শ্রেয়সী পর্ব ২৮

0
247

#শ্রেয়সী
#পর্ব_২৮
#লেখনীতে_নাদিয়া_সিনহা

একা একা বারান্দায় বসে কাঁথা সেলাই করছি। প্রেগন্যান্সির দিন গুলো এভাবেই পার করতে থাকি। নতুন একটা ডায়েরি নিয়েছি। সেখানে আমার সব অনুভূতি প্রকাশ করা যা আমি আমার বাচ্চাটার প্রতি অনুভব করি৷ কে জানে? হয়তো কাল এই সকল অনুভূতি বলার জ্ন্য আমিই না থাকলাম। তাই আগেই সব কিছু টুকে রাখছি। যেনো আমার বাচ্চা তার মা কে চিন্তে একটুও বেগ পোহাতে না হয়। তবুও চিন্তা নেই রোদ্দু তো আছেই।
রোদ্দু সপ্তাহে তিনদিন ভার্সিটি যায়। আর বাকিটা সময়টা রোদ্দু আমার সাথেই কাটায়। রোদ্দুর কত সব জল্পনাকল্পনা বাবুকে নিয়ে। সে এই করবে ওই করবে। নিজ হাতে খাওয়াবে তাকে। কত কি ভাবনা এ নিয়ে। রোদ্দু তো বলে দিয়েছে,”এটা আমার বেবি। আমার বেবিকে আমি সবচেয়ে বেশি আদর করব।” রোদ্দু বাচ্চামি গুলো দেখে আমার কেমন হাসি পায়। আজও রোদ্দু ভার্সিটি যেতে চায়নি আমি জোর করে পাঠিয়েছি। রোদ্দু ইদানীং প্রচুর ভয় বেড়েছে আমাকে নিয়ে। ডেলিভারি সময়টা কাছিয়ে এসেছে বলে রোদ্দুও আমার কাছাকাছি থাকে। একা একা বসে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের ভাবনা গুলো মিলাচ্ছি। আমার অতীতে জীবনের প্রভাব আমার বাচ্চার উপর পরবে না তো? আল্লাহর কাছে রোজ রোজ দোয়া করছি যেনো আমার অতীতের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন আমার বাচ্চাকে না হতে হয়।

হাজার চিন্তা ভাবনার মাঝে তল পেটে কেমন চিন চিন ব্যথা অনুভব হয়। বুঝতে পারলাম লিভার পেইন শুরু হয়েছে বোধহয়। বারান্দা থেকে আস্তে আস্তে উঠে ধীর পায়ে রুমে চলে যাই। ফোনটা খুঁজতে থাকি তবে পাচ্ছি না। কোথায় রেখেছি তাও মনে পরছে না। এদিকে ব্যথা আমার ক্রমশ বেড়েই যাচ্ছে। উদর চেপে ধরে এগিয়ে যাই দরজার সম্মুখে। দরজা খোলার চেষ্টা করছি তবে কিছুতেই খুলতে সক্ষম হই না। ব্যথায় মস্তিষ্ক শূন্যের কোঠায়। দরজা বোধহয় কেউ আঁটকে গেছে। ব্যথায় কতক্ষণ যাব ছটফট করেছি তা আমার অজানা। দরজার পাশে বসে পরি। অসহনীয় ব্যথা অনুভব হচ্ছে। রোদ্দু কখন আসবে তাও জানি না। হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে দেহে যেনো প্রাণ ফিরে পাই। “রোদ্দু” বলে চিৎকার করে ডেকে উঠি। সম্মুখে দৃষ্টিপাত করতেই দেখি তনুফ ভাইয়া। ভাইয়া দ্রুত এসে আমার সম্মুখে বসে উত্তেজিত হয়ে বলে,
-“কি হয়েছে শ্রেয়ু? এভাবে এখানে বসে আছিস কেনো?”

কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলি,
-“পেইন হচ্ছে। হসপিটালে নিয়ে চলো প্লিজ।”

ভাইয়া আসে পাশে চোখ বুলিয়ে আমার হাত ধরে দাঁড় করায়। এক হাতে শক্ত করে আমার কাঁধ জড়িয়ে ধরে অন্য হাতে আমার হাত আঁকড়ে ধরে আস্তে আস্তে হাঁটা শুরু করে। ব্যথায় ভাইয়া শার্ট খামচে ধরে রেখেছি। মা হওয়ার যন্ত্রণা এতটা অসহনীয় বাচ্চা নষ্ট করে দিলে হয়তো তা বুঝতামই না। ভাইয়া আমাকে নিয়ে এসে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও বসে পরে। দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিয়ে হসপিটালের পথে রওনা দেয়। মাঝ পথে সুরাইয়া ম্যামকে কল দিয়ে হসপিটালে সব কিছু ম্যানেজ করে নিতে বলে। আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলি,
-“আল্লাহ না করুক যদি এমন পরিস্থিতি আসে আমার আর বেবির মধ্যে যেকোনো একজন কে বাঁচাতে হয় তাহলে আমার বেবিটাকে বাঁচাবে প্লিজ।”

ভাইয়া আমার মাথায় হাত দিয়ে ধমকের স্বরে বলে,
-“আজেবাজে কথা বলিস না। কিচ্ছু হবে না। তুই আর তোর বেবি দুজনই সুস্থ থাকবি।”

হসপিটালে পৌঁছাতেই সুরাইয়া ম্যাম দ্রুত স্ট্রেচারে উঠিয়ে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। ব্যথায় চোখ খুলে রাখা দ্বায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার শারীরিক অবস্থা ক্রিটিক্যাল হওয়ায় দ্রুত ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। বি’দ’ঘু’টে এক অনুভূতি হচ্ছে। শত সহস্র প্রশ্নের বন্যা বইছে আমার অন্তরালে। তবে উত্তর একটাই ‘সময়’!

হসপিটালের সকল ফর্মালিটি পূরণ করা হলে নার্স তনুফ ভাইয়ার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-“পেসেন্টের হাসবেন্ড কোথায়?”

নার্সের প্রশ্নে ভাইয়া কেবল তাকিয়ে ছিলো উত্তর দেওয়ার মতো অবশ্য নেই কিছু। সুরাইয়া ম্যাম এগিয়ে এসে নার্স কে জিজ্ঞেস করেন,
-“কোনো সমস্যা হয়েছে কী? পেসেন্টের হাসবেন্ডের খোঁজ কেনো করছেন?”

-“আসলে ম্যাম আমাদের হসপিটালের এগ্রিমেন্ট পেপার সাইন করতে হবে তাই পেসেন্টের হাসবেন্ডের সাইন লাগবে।”

-“দিন আমি সাইন করে দিচ্ছি।”

-“আপনি পেসেন্টের কি হন ম্যাম?”

সুরাইয়া ম্যাম তনুফ ভাইয়া পানে তাকিয়ে আছে। তনুফ ভাইয়া নার্সকে জিজ্ঞেস করে,
-“হাসবেন্ড নেই। আমি পেসেন্টের ভাই। সাইন আমিই করব।”

-“আ’র ইউ শিওর স্যার? না মানে যদি ওনার কিছু হয়ে যায় তখন ওনার হাসবেন্ড আপনাকে ধরবেন তাই।”

-“হাসবেন্ডের আগেই ভাই হয়েছি। অধিকারটা ভাইয়েরই বেশি। সুতরাং সাইনটা আমিই করব।”

নার্স আর কিছু বললেন না। ভাইয়া সাইন দেওয়ার পর তিনি সেখান থেকে চলে যান। ভাইয়া চুপ করে মাথা চেপে ধরে চেয়ারে বসে পরে। ওটিতে ছিলাম আমি অথচ বাইরে বসে আইসিউতে থাকার অবস্থায় ছিলো তনুফ ভাইয়া। সত্যি ভাগ্যবতি আমি। এমন একজ ভাই পেয়ে, রোদ্দুর মতো বেস্টফ্রেন্ড পেয়ে, সুরাইয়া ম্যামের মতো বোন পেয়ে। সুরাইয়া ম্যামই আমাকে সেসব কথা জানায়। আমি স্তব্ধ হয়ে নির্বিকারে শুধু তার কথা শ্রবণ করেছি কেবল।

