#গোধূলি_বেলায়_তুমি_এসেছিলে
#আনিশা_সাবিহা
পর্ব ২ (২য় খণ্ড)
“কাঁদছিলে কেন?”
অভিরূপের ভাঙা আর নিভানো কণ্ঠ চকিতে তাকায় রাগিনী। চাঞ্চল্যে ভরা লোকটির এই পরিণতি মানতে পারল না সে। না চাইতেও রাগিনী মনে অদ্ভুত ক্ষো’ভ তৈরি হলো সেই বহুরূপী নারীর প্রতি যে কিনা অভিরূপকে নিজের মায়ায় আঁটকে ফেলেছে। তার জন্য ভেতরে মুষড়ে পড়েছে লোকটি। প্রাণ থেকেও যেন নিষ্প্রাণ। রাগিনী নিজেকে ধাতস্থ করে নিজের জামাটা লাগেজে রেখে বলল,
“আপনিও তো কাঁদছিলেন।”
“কী করে বুঝলে?”
অভিরূপের উৎকণ্ঠা হয়ে করা প্রশ্নে রাগিনী পাল্টা প্রশ্ন করল,
“আপনি কী করে বুঝলেন?”
“তোমার ভেজা চোখের চারিপাশ আর লাল মুখটা সব বলছে। বিয়েটা তো হচ্ছে না। তবে তোমার সমস্যা কীসে? আমায় বলতে পারো!”
রাগিনী অবাক হয় আরেক দফা। লোকটা কী দিয়ে বানানো। এই মূহুর্তে নিজের শোকের মাঝেও রাগিনীর সমস্যা নিয়ে চিন্তা করছে। এই মানুষটাই বুঝি এমন! পরকে নিয়ে ভাবেন বেশি। রাগিনীও বলল,
“আপনার ফোলা চেহারা, সবসময়ের মতো সুন্দর হয়ে থাকা চুলগুলো অনিয়ম হয়ে অগোছালো দেখা যাচ্ছে। আর আমার সমস্যা জেনে কোনো লাভ নেই। এর সমাধান নেই।”
“বলেই দেখো। চেষ্টা তো করতে পারি!”
“কীভাবে পারছেন এতটা দৃঢ় থাকতে? নিজের দিকে তাকিয়েছেন? ভালো লাগছে না আপনাকে দেখতে। আপনাকে সবসময় একজন ভালো বন্ধু ভেবে এসেছি। ভবিষ্যতেও ভাববো। সেখান থেকেই বলছি আপনাকে হাসিখুশিতেই মানায়।”
অভিরূপের মলিন হাসে। আর বলে,
“আমার হাসিখুশি, আমার সমস্ত অনুভূতি কেঁড়ে নিয়ে নির্দয়া নারীর মতো আমার হৃদয়টাকে যে ফাঁকা করে দিলো সে! এই হৃদয়ে আর কিছুই বাকি নেই।”
রাগিনী চুপ হলো এবার। অভিরূপের বলা প্রতিটা শব্দের গভীরতা তাকে স্পর্শ করতে পারল। আশেপাশে উর্মিলাও নেই। অভিরূপকে দেখেই সে ফাঁকা রাস্তা পেয়ে ধড়ফড়িয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। অভিরূপ তাকে আরেকবার নিচু গলায় জিজ্ঞেস করল,
“আরেকবার বলো না! তুমি কি সে নও? যার হাত ধরে আমি রিকশায় স্বস্তিবোধ করেছিলাম? তুমি কি সে নও? যাকে আমি হসপিটালের ছাঁদে নিজের গাওয়া ‘হৃদমাঝারে রাখব’ গানটি উৎসর্গ করার সাথে সাথে নিজের হৃদয় এবং সমস্ত স্নিগ্ধ অনুভূতি উৎসর্গ করে দিয়েছিলাম?”
