরাজিত হয়ে। তার প্রতিটা গরম শ্বাস যখনই রূপার গলায় গিয়ে পড়ছে আন্দোলিত হচ্ছে রূপাঞ্জনার সর্বাঙ্গ। এমন আদুরে স্পর্শ সে তো পায়নি আগে। এই প্রথম কোনো পুরুষ আ/ক্রো/শ ব্যতীত সেবা এবং যত্নের উদ্দেশ্যে স্পর্শ করল তাকে। এই কোমল ছোঁয়া যেন যেখানে যে কারোর হৃদয়ে তড়িৎ পরিবহন করতে ব্যর্থ সেখানে রূপাঞ্জনা তো একজন নারী! নারী সামান্যতম যত্নেও গলে যায় কঠিন বরফ থেকে পানি হওয়ার মতো। এরইমাঝে অভিরূপের খেয়াল হলো সে আবেগে ভেসে কী করে ফেলেছে! সরে এলো। উঠে দাঁড়াল। রাগের সাথেই বলল,
“শুয়েই থাকো তুমি। ওঠার দরকার নেই। আমি বাহিরে থেকে আসছি। দরজা লাগিয়ে দাও।”
দরজা খুলে হনহনিয়ে বেরিয়ে যেতে যেতেই হুট করেই সামনে এসে হাজির হলো রাগিনী। ধা/ক্কা খেতে খেতে বেঁচে গেল দুজন। সামলে নিলো নিজেদের। রাগিনী ধাতস্থ করে স্বস্তির শ্বাস ফেলে বলল,
“এভাবে হন্তদন্ত হয়ে কোথায় যাচ্ছিলেন? ওদিকে কিছু হয়েছে নাকি?”
অভিরূপ মাথা চুলকে নির্বোধের মতো বলল,
“না! আসলে ওর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। কীভাবে যে সব এত তাড়াতাড়ি ভুলে যাই!”
হাসতে গিয়েও হাসল না রাগিনী। ঠোঁট চেপে হাসি নিবারণ করে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে দরজার সামনে মাথা দিয়ে উঁকি দিতেই রূপাকে সজাগ দেখে তৎক্ষনাৎ সরে এলো সে। ভয়ই লাগছে মেয়েটার কাছে যেতে বা তাকে দেখতে। কখন কী করে দেয়! অভিরূপের দিকে প্রশ্ন ছ/ুঁড়ে দেয় রাগিনী।
“কেমন আছে এখন ও?”
“সেন্স তো এসেছে বাট হঠাৎ কেন যেন র/ক্ত বেরিয়ে এলো মুখ দিয়ে। বুঝতে পারছি ব্লি/ডিং এর কারণ।”
না চাওয়া সত্ত্বেও আঁতকে উঠল রাগিনী। চিন্তিত সুরে বলল,
“ওর জন্য কিছু খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। জানি না আমরা ওর কী হয়েছে। একটু হলেও তো যত্ন করতে হবে।”
“তুমি রান্না করে খাইয়ে দাও। আমি পারব না ওসব সেবা করতে।”
রাগিনী এবার ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে থাকে। যেন সে শুনে নিয়েছে, ভূতের মুখে রাম রাম! দুহাত ছড়িয়ে ব্যঙ্গ করে বলে দিলো,
“ওহ হো! এতক্ষণ বুঝি অভিরূপ চৌধুরীর ভূত সেবা করছিল? আবার শুনলাম কাছাকাছিও গিয়েছিল তারা।”
অভিরূও এবার অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। গলা খাঁকারি দিয়ে শ’ক্তভাবে বলে ওঠে,
“ধুর! আমি আসছি। তোমার যা ইচ্ছা করো।”
রাগিনীকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে গেল অভিরূপ। তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রাগিনী গালে হাত দিয়ে বিড়বিড়িয়ে বলল,
“ভালোবাসার কত রূপ!”