ডেলিভারির প্রায় একদিন পর আমার জ্ঞান ফিরে। শরীর অতিরিক্ত দূর্বল হওয়ায় চোখ খোলা রাখতেও বেশ কষ্ট হচ্ছিলো। চোখ খুলে আমি নার্সকে জিজ্ঞেস করি,”আমার বেবি কোথায়?” নার্স অপেক্ষা করতে বলে বাইরে চলে যান। কিয়ৎ পর রোদ্দু ক্যাবিনে প্রবেশ করে। রোদ্দুর কোলে বেবি। ওষ্ঠদ্বয় প্রসারিত করে আমাকে বলে,
-“দেখ শ্রেয়ু আমার বেবি একদম আমার মতো হয়েছে।”

রোদ্দু কথায় আমার ওষ্ঠে মৃদু হাসি ফুটে উঠে। রোদ্দু আমার পাশে এসে বসে বেবিকে আমার পাশে রেখে বলে,
-“তোর মেয়ে।”

আমার মেয়ে! ভাবতেই কেমন অনুভূতি অনুভব হচ্ছে। বাচ্চাটার দিকে তাকাতেই অজান্তে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরে। রোদ্দুর দিকে তাকিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করি,”আমার বেবি?”

রোদ্দু মাথা নাড়িয়ে ‘হ্যাঁ’ সম্মুতি দেয়। ধীরেসুস্থে উঠে বসি। আমার মেয়ে কে কোলে নিতেই অঝোরে জল গড়িয়ে পরে চোখ দিয়ে। এতদিন শুধু শুনেছি মা হওয়ার অনুভূতি পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দের। আজ তা উপলব্ধিও করতে পারছি। আমার বলতে কেউ একজন এসে গেছে। যাকে কেউ আমার থেকে আলাদা করতে পারবে না৷ কখনও না।
কিয়ৎ পর ডাক্তার ক্যাবিনে এসে আমাকে এবং বেবিকে চেক করে বলেন,
-“মিসেস শ্রেয়সী আপনার ডেলিভারিতে প্রচুর কম্পলিকেট কমপ্লিকেশন ছিলো তবে আল্লাহ রহমতে আপনি এবং আপনার বেবি দুজনই সুস্থ আছেন। কিন্তু আপনাকে আমার চেম্বারে এসে চেকআপ করিয়ে যেতে হবে। আই হোপ আপনি বুঝতে পারছেন।”

ডাক্তারের কথায় আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলি। পাশ থেকে নার্স হেসে বলেন,
-“এত সুন্দর বেবি হয়েছে আপনার মিষ্টি খাওয়াবেন না? আপনার হাসবেন্ড কে বলুন মিষ্টি নিয়ে আসতে।”

আমি রোদ্দুর দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নেই। রোদ্দু জোরপূর্বক হেসে বলে,
-“অবশ্যই মিষ্টি খাওয়াব। তা শ্রেয়সী কে ছাড়বেন কবে?”

-“পাঁচ দিন পর ওনাকে ছেড়ে দিব। ততো দিন ওনি ডাক্তারের অবজারভেশনে থাকবেন। আর আপনারা হসপিটালের ফর্মে ওনার হাসবেন্ডের নাম দেননি। কাইন্ডলি নামটা দিয়ে দিবেন প্লিজ।”

ডাক্তার এবং নার্স আমাকে চেক করে বেরিয়ে যান। আমি রোদ্দুর দিকে তাকিয়ে বলি,
-“সমাজটা বড্ড অদ্ভুত রে রোদ্দু৷ এখানে পদে পদে নিজের বংশ পরিচয় দিতে হয়। নয়তো বেঁচে থাকা দ্বায়।”

