#প্রিয়োশীর_ভালোবাসা
#পর্ব_২
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
আয়ান লিয়াকে রাতেরর খাবার খাওয়াচ্ছিলো। এমন সময় আয়ানের রুমে ওর মা প্রবেশ করে। মিসেস আফিয়া সিকদার রুমে এসেই আয়ান কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে তার গালে থা/প্প/র লাগায়। আয়ান অবাক চোখে তার মায়ের দিকে তাকায়। সে ভাবতে পারছে না তার মা তার গায়ে হাত তুলছে।
– তোর মতো সন্তান যে আমি জন্ম দিয়েছি ভাবতেই ঘৃনা হচ্ছে আমার আয়ান। তুই কি কারো ভালো সহ্য করতে পারছিস না। কি দোষ ছিলো অই মেয়েটার হ্যাঁ? তোর স্ত্রী ছিলো সে আবার প্রেগন্যান্ট ও তাহলে কেনো তুই অই মেয়েটার সাথে এতো নাটক করলি।
মিসেস আফিয়া সিকদার কান্নারত কন্ঠে আয়ানের কাছে জানতে চাইলো। মায়ের কান্না দেখেও আয়ান স্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে আছে৷ তার ভাবাবেগ আগের মতো। আয়ান চোখ-মুখ শক্ত করে তার মা’কে বললো।
– এসব আজাইরা ফাও প্যাচাল নিয়ে আমার রুম থেকে বের হও তুমি। আমি চাইনা তোমার সাথে খারাপ বিহেভিয়ার করতে আম্মু।
– আয়ান নিজের মায়ের সাথে কিভাবে কথা বলছো তুমি?
– তুমি বেশি কথা না বলে ঘুমাও লিয়া।
আফিয়া সিকদার নিজ সন্তানের কাছে অপদস্ত হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। চোখ দিয়ে পানি পরছে তার,কেনো যে আয়ান এমন করে তা সে আজ ও জানেনা।
প্রায় অনেক্ষন হয়েছে জ্ঞান ফিরেছে রওনাকের। চুপচাপ সুয়ে মাথার উপর থাকা সাদা রঙের ছাদ দেখছে। রাফিন বোনের পাশে বসে আছে বোনের হাত ধরে।
– কেনো এইরকম বলদের মতো কাজ করলি, একজন মানুষ কি তোর জিবনের থেকে বেশি দামী বনু? আমাদের মা থেকেও সে বড় হলো তোর কাছে। তুই জানিস তুই যখন আম্মুর পেটুতে ছিলি তখন আম্মু খুব অসুস্থ থাকতো, ডাক্তার বলেছিলো যে একজন কে বাচাতে পারবে তখন আম্মু তোকে বেছে নিয়েছিলো। আল্লাহ এর দয়ায় আম্মু আর তুই দুজন সুস্থ হয়েছিস তখন। যে মা নিজের কথা না ভেবে তোর কথা ভেবেছে তুই তখন এই দুনিয়াতে ছিলি না। আজ এইরকম এক কাজ করলি মা-বাবার কথা না ভেবে।
রওনাক নিজের করা ভুলে লজ্জিত। ভাইয়ের দিকে তাকানোর মতো সাহস পাচ্ছে না সে। সে রাগের বসে খুব বড় এক ভুল করে ফেলছে৷
– আমাকে ক্ষমা করে দে ভাইয়া। আমার রাগে মাথা কাজ করছিলো না আমি কি করতাম তখন? এইভাবে সবার সামনে আমাকে হাসির পাত্রী বানিয়ে কিভাবে অপমান করলো। আমাকে ভালো যদি নাই বাসতো আগেই বলে দিতো সে তা না করে সে এই কাজ করলো। আর লিয়া কিভাবে এসব করলো ভাইয়া সে না তোমাকে ভালোবাসতো?
