আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১০

0
1988

#আমার তুমি ২
#পর্বঃ১০
#তানিশা সুলতানা

সুমুকে দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে যায় তন্ময়। যে মেয়েটা সেই দিন পর্যন্ত উঠতে বসে তন্ময়কে কল করতো, হাজারটা মেসেজ দিয়ে মেসেঞ্জার ভরিয়ে রাখতো, নতুন কোনো পিক আপলোড দিলে সবার আগে লাভ রিয়েক্ট দিয়ে হাজারটা কমেন্ট করতো, তন্ময়কে দেখার জন্য ওদের ভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো।
আজকে সেই মেয়ে এক পলকের জন্যও তাকাচ্ছে না তন্ময়ের দিকে। কি সুন্দর হেসে হেসে গল্প করে যাচ্ছে তুলতুলের সাথে। যেনো তন্ময়কে চেনেই না।

হিমু চলে গেছে অনেকখন হলো। তারপর থেকে তন্ময় সুমুর মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু কেনো করছে সেটা অজানা। কাল পর্যন্ত মেয়েটাকে পেছন থেকে সরাতে চেয়েছে। বন্ধু বোনের সাথে প্রেম করার কথা মাথাতেও আনে নি। আর আজকেই মেয়েটার ইগনোর সয্য হচ্ছে না।

“দাভাই দাঁড়িয়ে আছো কেনো? যাও আমাদের জন্য বার্গার স্যান্ডউইচ নিয়ে এসো।

তুলতুল পকোড়া মুখে পুরে বলে৷ সুমু পকোড়া ভেঙে দুই টুকরো করে এক টুকরো মুখে দিতে দিতে তাকায় তন্ময়ের দিকে। তন্ময় অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কিছু একটা ছিলো সুমুর চোখে। কেমন মাতাল মাতাল লাগছে তন্ময়ের। ম্যাজিক শিখেছে না কি মেয়েটা?

জীভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয় তন্ময়।

” বার্গার খেতে হবে না। যেটা গিলছিস সেটাই গিল।

ধাপ করে তুলতুলদের ঠিক সমানে রাখা সোফায় বসে বলে তন্ময়। সুমু ঠোঁট বাঁকিয়ে একটু হাসে। তারপর নিজের ফোনটা হাতে নিয়ে হিমুকে কল করে।

“ভাইয়া আমাদের জন্য বার্গার পাঠিয়ে দাও। আটটা পাঠাবে ঠিক আছে?

তন্ময় একটু অপমানিত বোধ করে। মাথা নিচু করে ফেলে। কি হতো এনে দিলে?

” দাভাই সুমুর ভাইয়া বেশি ভালো।

তুলতুল গাল ফুলিয়ে বলে। তন্ময়ের বুকের ভেতর মোচর দিয়ে ওঠে। এভাবে বলা ঠিক হয় নি? এনে দেওয়া উচিৎ ছিলো। কতখনই বা লাগতো? আসলে হুট করেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। এটা মনের কথা ছিলো না। এখন ওদের বোঝাতেও পারবে না। কেমন এলোমেলো লাগছে তন্ময়ের। কই একটু আগেও তো এমন ছিলো না। হঠাৎ কি হলো?

সুমু তন্ময়ের মনোভাব বুঝতে পারে। ভীষণ অপমানিত বোধ করছে এটাও বুঝতে পারে।

“তুলতুল তোমার রুম দেখাবা না?