রাগিনী বেশ ভালো করেই অভিরূপের দর্শনেন্দ্রিয়ের দিকে তাকিয়ে বুঝল মানুষটির মনে একটু একটু করে উৎপত্তি হওয়া প্রগাঢ় যাতনা। যেন লোকটি আশা করে রয়েছে রাগিনী যদি একবার স্বীকার করে ওটা সে ছিল তবে লোকটি আবারও হয়ে উঠবে প্রাণোচ্ছল! তবে নিয়তি নি’ষ্ঠুর। রাগিনী মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না। সে এক বহুরূপী মেয়ের কথা! বিশ্বাস না হলে বাবার থেকে শুনে নিতে পারেন। বাবা সব জানে। তবে নিজের বন্ধুর কাছে ছোটো হবেন না ছোটো মানুষের মতো বুদ্ধি করে বিষয়টা লুকিয়ে গিয়েছে। আপনি সবসময় বলতেন না? আমাকে একেক সময় একেকরকম লাগে আপনার! সেই একেকরকম লাগার কারণ এটাই ছিল।”
অভিরূপের বুক চিঁড়ে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। তার আর কারোর কাছ থেকে শোনার বা জানার নেই। রাগিনীর বাবা বিষয়টা স্বীকার করেছে। সে রাগিনীর কোমল চোখ দুটোর দিকে দৃষ্টিপাত করে। এই মেয়ের দিকে তাকিয়ে সে কখনো স্বস্তি আর শান্তি অনুভব করেনি। তার প্রশান্তি লুকিয়ে ছিল সেই অপ’রাধী মেয়েটির চোখের মাঝে। যার চোখ ভরে ছিল দুঃসাহস। অভিরূপ আবারও বায়না ধরা গলায় বলে,
“আমায় ওই বহুরূপীর সাথে দেখা করিয়ে দিতে পারবে, রাগিনী?”
“কী করবেন? কী বলবেন তাকে?”
“তা অজানায় থাক। সেটা শুধু তাকেই বলব। এই আশায় রইলাম যে কখনো তার মুখোমুখি হবো আমি!”
বলেই অভিরূপের রাগিনীর লাগেজের দিকে পড়ল। তৎক্ষনাৎ সে বলল,
“কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
“চলে যাচ্ছি আমি। আঙ্কেল আর আন্টিকে মুখ দেখানোর মতো সাহস আমার নেই। আমার বদলে কষ্ট করে একটু তাদের সরি বলে দেবেন। উনাদের সম্মানহানি হয়েছে। তার জন্য আমি লজ্জিত।”
অভিরূপ কিছু বলতে চেয়েও নীরব রইল। একপানে চেয়ে রইল রাগিনীর মায়াভরা বিড়াল রিও এর দিকে। তার জীবনই বোধহয় সুন্দর! কোনো জটিলতা নেই। আর না আছে কোনো চিন্তা।
বাড়ি চলে যাওয়ার জন্যই বের হচ্ছিল উর্মিলা। অসময়ে আবারও এসে টালমাটাল অবস্থায় সংঘর্ষ হলো তার চেয়েও লম্বা এবং প্রসারিত ব্যক্তির সঙ্গে। মুখ উঁচিয়ে চশমাটা ঠিক করে তাকাতেই চোখ কচলাতে থাকা নোমানকে দেখেই তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল সে।
“আপনার চোখ দুটো ভালো থাকা সত্ত্বেও কি আপনি দেখতে পান না? সবসময় কেন ধা’ক্কা খেতে হয় আপনার?”
“কী করব বলো? তোমার এই শুকনো শরীরটা চোখে পড়লেই আমার এক ধা’ক্কায় তোমায় উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে। এই, ঝড়ে বুঝি কখনো বাহিরে যাও না তাই না? বাহিরে গেলে বুঝতে! কখনো যদি আমি থাকা অবস্থায় ঝড় হয় তবে তোমায় ঘুড়ি বানিয়ে আকাশে উড়িয়ে দেব।”
বলেই একটা লম্বা হাই তুলল নোমান। চোখ দুটো দেখেই মনে হচ্ছে সদ্য ঘুম থেকে উঠে বাহিরে এসেছে। উর্মিলা হিসহিসিয়ে বলল,
“আপনার হাতির শরীর বলে সবার হাতির শরীর হবে? জিরো ফিগার দেখেছেন কখনো?”
নোমান চোখটা সরু করে উর্মিলাকে দেখে নেয় এবার। তারপর ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে দেয় সে।
“দেখেছিলাম তো! বাট তোমার দৌলতে মাইনাস টু ফিগারও দেখা হয়ে গেল।”
“আপনার সঙ্গে কথা বলাই ভুল হয়েছে আমার। বেকার নিজের সময়, মুখ দুটোই নষ্ট। ফা’জিল মার্কা লোক!”