রোদ্দু কিছুই বলছে না। চুপ করে তাকিয়ে আছে বাচ্চাটার দিকে। রোদ্দুর অবস্থাও বুঝতে পারছি। হয়তো ভাবছে এই বাচ্চাটা বড় হয়ে কার পরিচয় মানুষ হবে? তার তো বাবা নেই। তার মায়েরও জীবনের গ্যারেন্টি নেই। তাহলে সে বাঁচবে কি করে এই ভয়ংকর সমাজে? মেয়েটার দিকে তাকিয়ে লম্বা শ্বার টেনে জিজ্ঞেস করি,
-“ভাইয়া আর সুরাইয়া ম্যাম কোথায়?”

-“বাইরে বসে অপেক্ষা করছে।”
______________________________

আমার মেয়েটা যতদ্রুত বড় হচ্ছে ততোই আমার চিন্তা বাড়ছে৷ পরিচয়টা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে তা ছাড়া সমাজে মানুষ আমাদের বাঁচতে দিবে না। এ কায়েক মাসে প্রতিবেশী প্রায় অনেকেই আমার মেয়ের বাবার কথা জিজ্ঞেস করে ফেলেছে। তাদের প্রশ্নের জবাবে আমি এবং রোদ্দু দুজন দুরকম কথা বলেছি। এতেও নানা কথা সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের। অতঃপর বাধ্য হয়ে সে বাসা ছেড়ে নতুন বাসায় উঠি। এই বাসাটা আরাবীর বাসার বেশ কাছাকাছি। ইচ্ছে করেই এত কাছে বাসা নেওয়া। অন্তুত মৃ’ত্যু’র আগে একবার হলেও তাকে দেখতে চাই। তবে নতুন বাসায় এসেও শান্তি নেই এখানেও একই প্রশ্ন আমার মেয়ে বাবা কোথায়। কিন্তু এবার আর আগের মতো ভুল করিনি। সবাইকে একই উত্তর দিয়েছি মেয়ের বাবা বিদেশে থাকেন। তবুও অনেক সন্দেহ প্রবল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন। কিছুই করার নেই। বাঁচতে হলে এভাবেই বাঁচতে হবে।

আমার মেয়েটা আধো আধো কন্ঠে মা বলা শিখেছে। অল্প অল্প হামাগুড়িও দিচ্ছে। রোদ্দুকেও মা বলে ডাকে। রোদ্দুর তা নিয়ে সে কি আনন্দ। প্রায় বলে,”রেডিমেড বাচ্চা পেয়ে গেছি। আমার আর বেবি নিতে হবে না।” রোদ্দুও এখনও আগেরও মতোই বোকা বোকা কথা বলে। আমিও চুপচাপ বসে বসে ওর কথা গুলো শুনি। নুসুর কে কল দিয়েছিলাম একদিন শুনলাম ছেলে হয়েছে ওর। সাজ্জাদ ভাইয়ের বাবা-মা তাদের বিয়েটাও মেনে নিয়েছে। এখন নুসু শশুড় বাড়িতেই থাকে। নুসুর কথা শুনে খুব খুশী হয়েছি। যাক মেয়েটা শেষ পর্যন্ত ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখী। রোদ্দু আর নুসু কে দেখলেই চোখে আলাদা প্রশান্তি ভর করে। সত্যি ভালোবাসা দেখতেও সুন্দর। তবে ভালোবাসা পাওয়ার ভাগ্য সবার হয় না। যেমন আমি।
__________________

