গল্প:- #হেথায়_সেথায়_সর্বত্রই_রিক্ত (পর্ব:-২)
লেখা:-
মোঃ শাহরিয়ার ইফতেখায়রুল হক সরকার।
বাসার বাইরের গেটের বাম পাশে বাবা মাটিতে পড়ে আছে। দৌড়ে গিয়ে বাবার শরীর স্পর্শ করলো অনিন্দিতা। মুহূর্তেই আঁতকে উঠলো সে। বাবার সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে আছে। নির্বাক হয়ে বসে পড়লো অনিন্দিতা। মুখের ভাষা যেন হারিয়ে যাচ্ছে তার। কিছুই বলছে না। অনিন্দিতার পরে এবার তার ভাই বাবার শরীর স্পর্শ করলো। সাথে সাথে সেও চমকে উঠলো। নিশ্বাস চলছে কি-না চেক করতেই অনিন্দিতার ভাইয়ের যেন সারা শরীর শিউরে ওঠে।
পাশ থেকে অনিন্দিতার মা উত্তেজিত হয়ে বলল,
– তোর বাবার কী হয়ছে রে! সারা শরীর এমন ঠান্ডা হয়ে আছে কেনো? জলদিই তোর বাবাকে তোল, হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। এখন এতো কিছু ভাবার সময় নাই। তোরা ভাই-বোন এমন চুপ হয়ে আছিস কেনো?
কাঁপা কাঁপা স্বরে অনিন্দিতার ভাই বলে উঠলো,
– তার কোনো প্রয়োজন নেই। বাবা আর নেই। বাবার শ্বাস চলছে না। সারা শরীর এমনি এমনি ঠান্ডা হয়ে ওঠেনি।
– কি বাজে কথা বলছিস! চ*ড় খাবি কিন্তু।
অনিন্দিতার ভাই এবার চোখে জল এনে বলল,
– না মা, বাজে কথা বলছি না। বাবা আর সত্যিই নেই।
সঙ্গে সঙ্গে অনিন্দিতার ভাইয়ের গালে ঠাশ করে একটা চ*ড় দিয়ে অনিন্দিতার মা বললেন,
– তুই কী ডাক্তার হইছিস, যে বলে দিচ্ছিস তোর বাবা আর বেঁচে নেই?
অনিন্দিতার মা আর কিছু বলতে পারলো না। মাথা চক্কর দিয়ে ওঠে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি সেন্সলেস হয়ে যান। সবাই একত্রে ধরাধরি করে অনিন্দিতার মা’কে রুমে নিয়ে আসে। অনিন্দিতার ভাবীকে সেখানে রেখে তারা দু’জন আবার বাসার বাইরে বাবার লাশের পাশে এসে দাঁড়ালো। অনিন্দিতার ভাই পুলিশকে ফোন করে দ্রুত আসতে বলেছে। থানা অতটাও দূরে নয়। আসতে বেশ একটা সময় লাগবে না বোধ হয়।
অনিন্দিতার মনে এই মুহূর্তে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাবার লাশের পাশে মুখ চেপে কাঁদছে সে। এবারের হুট করে ঘটা বিষয়টাও সে আরও মানতে পারছে না। কোথা থেকে কী হলো, কি হচ্ছে, পরবর্তীতে কী হবে কোনোকিছুই বুঝতে পারছে না অনিন্দিতা। আচমকা অনিন্দিতার ভাই বলে উঠলো,
– আমার মাথাতে কিছু ঢুকছে না। বাবা এতো রাতে বাসার বাইরে কি করছে? কেনো এলো? নিশ্চয়ই এটা খু*ন। বাবাকে কেউ খু*ন করেছে। কিন্তু কেনো খু*ন করা হলো! তারা কে? এর পিছনে কারা জড়িত বা কে আছে? যাই ভাবিনা কেনো, ফলাফল শূন্যই। তুই-ই এতো রাতে আমাদের সবার ঘুম ভাঙিয়েছিস। বাবা ঘরে নেই তোর মাধ্যমেই জানা। আচ্ছা অনিন্দিতা, তুই কি আগে থেকে কিছু জানতিস? আমার-তো এখন সব বিষয়েই তোর ওপর সন্দেহ হয়। বাবার মৃত্যুর পেছনে তোর কোনো হাত নেই তো?