রওনাকের কথায় রাফিনের চোখ ছলছল করে উঠলো, তবুও বোনের সামনে নিজেকে শক্ত প্রমান করতে অন্যদিকে তাকিয়ে নিজেকে কন্ট্রোল করলো।
– এসব বাদ দে বনু কাল সকালে একটা সারপ্রাইজ আছে তোর জন্য। আশা করি তোর পছন্দ হবে।
– মজা নিচ্ছো আমার সাথে ভাইয়া? আমাকে সারপ্রাইজ হাহ। আচ্ছা ভাইয়া যেই বাসায় আয়ান আর লিয়া আছে অই বাসায় আমরা কিভাবে থাকবো?
– আমি বাসায় গিয়ে বাবার সাথে কাল কথা বলবো ও বাড়ি থেকে আলাদা হওয়ার। অনেক রাত হয়েছে ঘুমা।
রাফিন কেবিন থেকে বের হয়ে বাড়িতে কল দিলো তার বড় আম্মুর কাছে।
– হ্যালো রাফিন বল,ওখানে সব ঠিক আছে?
– হ্যাঁ বড় আম্মু বনু ঠিক আছে। এখন ঘুমাচ্ছে তুমি টেনশন নিও না। আর শুনো কাল সে বাড়িতে ফিরছে সাথে তো বনুকে নিয়ে আমরা আসছি। আমাদের ওয়েলকাম জানাতে যেনো কোনো ত্রুটি নাহয়।
– সত্যি বলছিস ও আসবে, বাবা তোকে বলছে। এতো খুশি আমি কই রাখবো। সিকদার বাড়ির দুই কলিজার টুকরা কাল আসবে আর তাদের স্বাগত জানাতে ত্রুটি থাকবে সে টা কিভাবে হয়। চিন্তা করিস না সব সুন্দর ভাবে হয়ে যাবে।
-ধন্যবাদ বড় আম্মু।
সকাল থেকে শুরু হয়েছে হৈচৈ সিকদার বাড়িতে। বাড়ির বড় ছেলে আজ বাড়িতে ফিরবে এতোগুলো বছর পড়ে আনন্দে আছে। আর রওনাক ও তো বাড়িতে আসবে সুস্থ হয়ে ডাবল সেলিব্রেশন আজ।
– বড় ভাবি আজ আমি সমুদ্রের পছন্দের সব খাবার রান্না করবো। তুমি তো করলে।
– হ্যাঁ কর তাহলে ছেলে আমার তোর হাতের খাবার খেয়ে খুব পছন্দ করে ছোট।
– আর বইলো না ভাবি ছেলেটা কে দেখার জন্য অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করছি আর আজ তা সার্থক।
– তবে ছোট বাড়ির এসব খবর কানে গেলে ওর কি হবে বুঝতে পারছিস। আমরা ওর আমানতের খেয়ানত করতে গিয়েছিলাম। ও যদি জানতে পারে তাহলে আমাদের কারো সাথে কোনো সম্পর্ক রাখবে না।
– এভাবে বলো না ভাবি যাইহোক ওকে এসব এখন জানানো যাবে না। তুমি খেয়াল রাখিও।
বাড়ির বাহিরে গাড়ি আসার আওয়াজ পেয়ে দুই জালের কথা থেমে যায়। দ্রুত কিচেন থেকে হাত ধুয়ে বেরিয়ে পরে ছেলেকে দেখতে। শামিম সিকদার, পিয়াশ সিকদার ও তাদের দুই স্ত্রী দরজায় দাঁড়িয়ে আছে সমুদ্রের জন্য। সমুদ্র হলো শামিম সিকদার ও আফিয়া সিকদারের বড় ছেলে। আয়ানের বড় ভাই। সমুদ্রের পুরো নাম সাফওয়ান সমুদ্র সিকদার। পিয়াশ সিকদার ও আলিয়া সিকদারের বড় ছেলে রাফিন সিকদার ও একমাত্র মেয়ে প্রিয়োশী রওনাক সিকদার৷ বাড়ির সবাই আদর করে রওনাক,রন,রওনু বলে ডাকে।
আয়ান ঘুমিয়ে ছিলো সবার হইচই এর আওয়াজ পেয়ে লিয়া ধীরে ধীরে হেটে বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে একজন বয়স ২৬ এর যুবোক কে নামতে দেখে। কালো প্যান্ট ও কালো টি-শার্ট পড়া , গায়ের রঙ ফরসা,উচ্চতা ৫” ৬ ফিট,চোখে কালো সানগ্লাস৷ মুখে হাল্কা খোচাখোচা দাড়িতে ছেলেটা কে খুব সুন্দর লাগছে। ছেলেটি গাড়ি থেকে নেমেই আগে বা- মা কে সালাম করে জড়িয়ে ধরলো। এতোগুলো দিন পড়ে বড় ছেলেকে পেয়ে তার মা-বাবাও আবেগ আপ্লুত হয়ে পরলো।
– আরে মা তুমি এভাবে কান্না করছো কেনো দেখো আমি একদম ঠিক আছি।
– আমার সাথে কথা বলবি মা তুই মায়ের কথা কি মনে আছে তোর?
