অবহেলিত ভালোবাসা
পর্বঃ০২
Writer: Shakif Arefin
__নীল বাসর ঘরে তার বউ কে একটি কথাই বলে–তুই যদি এক বাপের জন্মের হয়ে থাকিস তাহলে কখনো আমার খাটে ঘুমাতে আসবি না।
__বিয়ের পর দিন নীল নাস্তা করার সময় তার বাবা কে বলে~ বাবা আমি আজই ঢাকা চলে যাবো। নীলের বাবা বলে__তুই তো মাত্র কাল আসলি আর আজই চলে যাবি..?বিয়ে করলি দুই একদিন বউ কে সময় দিবি না..?নীল বলে__ বাবা সময় থাকা লাগবে না।তুমি ফোন করে বললে দ্রুত আসতে তাই আমি দুই দিনের ছুটি নিয়ে আসছি।
__নীলের বাবা বলে__আচ্ছা সমস্যা নাই তুই যাওয়ার সময় তাসনুভা কে সাথে নিয়ে যাবি।মেয়ে টা এখানে একা পড়ে থেকে কি করবে।নীল কথা টা শুনে চমকে যায়। নীল বলে__বাবা কি বলছো এসব..?? ওকে আমার সাথে নিয়ে গেলে তোমাদের দেখা শুনা করবে কে..??ওর ঢাকায় যাওয়ার প্রয়োজন নাই। তোমাদের সাথে এখানেই থাকুক।
__নীল অনেক বার না করার পরও নীলের বাবা তাসনুভা কে তার সাথে জোর করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। যার ফল স্বরুপ প্রতি দিনই তাসনুভা কে পেতে হয় চড়থাপ্পড় আর চামড়ার বেলের আঘাত।
__বর্তমান…
___তাসনুভা সারাদিন কিছুই খায় নি। খুব ক্লান্ত তার মধ্যে আবার শরীর টা ব্যথা করছে যার কারণে খুব সহজেই তাসনুভার চোখে ঘুম চলে আসে।মীরা কিচেন ঘুছিয়ে এসে দেখে তাসনুভা সন্ধ্যা সময়ই ঘুমিয়ে গেছে। মীরাও খুব এই বাসায় খুব আতংকে থাকে। নীল যেইভাবে তাসনুভা কে একটু আরেক টু ভুল হলেই গায়ে হাত তুলে।কোন দিন জানি দেখে একেবারে খুন করে ফ্রিজে রেখে চলে গেছে।
মাঝে মধ্যে মীরারও একটু ভুল হলে ধমক দিয়ে কথা বলে।এই জন্য মীরা খুব আতংকে থাকে।নীলের সামনে বেশি একটা যায় না। ছোট মেয়ে বলে কথা।মীরা চিন্তা করে তার ভাগ্যেও কি এমন খারাপ জামাই জুটবে।
__সন্ধ্যার পর নীল তার গার্লফ্রেন্ড মাহিরার সাথে দেখা করে বাসায় আসে। নীল কলিং বেল বাজাতেই মীরা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। নীল বলে__ তোর আপায় কোথায় রে..??মীরা বলে..?? ভাইজান আপায় তো ঘুমিয়ে আছে। নীল বলে__ এই অসময়ে ঘুম কিসের..?? সে জানে না আমি উল্টো পাল্টা কাজ পছন্দ করি না।তোর আপাকে গিয়ে বল আমার জন্য কফি নিয়ে আসতে।মীরা বলে__ ভাইজান আপনি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বসুন আমি এখনই কফি বানিয়ে দিচ্ছি। নীল ধমক দিয়ে বলে __তোকে আমি যেটা করতে বলছি সেটা কর।আগ বাড়িয়ে কাজ করতে যাবি না।
__নীল রুমে গিয়ে ফ্যান ছেড়ে ওয়াসরুমে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে খাটে বসে আরাম করে।