#শ্রেয়সী
#পর্ব_২৯
#লেখনীতে_নাদিয়া_সিনহা
প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেছে। আরাবী শ্রেয়সীর কোনো খোঁজ পায়নি। সাজ্জাদ কে বলেছিলো নুসাইবাকে জিজ্ঞেস করতে। সাজ্জাদ আরাবীর কথা মতো নুসাইবা কে জিজ্ঞেস করে। নুসাইবা ঠিকানা জানতে রোদ্দু কে কল দেয়। কিন্তু রোদ্দুর ফোন বন্ধ। আর এই এক সপ্তাহ আরাবী কাছে এক যুগ বলে বোধ হয়েছে। কোনো ভাবেই শ্রেয়সীর খোঁজ পাওয়া যায়নি এই এক সপ্তাহে। তবে আরাবীও ভয়ংকর কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে। এক সপ্তাহ আগে আরাবী শাহীর কে মেসেজ করে বলেছিলো,”শ্রেয়সী আমাকে খুব জ’ঘ’ন্য ধোঁকা দিয়েছে। তা শ্রেয়সীর ডায়েরি না পড়লে কখনও জানা হতো না আমার। তুই ঠিক বলেছিস। শ্রেয়সী মরিচীকা।” শাহীর আরাবীর মেসেজ পেয়ে দ্রুত আরাবী ফ্ল্যাটে চলে আসে। আরাবীর পাশে দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত চেপে বলে,
-“কষ্ট পাস না মেয়েরা এমনই হয় ধোঁকাবাজ।”
-“তোর কি মনে হয়? ছেলেরা ধোঁকাবাজ হয় না?”
-“কেনো হবে না? হয়! অবশ্যই হয়।”
-“হ্যাঁ হয়! যেমন তুই।”
শাহীর চমকে আরাবীর পানে তাকায়। আরাবী নিজেও শাহীরের পানে তাকিয়ে আছে। শাহীর ঢোক গিলে আরাবী কে বলে,
-“কি বলতে চাইছিস? আমি তোকে ধোঁকা দিয়েছি?”
আরাবী বাঁকা হেসে বলে,
-“আরে আমি কখন বললাম তুই আমাকে ধোঁকা দিয়েছিস। অন্য কাউকেও তো দিতে পারিস। নাকি সত্যি সত্যি আমাকেই ধোঁকা দিয়েছিস?”
শাহীরের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের শিশি জমে। অনবরত চোখের পলক ফেলছে। আরাবী শাহীরের পানেই তাকিয়ে। শাহীর ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,
-“আমি কেনো তোকে ধোঁকা দিব? ভুল ভাবছিস।”
-“হুম ঠিক বলেছিস। তুই কেনো আমাকে ধোঁকা দিবি। তুই তো আমার বেস্টফ্রেন্ড।”
শাহীর টেবিলের দিকে এগিয়ে গিয়ে এক গ্লাস পানি পান করে। আরাবীর দিকে তাকিয়ে বলে,
-“আজ আসি। কাজ আছে কিছু। তোর সাথে পরে কথা হবে। টেক কেয়ার।”
-“শ্রেয়সী কে সেদিন কল তুই’ই করেছিলিস তাই না?”
আরাবী বলা বাক্যে থমকে যায় শাহীর। শাহীর বেশ বুঝতে পারছে আরাবী কি বলতে চাইছে এবং কি বলছে। ঠায় দাঁড়িয়ে আছে শাহীর। নড়তে ভুলে গেছে যেনো। আরাবী পূর্বের ন্যায় বলে,
-“আমাকে সেদিন কল তুই’ই দিয়েছিস। আর শ্রেয়সীকেও তুই’ই কল দিয়েছিস। আমি সেখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তুই শ্রেয়সী কে নিয়ে বেরিয়ে গেলি৷ আর আমি চলে আসার পর সবাই জানলো শ্রেয়সী নেই। পালিয়ে গেছে। আর সবাই এটাই জানে শ্রেয়সী আমার সাথে পালিয়েছে। কি গেমটাই না খেললি। বাহ্!”
আরাবী শাহীরের সম্মুখে পদার্পণ করে বলে,
-“এমনটা কেনো করেছিস?”