তুলতুল সুমুকে নিয়ে নিজের রুমে যায়। তন্ময় চুল গুলো খামচে ধরে বসে থাকে। কিচ্ছু ঠিক হচ্ছে না। এমনটা হওয়ার কথা ছিলো না।

🥀
ভার্সিটিতে নির্বাচন চলছে। তিন তারিখে ভিপির ভোট হবে। সেই সুবাদে ঢাকায় আটকে গেছে সায়ান। নির্বাচনের একজন পার্থী সায়ান। আর এটাও বিশ্বাস সায়ানই জয়ী হবে। নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত গ্রামে যাওয়া যাবে না। আর ভিপির ভোট শেষ হলেই শুরু হয়ে যাবে এমপির নির্বাচন। বাবাকে বলছিলো এই বার ভোটে না দাঁড়াতে কিন্তু তিনি শুনবেনা না।

সেটার প্রস্তুতিও নিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে বেশ ক্লান্ত সায়ান। হাসিব আর নিলয়কে সাথে নিয়ে এসেছিলো ঢাকায়।
ঢাকায় সায়ানের বাবার খুব ছোট একটা বাড়ি আছে। ভার্সিটির সাথেই। বাড়িটার জায়গা কিনে রেখেছিলো সায়ানের দাদাভাই। সায়ানের বাবা তাতে এক তালা বাড়ি বানিয়েছে। ইচ্ছে আছে বাড়িটাতে আরও কয়েক তালা করার। কিন্তু সময় আর পরিস্থিতির কারণে করা হয়ে ওঠে নি।
সায়ান সেখানেই থাকে।

সায়ান আজকে কয়েক ঘন্টার জন্য গ্রামে যাবে। ভার্সিটির পাওয়ার ফুল কয়েকজন স্টুডেন্টের হাতে সব বুঝিয়ে দিয়ে বাইকে চেপে রওনা দেয় গ্রামের উদ্দেশ্য। তুলতুলকে বেশ করে শাস্তি দিতে হবে। থা*প্প*ড় গাল লাল করে দিতে হবে।

কি পাইছে ওই নেইমারকে নিয়ে? প্রতিদিন প্রায় পাঁচ ছয়টা বেশি পোষ্ট করে নেইমারকে নিয়ে। কল দিলে রিসিভ করে না। উল্টে নাম্বার ব্লক করে রেখেছে।
ফেসবুক থেকেও নীরবে ব্লক করে দিয়েছে। নেহাত সায়ানের আইডি অনেক গুলো।

সুমু বায়না ধরেছে টাউনে যাওয়ার। পার্লারে যাবে। চুল গুলো কেমন হয়ে গেছে। টিটমেন্ট করাবে। তুলতুলও রাজী হয়ে যায়। ওর তো পার্লারে যেতে দারুণ লাগে ওর। তনুও যাবে। ফেসিয়াল করাবে।

বিকেলে হালকা নাস্তা করে রেডি হয়ে নেয় ওরা। তুলতুল সুমুর সাথে মেচিং করে গাউন পড়ে। দুজনের টা একই কালারের কিন্তু মডেল ভিন্ন।
তুলতুলের আরও একটা ইচ্ছে জেগেছে সুমুর মতো চুল কাটতে কপাল সমান করে।

সুমু চুল ওয়াশরুমে গেছে। তনু চুল বাঁধছে। এই ফাঁকে তুলতুল বেরিয়ে পড়ে। ভাইয়ের কাছে যাবে। ভাই মাকে বললে মা না করবে না।

তন্ময় শার্ট পড়ছিলো। ও বেরবে। ওদের পার্লারে নামিয়ে দেবে আর ওদের হয়ে গেলে সুমুকে বাড়ি পৌঁছে দেবে। হিমুর কাজ পড়েছে।

“দাভাই আমি সুমুর মতো করে চুল কাটতে চাই।

তুলতুল তন্ময়ের পেছনে দাঁড়িয়ে বলে।

“আম্মু তোকে নে*ড়া করে দেবে। এই আশা বাদ দে।

চুল ঠিক করতে করতে বলে তন্ময়।

” একটু বোঝাও না দাভাই। জীবন তো একটাই বলো। এখন যদি আমি একটু নিজের খেয়াল খুশি মতো না চলি। যদি শখ আহ্লাদ পূরণ না করি। তাহলে করবো কবে? এই তো বয়স শখ করার।
বাঁ*চবোই আর কয়দিন?
আমি চুল কাটবো। কতো কিউট লাগবে আমায় একবার ভাবো? আম্মু তো আমাকে কিউট লাগুক এটা চায় না। চাইলে কি আর এভাবে না করতে পারতো বলো?
পারতো না। নিজের আপন মেয়ের সাথে শ*ত্রুতা। তুমি শ*ত্রুতা করলে আমি যাবো কোথায় বলো? এতিম খানা ছাড়া আমার আর উপায় নেয়।