এরই মাঝে তাসনুভা ঘুম থেকে উঠে কফি বানিয়ে নীলের রুমে যায়। কফির মগটা তাসনুভা নীলের হাতে তুলে দেয়। কফির মগ টা নেওয়ার সময় নীল খেয়াল করে হাতের কব্জি টা বেশ ফুলে আছে। নীল বোঝতে পারে সকালে লাঠির আঘাত লেগে কব্জিটা ফুলে গেছে।
__এরপর নীল তাসনুভার মুখের দিকেও নজর দেয়। দেখে গাল দুটো ফুলে আছে। কপালে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ করা।নীল ভাবে হয় তো মীরা দোকান থেকে ব্যান্ডেজ এনে দিছে।আজকে একটু মারের পরিমাণ টা বেশিই হয়ে গেছে। তাসনুভা কফি দিয়ে চলে যেতে গেলে নীল ডাক দেয়।নীলের ডাক শুনে তাসনুভার কলিজা টা ভয়ে আঁতকে উঠে। তাসনুভার ধারণা,, হয়তো কফি টা ভালো হয় নি যার কারণে নীল তাকে আবারও মারবে।
__তাসনুভা ভয়ে ভয়ে নীলের দিকে তাকায়। নীল বলে__ তাসু এখানে দাড়াতো আমার কফি টা শেষ হলে মগ টা নিয়ে যাস।তাসনুভা কথা টা শুনে যেন এক ভয়ংকর আজাব থেকে বেঁচে যায়। তাসনুভা বলে__জ্বি আচ্ছা। নীল আবারও বলে __ রাতের জন্য কি রান্না করেছিস..??তাসনুভা বলে__ গোস্তো -সবজি-ডাল। নীল কফির মগে কয়েকটা চুমুক দিতেই তার ফোনের রিংটোন বেজে উঠে।
__নীল বলে__ তাসু তুই এখন চলে যা মাহিরার সাথে কথা বলবো।পরে এসে মগ টা নিয়ে যাস।কথা টা শুনে তাসনুভা চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না।চোখের পানি মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হয়ে যায়। মীরা দেখে বলে __ আপা কি হয়েছে..?? ভাইজান কি আবার কিছু বলছে..?তাসনুভা বলে__ না বোন উনি কিছুই বলে নি।
__মীরা তাসনুভার মুখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে।তাসনুভার মুখ টা খুব মায়াভরা। একেবারে নিষ্পাপ মেয়েদের মতো লাগে।মীরা চিন্তা করে এতো মার খাওয়ার পরও সব সহ্য করে স্বামীর সংসার করে যাচ্ছে। এই অমানুষটার সাথে সংসার না করে কোথাও চলে গেলেও পারে।
__তাসনুভা বলে __মীরা.. এভাবে তাকিয়ে কি ভাবছো..??তাসনুভার কথায় ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে মীরা। মীরা বলে__ আপা আপনি ভাইজান কে খুব ভালোবাসেন তাই না…??মীরার কথায় চমকে উঠে তাসনুভা। কি বলে এ-সব মেয়ে টা..!!কিন্তু এটাই যে সত্যি তাসু নীল কে খুব ভালোবাসে।অবহেলা এতোটাই কষ্টকর যে ভালোবাসা টা পর্যন্ত হার মেনে যায়।
__তাসনুভা বলে__ মীরা এসব কি বলো..? মীরা বলে_ _আমি জানি আপনি ভাইজান কে অনেক ভালোবাসেন। তাই তো প্রতিদিন ভাইজানের হাতে এতো মার আর অবহেলা সহ্য করে এখানে কাজের মেয়ের মতো পড়ে আছেন।
__ আপা আপনাকে ছোট মুখে একটা কথা বলি__ভাইজান আপনাকে একটুও ভালোবাসে না।