শাহীর চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কোনো কথা বলছে না। শাহীরের সর্বাঙ্গ কাঁপছে। কপাল থেকে টপটপ করে ঘাম বেয়ে গলায় পরছে। আরাবী এবার চিৎকার করে বলে,
-“কেনো করেছিস? উত্তর দে।”
কেপে উঠে ভয়ার্ত কন্ঠে শাহীর বলে,
-“কারণ শ্রেয়সী কে আমিও পছন্দ করতাম। তোর আগে আমি ওকে ভালোবাসতাম। কিন্তু আমার আগেই তুই শ্রেয়সীকে জিতে নিলি। উইথ আউট এনি কস্ট।”
-“কোনটা কে তুই ভালোবাসা বলছিস? তুই যদি সত্যি শ্রেয়সীকে ভালোবাসতিস তাহলে এমনটা করতে পারতি না৷ আর শ্রেয়সী কি কোনো গেম? নাকি পণ্য? যে তুই কিনতে পারলি না।”
-“অত সব বুঝে আমার লাভ নেই। আমি শ্রেয়সী কে পাইনি তাই তোকেও পেতে দিলাম না।”
আরাবী চোখ বন্ধ করে শ্বাস টেনে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-“শ্রেয়সী তোর হয়ে গেলে কি আমার হতে দিতি? এতটা উদার মনের তুই?”
শাহীর চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কথা বলার মতো তার কাছে অবশিষ্ট নেই কিছুই। আরাবী দীর্ঘ এক শ্বাস টেনে বলে,
-“এমনটা না করলেও পারতিস।”
রাগে-ক্ষোভে শাহীরের মাথায় হাত চেপে সজোড়ে ধাক্কা দেয় আরাবী। যার দরুন শাহীর ছিটকে গিয়ে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খায়। শাহীরের দেয়ালের সাথে ধাক্কাটা বেশ জোরেই লাগে যার দরুন তা মাথা ফেটে রক্ত বের হয়ে গেছে। শাহীর মাথা চেপে ধরে ফ্লোরে ঢলে পরে। শাহীরকে টেনেহিঁচড়ে একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। যেমনটা শ্রেয়সীকে রাখা হয়েছিলো। একটা চেয়ারে বসিয়ে হাত-পা শক্ত করে বেঁধে দেয়। আচমকা শাহীরের চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। শাহীর আঁতকে চোখ মেলে তাকায়। ব্যাথায় ছটফট করছে। মাথার এক অংশ রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। যে স্থান থেকে রক্ত গড়িয়ে পরেছে সেখানে রক্ত জমাটবদ্ধ হয়ে আচে। শাহীরের মুখ দিয়ে ব্যথায় গোঙ্গানি শব্দ বেরিয়ে আসছে। আরাবী চেয়ারের হাতলে দুহাত ভর করে শাহীরের মুখশ্রী সম্মুখে ঝুঁকে তার চক্ষুদ্বয়ে দৃষ্টিপাত করে বলে,
-“শ্রেয়সী কে অন্ধকার ঘরে আবদ্ধ করে অ’ত্যা’চা’র করেছিলিস না? এবার তুইও এর স্বাধ গ্রহন করবি।”
শাহীর করুন কন্ঠে মিনতির স্বরে আরাবী কে বলে,
-“আরাবী প্লিজ আমাকে ছেড়ে দে। মাফ করে দে আমাকে। তুই তো এখন শ্রেয়সীকে পেয়ে গেছিস। তাহলে আমাকে কেনো শাস্তি দিচ্ছি বল? আমি তো কিছু করিনি। ওয়ালিদ করেছে ওকে ধর।”
-“হ্যাঁ! ওয়ালিদ সব করেছে। তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে এমনটা করবি না। তা জানি আমি। তোকে তো মাফ করাই যায়।”
অন্ধকার থেকে বাঁচার একটু আলো হয়তো পরেছে শাহীরের জীবনে। শাহীরের ওষ্ঠে তৃপ্তিময় প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠে। আরাবী শাহীরের এক হাতের বাঁধন খুলে দেয়। শাহীর কৃতজ্ঞতায় আরাবী কে বলে,
-“দোস্ত তোকে আর শ্রেয়সীকে আল্লাহ সারা জীবন এক করে রাখবে দেখে নিস। আমি তোদের বিয়েতে অনেক আনন্দ করব।”
আরাবী ওষ্ঠে বক্র হাসি রেখে ফুটে উঠে। শাহীরের পানে তাকিয়ে বিদ্রুপ কন্ঠে বলে,
-“তার আর দরকার পরবে না।”
-“কেনো পরবে না? তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড। তোর বিয়েতে আমিই সবচেয়ে বেশি আনন্দ করব।”
আরাবী পেছন মুড়ে হাতে গ্লাভস এবং মুখে মাস্ক পরে নেয়। অতঃপর শাহীরের পানে তাকিয়ে বলে,
-“তুই থাকলে তো?”