প্রায় বহুদিন পর আরাবী কে এতটা কাছ থেকে দেখলাম। ছেলেটা আর আগের মতো নেই। অনেকটা পাল্টে গেছে৷ আগের মতো মুখশ্রীতে উচ্ছ্বসিতা নেই। কেমন নির্জীব, নিষ্প্রাণতায় হাঁটছে সে। তার মুখশ্রীতে আছে শুধু বিষন্নতা। এক রাশ বিবর্ণতা! চোখের নীচটা কেমন কালচে আভা পরে গেছে ছেলেটার। হয়তো ঠিক মতো ঘুমায় না রাতে। দূর থেকেই দেখার সৌভাগ্য হয়েছে কেবল। কাছে আসতেই দৃষ্টি ঘুরিয়ে নেয়। জানি কাছে আসার সময়টা আরাবী আমার পানেই তাকিয়ে ছিলো। তবে আমি চোখ তোলার সাহস পাইনি। চলে যায় সে। পেছন ফিরে একবারও তাকায়নি। একবারও দেখিনি তার প্রেয়সীকে। অবাক লাগছে এতটা কাছে পেয়েও সে আমার কাছে আসেনি। জবাবদিহি চায়নি।এতটা পাল্টে গেছে সে। তার প্রেয়সী ভালো নেই। তাও কি বোঝেনি? হয়তো না আবার হ্যাঁ। তবে আজ কষ্ট হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে। আমি চলে যাওয়ার পর আমার মেয়েটার কি হবে? রোদ্দু আর ভাইয়া কতদিন আগলে রাখবে। একবার না একবার তো তার উপর আঙ্গুল উঠবেই।
আমার ডায়েরির শেষ পাতা। হয়তো এখানেই ইতি টানবে আমার আর আরাবী প্রনয় সন্ধি। হয়তো আর কখনও কেউ আরাবী শ্রেয়সীর পরিনতির কথা জানবে না। পৃথিবী থেকে যখন শ্রেয়সীই হারিয়ে যাবে তখন আর এই উপন্যাসের উপসংহার কে’ই বা জানবে? হয়তো আরাবীও জানবে না। আর আমার মেয়েটাও না। ডায়েরি লেখার অভ্যসটা মৃ’ত্যু’র আগ পর্যন্ত ছাড়তে পারলাম না তাই শেষ অব্দি নিজের আত্মকাহিনী লিখে গেলাম। এমন এক কাহিনী যে কাহিনী আদৌও কেউ জানবে না। আমার বি’দ’ঘু’টে জীবনটা কেমন নি’ষ্ঠু’র’তা’য় কেটে গেলো৷ ভালোবাসা পেয়েও হারিয়ে গেলো। না পেলাম ভালোবাসার মানুষ গুলোকে। না পেলাম প্রিয় পুরুষকে। আর না পারলাম আমার মেয়েটাকে আগলে রাখতে। জীবনের শেষ সময়েও আমার একটাই অভিযোগ থাকবে আল্লাহর কাছে। আমার জীবনটা এমন না হলেও পারতো। এমনটা না হলে হয়তো আজ আরাবী, আমি এবং আমার মেয়েকে নিয়ে সুখী পরিবার হতো। হয়তো আমার মেয়েটা আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় খুশী হয়ে আসতো। হ্যাঁ! হয়তো! এমনটা হলো না। তবুও ভালো থাকুক আমার অপূর্ণতায় ভরা জীবনের ভালোবাসারা৷ যাদের সাথে সারা জীবন কাটাতে চেয়েছিলাম। ভালো থাকুক আমার ভালোবাসা।

-ভালোবাসি আরাবী! খুব বেশি!
____________________________

বর্তমান……..

আরাবী ডায়েরিটা বন্ধ করে উঠে দাঁড়ায়। ধীর পায়ে এগিয়ে পাশে রাখা টেবিলের দিক এগিয়ে যায়। টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা খাম বের করে। খামটা নিয়ে জানার পাশে দাঁড়ায়। প্রায় অনেক্ক্ষণ তাকিয়ে থাকে খামটার দিকে অতঃপর খুলে একটা পুরোনো কাগজ বের করে। কাজটায় শ্রেয়সীর হাতের লেখা। সেখানে লেখা,