“সরি বাট আমার নামের কোনো মার্কা টার্কা হয়নি। আমি ভোটে দাঁড়াইনি তো কখনো! যদি দাঁড়াই তবে কষ্ট করে একখানা ভোট দিয়ে যেও।”
উর্মিলা এবার চশমা খুলে চোখ রাঙিয়ে তাকায়। সামনে থাকা এই লোকটাকে আস্ত চিবিয়ে খেলেও শান্তি মিটবে না। নোমান সেসব তোয়াক্কা না করে অগোছালো চুলগুলো ঠিক করতে করতে বলে,
“অভিরূপকে দেখেছ? আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম তারপর উঠে যে কোথায় গেল ছেলেটা!”
“হু উপরে রাগিনীর ঘরে গেল দেখলাম। আর আপনার এই সিচুয়েশনে ঘুম পাচ্ছে?”
“ইয়েস ম্যাডাম। আমার টেনশনে ঘুম পায় বেশি।”
উর্মিলা ভেংচি কেটে উত্তরে বলে,
“আগেই ভাবতাম আপনি এলিয়েন। আজ সিউর হয়ে গেলাম। নয়ত টেনশনে কারোর ঘুম পায় না! তা কোন প্রজাতির এলিয়েন আপনি?”
নোমান জোর গলায় বলে,
“এলিয়েন তো তুমি। বাই দ্যা ওয়ে, তোমরা মেয়েরা এমন কেন বলো তো? কথা দিয়ে কথা রাখো না! তোমার বান্ধবীর জন্য আমার বন্ধুটার অবস্থা দেখেছ?”
উর্মিলা ক্ষুদ্ধ হলো এবার। আর যাই হক নিজের বান্ধবীর বিরুদ্ধে এসব সে শুনতে রাজি নয়। সে ক্ষোভ নিয়ে বলল,
“এক্সকিউজ মি! আপনার বন্ধু যে অন্য কারোর প্রেমের সমুদ্রে তলিয়ে গিয়েছে! তাতে? এটা জাস্ট একটা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং। যারা কেউ কাউকে চায় না তাদের মিলন না হওয়ায় ভালো। আপনার বন্ধুকে সামলে নিজ দেশে নিয়ে গিয়ে আগের মতো করে তোলার চেষ্টা করুন। দেখবেন এমনি ভুলে যাবে সব। সেলেব্রিটি মানুষ! এসব আবেগ ভুলে যাওয়া ব্যাপার না তাদের কাছে।”
বলেই বড়ো বড়ো শ্বাস নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো সে। আবারও অন্যদিকে ফিরে বলল,
“আর আপনারা ছেলেরা মেয়েদের কখনোই বুঝবেন না।”
উর্মিলা দাঁড়াল না আর এক মূহুর্তও! বেরিয়ে এলো হনহনিয়ে। পিছু ডাকতে গিয়েও ডাকল না নোমান। ঠাঁই দাঁড়িয়ে ভাবল হয়ত কথাটুকু বলা উচিত হয়নি তার। তাই বলে এভাবে রাগ দেখাবে? নোমান মনে মনে উর্মিলার একটা নামও ঠিক করল! মেয়েটা একটু বেশি চিকন দেখে নাম রেখে দিল, ‘শুঁকনো মরিচ’!