শাহীর কিছু বুঝে উঠার আগেই তার হাতে এসিড ঢেলে দেয় আরাবী। তীব্র আওয়াজে চিৎকার করে উঠে শাহীর। তার চিৎকারে সমগ্র ঘর কেঁপে উঠার উপক্রম। আরাবী শাহীরের মুখে শক্ত করে কাপড় বেঁধে দেয়। এসিডের তীব্রতায় শাহীরের হাত পুড়ে যাচ্ছে। শরীর থেকে চামড়া খসে পরছে। শাহীরের চোখ দিয়ে অঝোরে জল গড়িয়ে পরছে। এসিড ঢালা হাতে ছু/ড়ি বসিয়ে দেয় আরাবী। শাহীর পূর্বের তুলনায় আরও দিগুন চিৎকার করে উঠে। তবে মুখে কাপড় বেঁধে দেওয়ায় তার চিৎকার ঘর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। ছটফটানি কয়েকগুন বেড়ে যায়। দুহাত বুকে আড়াআড়ি গুঁজে শাহীরের ছটফটানি এক দৃষ্টি দেখছে আরাবী। বেশ খানিকক্ষণ পর আরাবী শাহীরকে জোর করে পেইন কিলার খাইয়ে বলে,
-“পৃথিবীতে তোকে জা’হা’ন্না’ম দেখিয়ে ছাড়ব।”
ক্লান্ত কন্ঠে শাহীর বলে,
-“এর থেকে ভালো আমাকে মেরে ফেলতি।”
আরাবী তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
-“তোকে এত সহজে মারব না। দুনিয়ার সবচেয়ে সহজ শাস্তি মৃত্যু। মরে গেলে বেঁচে যাবি। কিন্তু আমি তোকে মরতে দিব না। বাঁচিয়ে রেখে জা’হা’ন্না’ম দেখি দিব।”
পেছন মুড়ে শাহীরের পানে তাকিয়ে বলে,
-“ওয়ালিদ শ্রেয়সীকে বলেছিলো৷ বাঁচিয়ে রেখে জা’হা’ন্না’মও দেখিয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় ভুল করেছে বাঁচিয়ে রেখে। এবার তোরা জা’হা’ন্না’ম দেখবি।”
_______________________
ফোনে কল আসতেই এক সপ্তাহ আগের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে আরাবী। ফোনটা সম্মুখে তুলতেই দৃষ্টিপাত হয় সাজ্জাদের নম্বর। সময় ব্যয় না করে দ্রুত রিসিভ করে,
-“শ্রেয়সী কোথায়?”
-“তোকে আমি একটা এড্রেস মেসেজ করে পাঠাচ্ছি৷ সেই ঠিকানা মতোই পৌঁছে যা। আমিও আসছি নুসাইবাকে নিয়ে।”
সাজ্জাদ কল কেটে দেয়। সাজ্জাদের কল রাখার পর এক মুহূর্ত নষ্ট না করে বেরিয়ে যায় আরাবী। রাস্তায় এসে সাজ্জাদের মেসেজ চেক করে রওনা দেয় সেই ঠিকানার উদ্দেশ্যে৷ আরাবীর বাসা থেকে বেশি দূর নয়। তবে আরাবী যেখানে থাকে সেখান থেকে উল্টোদিকে। তার বাড়ির পেছনের রাস্তা দিয়ে তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়৷ তাই সে সেখান দিয়েই রওনা দেয়। সরু রাস্তা হওয়ায় ভীড়ও বেশি এবং গাড়ির জ্যাম লেগে আছে পুরো রাস্তা। আরাবী পরেছে মহা বিপদে। তাকে যতদ্রুত সম্ভব শ্রেয়সীর কাছে পৌঁছাতে হবে। নয়তো অনেকটা দেরি হয়ে যাবে। দৌড়ে পথ পারি দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে কিয়ৎ পর পর থমকে যেতে হচ্ছে।