শেষ পর্যন্ত নিজের ভাইয়ের মুখে এমন কথাও যে অনিন্দিতাকে শুনতে হবে তা সে কস্মিনকালেও আশা করেনি। ছলছল চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে অনিন্দিতা বলল,
– আমি বাবার খু*ন….ছিঃ! আমি মাথায়ও আনতে পারছি না। তুমি এসব কি শুরু করছো ভাইয়া? চারদিন আগে গয়না নিয়ে একটা মিথ্যে দোষারোপ আমার উপর চাপিয়ে দিলে আর আজ বাবার মৃত্যুর দোষও! কেনো এমন করছো?
প্রত্যুত্তরের আগেই গেটের বাইরে পুলিশের গাড়ি এসে ব্রেক করলো। কিছু বলতে গিয়েও কেনো যেন বলল না অনিন্দিতার ভাই। গাড়ি থেকে দ্রুত কয়েকজন পুলিশ নেমে এলো। সাথে থানার ওসিও আছে। ইশারায় বাবার লা*শ দেখিয়ে দিলো অনিন্দিতার ভাই। বাবার লা*শ যেমন ছিল, তমনই আছে। কোনো নড়াচড়া করা হয়নি। যদি কোনো প্রমাণ নষ্ট হয়ে যায় তাই।
কয়েকজন আশেপাশে কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে আর ক’জন লা*শটাকে ভালো করে দেখছেন। আশেপাশে তেমন কিছু পাওয়া গেল না। তবে লা*শের নিচে একটা খাম পাওয়া গেল। কালো রঙের খাম। যেটা লা*শের নিচে চাপা পড়ে ছিল। খামটা এখনো খোলা হয়নি। ভেতরে কি আছে সেটাও কারো জানা নেই। খাম হাতে নিয়ে থানার ওসি অনিন্দিতার ভাইকে জিজ্ঞাসা করলো,
– গলায় দাগ! শরীরের আর কোথাও কোনোরূপ চিহ্ন নেই। মনে তো হচ্ছে শ্বাসরুদ্ধ ভাবে খু*ন করা হয়েছে। তবে এতো রাতে আপনার বাবা এখানে কী করছিলেন? কিছু কী জানেন?
– আমি ও আমার স্ত্রী ঘুমাচ্ছিলাম। এতো রাতে মা ও বোনের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আমাদের দু’জনেরই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। পরে জানতে পারলাম, বাবা বাসায় নেই। সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেও বাবাকে কোথাও পাওয়া গেল না। এদিকে বাসার মেইন দরজাটাও খোলা ছিল। বাইরে একবারও খোঁজা হয়নি। বাইরে আসা মাত্রই গেটের পাশে বাবাকে সবাই এভাবে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখি।
– কাউকে সন্দেহ হয়?
– হ্যাঁ হয়। অবশ্যই সেটা আমার বোনকে। আমি আমার বোন অনিন্দিতাকে সন্দেহ করি। ওকে আপনারা নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।
ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে অনিন্দিতার চোখ দু’টো বড়বড় হয়ে গেল।কিছু বলতে যাবেই মাত্র তার আগেই কেউ একজন ভেতরে প্রবেশ করতে করতে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,
– জিজ্ঞাসাবাদ তো আপনাকে করা উচিত।
গলার স্বরটা এহসানুল সরকারের। এহসানুল সরকারকে দেখে অনিন্দিতা একটু সংকোচ মুক্ত হলো। এই মুহূর্তে বাহির থেকে অপরিচিত কারো উপস্থিতি দেখে থানার ওসি নিজেই আগে প্রশ্ন করে বসলেন।
– কে আপনি?