এখন রাতটাতে একটু শীত শীত ভাব হয়। রাত যত বাড়ে শীতের ভাবটা বেশি প্রগাঢ় হয়। ভোরও একটু দেরিতে হয়। রাগিনী বিছানা ছেড়েছে সবেই। তবে সারারাতই জেগেই কাটিয়েছে সে। ঘুমটা আর চোখের পাতায় এসে পৌঁছাতে পারেনি। ফলে চোখমুখের অবস্থাও খুব একটা ভালো হয়। চেহারা ফুলে চোখ দুটো যেন ছোটো আকার ধারণ করেছে। সেই অবস্থাতেই ফ্রেশ হয়ে চুলটা পেছনে কোনোরকমে বেঁধে নিলো রাগিনী। বিষণ্ণতাকে চাপা দেওয়ার চেষ্টায় দীর্ঘশ্বাস ফেলল আয়নায় নিজেকে দেখে। তারপর ঘাড় ঘুরিয়ে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা কোহিনূরের স্কেচটার দিকে তাকিয়ে মলিন হাসল। বিড়বিড়িয়ে বলল,
“আমি চলে যাচ্ছি, অফিসার কোহিনূর রত্ন! জানা নেই কখনো আপনার সঙ্গে কখনো দেখা হবে কিনা তবুও এই সিক্রেট অফিসার একদিন ঠিক আমায় খুঁজে নেবে এই ভেবেই আমি শহর ছাড়তে চলেছি।”
রাগিনী বিছানার কাছে এসে উঠে গিয়ে জানালা খুলে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে হুড়হুড় করে শিরশিরে বাতাসের আগমন ঘটে গেল। সকালটা এখনো ভালো করে হয়নি। সবে একটু একটু করে দেখা মিলছে আলোর। রাগিনী এবার রিওকে উঠিয়ে তাকে একটা জামা পরিয়ে দিলো। লাল রঙা জামা পরেই রিও লাফাতে লাগল। যেন সে মনে মনে ভীষণ কৌতূহলী! রাগিনী নিজে মাথায় একটা ওড়না পেঁচিয়ে একহাতে লাগেজ আর অন্যহাতে রিওকে তুলে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ঘর থেকে। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতেই সৈয়দের দেখা মিলল। তাকে দেখেই সৈয়দ তড়িঘড়ি করে এগিয়ে এসে লাগেজ ধরে বলল,
“স্যারকে ডাইকা দেই?”
“এখনো ছয়টাও বাজেনি। এমনিতেই বাবা হয়ত খুব টেনশনে রাত করে ঘুমিয়েছে। আর বিরক্ত করার দরকার নেই। কাকা, নিজের খেয়াল রাখবেন আর বাবারও! টাইমলি ঔষধ ধরিয়ে দেবেন। নয়ত খেতে ভুলে যায়।”
সৈয়দ বাধ্য মতো মাথা নাড়াল। তারপর বাড়ি ছাড়ল। গাড়িতে লাগেজ তুলে দিল সৈয়দ। গাড়ি ছাড়ল। হতাশা বাড়ল! রাগিনীর মনটা বলে উঠল, এই বুঝি সামনে এসে কোহিনূর দাঁড়াবে। তার ওপর জোর দেখিয়ে বলবে কোথাও যাওয়া হচ্ছেনা। কিন্তু মনের কল্পনা সেটা মন অবধিই সীমাবদ্ধ থাকে। ভাবতেই চোখ ভর্তি পানির আগমন ঘটল। ঠোঁট চেপে নিবারণ করতে থাকল রাগিনী সেইসব অবাধ্য অশ্রুগুলি।
রেলস্টেশনে নেমেই বেশ লোকজনের সমাগম দেখল রাগিনী। সকলেই উদগ্রীব নিজের কাঙ্ক্ষিত স্থানে যাওয়ার জন্য। শুধু রাগিনী ব্যতীত। ড্রাইভার লাগেজ নামিয়ে দিয়েই বলল,
“ট্রেন আসার আগ পর্যন্ত থাকি আমি?”
রাগিনী তাও মানা করল। তার একটু একাকিত্ব প্রয়োজন! সে বিনয়ের সঙ্গেই বলল,
“তার কোনো প্রয়োজন হবে না। আর কিছুক্ষণই তো। আধঘণ্টার মাঝে ট্রেন এসে পড়বে।”
“তাইলে আমি যাই?”