“এক্সকিউজ মি! মে আই কাম ইন?”
কেবিনের দরজায় একগুচ্ছ তাজা গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা নোমান বিনয়ী সুরে যখন কথাটি বলল বেডে আধশোয়া হয়ে থাকা উর্মিলা এবং উর্মিলার মা দুজনই তার দৃষ্টি আকর্ষণ করল। উর্মিলার মা তাকে চিনতে না পেরে প্রথমেই টুল থেকে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,
“তোমায় তো ঠিক চিনলাম না!”
“উনিই সে যে আমায় জুতো মে/রে গরু দান করে বারবার।”
উর্মিলার কড়া কণ্ঠ বুঝিয়ে দেয় নোমানকে সে এখনো কতটা ক্ষুব্ধ হয়ে রয়েছে তার উপর। তবে নোমান নিজের হাসিটা বজায় রাখে। উর্মিলার মা কিছুটা বুঝতে পেরে বলে,
“উর্মি! যখন তখন যা ইচ্ছা তাই বলার স্বভাব তোর যাবে না? কথায় শেখাতে পারলাম না তোমায়। আর তুমিই বুঝি আমার মেয়েকে হসপিটাল অবধি নিয়ে এসেছিলে?”
শেষ কথাগুলো নোমানকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়ে নোমান নম্র সুরে জবাবে বলে,
“জি, হ্যাঁ। আর ওর রা/গ করাটা স্বাভাবিক আন্টি। আমিই ওকে রাগিয়ে দিয়েছিলাম রাস্তার মাঝখানে সেকারণেই ওর এমন অঘ/টন ঘটে গেল।”
“ওসব কিছু না। মূল কথা হচ্ছে আমি ওকে বিয়ের কথা বলেছিলাম তো তাই ক্ষে/পে ছিল। বিয়ের কথা যেন সহ্যই হয় না তার। তুমি ভেতরে এসো।”
নোমান ভেতরে এলো। উর্মিলার নিকটে গিয়ে নিজের হাতের ফুলগুলো দিতে গেলে মুখ ঘুরিয়ে নিজের হাত গুটিয়ে অকপটে রইল উর্মিলা। নোমান কিছু না বলে মেয়েটার পাশেই রেখে দিলো ফুলগুলো। বিয়ের কথাটি শুনে মনটা উটকো চিন্তায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ততক্ষণে। প্রফুল্ল সজীব মনটা যেন নিমিষে শুকনো পাতার ন্যায় হয়ে গেল। তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
“বিয়ের কথায় রাগার কী হলো মিস. উর্মিলা? বিয়ে করা তো ভালো ব্যাপার।”
“সেটাই তো ওকে বোঝাতে পারি না। এখন এত এত সম্মন্ধ আসে ওকে নিয়ে। সবসময় তো ভালো ছেলে পাওয়া যায় না। এটা ও বুঝতেই চায় না।”
নোমান নীরবে হেঁসে খানিকটা ঝুঁকে উর্মিলাকে প্রশ্ন করল,
“তা বিয়ের দাওয়াত কবে দিচ্ছো আমায়?”
এবার আরো মেজাজ খারাপ হয় উর্মিলার। রে/গেমেগে চোখ রাঙিয়ে তাকায় নোমানের দিকে। ইচ্ছে করল ঠা/স করে একটা থা/প্পড় বসিয়ে দিতে। কী করে পারে একটা মানুষ কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে সেটা এই লোকটার থেকেই যেন শিখতে হয়। উর্মিলা এবার তার মায়ের দিকে তাকিয়ে জে/দ ধরে বলল,
“মা! তুমি থামবে? তোমরা দুজন মিলে বিয়ে বিয়ে শুরু করলে কেন? এত শখ হলে তুমি আবার বাবাকে বিয়ে করে নাও আর এই লোকটাকেও একটা পাত্রী খুঁজে দাও বিয়ের জন্য। আমাকে জ্বালিয়ো না তোমরা।”
রাগ ফোঁসফোঁস করে কথাটা অনর্গল বলে থামল উর্মিলা। তার মাও তেতে উঠলেন এবার।
“দিনকে দিন লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছিস!”