একটা কার্ড বের করে দেখানোর পর এহসানুল সরকার বললেন,
– আমি এহসানুল। এহসানুল সরকার। গোয়েন্দা শাখার একজন পুলিশ অফিসার। চোখে না দেখলেও নাম বোধ হয় শুনেছেন।
অনেকটা অবাক হয়ে থানার ওসি গলার কন্ঠ স্বর নরম করে বলল,
– আপনি! শুনবো না কেনো, অবশ্যই আপনার নাম শুনেছি আমি। কিন্তু আপনি এমুহূর্তে এখানে কী করছেন?
– এতোকিছু বলতে চাইছি না। অনিন্দিতার বাবার প্রাণ সংশয় রয়েছে। সেটা আমিই এতো রাতে ফোন করে ওকে জানিয়েছি। তা উনি কি বেঁচে আছেন?
– না।
-লা*শে*র আশেপাশে কোনো কিছু পাওয়া গেছে?
হাতে থাকা কালো রঙের খামটা এগিয়ে দিয়ে থানার ওসি বলল,
– এই খাম ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি।
দ্রুতই ওসির হাত থেকে এহসানুল সরকার খামটা নিলো। পূর্বপরিচিত খাম। খামটা খুলেই তিনি একটা চিঠি বের করলেন। যে চিঠিতে লেখা ছিল,
– পাপের পরিমাণ সর্বোচ্চ সীমানায় পৌঁছে গিয়েছিল। জীবনের শেষ পাপটা আজ করার কথা ছিল। যারপর সব ছেড়ে-ছুড়ে মহান হতে চেয়েছিল কিন্তু তার আগেই ওপরে তার সব পাপের হিসেব দিতে চলে গেল।
#সেরু_ভাই
চিঠিটা সবার একটু শোনার মতো করেই পড়ে ছিলেন এহসানুল সরকার। যার পরপরই খামসহ চিঠিটা মুষ্টিবদ্ধ করে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তিনি বললেন,
– এই চিঠি দিয়ে কিছু হবে না। কিছু পাওয়াও যাবে না।
আতঙ্কিত গলায় থানার ওসি বলল,
– এটা কি সেই সেরু ভাইয়ের খাম!
এহসানুল সরকার গম্ভীর গলায় জবাব দিলো,
– হ্যাঁ। আপনি লা*শটাকে মর্গে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। এই খু*নের পেছনে শুধু একজনেরই হাত আছে, সেটা হলো সেরু ভাই।
এতোক্ষণ যাবৎ নিশ্চুপ থাকলেও এবার চুপ থাকলো না অনিন্দিতা। চোখের জল মুছে, অসহায় দৃষ্টিতে এহসানুল সরকারের দিকে তাকিয়ে বলল,
– সেরু ভাই কে? সে আমার বাবাকে কেনো খুন করলো? আমার বাবার কী এমন দোষ ছিল? এসব কি! একের পর এক আমি আর কিছু নিতে পারছি না।
সাথে সাথে অনিন্দিতার ভাইও এহসানুল সরকারের উদ্দেশ্য বলে উঠলো,
– আমিও জানতে চাইছি।
খানিকটা মুচকি হেসেই অনিন্দিতার ভাইয়ের কথার জবাবে এহসানুল সরকার বলল,
– কেনো আপনি কী কিছুই জানেন না? এতো সাধু সাজছেন কেনো? আজ তো আপনারও, আপনার বাবাকে খুন করার কথা! কত সূক্ষ্ম প্লানিং করে রাখা। আপনার কথাতেই তো আপনার বাবা এতো রাতে বাসার বাইরে বের হয়েছিল। আপনার তো খুশি হওয়া উচিত আপনার কাজটা অন্য কেউ করে দিয়েছে। মাঝখানে আমি পড়ে গেলাম, অপ্রীতিকর অবস্থায়। আপনার বাবা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর একমাত্র ছেলে ইমন অর্থাৎ অনিন্দিতার এক্স বয়ফ্রেন্ডকে কেনো খুন করালো সেটা ওনার নিজের মুখ থেকে জানা হলো না।
#চলবে_____