রাগিনী মুচকি হেসে সম্মতি জানাতেই বিদায় নিলো ড্রাইভার। একহাতে রিও এবং অন্যহাতে লাগেজ টানতে টানতে এসে বসল সিটে। প্রতীক্ষা করতে লাগল ট্রেন পৌঁছার। তারপর এক দৃষ্টিতে সব মানুষের হেলদোলের মাঝেই অবশীভূত আঁখিজোড়া পরখে পরখে খুঁজতে থাকল মনের মানুষটিকে। কেন যে মনে বাঁধে ক্ষীণ আশা! মানুষটি কী করে জানবে সে এখানে রয়েছে? এটাও রাগিনী অবগত হওয়া সত্ত্বেও খুঁজতে খুঁজতেই পার হলো সময়টুকু। অনেকটা সময় পার হওয়ার পরেই ঘোষণা দিলো, “সোনার বাংলা এক্সপ্রেস আধঘণ্টার মাঝেই নিজের গন্তব্যে রওনা দিতে চলেছে। সকলে নিজের জিনিসপত্র নিয়ে সাবধানে থাকুন।”
মনের অদ্ভুত চাওয়া মানতে মানতে চোখ দুটো ঘোলা হয়ে এসেছে রাগিনীর। আর মাত্র আধঘণ্টা। তারপর এই অস্থিরতা বোধহয় মিলিয়ে যাবে! রাগিনী উঠে দাঁড়াল। চোখেমুখে পানি না দিলেই নয়। ধীর পায়ে এগিয়ে গেল রেস্ট রুমের দিকে।
রেস্ট রুমের ওয়াশরুমের বেসিনের পানির কল ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছেমতো পানির ঝাপটা দিলো মুখে রাগিনী। পানির স্পর্শে মুখের সঙ্গে চুলের কিছু অংশ এবং মাথায় দিয়ে রাখা ওড়নার খানিকটা ভিজল। তবুও নিজের কাজ চালিয়ে গেল সে। এরই মাঝে কর্ণকুহরে ভেসে এলো অন্যরকম এক ঘোষণা! কান খাঁড়া করে শোনার চেষ্টা করল রাগিনী।
‘বিশেষ ঘোষণা! একজন লোকের স্ত্রী হারিয়ে গিয়েছেন। যদি তার স্ত্রী মিসেস. রাগিনী তাজরীন ঘোষণাটি শুনতে পান তবে দ্রুত আমাদের হেড অফিসে চলে আসুন। আপনার স্বামী আপনাকে খুঁজছেন।’
হকচকিয়ে উঠল রাগিনী। আশ্চর্য! সে কি কানে ভুল শুনল? উঁহু, না। ঘোষণা পরপর তিনবার রিপিট হলো। এমনকি বার বার তারই নাম উচ্চারণ করছে তারা। তড়িঘড়ি করে রিও কে কোলে তুলে হাতে লাগেজ ধরে ভেজা চোখেমুখেই বেরিয়ে এলো ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো রাগিনী। শেষমেশ রেস্টরুম থেকে বের হতে হতে ঘোষণা থামল। বিস্ময়ের চরম সীমানায় এসে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সে। আশপাশটা পর্যবেক্ষণ করতেই তাকে আরো চমকে দিয়ে ঘোষণায় ভেসে এলো তার বড্ড প্রিয় কণ্ঠস্বর!
‘রাগের রানি! আমার প্রিয়তমা! সংসারে অশান্তি একটু লাগতেই পারে। স্ত্রীকে স্বামী না হয় একটু মিথ্যে বললই! একটু ছলনা করলই! তাই বলে ভালোবাসার বন্ধন ছিঁড়ে চলে যাওয়ার ফন্দি আঁটবে তুমি? ফিরে এসো! নয়ত তোমার অপেক্ষায় আমি সারাজীবনে বুড়ো হয়ে যাব তো!’
হৃৎস্পন্দনের গতি বাড়তে বাড়তে উচ্চগতির হতে থাকল। কী করবে সেই হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এক জায়গায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল রাগিনী। নিজের কানকে অবিশ্বাস্য ঠেকল তার কাছে। তার শ্রবণশক্তিকে আর বিশ্বাস হচ্ছে না তার। কাটল কিছু মূহুর্ত। সকলেই বাকহারা আশেপাশের। গুঞ্জন চলছে। এক ভিড় পেরিয়ে দেখা মিলল কালো শার্ট পরিহিত রাগিনীর দেখা সবচেয়ে স্নিগ্ধ পুরুষটির। অবশেষে চক্ষু দুটোতে প্রশান্তি এবং খুশির ঢেউ বয়ে গেল। মান-অভিমান, রাগ-ক্ষোভ, দুঃখ-যন্ত্র’ণা সব মিলিয়ে লোচনে ফের প্রবেশ ঘটল অশ্রুর।
চলবে…
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক।]