– কি যে বলো আম্মু মনে কেনো থাকবে না বলো,পড়াশোনার জন্যই তো আমি দূরে ছিলাম। এখন আর তোমাদের থেকে দূরে যাবো না।
-কেমন আছো তুমি শাশুমা।
আলিয়া সিকদারের দিকে তাকিয়ে সমুদ্র তাকে প্রশ্ন করলো। সেই ছোট থেকে সমুদ্র তাকে শাশুমা বলে ডাকে। আলিয়া সিকদার হেসে ফেললো এমন কথায়।
– তুই আর পাল্টালি না দুষ্টু ছেলে, সেই আগের মতোই থেকে গেলি। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা। তুই কেমন আছিস?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো শাশুমা। সব কথা কি এখানে দাঁড়িয়ে শেষ করবো আমাকে বাড়িতে ঢুকতে কি দিবে না?
– ইশ রে আমরা সবাই তোকে কাছে পেয়ে ভুলে গেছি। চল চল তাড়াতাড়ি।
সবাই সমুদ্রকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে গেলো। এতোক্ষণ এসব কিছু অবাক চোখে দেখছিলো লিয়া। উপর থেকে স্পষ্ট ভাবে সব কথা শুনা যায় না তাই সে তাদের কথোপকথন শুনতে পায় নাই। ছেলেটার সাথে আয়ানের চেহারার অনেক মিল, এসব প্রশ্নের জবাব সে আয়ান থেকেই পাবে। এইজন্য রুমে গিয়ে আয়ান কে ডেকে তুললো।
– আয়ান আমার খুব খুদা লাগছে আর মেডিছিনের সময় ও চলে যাচ্ছে উঠেন।
– এতোদিন আমি হাজার ডেকেও খাবার খাওয়াতে পারি না তোমাকে আর আজ খুদা লেগে গেলো?
– এতোকথা জানিনা খুদা লাগছে খাওয়াবেন কি না বলেন?
– দাঁড়াও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
– আয়ান নিচ থেকে অনেক সুন্দর ঘ্রান আসছে খাবারের,আমাকে কি ওখানে খেতে নিয়ে যাবেন?