সাজ্জাদের দেওয়া ঠিকানায় পৌঁছাতে আরাবীর বেশ খানিক সময় লেগে যায়। সাজ্জাদ যে বিল্ডিং এর ঠিকানা দিয়েছিলো আরাবী সেখানে পৌঁছাতেই দূর থেকে এ্যাম্বুলেন্স দেখতে পায়। ভ্রুদ্বয় কুঁচকে এগিয়ে গিয়ে ফোনে দেওয়া ঠিকানা এবং বাড়িতে থাকা ঠিকানা মিলিয়ে দেখে নেয় আরাবী। দুটো ঠিকানা এক। আরাবী সাজ্জাদ কে দ্রুত কল দেয়। প্রথমবার রিং হতেই কল রিসিভ করে সাজ্জাদ। আরাবী উত্তেজিত হয়ে বলে,
-“কোথায় তুই? আমি পৌঁছে গেছি।”
সাজ্জাদ চুপ করে আছে। আরাবী ফোনের এপাশ থেকে হ্যালো বলে যাচ্ছে। কিয়ৎ পর মৃদুস্বরে সাজ্জাদ বলে,
-“পৌঁছে গেছি আমি।”
-“কোথায়? দেখতে পাচ্ছি না তো।”
-“অপেক্ষা কর।”
প্রায় দশমিনিট হতে চললো আরাবী বিল্ডিং এর নিচে দাঁড়িয়ে সাজ্জাদের জন্য অপেক্ষা করছে। সাজ্জাদ আসছে না তাই অধৈর্য্যে হয়ে ভিতরে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় আরাবী। ভিতরে প্রবেশ করার পূর্বেই দেখতে পায়। দুজন লোক স্ট্রেচারে করে কাউকে বাইরে বের করছে। আরাবী ভ্রু কুঁচকে পিছিয়ে দাঁড়ায়। স্ট্রেচারের পেছনে সাজ্জাদ আসছে। সাজ্জাদকে দেখে আরাবী দাঁড়িয়ে যায়। সাজ্জাদের পেছনে তনুফ তারপর রোদ্দু, নুসাইবা। দুজনের কোলে বাচ্চা। রোদ্দু মুর্তির ন্যায় হাঁটছে। নুসাইবার চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে। তনুফের মুখশ্রীতে কেমন বিবর্ণতা। অতি শোকে পাথর হয়ে যাওয়া মানব হাঁটছে। সাজ্জাদ চোখ তুলে একবার আরাবী পানে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। লোক দুটো স্ট্রেচারে করে আনা ব্যক্তিকে এ্যাম্বুলেন্সে তোলে। তনুফ, রোদ্দু, নুসাইবা একে একে সবাই আরাবী পানে তাকায়। আরাবী সকলের দৃষ্টি উপেক্ষা করে পেছনে শ্রেয়সীকে খুঁজচ্ছে। সবাই বেরিয়ে এসেছে অথচ শ্রেয়সী আসছে না। আরাবী বার বার পেছনে তাকাচ্ছে। আরাবী ভেতরে প্রবেশ করতেই সাজ্জাদ আরাবী কে আঁটকে দেয়। আরাবী কঠোর দৃষ্টিতে সাজ্জাদের পানে তাকায় আর বলে,
-“আমাকে আটকাস না প্লিজ। তাহলে বোধহয় ভালো হবে না।”
সাজ্জাদ শ্বাস টেনে আরাবী কে প্রশ্ন করে,
-“ভেতরে কেনো যাচ্ছিস?”
-“আজব প্রশ্ন। তুই কি জানিস না আমি এখানে কেনো এসেছি?”
-“জানি। জানি বলেই জিজ্ঞেস করছি।”
-“পথ ছাড় আমি শ্রেয়সীর কাছে যাব।”
-“তার জন্য ভেতরে যাওয়ার দরকার নেই।”
আরাবী এক কদম পিছিয়ে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে,
-“কেনো?”