মি.আরাবী শাহনেওয়াজ,

আমার জীবনের সবচেয়ে জ’ঘ’ন্য মুহুর্তে গুলো ছিলো আপনার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহুর্তে। তা মনে পরতেই আজও আমার শরীরে কেমন বি’দ’ঘু’টে অনুভূতি হয়। সত্যি কতটা বোকা ছিলাম আমি। যে এমন একটা ছেলের সাথে কিনা প্রেম ভালোবাসার নাটক করেছি। আপনাকে আমি ভালোবাসিনি কোনো দিনও। যা ছিলো সবই টাইমপাস বলতে পারেন। যাই হোক দয়া করে আমার পিছু আসবেন না আর। আমার জীবনে ভালোবাসার মানুষ আমি পেয়ে গেছি৷ আপনি যদি ভুল করেও আমার জীবনে আসেন তবে সেদিনই যেনো আমার শেষ দিন হয়। আপনি আমার জীবনের কালো ছায়া আর এই ছায়া আমি আর আমার জীবনে আসতে দিব না। আমার জীবনে এখন একজন পুরুষই সত্য সে ওয়ালিদ। আমার স্বামী। তার সাথেই সারাটা জীবন থাকতে চাই আমি।

ইতি,
শ্রেয়সী তাজওয়ার

আরাবী চিঠিটা হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে মুচড়ে ফেলে৷ আরাবী হসপিটালে থাকা অবস্থায় কেউ এসে তাকে চিঠিটা দিয়ে যায়। চিঠিটা পড়ে বিশ্বাস করেনি আরাবী। তবে চিঠির সাথে একটা ছবিও দেওয়া হয়েছিলো। ছবিটা ছিলো ওয়ালিদ আর শ্রেয়সীর। বউ সাজে ওয়ালিদের বাহু বন্ধনে প্রশান্তিতে চোখ বুঁজে বেঘোরে ঘুমচ্ছে শ্রেয়সী। আর ওয়ালিদ সযত্নে আগলে জড়িয়ে আছে শ্রেয়সী কে। ছবিটা দেখা মাত্র চিৎকার দিয়ে ছবিটা ছিড়ে ফেলে আরাবী। শ্রেয়সী তাকে ধোঁকা দিয়েছে। মানতে পারেনি সে।
পুরোনো জখম বন্ধ হৃদয় আবদ্ধ করে সাজ্জাদ কে কল দেয়। সাজ্জাদ কল রিসিভ করতেই আরাবী শক্ত কন্ঠে বলে,
-“যতদ্রুত সম্ভব শ্রেয়সীর ঠিকানা বের কর।”

সাজ্জাদ অবাক কন্ঠে বলে,
-“পাগল হয়েছিস? শ্রেয়সীর ঠিকানা নিয়ে কি করবি? ধোঁকাবাজ মেয়েটা তো ঠিকি সুখে সংসার করছে। তোর জীবন ধ্বংস করে দিয়েছে। অনেক কষ্টে তুই নিজেকে সামলেছিস তা আমি জানি। এখন আবার কেনো সেই মেয়ের পিছু যাচ্ছিস?”

আরাবী চিৎকার করে বলে,
-“চুপ! একদম চুপ। আমার শ্রেয়সীকে ভুল করেও ধোঁকাবাজ বললে তোকে আমি বাঁচিয়ে রাখব না। না জেনে কথা বলবি না।”

-“শ্রেয়সী তোর সাথে কি কি করেছে ভুলে গেছিস?”

-“সাজ্জাদ আমার ধৈর্য্যের পরিক্ষা নিস না। শ্রেয়সীর কোনো দোষ নেই। তুই ঠিকানা বের কর। নুসাইবা সব জানে ওর থেকে ঠিকানা বের কর প্লিজ।”

-“আচ্ছা ঠিক আছে তুই শান্ত হ। আমি নুসাইবার সাথে কথা বলছি।”

আরাবী ফোনটা রেখে কাউকে মেসেজ করে। আকাশের পানে তাকিয়ে ওষ্ঠে মৃদু হাসি তুলে বলে,
-“প্রেয়সী আসছি আমি।”

~চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here