ভাইজান তো ভালোবাসে ঐ মেয়েকে।দেখেন নাই এর আগে মেয়ে টাকে এই বাসায় এনে আপনাকে কতো অপমান করছে।আর ঐ শাঁকচুন্নি টাও মিথ্যা কথা বলে আপনাকে ভাইজানের হাতে মার খাওয়াইছে।
__একদিন দেখবো ভাইজান আপনাকে মাহিরা নামক শাঁকচুন্নির কথায় খুন করে ফেলে দিছে।এখনো সময় আছে আপনি এখান থেকে চলে যান।তাসনুভা কথা গুলো শুনে কান্না করে দেয়। তাসনুভা বলে __
__কোথায় যাবো মীরা..?? যাওয়ার মতো কোন জায়গায় আছে আমার..? গ্রামে যেতে পারবো না।চাচা আমাকে বসে রেখে খাওয়াবে না।খাওয়ালেও মানুষ খুব বাজে কথা বলবে।আর যদি শ্বশুর বাড়িতে যাই তারা যখন জানতে পারবে তার ছেলে আমাকে এতো কষ্ট দিয়েছে তাহলে তারা তখন খুব কষ্ট পাবে।
__ মীরা বলে__ আপা আমাদের দেশ টা যথেষ্ট বড় আছে। আপনার হাত পা আছে কিছু লেখা পড়াও জানেন কোন একটা ভালো কাজ করে বাঁচতে পারবেন।প্রতিদিন আর এতো মার খেয়ে চোখের পানি ফেলতে হবে না।তাসনুভা বলে__কিন্তু আমি যে তাকেও ছাড়তে পারবো না।মীরা আশ্চর্য হয়ে বলে __ কিহহ্!! দূর আপা মরেন তাহলে।বর বাহিরে অন্য মেয়ের সাথে পরকীয়া করে বাসায় ফিরে। আর আপনি আছেন তার ভালোবাসা নিয়ে।
__তাসনুভা চলে যায় তার রুমে। দরজা লাগিয়ে দিয়ে ওড়নায় মুখ চেপে কেঁদে দেয়। তাসুু এই অবস্হায় সত্যি নিরুপায়। কি করবে সে..?? আবেগ আর সমাজের কাছে যে, সে বড় বাধা।ভালোবাসে নীলকে অনেক। যদিও সে জানে নীল তাকে একটুও ভালোবাসে না।সে ভালোবাসে তার ভালোবাসার মানুষ মাহিরা কে।তাসু এ-ও জানে সে শুধু তাকে এই বাসার কাজের মেয়ে ভাবে। বউ সে নীলের কখনো হতে পারবে না।তবুও কেন তাসু নীল কে এক মূহুর্তের জন্য ছাড়তে পারবে না।
__ঐ দিকে নীল তার ভালোবাসার মানুষ মাহিরার সাথে কথা বলতে থাকে।এক পর্যায়ে মাহিরা বলে__এই তোমার বাসার রান্নাবান্নার কাজ করে কে..??নীল আশ্চর্য হয়ে বলে__ কেন কাজের মেয়ে মীরা আর তাসু।মাহিরা বলে__ ফকিন্নির মেয়ে থাকতে তুমি কাজের মেয়ে রাখবে কেন বাসায়..?? কালকেই তুমি কাজের মেয়ে কে বাসা থেকে বের করে দিবে।সব কাজ তুমি তোমার বউ কে দিয়ে করাবে।
__ নীল বলে__ কি বলো এসব..?? তাসু একা এতো কাজ করতে পারবে..??এমনেতেই তো সব সময় চাপের উপর রাখি।মাহিরা বলে__ এটা তো আরো বেশি ভালো সময় মতো কাজ করতে না পারলে তুমি গায়ে হাত তুলবে।তখন এসব সহ্য করতে না পেরে এমনেতেই একদিন পালিয়ে যাবে।
__নীল বলে __প্লিজ থাকুক না কাজের মেয়ে টা। মাহিরা ধমক দিয়ে বলে__ বউয়ের প্রতি এতো দরদ দেখাতে আসবে না।যেটা বলছি সেটা করো।