নোমান শান্ত সুরেই বলল,
“আমার পছন্দ মতো কাউকে পেলে তো বিয়ে করেই নেব। সমস্যা নেই। তুমি সবার আগে দাওয়াত পাবে। এখন আমি আসি।”
“এখনি চলে যাবে?”
নোমান প্যান্টের পকেটে হাত গুঁজে নিলো। মাথা দুলিয়ে বলল,
“হ্যাঁ আন্টি আমি আসি। কাজ আছে।”
নোমান আর কথা বাড়াল না। উর্মিলার লাল হয়ে যাওয়া চেহারার দিকে তাকিয়ে বেরিয়ে এলো। করিডর দিয়ে যেতে যেতে অনর্থক ভাবনায় পড়ল নোমান। তার তো হাতে কোনো কাজ নেই। তবে বেরিয়ে এলো কেন বাহানা দিয়ে? কীসের এত অমায়িক চাহিদা?
বসে বসে এক অদ্ভুত চিন্তায় নিজেকে মাতিয়ে তুলেছে রূপাঞ্জনা। সেই চিন্তার মাঝে হা/না দিলো কারোর উপস্থিতি। হালকা ফাঁক রাখা দরজায় উঁকি দিচ্ছে দুটো সুন্দর আঁখি জোড়া। ভ্রু কুঁচকে তাকাল রূপা। চিনতে খুব একটা ভুল হলো না তার। অভিরূপ তাকে দরজা লাগাতে বলেছিল। কিন্তু সে ভুলে গিয়েছে। দুর্বল এবং নিচু সুরে সে বলে,
“রাগিনী!”
রাগিনী হুড়মুড়িয়ে দরজা খুলে ফেলল একহাত দিয়ে। যেন সে বেশ ভয় পেয়েছে। বাধ্য মেয়ের মতো উত্তর দিলো,
“হ্যা়ঁ। কিছু বলবে?”
রূপাঞ্জনা বেশ ভালো করেই বুঝে নেয় মেয়েটা ভয় পাচ্ছে। পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তার নিজের কারণে এই মেয়েটার ওপর দিয়ে অনেক কিছুই বয়ে গিয়েছে সেটা বেশ ভালো করেই বোঝা যায়। আর সে তো নিজেই একটা আ/তঙ্ক। তবে রূপা ভালো করে সোজা হয়ে বসে আশ্বাস দিয়ে বলল,
“ভয় পেও না। আমি সত্যিই এখানে কোনো উদ্দেশ্যে আসিনি। এখানে এসো।”
রাগিনী স্যুপ নিয়ে এসেছিল। তবে ঘরে প্রবেশ করার সাহসটা পাচ্ছিল না। দুরুদুরু বুকে এলোমেলো পায়ে রূপার থেকে কিছুটা দূরত্বে এসে বসল সে। স্যুপ এগিয়ে দিয়ে বলল,
“এটা খেয়ে নাও।”
রূপা হাত বাড়াতে গিয়েও বাড়াল না। তার হাতে র/ক্ত শুঁকিয়ে গিয়েছে। সেটা খেয়াল করে রাগিনী ভয়ে ভয়েই বলল,
“আমি খাইয়ে দেব?”
“তুমি?”
এক আকাশ বিস্ময় নিয়ে বলল রূপা। রাগিনী হালকা মাথা দুলাতেই রূপা আরো গুটিয়ে নিলো নিজেকে। মিনমিন করে বলল,
“কেন এমন যত্ন করছ আমার? করো না এত যত্ন! এসব সেবা আমার মধ্যে আরো বেশি অপরাধবোধ জাগিয়ে তুলছে।”
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]