তুলতুল একদমে কথা গুলো বলে। তন্ময় দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।

“দেখছি

তুলতুল খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। টুপ করে গলা জড়িয়ে ভাইয়ের কপালে চুমু দিয়ে এক দৌড় দেয়। তন্ময় মুচকি হাসে।

🥀
তুলতুল খুশিতে রীতিমতো লাফাচ্ছে। কিন্তু তুলতুলের লাফানো বেশিখন টিকলো না। রিকশা থেকে নামতেই চোখ পড়ে হনুমানটার দিকে। বাইক নিয়ে ওদের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কি সাংঘাতিক?
এ এখানে আসলো কিভাবে?
সায়ান হেলমেট খুলে গোল গোল চোখে তাকায় তুলতুলের দিকে। তুলতুল ভেংচি কাটে। সাথে দাভাই আছে কিচ্ছু করতে পারবে না এই লোকটা।

সুমু এক দৌড়ে ভাইয়ের কাছে চলে যায়। হেসে হেসে দুই ভাইবোন কথা বলতে থাকে।
তন্ময়ও এগিয়ে যায়। তুলতুল একা দাঁড়িয়ে আছে। সামনে এগোনোর সাহস নেই।
এই হনুমানের সামনে না যাওয়াই ভালো। বলা তো যায় না। কখন আবার হালুম করে ধরবে।

“তোর বোন আমাকে প্রপোজ করেছে। আর আসতে বলবো। আমি তো আগে থেকেই তোর বোনকে পছন্দ করতাম। তো ও প্রপোজ করার পরে আর টিকতে পারলাম না। ছুটে চলে আসলাম ওকে দেখতে।
কি যে কান্না কাটি করেছে বেচারা তোকে বলে বোঝাতে পারবো না। কতো কাজ রেখে ছুটে এসেছি ভাবতে পারছিস?

সায়ান বলে ওঠে। তুলতুল চোখ বড়বড় করে তাকায়। কখন প্রপোজ করলো লোকটাকে? এতো মিথ্যে কথা কিভাবে বলে লোকটা? ঠোঁটও কাঁপলো না? মারাক্তক সাংঘাতিক লোকটা।

সুমু ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। তন্ময় এক পলক তুলতুলের দিকে তাকায়।

” এনি প্রুফ?

সায়ান যেনো এটারই অপেক্ষায় ছিলো।

“আমার মুখের কথায় তোর বিশ্বাস হচ্ছে না? এতোটা অবিশ্বাস করিস আমায়?
বেপার না। বোনের থেকে তো আর বন্ধু বড় না।

সায়ান তন্ময়ের সামনে নিজের ফোনটা ধরিয়ে দেয়। তুলতুল মনে মনে উড়ছে। প্রমাণ তো আর দিতে পারবে না। তারপর আচ্ছা মতো বকা দিবে দাভাই।
তুলতুল এগিয়ে এসে সুমু আর তনুর মাঝখানে দাঁড়ায়।
তনু আর সুমু তুলতুলের দিকে তাকাচ্ছে।

তন্ময় মেসেজগুলো পড়ে তুলতুলের দিকে তাকায়। কতো আবেগ সময় কথা বলেছে তুলতুল।

” তোর বোন যে তলে তলে টেম্পু চালাচ্ছে বুঝতেও পারলাম না আমি।

সায়ান তৃহ্ম দৃষ্টিতে তুলতুলের দিকে তাকিয়ে বলে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here