প্রিয়দর্শিনীর খোঁজে পর্ব ২৬

0
594

#প্রিয়দর্শিনীর_খোঁজে❤
|| পর্ব – ২৬ ||
#লেখনীতে_বিবি_জোহরা_ঊর্মি

দীপ্তিময় সূর্য আলো ছড়িয়েছে চারদিকে। সূর্যের আলো জানালার পর্দা ভেদ করে রিদের রুমে প্রবেশ করেছে। তাহনার ঘুম ভেঙে যায়। সে ঘুম থেকে উঠে নিজেকে রিদের অনেকটাই কাছাকাছি দেখতে পায়। চারদিকে তাকিয়ে দেখে সকাল হয়ে গেছে। রিদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় সযত্নে। তারপর বিছানা থেকে উঠে হাত মুখ ধুতে ওয়াশরুমে চলে যায়।

*
আজ তাহনার বাবা এসেছেন তাহনাকে দেখতে। তাহনাকে জড়িয়ে অনেক কেঁদেছেন উনি। তাহনা তার বাবাকে সান্তনা দিয়ে চলেছে। সবাই মিলে একসাথে ব্রেকফাস্ট করে নিল৷ এরপর রিদের বাবা ও তাহনার বাবা একসাথে অফিসে চলে গেল।

.
তাহনার ভিষণ জ্বর উঠেছে। একদম মাত্রাতিরিক্ত জ্বর। বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে সে। রিদ অফিসে যেতে রেড়ি হয়েছিল। হঠাৎ তাহনাকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে চিন্তায় পড়ে যায় সে। রিদ তাহনার কাছে গিয়ে তার গায়ে হাতে দেয়। রিদ কেঁপে উঠে। তাহনার গা পুঁড়ে যাচ্ছে একদম। রিদ তার গলায় ঝুলে থাকা টাই খুলে নেয়৷ সে আর অফিসে যাচ্ছে না। তাহনা চোখ বন্ধ করে আছে। শীতে থরথর করে কাঁপছে সে। রিদ তাহনার গাতে কম্বল দিয়ে দিল। ড্রয়ারে থার্মমিটার খুঁজতে লাগলো। সেটা পেয়ে তাহনার কাছে এসে তাহনার জ্বর মাপতে লাগলো। সর্বনাশ! ১০৬° জ্বর তাহনার শরীরে। এসব হয়েছে কাল বৃষ্টিতে ভেজার জন্য। রিদ নিজের হাতে তাহনার জন্য জলপট্টি নিয়ে আসে। তারপর যত্ন নিয়ে তাহনার কপালে জলপট্টি দিতে থাকে। তাহনা বিড়বিড় করতে থাকে। ঠোঁট কাঁপতে থাকে থরথর করে।

রিদ নিচে গিয়ে তার মা’কে জানায় তাহনার ভিষণ জ্বর। তাকে যেন স্যুপ বানিয়ে দেওয়া হয়। রিদ বাইরে চলে গেল ডাক্তার নিয়ে আসার জন্য। তাহনার জ্বর হয়েছে শুনে মিসেস ফাবিহা তাড়াতাড়ি করে স্যুপ বানাতে যান।

জলদি করে স্যুপ বানিয়ে গরম গরম এক বাটি স্যুপ নিয়ে তাহনার কাছে যান তিনি। রুমে ঢুকতেই দেখেন তাহনার গায়ে কম্বল মুড়ি দেওয়া। টেবিলের উপর স্যুপের বাটিটি রেখে তাহনার কাছে গিয়ে বসেন উনি। তাহনার শরীরে হাত দিয়ে দেখেন অনেক জ্বর তাহনার। উনি আস্তে করে তাহনাকে ডাকতে থাকেন। তাহনা পিটপিট করে চোখ খুলে মিসেস ফাবিহাকে দেখতে পায়। সে আস্তে করে বলে,

‘মা আপনি?’