সাজ্জাদ চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস টানে। আরাবীর হাত ধরে টেনে হাঁটতে শুরু করে৷ আরাবী বার বার প্রশ্ন করছে কি হয়েছে? সাজ্জাদের মুখ থেকে কোনো কথা বের হচ্ছে না। সাজ্জাদ আরাবীকে নিয়ে এসে এ্যাম্বুলেন্সের সম্মুখে দাঁড় করিয়ে বলে,
-“যাকে খুঁজতে এসেছিস সে তোর ডান পাশে।”
আরাবীর ডান পাশে এ্যাম্বুলেন্স। কিন্তু আরাবীর মনে প্রশ্ন জাগছে এ্যাম্বুলেন্সে শ্রেয়সী কেনো থাকবে? এ্যাম্বুলেন্স থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সাজ্জাদের পানে তাকায়। সাজ্জাদ ইশারায় এ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে যেতে বলে। আরাবী মস্তিষ্কে নতুন ভাবনার উদ্ভট ঘটে। তবে সে মনের গহীন থেকে চাইছে যেনো তার ভাবনা ভুল হয়। এ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে প্রবেশ করে নিচে বসে আরাবী। সম্মুখে থাকা ব্যক্তির মুখশ্রী বিবর্ণ শুভ্র কাপড় দ্বারা আবদ্ধ করে রাখা। আরাবী হাত কাঁপছে। কম্পনরত হাতটা স্ট্রেচারে রাখা ব্যক্তির মুখ থেকে কাপড় সরাতে এগিয়ে নেয়। কিন্তু শত চেষ্টার পরও সে হাত বাড়িয়ে কাপড়টা মুখ থেকে সরাতে পারছে না৷ সাজ্জাদ একজন ওয়ার্ডবয় কে ইশারায় কাপড়টা সরিয়ে দিতে বলে। সাজ্জাদের কথা মতো লোকটা কাপড় সরিয়ে দেয়।
কাপড়টা সরাতেই আরাবী চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে। বরফের ন্যায় জমে ঠায় বসে থাকে আরাবী। স্বপ্ন নাকি সত্যি? অনেক সময় তো স্বপ্নও সত্যি মনে হয়। হতে পারে এটাও স্বপ্ন। আরাবীর মন মানতে নারাজ। সে শতভাগ নিশ্চিত সে স্বপ্ন দেখছে। তার এখনই ঘুম ভেঙে যাবে। আর এসব কিছু মিথ্যা প্রমান হবে।
কারো কান্নার শব্দে ধ্যান ভাঙে আরাবী। পেছনে তাকিয়ে দেখতে পায় রোদ্দুর কোলের বাচ্চাটা কাঁদছে। আরাবী সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সম্মুখে স্থাপন করে। না! সে যা দেখছে সব সত্যি। বাস্তব! চাইলেও স্বপ্নে রুপান্তরিত করা যাবে না। আরাবী সম্মুখে স্ট্রেচারে শুয়ে আছে শ্রেয়সী। শ্রেয়সীর শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে কি না? তা জানা নেই আরাবী সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শুষ্ক রক্তহীন মুখশ্রীর পানে। আরাবী আর বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারলো না। তার চোখের সম্মুখে সব অন্ধকার নেয়ে আসছে। কে যেনো দূর থেকে তার নাম ধরে ডাকছে। হয়তো শ্রেয়সী! ঢলে পরে শ্রেয়সীর পাশে সুঠাম দেহ সম্পন্ন আরাবী নামক মানব। তারপর……..
_______________________
-“আদ্রিশী মামনি অন্ধকার ঘরে একা বসে কি করছো?”
অন্ধকার ঘরে ছোট টেবিলের উপর মৃদু আলো জ্বালিয়ে ডায়েরি পরছে আদ্রিশী। পেছন থেকে কারো ভারি কন্ঠ কর্ণপাত হতেই আঁতকে উঠে। চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়িয়ে নাক টেনে পেছন ফিরে বলে,
-“কিছু না বাবা৷ বই পরছিলাম একটু।”
-“উমমম…আমার মেয়েটা যে বইও পড়ে তা আগে জানা ছিলো না। ওসব এখন রাখো খাবে চলো অনেকটা রাত হয়ে গেছে।”
লোকটা পেছন ফিরে ঘর থেকে প্রস্থান করার পূর্বে আদ্রিশী বলে,
-“শ্রেয়সী-আরাবী কে বাবা?”
মেয়ের আচমকা এহেন প্রশ্নে থামকে যায় আদনান সাহেব। তার চোখের কোনে জল চিকচিক করে উঠছে। পেছনে না তাকিয়েই বলে,
-“জানি না মা।”
আদনান সাহেব ঘরে থেকে বেরিয়ে যায়। আদ্রিশী একঝলক ডায়েরির পানে তাকিয়ে কয়েক পাতা উল্টেপাল্টে দেখে। কিন্তু সেখানে আর কোনো লেখা নেই। আদ্রিশী ডায়েরিটা হাতে তুলে বুক সেল্ফে রেখে দেয়। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস টেনে নিজের মন কে সামলে নেয়। মনে মনে পন করে নেয় শ্রেয়সী এবং আরাবী পরিনতির কথা সে জেনেই ছাড়বে।
~চলবে…..