কালই তুমি মেয়ে টাকে বাসা থেকে বের করে দিবে। তারা আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কেটে দেয়।
__পরদিন সকাল সকাল নাস্তা বানিয়ে টেবিলের উপর সাজিয়ে রাখে তাসু।প্রতিদিন সকালে-রাতে নীল একাই বাসায় খাবার খায়।কারণ তাসুকে নীল নিষেধ করছে যেন তার সাথে বসে কখনো খাবার না খায়।
__নীল সকালে একটু তাড়াতাড়িই ঘুম থেকে উঠে কারণ তার অফিসে আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং আছে।দ্রুত শাওয়ার নিয়ে অফিসের জন্য রেডি হতে থাকে নীল।কালো শার্ট টা পড়তে গিয়ে খুঁচা লেগে বোতাম টা খুলে ফ্লোরে পরে যায়।
__নীলের এমন টা দেখে রাগ উঠে যায়। নীল বলে__ দূর…মেজাজ টা এখন কেমন লাগে।কাজের সময়ই যা অঘটন হওয়ার হয়।তাসু নীল কে নাস্তা করার জন্য ডাক দিতে গিয়ে এসব দেখে। তাসু ফ্লোর থেকে বোতাম টা কুড়িয়ে হাতে নেয়।নীল একাই একাই বলতে থাকে–আজকে অফিসে মিটিং আছে আর আজকেই এমন টা হতে হলো।দূর কি যে করি এখন। আমার ফেবারিট শার্ট ছিল এটা।
__নীল কে এমন বিরক্ত হতে থেকে তাসু বলে __ আমি লাগিয়ে দেই..??নীল বলে__না থাক,,এখন আবার শার্ট টা খুলতে হবে।বোতাম টা লাগাতে গেলে তুই আবার শার্টের বাজ টা নষ্ট করে ফেলবি।
__তাসু বলে __ বাজ নষ্ট হবে না।আপনি গিয়ে নাস্তা করুন আমি সুই সুতো নিয়ে আসছি। শার্ট আপনার গা থেকে খুলতে হবে না। এমনেতেই লাগানো যাবে। এই বলে তাসু বোতাম টা হাতে নিয়েই রুমে যায় সুই সুতো আনার জন্য। নাস্তা খাওয়া শেষ হয়ে যায় নীলের কিন্তু তাসু এখনো সুই সুতা নিয়ে আসছে না।
__তাসু সুই সুতো আনতে গিয়ে কি করছে সেটা দেখার জন্য নীল তাসুর রুমে যায়। নীল গিয়ে দেখে তাসনুভা সুই সুতো নিয়ে আসছে।নীল বলে __ তুই সুই সুতো আনতে গিয়ে কোথায় হারিয়ে গেলি..??তাসু বলে__ আসলে এই গুলো খুঁজে পাচ্ছিলাম না।তাই খুঁজে পেতে দেরি হয়ে গলো।আমি এখনই বোতাম টা লাগিয়ে দিচ্ছি।নীল বলে__ প্লিজ একটু তাড়াতাড়ি কর।তাসু বলে__ হুম এই তো হয়ে গেছে।
__তাসু নীলের সামনে গিয়ে কাঁপা কাঁপা হাত দুটো নীলের বুক পর্যন্ত উঠায়।বোতাম টা তার জায়গায় রেখে গাঁথতে থাকে তাসু।নীল খেয়াল করে তাসুর হাত দুটো প্রচন্ড কাপছে। কাঁপার কথাই কারণ এই প্রথম তাসু নীলের এতো টা কাছে গিয়ে দাড়িয়েছে।নীল তাসুর গালে দেখে কালকের থাপ্পড়ের পাঁচ আঙ্গুলের দাগ টা এখনো কিছু টা বোঝা যাচ্ছে।
নীল বলে__ তুমি যে এভাবে কাপছো,,কখন না জানি আমার বুকেই সুই গেঁথে দাও।তাসু কষ্ট ভরা বুক নিয়ে বলে__ ভয় নেই আমি কারো বুকে মনে শরীরে আঘাত করি না।
চলবে….
গল্প টা ভালো লাগলে কমেন্ট করে জানাবেন। কেউ কোন বাজে কমেন্ট করবেন না।প্লিজ ??