‘খুব জ্বর উঠেছে তোমার। নাও আমি স্যুপ বানিয়ে নিয়ে এসেছি। খেয়ে নাও ভালো লাগবে।’

‘কিচ্ছু খাবো না মা। ভালো লাগছে না।’

‘তা বললে তো হবে না তাহনা। আচ্ছা আমিই তোমায় খাইয়ে দিচ্ছি।’

মিসেস ফাবিহা এক চামুচ করে তাহনাকে স্যুপটি খাইয়ে দিচ্ছেন। এদিকে রিদ ডাক্তার নিয়ে এসেছে তাহনাকে দেখার জন্য। রিদ এসে দেখলো তার মা তাহনাকে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে। ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগলো রিদের। ডাক্তার তাহনাকে চেকাপ করতে লাগলো। চেকাপ করার পর প্রেস্ক্রিপশনে ঔষধ লিখে দিল। রিদ ডাক্তারকে এগিয়ে দিতে গেল আর ঔষধগুলো আনতে গেল।

°
মাথার উপর ঝলঝল করছে সূর্য। সূর্যের সমস্ত তাপ যেন রাইশার উপরেই পড়ছে৷ বিরক্ত নিয়ে কলেজ গেইটে দাঁড়িয়ে আছে সে। এই দীপ্তি তাকে সবসময়ই দাঁড় করিয়ে রাখে। এই মেয়েটা এমন কেন? রাইশা আর অপেক্ষা করতে পারছে না। সে হাটা ধরলো। কি পেয়েছে ওকে? সবসময় দাঁড়িয়ে রাখার মানে কি?

‘আজ আর ওর সাথে কথা বলবো না। চলে যাচ্ছি। থাকুক ও একা একা বাসায় যাক।’

দীপ্তিকে বকতে বকতে রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিল সে। হুট করে কেউ রাইশার মুখ চেপে ধরে পিছন থেকে। রাইশা হাত দিয়ে তার মুখ ছোটানোর চেষ্টা করছে। রাইশার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। রাইশার সামনে একটা লোক এসে রাইশার হাত চেপে ধরে। তারপর রাইশার দুহাত বেধে ফেলে। পিছনের লোকটি রাইশার মুখ বেধে দেয়। এরপর ওরা একটা বড়ো গাড়িতে রাইশাকে উঠিয়ে দেয়। রাইশা অনেক চেষ্টা করেছে নিজেকে ছাড়ানোর। কিন্তু সে ব্যর্থ হয়। রাইশার চোখের সামনে তার মা বাবা ও ভাইয়ের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছে। ওরা রাইশাকে গাড়িতে উঠিয়েই তাকে নিয়ে চলে গেল তাদের গন্তব্য স্থানে।

.
তাহনার পাশে বসে তাহনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে রিদ। তাহনা অপলকভাবে রিদের দিকে তাকিয়ে আছে। সে তার দূর্বল হাত দিয়ে রিদের হাত ধরে বলে,

‘থামুন এবার। আমি ঘুমাবো।’

‘ঘুমানোর জন্যেই তো হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।’

‘আমি ছোট বাচ্চা নই।’

‘তুমি বাচ্চাই। শোনো পিচ্ছি মেয়ে! অনেক কথা বলেছ ঔষধ খাইয়ে দিয়েছি। এখন চুপচাপ ঘুমাও। নইলে কিন্তু…’

তাহনা ভ্রু উপরের দিকে তুলে জিগ্যেস করে,

‘নইলে কি?’

‘মাইর চিন?’

‘কিহ? আপনি আমাকে মারবেন?’

‘হুম।’

তাহনা গাল ফুলিয়ে অন্যদিকে মুখ করে রইলো।

‘ওরে বাবা কি অভিমান রে।’

‘সরুন তো। ঘুমাবো আমি।’

‘ঘুমাও কে বারন করেছে।’

‘আপনি যান।’

‘যাবো না। আমি এখানেই থাকবো।’

‘যাহ..।’

তাহনা চোখ বন্ধ করে নিল। রিদের সামনে ঘুমাতে তাহনার খুব অস্বস্তি হচ্ছে। কিন্তু রিদ সরছেই না।