লিয়া খুব শান্ত কন্ঠে আয়ান কে কথাটি বললো। আয়ান লিয়ার দিকে এক পলক তাকালো লিয়ার মন খারাপ। লিয়ার ফেস রিয়্যাকশন দেখে আর না করতে পারলো না আয়ান। ফ্রেশ হয়ে এসে লিয়া কে নিয়ে নিচে নামলো। সিড়ি দিয়ে লিয়াকে ধরে নিচের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে হেটে আসছিলো আয়ান। তাই আর ডাইনিং টেবিলে বসা সমুদ্রকে সে খেয়াল করে নাই। কিন্তু সমুদ্র অবাক হয়ে আয়ানকে দেখছে। আয়ান কে দেখেই বুঝে গেছে মেয়েটি আয়ানের স্ত্রী। এটা ভেবে অবাক হচ্ছে সমুদ্র ছোট ভাই বিয়ে করেছে তার স্ত্রী ও অন্তঃসত্ত্বা এই খবর সে জানেনা। টেবিলের কাছে যাওয়ার পরে আয়ান সমুদ্রকে দেখে চমকে গেলেও নিজেকে শান্ত করে নেয়।
– কি অবস্থা ভাই কখন আসলা খবরই পেলাম না আমি।
– তুই ও যে বিয়ে করেছিস আমি বড় আব্বু হচ্ছি সেই খবর ও তো আমি জানিনা।
– সে খবর কেউ জানতো না ভাইয়া লং স্টোরি, পরে সময় করে বলবো। লিয়া বসো এখানে।
লিয়া কে এক চেয়ারব বসিয়ে দিলো আয়ান।
– বাহ ভাই তুই তো অনেক বদলে গেছিস।
– সময় সবাইকে বদলে দেয় ভাই, খেয়েছো তুমি? ছোট আম্মু লিয়ার অনেক খুদা পেয়েছে তোমাদের রান্নার স্মেলে।
– মেয়েটা কে আগে খাবার দেও তোমরা আমাকে পড়ে দিলেও হবে।
সমুদ্রের কথায় মিসেস আলিয়া সিকদার খাবারের প্লেটে খাবার বেরে দেয় লিয়ার সামনে দেয়। মেয়ের বেষ্টফ্রেন্ড ছিলো লিয়া সেই হিসেবে কম আদর করতো না মেয়েটা কে। মাঝখানে কোথায় গায়েব হয়ে গিয়েছিলো কেউ জানতো না। মেয়েটার এই পরিস্থিতিতে দেখে খুব মায়া লাগে তার।
– কেমন আছো তুমি লিয়া?
– আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া, আপনি?
-আলহামদুলিল্লাহ। খাবার খেয়ে নেও নিজের যত্ন নিও। এই বাড়ির সবাইকে নিজের আপনজন ভাব্বে। যখন যা প্রয়োজন হবে বাড়ির যেকোনো সদস্যকে বলবে।
-জ্বী আচ্ছা।
– তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন বস তুই ও নাস্তা কর।
– না তোমরা করো আমি বাহিরে করবো।লিয়ালে মেডিছিন খাইয়ে দিয়েই আম বের হবো।
-একদিন বাহিরে নাস্তা না করলে কিছু হবে না আজ আমি আছি আমার সাথে করে নে।
বাড়ির কেউ বলতেও পারছে না যে আয়ান এই বাসায় থাকে ঠিকি কিন্তু খাবার এই বাসায় খায় না। নিজের মতো একা একা থাকে বাড়িতে থেকেও না থাকার মতো। আয়ান তো মনে মনে বেজায় খুশি সমুদ্র আসায়। আয়ানের প্ল্যান গুলা যে কাজে লাগছে ভেবেই। তাই সে আর না করলো না খাবারের টেবিলে বসে পরলো। তখন রাফিন ও রওনাক কে নিয়ে বাড়িতে ঢুকে খাবার টেবিলে নিয়ে সমুদ্রের পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিলো। রওনাক অন্যমনস্ক থাকায় খেয়াল করলো না সমুদ্র কে। সমুদ্র তা খেয়াল করে দেখে রওনাকের হাতে একটা চিমটি কাটলো। ব্যাথায় চোখমুখ কুচকে পাশে তাকিয়ে স্তব্দ হয়ে গেলো রওনাক। চোখ বড় বড় করব তাকিয়ে আছে সে।
– এভাবে চোখ বড় বড় করে ডাইনী মার্কা লুক কেনো দিচ্ছিস প্রিয়োশী?
– কি আর করবে ভাইয়া ফিনাইল খেয়ে সু*ই*সা*ই*ড করার চেষ্টা যে করে আএ ডাইনী ছাড়া আর কি হতে পারে৷ খবিশ মানুষজনে ভরে গেছে আমাদের বাড়ি।
– আয়ান হচ্চেটা কি এটা কোন ধরনের কথা।
আয়ানের এই খোচা দিয়ে বলা কথাটায় খুব কষ্ট পেলো রওনাক। আয়ানের পাশে লিয়া কে দেখে তার অনেক খারাপ লাগা অনুভব হচ্ছে।
রওনাক ভাবতে পারে নাই এইভাবে কথা শুনাবে আয়ান তাকে। এরমধ্যে আবার সমুদ্রকে দেখে রওনাকের মাথা ঘুরছে।
…চলবে..?