*
‘মিস্টার আফজাল শেখ। আপনার মেয়েকে আমরা কিড*ন্যাপ করেছি। মুক্তিপণ হিসেবে ১ কোটি টাকা আমাদের চাই। কাল সকালে মেসেজ করে একটা ঠিকানা দিব। ওখানে টাকা পাঠিয়ে দিবেন। টাকা হাতে পেলে আপনার মেয়েকে স্ব-সম্মানে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হবে। রাখছি।’

আননোন নাম্বার থেকে কেউ এসব কথা মিস্টার আফজাল শেখকে জানায়। আফজাল শেখ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সাথে সাথেই বাসায় কল দিয়ে খোঁজ নেন যে রাইসা বাসায় আছে কি না। বাসা থেকে জানানো হয় যে রাইশা এখনো ফিরেনি। এবার আফজাল শেখ চিন্তায় পড়ে যান। সাথে সাথে উনি এই আই নিজাম উদ্দিনকে কল করেন।

এস আই নিজাম মাত্র বাসায় এসেছেন। ক্লাম শরীর নিয়ে সোফায় বসেছেন উনি। স্ত্রী শরবত বানিয়ে এনেছেন। উনি শরবত টা মুখে দিবেন এমন সময় তার ফোনটা বেজে উঠে। আর উনি দেখেন যে মিস্টার আফজাল শেখ তাকে কল দিয়েছেন। উনি কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে অস্থির গলায় মিস্টার আফজাল শেখ বলেন,

‘আমার মেয়েকে বাঁচা নিজাম। আমার মেয়েকে ওরা কিড*ন্যাপ করেছে। প্লিজ সাহায্য কর তুই।’

ধপ করে সোফা থেকে উঠে বসলেন উনি। আশ্চর্য গলায় বললেন,

‘হোয়াট! এসব কি বলছিস তুই? রাইশা কিড*ন্যাপ হয়েছে? কারা কিড*ন্যাপ করেছে ওকে?’

রাফি সোফায় বসে ফোন চাপছিল। হঠাৎ রাইশা কিড*ন্যাপ হওয়ার কথা শুনে ওর বুক ধক করে উঠলো। মনে মনে ভাবছে, ওই ছোট মেয়েকে কে-ই বা কিড*ন্যাপ করবে?

‘আমি জানি না। একটা কল এলো আর বললো ওকে কিড*ন্যাপ করেছে। আর একটা ঠিকানা দিবে বলেছে। ওদের ১ কোটি টাকা ওই ঠিকানায় পাঠাতে হবে। তা নাহলে ওরা আমার মেয়েকে ছাড়বে না।’

‘ঠিকানা টা আমাকে দে।’

‘কাল সকালে পাঠাবে বলেছে।’

‘কিন্তু ওকে এভাবে আটকে রেখে ওর ক্ষতি করিয়ে দিলে তখন কি হবে?’

‘আমি জানি না নিজাম। আমার মেয়েকে আমার কাছে ফিরিয়ে দে তুই।’

‘আচ্ছা আমি দেখছি।’

রাফি তার বাবাকে জিগ্যেস করে,

‘কি হয়েছে বাবা?’

নিজাম সাহেব তার স্ত্রী ও ছেলেকে সব ঘটনা খুলে বলেন। তখন রাফি বলে।

‘কাল সকালে ওদের দেওয়া মেসেজ অনুযায়ী আমাদের যেতে হবে।’

‘তুইও যাবি নাকি?’

‘হ্যাঁ বাবা। এখন তুমি খোঁজ নাও। ও কোথায় ছিল, আর কোথা থেকে ওকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কিভাবে কারা নিয়ে গেছে। কেউ দেখেছে কিনা।’

‘তুই তো আমার থেকেও এগিয়ে গেছিস।’

‘বাবা একটা মেয়েকে কিড*ন্যাপ করা হয়েছে। এখন মজা করো না।’

‘যাচ্ছি রে। আশা করি কিছু না কিছু নিশ্চয়ই পাবো।’

মিস্টার নিজাম আবার থানায় চলে যান। আর রাফি বসে ভাবতে থাকে কারা রাইশাকে নিয়ে গেল। টাকার জন্য এভাবে একটা মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে? ও কাল তার বাবার সাথে যাবেই। রাইশাকে কাঁদিয়েছে অনেক। এখন একটা উপকার করতে চায় সে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here